অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা।আমাদের জন্য সময়টা হয়তো কখনওই সহজ ছিলনা। জন্মলগ্ন ৭১-থেকেই অনেক চড়াইউতরাই পেরিয়ে প্রায় ধুকতে ধুকতে ৪২- বছর এ পা দিয়েছি। যদিও সেই জন্মলগ্ন থেকে তোমার বুকের পথ ধরে হাঁটা হয়ে উঠেনি! কিন্তু ২০ বছর ধরে তোমার বুকের উপড় দাঁড়িয়ে জন্মদিন পালন করতে করতে যখন দেখলাম তোমার সকল সূর্য সন্তানেরা তোমার বুকের উপর হলি খেলায় মত্ত তখন তোমার পতাকা বুকে নিয়ে পাড়ি জমালাম অন্য কারও বুকের উপর। বলতে পারো পালিয়ে বাঁচলাম। নির্বাসন নিলাম।
কিন্তু বাঁচতে আর পারলাম কই? তোমার বুকের উপর জন্মানো সবুজ ঘাসে শুয়ে যে একবার আকাশের তাঁরা গুনেছে তার কি আর পাথর কেতে তৈরী করা বেডে জন্মানো ঘাসের উপর শুয়ে তাঁরা গুনে তৃপ্ত হয়। কিংবা তোমার বুকের উপর জন্মানো ধানক্ষেতের আইল ধরে দৌঁড়ে যার জীবন শুরু তার তৃপ্তি মেটায় সাধ্য কার!
তাই কষ্ট হয়! ভীষণ কষ্ট হয়। যখন দেখি ৪২-বছরেও কেউ আমাদেরকে এক সূঁতোয় গাঁথতে পারেনি। ইস্যু যাও হোক , সেটা রাজাকারের ফাঁসি, কিংবা রাজনৈতিক দল কর্তৃক আমাদের নিয়মতান্ত্রিক শোষণ কিংবা শত অন্যায় অত্যাচার কিংবা অন্য আরও অনেক কিছু।
তাও আমার প্রজন্মের উপর অগাধ বিশ্বাস নিয়ে যখন প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলাম তখনই তার জেগে উঠল। আমাদের ঘুম ভাঙলো, জন্ম নিল শাহবাগ প্রজন্ম। আমি চিৎকার করেছি এবং বলেছি যদি হয় আমাদের প্রজন্ম দ্বারাই কিছু হবে। রাজাকারদের বিচার হবে। হতেই হবে। এর সাথে পরিবর্তন আসবে আমাদের ধ্যানধারনায়। ঐ রাজাকার কিংবা নব্য রাজাকার ব্যাতীত বাকি মানুষগুলোকে এক সূতোয় বেধে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করাতে সক্ষম হবে আমাদের এই প্রজন্ম। আমি বলছিনা আমরা ব্যার্থ। কিন্তু পুরোপুরি সফল তাওবা বলি কি করে?
দেশের বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক দল তাদের নিজেদের ঐক্য বাঁচাতে ঘরে বসে আঙ্গুল চুষছে। আবার তাদের ছাত্র সংঘটনকে চুঁড়ি পড়িয়ে ঘরে বসিয়ে রেখেছে। বলতে বাধ্য হছি আপনারা একটু দূরদর্শী হলে নেমে পড়তেন আমাদের সাথে । জামাতকে ছেড়ে দেবার এর চেয়ে ভাল সুযোগ আর কোনদিনই পাবেন না। বলতে দ্বিধা নেই আমি আপনার দলেরই লোক তবুও দেশের স্বার্থে ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান(শাহবাগ আন্দোলনের আহবায়ক) এর পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে আমার খারাপ লাগবেনা। যুদ্ধ ক্ষেত্রে আমার পাশে কে যুদ্ধ করছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যখন তার এবং আমার চাওয়া এক। গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে আমি কার সাথে যুদ্ধ করছি। আপনাকে আপনার শত্রু তথা এখানে দেশের শত্রুকে চিনতে হবে। জামাত-শিবির ৭১-এ যে ভুল করেছিল আপনারা কি সেই একই ভুল করছেন না? দেশের কোটি কোটি মানুষ চাচ্ছে বিচার হোক কিন্তু আপনারা চুপ থেকে জনগনের চাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন না।
