somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্চের দিনগুলো, ২৫শে মার্চ এবং স্বাধীনতা দিবস

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মার্চ মাস কেবলই কি একটি মাসের নাম! না এ কেবল একটি মাসের নাম নয়। এই ''মার্চ'' শব্দটি মনে হতেই ভেসে উঠে রক্তের চাদরে মোড়ানো একটি সবুজ দেশের মানচিত্র। হ্যা এটিই সেই দেশ; আমার বাংলাদেশ।

আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, স্বচক্ষে দেখিনি সেই রক্তক্ষয়ী অধ্যায়। আমি মাতৃগর্ভ থেকে ভুমিষ্ট হয়েছি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে। সেদিক থেকে নিজেকে সৌভাগ্যবানদের কাতারে ফেলি নিজেকেই। তবুও মাঝে মাঝে দিকভ্রান্ত হয়ে বিষাদে ডুবে যাই, যখন এ দেশের নোংরা রাজনীতির প্রভাব বিস্তারে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ না দেখলেও হৃদয় থেকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেছি অনুভবটুকু। কখনো কখনো তা দাদা-দাদীর চোখে, বয়োজ্যষ্ঠদের চাক্ষুস বর্ণনায়, আবার কখনো কখনো বইয়ের পৃষ্ঠায় মুদ্রিত ছাপার অক্ষরে। আমার মতো করে এই তরুণ প্রজন্মের কেউই মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তারাও শেকড়ের সন্ধানেই খুঁজে নিয়েছে আমার মতোই পন্থা। কিন্তু এই স্পর্শকাতর রক্তাক্ত ইতিহাসকে যখন বিকৃত করে উপস্থাপণ করা হয় ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধারে তখন নূতন এই প্রজন্ম ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস গিলতে গিলতে দ্বিধার মাঝেই ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। চেষ্টা করবো এই পোষ্টের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের সেই রক্তক্ষয়ী মার্চের দিনগুলো তুলে ধরার।


মার্চের পটভূমিঃ

মার্চ-১, ১৯৭১: দুপুর প্রায় ১টা বেজে ৫মিনিট। হোটেল পূর্বাণীতে যখন আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় ৬ দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছিল, ঠিক এসময়ে তৎকালীন স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে পূর্বনির্ধারিত ৩রা মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশনটি স্থগিত ঘোষণা করে। যেটির আবেদন পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো করেছিলেন ২৮শে ফেব্রুয়ারী। ভুট্টো সেদিন বলেছিলঃ যদি তাঁর পিপলস পার্টিকে বাদ দিয়ে ৩ মার্চ অধিবেশন বসে, তাহলে পেশোয়ার থেকে করাচী পর্যন্ত জীবনযাত্রা নীরব-নিথর করে দেয়া হবে। এর ঠিক ঠিক পরপরই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা অনুযায়ী ইয়াহিয়া খান অধিবেশনের স্থগিতাদেশ দেয়। কিন্তু এমন সময় এটি কোনো নেতৃবৃন্দ কিংবা সাধারণ মানুষ কারো পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব ছিলো না। স্থগিতাদেশ শুনার সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ জনতা সেদিন দুপুরেই তীব্র প্রতিবাদে নেমে আসেন রাস্তায়। আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলে ওঠে সকলে। জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে হোটেলের চারপাশ।স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পল্টন। হোটেল পূর্বাণীতে অবস্থানরত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয় সেই হোটেল পূর্বাণীতে। বঙ্গবন্ধু সমবেত হাজারো জনতার সম্মুখে এসে বক্তব্য দেন। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করাকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে জনগণকে আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু সেদিনই, দুই তারিখ থেকে পাঁচ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা দুটো পর্যন্ত হরতাল ঘোষণা করেন এবং পরবর্তী কর্মসূচি ৭ই মার্চ ঘোষণা করা হবে বলে জানান।



মার্চ-২, ১৯৭১:
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ হরতাল পালন করল। মানুষই স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতালের পরিধি বাড়িয়ে দিল, মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে সবাই। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সহকর্মীরা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের উপায় খুঁজছিলেন। জনগণ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় সেই সময় ব্যাপকভাবে রাস্তায় নেমে আসতে থাকে কিন্তু মানুষকে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত না করে নেতার পক্ষে স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার পরিণতি জাতিকে হঠকারিতামূলক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই জনগণকে আরো প্রস্তুত করার অবস্থানে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতার সমাবেশে ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য এবং আবশ্যক করে তোলেন। পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে সামরিক-রাজনৈতিক পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ পায়।

