somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেট্রো রেল ও বিমান বাহিনীর বক্তব্য

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রস্তাবিত মেট্রোরেল রুট প্রকল্পের বাস-বায়ন প্রসঙ্গে বিমান সদরের বক্তব্য
জাপান আন-র্জাতিক সংস'ার (জাইকা) সহযোগিতায় ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের (এসটিপি) আওতায় মাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (MRT LINE-6) নির্মাণের পরিকল্পনা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বাবিবা) একটি অত্যন- সময়োপযোগী, কার্যকরি এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করে। MRT LINE-6 এর রোকেয়া সরণি হয়ে খামারবাড়ীর যে রুটটি সরকার অনুমোদন দিয়েছেন সেটি সব বিবেচনায় ও জনস্বার্থের জন্য একটি যথোপযুক্ত সিদ্ধান- বলে বিমান বাহিনী মনে করে। এই প্রস-াবিত রুটটি তেজগাঁও বিমানবন্দরে কোনো প্রকার বিমান পরিচালনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। তেজগাঁও বিমানবন্দরটি বাংলাদেশের একটি অতি মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ Operational স'াপনা (Infrastructure)। তাই এটি একটি স্ট্র্যাটেজিক এসেট হিসেবে বিবেচিত। MRT LINE-6 বাস-বায়নে বর্তমান যে রুটটি অনুমোদন পেয়েছে তা জনস্বার্থের সাথে মোটেও সাংঘর্ষিক নয়। বরং, বিশদ বিবেচনায় এটি একটি যথোপযুক্ত সিদ্ধান-। বর্তমানে অনুমোদিত রুটটি বাস-বায়ন হলে তেজগাঁও বিমানবন্দর হতে বিমান উড্ডয়ন ঝুঁকির সম্মুুখীন হবে না এবং প্রস্তাবিত MRT-6 প্রকল্পটিও সুষ্ঠুভাবে বাস-বায়ন হবে।
বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে মেট্রোরেল বাস-বায়নে বিমান বাহিনীর মতামতসংক্রাস- বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ পায়। উল্লিখিত বিষয়ে বিমান বাহিনীর অবস'ান নিম্নে দেয়া হলো :
ক. তেজগাঁও বিমানবন্দরটি Disused বা পরিত্যক্ত নয়। তেজগাঁও বিমানবন্দর একটি সম্পূর্ণভাবে সচল (Operational) বিমান ঘাঁটি। যেখান থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে সব ধরনের হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান, জেট বিমান এবং বৃহদাকার পরিবহন বিমান (০৪ ইঞ্জিন বিশিষ্ট C-130) পরিচালনা করে থাকে। তেজগাঁও বিমানবন্দর হতে প্রতি বছর কেবল মাত্র বিমান বাহিনীই ১০ হাজার ঘণ্টা উড্ডয়ন সম্পন্ন করে থাকে। এ ছাড়া এই বিমানবন্দর হতে নিয়মিত VVIP এবং VIP ফ্লাইটসহ জরুরি ত্রাণসামগ্রী বহনের জন্য বিশেষ ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
খ. যেকোনো বিমানবন্দরের চারপাশে স'াপনা তৈরির ক্ষেত্রে স'াপনার উচ্চতা Civil Aviation Regulation (CAR-84) এবং বাংলাদেশ গেজেট- ৮৪ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী রানওয়ের Approach Funnel-এর নিকটবর্তী স'ানের স'াপনার সর্বোচ্চ উচ্চতা রানওয়ে থেকে দূরত্বের সাথে ১ঃ৫০ আনুপাতিক হিসাব অনুযায়ী নির্মাণ করা যেতে পারে। বিজয় সরণি দিয়ে পরিকল্পিত MRT LINE-6টি রানওয়ে থেকে ৭০১ ফুট দূরে অবসি'ত। সেই অবস'ানে ১৪ ফুটের বেশি উচ্চতায় কোনো স'াপনা তৈরি বিমান উড্ডয়ন নিরাপত্তার (Flight Safety) পরিপন'ী। কিন' বিজয় সরণির MRT LINE-6 এর উচ্চতা ৬২ ফুট হওয়ায় বিমান অবতরণ কালে Landing Approach-এর উচ্চতা বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে বিমানকে রানওয়ের প্রথমভাগের একটি বড় অংশ বাদ দিয়ে অবতরণ করতে হবে। ফলে ব্যবহার্য রানওয়ের দৈর্ঘ্য আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাবে। যা বিমানবন্দরটিকে জঙ্গি বিমান এবং পরিবহন বিমানের অবতরণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। ফলে বিমান বাহিনীর উড্ডয়ন কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হবে।
