বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূত্রে অনেকের সাথেই কম বেশী কথা বলতে হয়। অনেকের সাথে কথা বলতে ভালোলাগে, অনেকেই এড়িয়ে চলি আবার অনেকের সাথে কখনোই কথা হয় নি। অফিসের প্রয়োজনে অনেক সময় ইন্টারভিউ নিতে হয় আর তাতেও নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়, অভিজ্ঞতা হয় বা হচ্ছে।
সমমনা বা প্রযুক্তির সাথে সর্ম্পকিত লোকজনের সাথে কথা বলতে আমার বরাবরই বেশ ভালো লাগে। তাদের ধারনা বা কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনতে চেষ্টা করি। অনেক সময়ই তাদের কথায় বেশ কিছু শেখার থাকে আবার অনেক সময় ঠিক বোধগম্য হয় না যে আসলে যার সাথে কথা হচ্ছে তিনি ঠিক কি বলতে চাচ্ছেন। অনেকেই আছেন যারা সুর্নিদিষ্ট কোন বিষয়ে সঠিকভাবে না জেনেও বলার জন্য কথা বলেন, কোন একটা কিছু বোঝানোর তাগিদে।
https://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/prokashoniblog/prokashoniblog-1655335898-bfb0a07_xlarge.jpg
সূত্রঃ ফোর্বস. কপিরাইটঃ গেটি ইমেজ
সম্প্রতি অফিসের প্রয়োজনে একটা জুনিয়র ডেভেলপার পজিশনের জন্য ইন্টারভিউ নেয়ায় দায়িত্ব পড়েছে। বেতন ভালো তাই আবেদন পত্রও জমা পড়েছে প্রচুর। কারো কারো রেজিউমি দেখে বেশ বিরক্ত বোধ করেছি আবার কারো কারো রেজিউমি দেখে মার্ক করে রেখেছি ইন্টারভিউতে ডাকার জন্য। দু'দিন আগে এক ভদ্রলোকের রেজিউমি দেখে রীতিমত মেজাজ খারাপ হবার জোগাড়। তিনি ১৭ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেছেন কিন্তু কোন ব্যক্তিগত সাইট বা ভালো কোন পোর্টফোলিও দেখাতে পারেন নি। যাও দেখলাম তাতেও চুরি করা বা অন্যের কাজকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়ার প্রবণতা দেখা গেলো। এ ধরনের লোকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু চোরেরা বরাবরই তার কাজে চুরির ছাপ রেখে যান, সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখলে অনেকেই তা দেখতে পাবেন। এ্যপলিকেশন ছুঁড়ে ফেলা হলো। আমার বস অবাক হয়ে বললেন, "ইফতি, তুমি ১৭ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজনের এ্যাপলিকেশন ফেলে দিচ্ছো কেন?" বললাম ব্যাটা "চোর"। তবে পরে অবশ্য বুঝিয়ে বলার পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, আমি কি বোঝাতে চেয়েছি।
গতকালই একজনকে সময় দেয়া হলো, তার অভিজ্ঞতাও ১২ বছরের, আজ তার ইন্টারভিউ হবে। যথারীতি ইন্টারভিউ শুরু হলো, ৫-১০ মিনিটের মাথায় আমার প্রথম প্রশ্নের পর অনলাইন থেকে সে উধাও। পরে সে জানালো তার ইন্টারনেট কানেকশানে সমস্যা আছে। ঘন্টা খানেক পর তার ইন্টারভিউ আবার শুরু হলো, টেকনিক্যাল ৫ টা প্রশ্ন করা হলো একটা প্রশ্নেরও উত্তর সঠিক হয় নি। তাকে যা প্রশ্ন করা হয়েছে তার সাথে তার উত্তরের কোন সম্পর্ক খুঁজে পাইনি। কথা বলেছেন অনেক, কিন্তু আসলে সে যে কি বোঝাতে চেয়েছে তাও বুঝতে পারি নি। ইন্টারভিউ তার এতটাই খারাপ হয়েছে যে, আমার বস আমার সাথে আর কোন আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেন নি। শুধু বললেন, কাল অন্য একজনকে ইন্টারভিউ নেবো।
শিক্ষণীয় বিষয় হলো, শুধু বেতন দেখে আবেদন পত্র জমা না দিয়ে নিজের কর্মাভিজ্ঞতা এবং নিজের ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপারে জ্ঞানের পরিধি বড় করা জরুরী। পৃথিবী পরিবর্তিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত আর মানুষকেও কম বেশী তার সাথে খাপ খাইয়ে চলার অভ্যেস করতে হবে। বাক্যে এবং কর্মে সৎ হওয়াটা আরো বেশী জরুরী।
আমেরিকায় অনেক বাঙালী লোকজনকে আমি চিনি যারা ক্যারিয়ার পরিবর্তন করেছেন শুধু ভালো বেতনের আশায়। সমস্যা সেখানে নয়, সমস্যা অভিজ্ঞতায়, অনেক ক্ষেত্রে জ্ঞানে আর অনেক ক্ষেত্রে অসততায়। কোন একটা বিষয়ে আপনার ভালোলাগা কাজ না করলে সেই ইন্ডাস্ট্রিতে না যাওয়াটাই ভালো। যা আপনার ভালো লাগে, যেটাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেই ইন্ডাস্ট্রিতেই ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশী। একজনকে চিনি যিনি তার রেজিউমিতে মিথ্যে তথ্য দিয়ে অভিজ্ঞতা জাহির করেছেন, তিনি লিঙ্কডইনে বেশ কিছুদিন আগে আমাকে রিকোয়েস্টও পাঠিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে তাকে আমি ভালো মানুষ জানলেও তাকে আমার নেটওয়ার্কে যোগ করা হয়নি আজও। সম্ভাবনাও নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৪০