মার্চ-৩: ১৯৭১: সালের ৩রা মার্চ বাঙালীদের জীবন ও বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। পহেলা মার্চ ইয়াহিয়া খানের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা দেয়াতে সেদিন আর অধিবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা বাংলা। পল্টন ময়দানে এদিন এক জনসভায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ শেখ মুজিবের উপস্থিতিতে পাঠ করে স্বাধীনতার ইশতেহার। ঘোষনা করা হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা। পূর্ব সিদ্ধান্তের আলোকে ঘোষণা করা হয়, এ দেশের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’, পতাকা হবে সবুজ জমিনের মাঝে লাল সূর্য, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর রচনা ‘আমার সোনার বাংলা’ হবে জাতীয় সঙ্গীত, বঙ্গবন্ধু হবেন জাতির পিতা আর ‘জয় বাংলা’ হবে জাতীয় স্লোগান। বঙ্গবন্ধুকে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক মনোনীত করে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধের সব রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণও হয় এদিনে। প্রকাশ্যে স্বাধীনতা শব্দ উচ্চারণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জনসভায় বঙ্গবন্ধু ''স্বাধীনতা'' শব্দটি উচ্চারণ করতেই সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। প্রথমবারের মতো সেদিন বিপুল সংখ্যক নারী লাঠি হাতে যোগ দেন মিছিলে। সমস্ত অফিস আদালত বন্ধ করে মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠে নগরী।

মার্চ-৪ ১৯৭১: সরাদেশে চলছিল হরতাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কোন মূল্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বেশ কিছু নির্দেশ জারী করেন। তৎকালীন বেসামরিক দায়িত্বে নিয়োজিত মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী কিছু প্রস্তাব রাতে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। বঙ্গবন্ধু বাঙালীরা কিভাবে মারা যাচ্ছে তার বর্ণনা দিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে তার দাবী মেনে নেয়ার কথা বলেন। সেখেন উপস্থিত থাকা তাজউদ্দিন আহমেদ যখন ফরমান আলীকে এক ছাদের নিচে আর থাকা সম্ভব না জানান; তখনি আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। আলোচনা আর এগোয়নি।


সেদিনই পূর্বপাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবী জানায়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানা থেকে ইপিআর-এর বাংলাদেশী জওয়ানরা রাজপথে মিছিলকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে জয়বাংলা সে­াগান দিতে থাকে।

মার্চ-৫, ১৯৭১: এদিন সারাদেশে সেনাবাহিনীর গুলিতে অনেকজন মারা যান। সময় যত গড়াচ্ছিল মুক্তিকামি জনতার উত্তাল আন্দোলন তত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিল। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, টঙ্গী সহ আরো বেশ কিছু জেলাতে অনেকেই পাকহানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হোন। মার্শাল ল অথরিটি সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দেশব্যাপী আন্দোলন আরো জোরদার হতে থাকে।

মার্চ-৬, ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল সারাদেশ। পুরো দেশ পরিনত হয় মিছিলের দেশ হিসেবে।''জয় বাংলা - জয় বঙ্গবন্ধু '', ''বীর বাঙ্গালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো '' এই শ্লোগানে মুখরিত হতে থাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢা.বি. ক্যাম্পাস, পল্টন ময়দান আর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। সময়ের সাথে সাথে অসহযোগ আন্দোলনের গন্তব্যও স্পষ্ট হচ্ছিল। সবার মনে আকাঙ্খা কখন আসবে স্বাধীনতার ডাক। পরের দিন অর্থ্যাৎ ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু কি ঘোষনা দেন তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল সারা দেশ। একই সাথে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি ও ছিল সেই দিকে।