গ. বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের সর্বোচ্চ অংশ (Dome) রানওয়ে Approach Line-এর কিছুটা পূর্বে অবসি'ত। নভোথিয়েটারটি একটি Point Obstruction এবং এর দুইপাশে আর কোনো উঁচু স'াপনা নেই। ফলে Approach এবং অবতরণের ক্ষেত্রে সামান্য Lateral Manoeuver-এর মাধামে বিমানের উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। কিন' MRT LINE-6-এর পূর্বে প্রস-াবিত বিজয় সরণির অংশটুকু বিমান Approach Path-এ আড়াআড়িভাবে একটি “Wall Obstruction” হওয়ায় Approach Path-এ এটি স'াপন করলে কোনো Manouever-এর জায়গা থাকে না। ফলে রানওয়ের প্রাথমিক অংশে অবতরণ করতে হলে Approach Angle (সাধারণত ২.৫ ডিগ্রি-৩ ডিগ্রি হয়ে থাকে) ৮ ডিগ্রির বেশি হবে, যা উড়োজাহাজের অবতরণের সময় যাবতীয় ঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি করবে। অতএব, বিজয় সরণি দিয়ে MRT LINE-6 নির্মিত হলে তেজগাঁও বিমানবন্দরের ফ্লাইট অপারেশন এবং উড্ডয়ন নিরাপত্তা এমন একপর্যায়ে উপনীত হবে যার ফলে তেজগাঁও বিমানবন্দরের মতো একটি Strategic Operational Airfield-এর ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাবে।
ঘ. বিমানবন্দরের আশপাশে অবসি'ত উঁচু ভবন যেমন, ফ্যালকন টাওয়ার, নবনির্মিত ট্রাস্ট ব্যাংক এবং IDB ভবনগুলা তেজগাঁও বিমানবন্দরের উড্ডয়ন এবং অবতরণের Approach Funnel-এর মধ্যে অবসি'ত নয় বিধায় বিমান উড্ডয়ন এবং অবতরণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বাধার সৃষ্টি করে না।
ঙ. বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন জঙ্গি বিমান এবং বেসামরিক বিমানের উড্ডয়নের সময় তেজগাঁও বিমানবন্দরটি হজরত শাহজালাল আন-র্জাতিক বিমানবন্দরের বিকল্প রানওয়ে হিসেবে জরুরি অবতরণের জন্য ব্যবহার উপযোগী। এ ছাড়াও তেজগাঁও বিমানবন্দর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সহযোগী হিসেবে দেশী-বিদেশী বিমানের পরিচালন সুবিধা প্রদান করে থাকে।
চ. প্রতিরক্ষা বিষয়ক Air Strategic দৃষ্টিকোণ থেকে, তেজগাঁও বিমানবন্দর আদর্শ অবস'ানে আছে। এই বিমানবন্দরের Strategic Depth সর্বাপেক্ষা অধিক যা যুদ্ধকালীন সময় সমর শক্তির Survivability এবং দেশের মধ্যাঞ্চলের আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিগত অনেক বছর ধরেই প্রচুর অর্থ ও শ্রম ব্যয়ে এয়ারফিল্ডটি বিভিন্নভাবে যুদ্ধপোযোগী করে তোলা হয়েছে। ঢাকার এ দু’টি বিমানবন্দর (তেজগাঁও এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) হতে যুগপৎ বিমান পরিচালনার সামর্থ্য এবং টিকে থাকার শক্তি Synergistic effect-এর কারণে বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও একটি বিমানবন্দর অপরটির সার্বক্ষণিক Combat Air Operations পরিচালনায় Tactical Redundancy হিসেবে কাজ করে। এই Strategic ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে তেজগাঁও বিমানবন্দরকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর হিসেবেই সচল রাখতে হবে। অন্যথায়, বিমান বাহিনী তার ওপর অর্পিত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের কার্যকরি প্রতিরক্ষা প্রদানের সামর্থ্য অনেকাংশেই হারাবে, যা জাতীয় স্বার্থের পরিপন'ী এবং আপদকালীন সময় Catastrophic হতে পারে।
উল্লিখিত বক্তব্যের আলোকে তেজগাঁও বিমানবন্দরের সার্বিক কার্যক্রম সচল রাখতে এবং জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে MRT LINE-6টি বিজয় সরণি হয়ে নির্মাণ না করে ফার্মগেট-খামারবাড়ী-রোকেয়া সরণি হয়ে নির্মাণ করার সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে জনস্বার্থ কোনোভাবেই বিঘ্নিত হবে না। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে নাগরিক স্বার্থে MRT LINE-6 এর বাস-বায়ন অতীব জরুরি। Transportation Plan (STP) এর আওতায় MRT LINE-6 টি বিজয় সরণির পরিবর্তে খামারবাড়ী হয়ে নির্মিত হলে তেজগাঁও বিমানবন্দর এবং MRT LINE-6, এই দু’টি Strategic স'াপনার ব্যবহারই কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক হবে এবং জাতীয় স্বার্থও রক্ষা হবে। তাই সরকারের সিদ্ধান্তই সঠিক বলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মনে করে। আইএসপিআর
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×