প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন। পাশাপাশি আরও এক বছর বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সও। এ লক্ষ্যে ‘দি পাবলিক সার্ভিস (রিটায়ারমেন্ট) এ্যাক্ট, ১৯৭৪ সংশোধনের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে খসড়া তৈরি করেছে। চলতি বছরের শেষ দিকে এটি কার্যকর হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে সরকারী চাকরি থেকে অবসরের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়। এছাড়া ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়। এর পর প্রজাতন্ত্রের কার্মচারীদের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর পর ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে করা হয় ৬০। এবার মুক্তিযোদ্ধাদের আরও এক বছর বাড়িয়ে ৬১ বছর করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের বিগত আমলেও সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলেও এই উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাও ফাইলবন্দী রেখে সরকার বিদায় নেয়। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আবারও সে উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তাও ঝুলে থাকে। সরকারী চাকরিতে অবসরের মেয়াদ বাড়ানোর এই উদ্যোগ বার বার ব্যহত হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তাকেই দায়ী করা হয়েছে অতীতে। অবশেষে মহাজোট সরকারের প্রায় তিন বছরের মাথায় এসে এটি কার্যকর করা হয়।
সরকারী চাকুরেদের মেয়াদ বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘দি পাবলিক সার্ভিস (রিটায়ারমেন্ট) এ্যাক্ট, ১৯৭৪-এর ৪ নম্বর সেকশন সংশোধন করে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে বৃদ্ধি করে ৫৯ বছর করা হয়। এই এ্যাক্টটি আবারও সংশোধন করা হচ্ছে। এর আগে ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে দি পাবলিক সার্ভিস (রিটায়ারমেন্ট) এ্যাক্ট, ১৯৭৪-এর ৪ নম্বর সেকশন সংশোধন করে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে বৃদ্ধি করে ৫৯ বছর করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৬৭ দশমিক ৮ বছর হয়েছে। ১৯৭৪ সালে ‘পাবলিক সার্ভিস (রিটায়ারমেন্ট) এ্যাক্ট’ প্রণয়নের সময় মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬ দশমিক ২ বছর। এখন মানুষ ৫৭ বছরের পরও কাজ করতে পারেন। এছাড়া ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানে অবসর বয়সসীমা এখন ৬০ বছর। সরকার মনে করছে যখন মানুষ অভিজ্ঞতা অর্জন করছে তখন তাঁকে অবসরে চলে যেতে হচ্ছে। এ জন্য সরকারী চাকরির বয়স দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে সরকারের কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেন এতে পদোন্নতি বিলম্বিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে যাবে। বলা হয়, প্রশাসনে এক ধরনের ক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে। কিন্তু চারকির মেয়াদ বাড়ানোতে এ জাতীয় তেমন কোন সমস্যা সৃষ্টি না হওয়ায় সরকার আবারও এই মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালে চাকরির মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল। তখন তিন বছরের পরিবর্তে প্রাথমিকভাবে দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিস্থিতির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সময় যে সকল নেতিবাচক বক্তব্য তুলে ধরা হয়, তার তেমন কোন বাস্তব প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়নি। সে কারণে সরকার এই বছরের মধ্যেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, খসড়া প্রস্তাবে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশের সরকারী চাকরিতে অবসরের মেয়াদ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বেশি জোর দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশের কথা। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় সরকারী চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর। এছাড়াও জনপ্রশাসনের সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এবং বিগত জোট সরকারের সময় সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়ে দেয়াসহ মোট ছয়টি বিষয় বিবেচনায় এনে সরকারী চাকুরেদের অবসরে যাওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ২০০৪ সালে বিগত জোট সরকার সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনের মাধ্যমে সুপ্রীমকোর্ট বিচারকদের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর এবং মহা-হিসাব নিরীক্ষকের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার সময়সীমা ৬৫ বছর অথবা উক্ত পদে দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়া, এর মধ্যে যা আগে ঘটে সে সময় পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পাশাপাশি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় ইংরেজী, গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিষয়ের শিক্ষকদের শর্তসাপেক্ষে ৬৫ পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এ সকল বিষয়ে সমন্বয় করতে সরকারী চাকরির থেকে অবসরে যাওয়ার মেয়াদ ৬০ বছর করা জরুরী বলে মন্তব্য করা হয় প্রস্তাবে।
সূত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ (৩১/০৩/১৩)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