৭ই মার্চের ভাষন ঠিক করতে এ দিন বঙ্গবন্ধু মিটিং করেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে। পুরো জাতি যখন স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত তখনো বাঙ্গলীর স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ইয়াহিয়া খান। এ দিন হঠাৎ করে এক রেডিও ভাষনে ২৫শে মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের বৈঠক বসবে বলে ঘোষনা দেন। ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্হানী মুক্তিকামি জনতাকে ''দুষ্কৃতিকারি'' আখ্যা দিয়ে বলেন, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হতে দেব না, ঐক্য বিনষ্টের যে কোন প্রচেষ্টা সেনাবাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে। কুখ্যাত জেনেরেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্হানের গভর্নর হিসেবে ঘোষণা দেন ইয়াহিয়া।

এ ঘোষনার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে নেমে আসে প্রতিবাদি ছাত্র-জনতা। স্বাধীনতার দাবী আরও জোরালো ভাবে উঠে আসে ।

বিকেলে বায়তুল মোকাররমের সামনে এক সমাবেশে মাওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সকলকে মুক্তিসংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহব্বান জানান। এ দিন সাংস্কৃতিক কর্মীরাও রাজপথে মিছিল করেন । মিছিলে নায়ক রাজ্জাক, নায়িকা কবরি পরিচালক জহির রায়হানসহ জনপ্রিয় ব্যক্তিরা অংশগ্রহন করেন।

মার্চ-৭: রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এবং স্বাধীনতা লাভের প্রতি আকাঙ্ক্ষার স্লোগান স্পষ্টই বুঝিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশের জনগণ আর পাকিস্তানে বসবাস করতে চায় না, জনগণ স্বাধীনতা চায়। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পথটি খুবই কঠিন ছিল, যা জানতেন ও বুঝতেন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি রাষ্ট্র-রাজনীতিকে কত গভীর প্রজ্ঞা দিয়ে বুঝতেন তা বোঝা গেল ১৮ মিনিটের ইতিহাস কাঁপানো মহান দীপ্ত ভাষণে। এই ভাষণ মুখস্থ বুলি আওড়ানো কিছু শব্দ নয়, প্রানের আবেগ আর রাজনৈতিক চূড়ান্ত প্রজ্ঞার সেই ভাষণ ছিল জাতির মুক্তির রুপরেখা। বঙ্গবন্ধু এক মহাকাব্য রচনা করে গেলেন। দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারন করে গেলেন বাঙালির হাজার বছরের চাওয়া-পাওয়া, দুঃখকষ্টের কথা।