এখন আসি আমাদের আরেক রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে। ক্ষমতার স্বার্থে, দলের স্বার্থে তারা অপরাজনীতি করে অবলীলায়। মতিয়ুর রহমান রেন্টু তার ভুল আলোচিত বই “আমার ফাঁসি চাই”-এ ৮৩-র মধ্য ফেব্রুয়ারী ছাত্র হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে দেখিয়েছেন কিভাবে নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে শেখ হাসিনা একটি ছাত্র আন্দোলন সাজিয়েছিলেন। যার পরিণতিতে প্রাণ দিতে হয়েছিল জয়নাল এবং জাফরকে। অনুরুপভাবে পরিকল্পিত মৃত্যু ঘটানো হয় ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে। আরো দুটি তাজা প্রাণ ঝরে যায় আমাদের দেশের অপরাজনীতির ফলে। তাদের নাম সেলিম ও দেলোয়ার। (আমার ফাঁসি চাই- পৃঃ ৫২-৫৩)। এবারও পরিকল্পনাকারী আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
যারা শাহবাগে আছেন কিংবা আমার মত শাহবাগের সাথে একাত্ততা ঘোষনা করেছেন তাদেরকে বলছি এখন সময় হয়েছে মুখ খোলার। খবরের অন্তরালে যাবার।দীর্ঘ এগারো দিনের পরিক্রমায় আমরা এই আন্দোলন থেকে কিছুই পাই নি। না হয়েছে আমাদের কোন সুনির্দিষ্ট দাবী-দাওয়া সরকারের কাছে, না হয়েছে আন্দোলনের কোন গতিপথ।কিন্তু আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? কোথাও থেকে নির্দেশ আসছে আর আমাদের আন্দোলনের নেতা তা তোতাপাখির মতন আউড়াচ্ছে। আমরা কি রাস্তায় এসেছি আমাদের আন্দোলন কোন দলের কাছে লিজ দিয়ে? যার ফলাফল হিসাবে আমরা গতকাল পেলাম আমাদের ভাই-বন্ধু-সহযোদ্ধা আহমেদ রাজীব হায়দারের লাশ। রাজীবের হত্যাকান্ড কি সেই একাত্তরের রাজাকারদের বিরুদ্ধে কথা বলায় নাকি সে আমাদের দেশের অপরাজনীতির শিকার। আর যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে আস্তিক আর নাস্তিকের সংজ্ঞা দিয়ে রাজিবকে নিয়ে কথা বলছেন তাদের বলছি, Get your shit together and get the fuck out of Shahbag. You don’t belong to here.
আর শাহবাগ যদি হয় জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার জন্য সাজানো নাটক, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার”- শব্দ দুটো যদি হয় ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি তবে জনগন আপনাদের ক্ষমা করবেনা। জামাত-শিবিরকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিষিদ্ধ করতে হলে তা করবে জাতীয় সংসদ- নাৎসিদের মতন জার্মান আদলে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি নির্বাচন কমিশনের দেখাশোনা নামক দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া এবং তা শুধুই নিবন্ধন বাতিল। এতে কি জামাত-শিবিরের ৭১'এর খুন-ধর্ষন-লুন্ঠনসহ আমাদের সুর্যসন্তানদের হত্যার উপযুক্ত বিচার বিধান করা হয়? যেখানে আমাদের চোখের সামনেই আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানির উদাহরন। আমরা একই প্রক্রিয়ায় এদের নিষিদ্ধ হতে দেখতে চাই- যাতে অদুর ভবিষ্যতেও কেউ এদের আদলে এবং আদর্শে কার্যক্রম গোপনে চালালেও যথোপযুক্ত শাস্তি বিধান করা সম্ভব হয়।
আমি বলবো শুধু উপহাস করেই বলবো এখনো সময় আছে আপনারা চুপ করে থাকবেননা। বেগম জিয়াকে বলবো আপনার ছেলেদেরকে ছেড়ে দিন, শেখ হাসিনাকে বলবো আপনিও ছেড়ে দিন আপনার ছেলেদেরকে, আমাদেরকে এক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে দেশের জন্য কাজ করতে দিন। জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করতে চান সংসদে বিল উত্থাপন করুন।