প্রযুক্তি বিশ্বে ইন্টেল একটি অতি পরিচিত নাম এবং মাইক্রোপ্রসেসর নির্মাতা কোম্পানী। একটি কম্পিউটারকে যদি মানুষের সাথে তুলনা করা হয় তবে প্রসেসরকে বলা যায় ব্রেইন। মোটামুটিভাবে পৃথিবীর সকল মানুষের ব্রেইন এর গঠনগত বৈশিষ্ট্য প্রায় একরকম হলেও কর্মক্ষমতার দিক থেকে তা সমান নয়, ঠিক তেমনি পৃথিবীর সব মাইক্রোপ্রসেসর এর গঠনগত বৈশিষ্ট্য প্রায় এক হলেও তাতে বৈশিষ্ট্যের বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।
ইন্টেল বিগত বেশ কয়েকটি প্রসেসর এর জেনারেশনে এই টারবো বুস্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে। মূলত কোর আই৫, আই৭ এবং আই৯ বা এক্স সিরিজের প্রসেসরগুলোতে এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। মনে রাখা জরুরী যে এই প্রসেসরগুলো মূলত হাই-এন্ড গেমিং কম্পিউটার বা ওয়ার্কস্টেশনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে বলতে গেলে যেসব কম্পিউটারে মূলত অনেক ক্যালকুলেশনগত কাজ করা হয় (গেমিং, ভিডিও এডিটিং বা কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, সার্ভার, ভার্চুয়াল মেশিন ইত্যাদি) মূলত সেসব কম্পিউটারের প্রতি লক্ষ্য রেখেই এই প্রসেসরগুলো তৈরী করা হয়েছে। বোঝার সুবির্ধার্থে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন আপনি গেমিং করেন বা ভিডিও এডিটিং এর কাজ করেন। আপনার কম্পিউটারটি খুব সম্ভবত দিনের ২৪ ঘন্টাই সেই একই কাজ করছেনা (করলেও সমস্যা নেই), কখনো কখনো আপনি ঐ কম্পিউটারে অফিশিয়াল টুকটাক কাজ বা স্বাভাবিকভাবে ওয়েব ব্রাউজিংও করছেন। কম্পিউটারটি যখন কোন ভারী কাজ করছে না তখন ঐ কিম্পউটারের প্রসেসরটি তার স্বাভাবিক গতি বা বেইজ ফ্রিকুয়েন্সি (স্বাভাবিক গতি) /ক্লক রেট স্পীডে কাজ করছে। ঠিক যখনই আপনি অনেক ভারী কাজ শুরু করছেন (ভিডিও এনকোডিং, গেমিং ইত্যাদি) ঠিক তখনই আপনার প্রসেসরটি কাজের চাপ অনুধাবন করে তার গতি বাড়িয়ে দিয়ে তা ৪ গিগাহার্টজ বা তার চেয়েও দ্রুত গতিতে কাজ শুরু করে দেয় যাতে করে কাজটি দ্রুত শেষ করা সম্ভব হয়। মূলত স্বাভাবিক গতির চেয়ে বেশী গতিতে কাজ করার এই প্রযুক্তিকেই ইন্টেল টারবো বুস্ট প্রযুক্তি বলছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ একটি প্রসেসর তার স্বাভাবিক গতির চেয়ে ঠিক কতখানি বেশী দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারবে তা নির্ভর করছে মূলত থার্মাল ডিজাইন পাওয়ার (টিডিপি) এর উপর। মানে উচ্চ গতিতে কাজ করার জন্য যে পরিমান বৈদ্যুতিক শক্তি প্রয়োজন তা আপনার কম্পিউটারের পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট (পিএসইউ) দিতে পারছে কি না, যে পরিমাণ বেশী তাপ উৎপন্ন হচ্ছে তা ঠিকভাবে বের হতে পারছে কি না ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর। মনে রাখা জরুরী ইন্টেল ডিজাইনগতভাবে এই প্রসেসরগুলোর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ২১২ ডিগ্রী ফারেনহাইট নির্ধারণ করে দিয়েছে। যে কোন কারণেই হোক না কেন, প্রসেসর এর তাপমাত্রা এর কাছাকাছি আসলেই আপনার প্রসেসর নিজে থেকেই তার কাজের গতি কমিয়ে দেবে যাতে প্রসেসর এর ফিজিক্যাল কোন ক্ষতি না হয়। তাই দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রসেসর এর উচ্চ গতি ধরে রাখার জন্য প্রসেসর ঠান্ডা রাখা জরুরী। আর এর জন্য প্রসেসরে ভালো ফ্যান বা কুলার ব্যবহার করা উচিত।
ব্যক্তিগত অভিমতঃ ইন্টেলের টারবো বুস্ট প্রযুক্তি ক্ষেত্র বিশেষে বেশ কাজে আসলেও এর কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। যেমন, স্বাভাবকিভাবে প্রসেসরের টারবো বুস্ট প্রযুক্তি চালু থাকলে আপনার অপারেটিং সিস্টেম বেশীরভাগ সময়ই সেটা ব্যবহার করে। এমনকি আপনি হালকা কোন কাজ করলেও যেখানে স্বাভাবিক গতির তুলনায় বেশী শক্তি ব্যয় করে সে কাজটি করার চেষ্টা করে যদিও সেটার প্রয়োজন নেই। তাতে অতিরিক্ত তাপ ছাড়াও প্রচুর বিদ্যুৎ শক্তির অপচয় হয়। টারবো বুস্টে ভারী কাজে সম্পাদন কারা জন্য যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় (প্রসেসর এর জন্য + প্রসেসর ঠান্ডা রাখার কুলিং সিস্টেমের জন্য) তা দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাক্তিগত পর্যায়ে আর্থিকভাবে শাস্রয়ী নয় তবে বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকলে সেটা ভিন্ন ফলাফল নিয়ে আসতেও পারে।
আমি প্রায় প্রতিদিনই ভিডিও এনকোডিং এর কাজ করি এবং এতে অভিজ্ঞতা হলো যে ভিডিও এনকোডিং এ প্রচুর শক্তির প্রয়োজন পড়ে এবং তা তাপ উৎপন্ন করে। ধরুন টারবো বুস্ট প্রযুক্তি চালু থাকলে ১০ মিনিটের একটি ভিডিও এডিটিং শেষ করে এনকোডিং করতে প্রায় ১৩/১৪ মিনিট লাগছে, সেই একই ভিডিও টারবো বুস্ট বন্ধ করে এনকোডিং করতে হয়তো ১৬/১৭ মিনিট লাগছে কিন্তু তেমন কোন তাপ উৎপন্ন হচ্ছে না পাশাপাশি স্বাভাবিক বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। তাই ব্যক্তিগতভাবে অভিজ্ঞতা হওয়ার পর থেকে আমি আমার প্রসেসরের টারবো বুস্ট প্রযুক্তি মাদারবোর্ডের বায়োস থেকে বন্ধ করে দিয়েছি।
ছবি কপিরাইটঃ এ্যামাজন
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ২:৩১