সর্বকালের সেরা বাঙালির শ্রেষ্ঠ ভাষণটি কোট করছি,

“ভায়েরা আমার,আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সকলে জানেন এবং বোঝেন আমরা জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম?
নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরী করব এবং এদেশের ইতিহাসকে গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনীতিক, রাজনীতিক ও সাংষ্কৃতিক মুক্তি পাবেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলছি বাংলাদেশের করুণ ইতিহাস, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। এই রক্তের ইতিহাস মুমূর্ষু মানুষের করুণ আর্তনাদ—এদেশের ইতিহাস, এদেশের মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।
১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি।১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খাঁ মার্শাল-ল জারি করে ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আয়ুব খাঁর পতনের পরে ইয়াহিয়া এলেন। ইয়াহিয়া খান সাহেব বললেন দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন— আমরা মেনে নিলাম। তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আমাদের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দিন। তিনি আমার কথা রাখলেন না। রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সভা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব— এমনকি এও পর্যন্ত বললাম, যদি ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজনের মতেও যদি তা ন্যায্য কথা হয়, আমরা মেনে নেব।
ভুট্টো সাহেব এখানে ঢাকায় এসেছিলেন আলোচনা করলেন। বলে গেলেন, আলোচনার দরজা বন্ধ নয়, আরো আলোচনা হবে। তারপর অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করলাম— আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরী করব। সবাই আসুন, বসুন। আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরী করব। তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি আসে তাহলে কসাইখানা হবে এসেম্বলি। তিনি বললেন, যারা যাবে, তাদের মেরে ফেলে দেওয়া হবে। আর যদি কেউ এসেম্বলিতে আসে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত সব জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলি চলবে। আর হঠাৎ মার্চের ১লা তারিখে এসেম্বলি বন্ধ করে দেওয়া হলো।
ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট হিসেবে এসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম, যাবো। ভুট্টো বললেন, যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এলেন। তারপর হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া, দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষের, দোষ দেওয়া হলো আমাকে। দেশের মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠলো।
আমি বললাম, শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করুন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সব কিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিল। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো। আমি বললাম, আমরা জামা কেনার পয়সা দিয়ে অস্ত্র পেয়েছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য। আজ সেই অস্ত্র দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের বিরুদ্ধে— তার বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানে সংখ্যাগুরু— আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
আমি বলেছিলাম জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। দেখে যান কিভাবে আমার গরিবের ওপর, আমার বাংলার মানুষের বুকের ওপর গুলি করা হয়েছে। কিভাবে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। কী করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আপনি আসুন, আপনি দেখুন। তিনি বললেন, আমি ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স ডাকব।
আমি বলেছি কীসের এসেম্বলি বসবে? কার সঙ্গে কথা বলব? আপনারা যারা আমার মানুষের রক্ত নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলব? পাঁচ ঘন্টা গোপন বৈঠকে সমস্ত দোষ তারা আমাদের বাংলার মানুষের ওপর দিয়েছেন, দায়ী আমরা।
২৫ তারিখে এসেম্বলি ডেকেছেন। রক্তের দাগ শুকায় নাই। ১০ তারিখে বলেছি, রক্তে পাড়া দিয়ে, শহীদের ওপর পাড়া দিয়ে, এসেম্বলি খোলা চলবে না। সামরিক আইন মার্শাল-ল উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ঢুকতে হবে। যে ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখব আমরা এসেম্বলিতে বসতে পারব কিনা। এর পূর্বে এসেম্বলিতে আমরা বসতে পারি না।
আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে, আজ থেকে এই বাংলাদেশ কোর্ট-কাচারি, আদালত, ফৌজদারি আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সেজন্য যে সমস্ত জিনিসগুলি আছে, সেগুলির হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, গরুর গাড়ি, রেল চলবে। শুধু সেক্রেটারিয়েট ও সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট, জজ কোর্ট, সেমি-গভর্নমেন্ট দপ্তর, ওয়াপদা— কোনো কিছুই চলবে না। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এরপর যদি বেতন দেয়া না হয়, এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়— তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব। সৈন্যরা, তোমরা আমাদের ভাই। তোমরা ব্যারাকে থাকো, তোমাদের কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আর তোমরা গুলি করবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না।
আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগ থেকে যদ্দুর পারি সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যারা পারেন আওয়ামী লীগ অফিসে সামান্য টাকা-পয়সা পৌঁছে দেবেন। আর সাতদিন হরতালে শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছে, প্রত্যেক শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছে দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হচ্ছে ততদিন ওয়াপদার ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো— কেউ দেবে না। শুনুন, মনে রাখুন। শত্রু পেছনে ঢুকেছে আমাদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান যারা আছে আমাদের ভাই— বাঙালি অবাঙালি তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের ওপর। আমাদের যেন বদনাম না হয়।
মনে রাখবেন, রেডিও যদি আমাদের কথা না শোনে, তাহলে কোনো বাঙালি রেডিও স্টেশনে যাবে না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, তাহলে কর্মচারীরা টেলিভিশনে যাবেন না। দুঘন্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাদের মায়নাপত্র নিতে পারে। পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন, টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ব বাংলায় চলবে এবং বাংলাদেশের নিউজ বাইরে পাঠানো চলবে।
এই দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা চলছে— বাঙালিরা বুঝেসুঝে কাজ করবে। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলুন এবং আমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।”



মার্চ-৮, ১৯৭১: ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে সম্প্রচার কাজ শুরু হয়। প্রদেশের অন্যান্য বেতার কেন্দ্র থেকেও তা রিলে করা হয়।বৃটেনে প্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি লন্ডনস্থ পাকিস্তানি হাই কমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগের নামকরণ শুধু ‘ছাত্রলীগ’ ঘোষণা করা হয় এবং স্বাধীণ বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

মার্চ-৯, ১৯৭১ : এইদিনে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পল্টন ময়দানে ভাষন দেন। “ইয়াহিয়া কে তাই বলি, অনেক হইয়াছে আর নয়। তিক্ততা বাড়াইয়া আর লাভ নেই। ‘লাকুম দিনুকুম আলিয়াদ্বীন’(তোমার ধর্ম তোমার আমার ধর্ম আমার) এর নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার স্বীকার করে নাও। শেখ মুজিবের নিদের্শমত আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে কোন কিছু করা না হলে আমি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মিলিত হইয়া ১৯৫২ সালের ন্যায় তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলবো।”
ভাষানী এদিন ১৪ দফা ঘোষণা করেন। বিভিন্ন আন্দোলন চলতে থাকে, প্রানহানীও থেমে থাকেনি।

মার্চ-১০, ১৯৭১: সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাসভবনে একদল বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকার বৈঠকে মিলিত হন। সেসময় তিনি বলেন, ‘সাতকোটি বাঙালি আজ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। যে কোনো মূল্যে তারা এই অধিকার আদায়ে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এ পর্যন্ত বাঙালিরা অনেক রক্ত দিয়েছে। এবার আমরা এই রক্ত দেয়ার পালা শেষ করতে চাই’।

পাকিস্তানের গর্ভনর হিসেবে টিক্কা খানের শপথ নেবার কথা থাকলেও বিচারপতি বি.এ.সিদ্দিকী যখন শপথ বাক্য পাঠ করাননি। এই আনন্দে চট্টগ্রামে আনন্দ মিছিল বের হয়। এমন সময় সেই মিছিলে বিহারী জল্লাদরা নিরস্ত্র বাঙালীর উপর হামলা করে। তাদের হামলাতে প্রায় ২০জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়।

মার্চ-১১, ১৯৭১: স্বাধীন বাংলার দাবিতে অবিচল সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের সাথে সবধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রাখেন। হাই কোর্টের বিচারপতি ও প্রশাসনের সচিবসহ সারা বাংলার সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মচারী অফিস বর্জন করেন। ১১ মার্চ সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সকল সরকারি ও আধাসরকারি ভবন ও বাসগৃহের শীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে থাকে। ন্যাপ (ওয়ালী) পূর্ববাংলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম. খুরশীদ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন ও ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে. উলফ ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে পৃথক পৃথক আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। সংগ্রামী জনতা সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। রংপুর, যশোর ও সিলেটে রেশন নেয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়েকে বাধা দেয়া হয়। রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৪নং সামরিক আদেশ জারী করে।

মার্চ-১২, ১৯৭১: এইদিনে শাপলাকে আমাদের জাতীয় ফুল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শিল্পী কামরুল হাসানের আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ভবনে আয়োজিত শিল্পীদের এক সভাতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণা শেষে মুক্তিকামী মানুষকে সেদিন আরও বেশি উৎসাহী করে তুলতে তাঁরা প্রতিবাদী পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন বিলি করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য মরিয়া মুক্তিপাগল বাঙালী।


মার্চ-১৩, ১৯৭১: দিনটি ছিল অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ষষ্ঠ দিন। যথারীতি আজও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সরকারি, আধাসরকারি অফিস-আদালত কর্মচারীদের অনুপস্থিতি অব্যাহত থাকে। বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী খোলা থাকে। স্বাধীকার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে শোক এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে আজো সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান, বাসভবন এবং যানবাহনে কালো পতাকা উত্তোলিত থাকে।

মার্চ-১৪: এই দিনেই সারা দেশে জেলা ও থানা পর্যায়ে সংগ্রাম পরিষদকে যুদ্ধের ট্রেনিং নেয়ার নির্দেশ দেন তৎকালিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ। অন্য দিকে পুর্বপাকিস্তান সফররত ন্যাপ সভাপতি ওয়ালী খান বাঙ্গালীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর চার দফা দাবীর সাথে একাত্ততা ঘোষনা করেন।

শেখ মুজিব তাঁর নিয়মিত প্রেসব্রিফিং-এ বলেন,''প্রেসিডেন্ট আলোচনায় বসতে চাইলে তার কোন আপত্তি নেই , তবে প্রেসিডেন্টকে দাবি পূরনের সদিচ্ছা দেখাতে হবে''। বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন , আলোচনা হতে হবে দ্বিপক্ষীয়। এতে কোন তৃতীয় পক্ষ উপস্থিত থাকতে পারবে না। এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ৩৫ দফা নির্দেষনা ঘোষনা করেন । মুলত এই ঘোষনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু প্রশাসনের ভার নিজে গ্রহন করেন।

মার্চ-১৫, ১৯৭১ : শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে ইয়াহিয়া ঢাকায় আসে। কিন্তু একটি প্রেস কন্ফারেন্সে ভুট্টো ঘোষণা দেন ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করবেন না’।

মার্চ-১৬,১৯৭১: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের বৈঠক হয়। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু সামরিক আইন প্রত্যাহার, বাঙালীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যাকা- বন্ধসহ বিভিন্ন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে এর জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবি করেন।

মার্চ-১৭, ১৯৭১: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইয়াহিয়া খানের মধ্যে টানা তৃতীয় দিনের মতো বৈঠক বসে একাত্তরের এই দিনে। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু জনগণের গণতান্ত্রিক রায়ের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং ছয় দফার ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়নের প্রশ্নে অটল থাকেন।
অন্যদিকে ইয়াহিয়া খান জনগণের ভোটে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানান। ফলে বৈঠকে শুরু হয় অচলাবস্থা। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের মধ্যে আলোচনা ভেঙে যায়। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর গাড়ি বের হয়ে আসে। আগের মতোই সাদা গাড়ির এক পাশে কালো পতাকা অপর পাশে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পতাকা উড়িয়ে বেরিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধু।

মার্চ-১৮, ১৯৭১: অসহযোগ আন্দোলন ১৬ দিনে পদার্পণ করে। এই আন্দোলনের ঢেউ গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

১৯-মার্চ, ১৯৭১: লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিবস। স্বাধিকারকামী অসহযোগ আন্দোলনের ধারাক্রমে প্রবীণ-নবীন নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের শ্রেণী-পেশার মানুষের ঢল নেমেছে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২নং বাসভবনে। বাসভবনটি যেন বাংলার মুক্তিকামী মানুষের তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ভোর থেকে গভীর রাত অবধি শত শত মিছিলের লাখ লাখ লোকের উপস্থিতিতে শ্লোগানে মুখরিত নেতার বাসভবনের সম্মুখ প্রাঙ্গণ।

মার্চ-২০, ১৯৭১: জয়দেবপুরের রাজবাড়ীতে অবস্থিত ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়ন তাদের হাতিয়ার ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়। গ্রামের পর গ্রাম থেকে মানুষ এসে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সবাই মিলে টঙ্গী-জয়দেবপুর মোড়ে ব্যারিকেড গড়ে তোলে নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য শামসুল হকের নেতৃত্বে।

মার্চ-২২, ১৯৭১: শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য বাঙালী সংগ্রামে গর্জে ওঠে। যতই দিন গড়াচ্ছিল, রাজনৈতিক সঙ্কট ততই গভীরতর হচ্ছিল। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে একাত্তরের ২২ মার্চের ঘটনাবলী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সকালে ২৫ মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনাক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।

অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস ছিল ২২ মার্চ। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগাণে মুখরিত হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে ছুটে যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার বক্তৃতা করেন। সংগ্রামী জনতার ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের মধ্যে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বন্দুক, কামান, মেশিনগান কোন কিছুই জনগণের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রাতে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মিলেমিশে এক সঙ্গে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান এখন এক ক্রান্তিলগ্নে উপনীত। গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পথে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকি, তাহলে কোনকিছুই আমরা হারাব না।


মার্চ-২৩, ১৯৭১ : পাকিস্তানের জাতীয় দিবস আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করেন। ফলাফলবিহীন আলোচনা চলতে থাকে। সর্বত্র বাংলাদেশের নতুন জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়।

মার্চ-২৫, ১৯৭১: আলোচনা ভেঙে যায়। ইয়াহিয়া ও ভূট্টো গোপনে পাকিস্তান চলে যায় এবং শেখ মুজিবকে বন্দি করে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়।


১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর অন্যায়ভাবে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে৷ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে একটি জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে৷ পঁচিশে মার্চের কাল রাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ হত্যা করে৷ সেদিন গ্রেফতার করা হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙালীর প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে৷ গ্রেফতারের পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন৷ ২৫ মার্চ, ১৯৭১-এর রাতে সমগ্র ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয় ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কয়েকটি সুসজ্জিত দল ঢাকার রাস্তায় নেমে পড়ে৷ মুক্তিযুদ্ধপূর্ব বেশ কয়েকটি আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় পাকিন্তানীদের প্রধান টার্গেট ছিল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিকড় উপড়ে ফেলা৷ তারই অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল ১৮নং পাঞ্জাব, ২২নং বেলুচ, ৩২নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এবং কিছু সহযোগী ব্যাটেলিয়ন৷ এই বাহিনীগুলোর অস্ত্রসম্ভারের মাঝে ছিল ট্যাংক, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, রকেট নিক্ষেপক, ভারি মর্টার, হালকা মেশিনগান ইত্যাদি৷ এই সমস্ত অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্তানী বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে অগ্রসর হয়৷ ইউনিট নং ৪১ পূর্ব দিক থেকে, ইউনিট নং ৮৮ দক্ষিণ দিক থেকে এবং ইউনিট নং ২৬ উত্তর দিকে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘিরে ফেলে৷ ২৫ মার্চের গণহত্যার (অপারেশন সার্চলাইট) প্রথম পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষককে হত্যা করা হয়৷ অসহযোগ আন্দোলন মূলত গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহরুল হক হলের স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন পরিষদকে কেন্দ্র করে৷ তাই, পাকবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের প্রথম লক্ষ্য ছিল এই হলটি৷ অধ্যাপক ড. ক ম মুনিমের মতে, ওই রাতে এই হলের প্রায় ২০০ জন ছাত্রকে পাকবাহিনী গুলিবর্ষণ করে হত্যা করে৷২৫ মার্চের কালরাতে বাঙালিদের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে উঠে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে৷ সে রাত সম্পর্কে তত্কালীন ইস্ট পাকিস্তান পুলিশে ওয়্যারলেস অপারেটর হিসাবে কর্মরত মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টা৷ আমরা শুনতে পেলাম পাকিস্তানী সেনারা ট্যাংক, মর্টার ও ভারি মেশিনগান নিয়ে এসেছে এবং আমাদের ঘিরে ফেলেছে৷ আমরা কেবলমাত্র ৩০৩জন পুলিশ ছিলাম৷সবার হাতে ছিল রাইফেল৷ শাহজাহান মিয়া বলেন, আমাদের হাতে অস্ত্র বলতে কেবল ৩০৩ রাইফেল৷ পুলিশের সাহসী যোদ্ধাদের নিয়ে আমরা পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সামগ্রিক শক্তির মোকাবেলা করলাম৷ সম্মুখযুদ্ধে ওই রাতে পুলিশের প্রায় ১৫০ সদস্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন৷ মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, সে রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার হলো আরও ৩০০০জনকে৷ ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল৷ পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলে মৃতের সংখ্যা৷ জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো৷ রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো৷ গোটা বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভূমি।



স্বাধীনতার ঘোষণা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। কথিত আছে, গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (অর্থাৎ, ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তত্কালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়। ঘোষণাটি নিম্নরুপ:

অনুবাদ: এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।

২৬শে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক'জন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ.হান্নান প্রথম শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। পরে ২৬শে মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ঘোষণাপত্রটির ভাষ্য নিম্নরুপ:

অনুবাদ: আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।

আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।

শেখ মুজিবর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এৰং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার। ১৯৭১ সালে ২৭ মার্চের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে যা নয় মাস স্থায়ী হয়।



তথ্যসূত্র এবং কৃতজ্ঞতাঃ
_________________

ফিরে দেখা একাত্তর- মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও দলিলপত্র

অনলাইন পত্রিকাসমূহ
ইন্টারনেট
ফিচার/ আর্টিকেল
বাংলা ব্লগসমূহ।
উইকিপিডিয়া এবং
বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই ব্লগার অবঃ আবুল বাহার, দিকভ্রান্ত পথিকসহ সেই সব ব্লগারদের যারা শেকড়ের সন্ধানে ছুটে চলেছেন অহোরাত্রি।

ছবি: ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন ব্লগারদের পোষ্ট থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৪৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×