আর্ন্তজালে যারা নিজস্ব ডোমেইন দিয়ে ব্লগ চালু করতে চান কিংবা ক্লাউড স্টোরেজ স্থাপন করে পরিবারের সবার সাথে ফাইল শেয়ার করতে চান অথবা আপনার বাসার পুরোনো রাউটার বদলে শক্তিশালী সার্ভিস রাউটার ও এক্সেস পয়েন্ট তৈরী করতে চান কিংবা কেবল ইন্টারনেটে ব্রাউজিং ও টুকিটাকি অফিসিয়াল ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী তারা এই লিখাটি পড়তে পারেন।
গত লিখায় খুব ছোট আকারে এস.বি.সি নিয়ে লিখার চেষ্টা করছি। বলতে পারেন সেটারই পরবর্তী ধাপের লিখা এটা। এস.বি.সি. এর প্রবল জনপ্রিয়তার কারণে অনেক ইলেকট্রনিক্স পণ্যই নতুন রূপে আর্বিভাব হচ্ছে। বোঝার সুবিধার্থে কথাটা একটু খুলে বলার চেষ্টা করছি। আপনার বাসায় ইন্টারনেট সংযোগের জন্য যে প্রথাগত রাউটারটি চলছে তা মূলত একটি কম্পিউটার কিন্তু এর প্রসেসিং ক্ষমতা খুবই সীমিত। ডিভাইসটি মূলত ইন্টারনেট ট্রাফিক ডিস্ট্রিবিউশন ও একাধিক কম্পিউটারের বা মোবাইল ডিভাইসের মধ্যে নেটওয়ার্কি (তারসহ/তারবিহীন) সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম। এছাড়াও রাউটার আরো বেশ কিছু কাজ করে কিন্তু আলোচনার সুবিধার্থে বেশী গভীরে যাচ্ছি না।
লক্ষ্য করলে দেখবেন, রাউটারটি প্রায় চব্বিশ ঘন্টা কিংবা বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুতায়িত আছে ও আর্ন্তজালে সংযোগ স্থাপন করে নিরবিচ্ছিন্নভাবে আপনাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রায় একইভাবে সার্ভার কম্পিউটারগুলোও কিন্তু বছরের পর বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে।
যদি কিছু স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন করে একই কাজ প্রায় একই বিদ্যুৎ খরচ করে অন্য কোন ডিভাইস দিয়ে (এস.বি.সি.) চালু রাখা সম্ভব হয় যা আপনাকে অরো অনেক বেশী সেবা দিতে পারে তাহলে কেমন হবে? যারা হালের এস.বি.সি নিয়ে কম বেশী ধারনা রাখেন তারা হয়তো জানেন বাজারে প্রচলিত অনেক এস.বি.সি দিয়েই নিজস্ব রাউটার দাঁড় করানো সম্ভব। তবে এ ব্যাপারে আপনাকে অবশ্যই নেটওয়ারর্কিং, রাউটার ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম তথা লিনাক্স সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞাণ থাকা আবশ্যক।
এস.বি.সি. দিয়ে আপনি মোটামুটি ভালো মানের লিনাক্স (এ.আর.এম. প্রসেসর যুক্ত) কিংবা উইন্ডোজ ভিত্তিক (ইন্টেল প্রসেসর যুক্ত) কম্পিউটারও তৈরী করতে পারেন যা দিয়ে অনেকেরই প্রতিদিনের অফিসিয়াল কাজ সম্পাদন করা সম্ভব। এই কম্পিউটারগুলো অত্যন্ত কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে বিধায় দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের পরেও বিদ্যুৎ খরচ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। কম্পিউটারগুলো খুব বেশী তাপ রিলিজ করে না তাই আলাদা কোন অতিরিক্ত কুলিং ফ্যান ছাড়াই শুধুমাত্র এ্যালুমিনিয়াম কেসিং ব্যবহার করেই প্রসেসরটিকে ঠান্ডা রাখা সম্ভব (ব্যতিক্রমও আছে)। এগুলো কোন হাই-এন্ড কম্পিউটার নয় তাই এসব কম্পিউটার দিয়ে কোন ভারী কাজ করার প্রত্যাশা না করাই শ্রেয়।
রাউটারের অল্টারনেটিভ হিসেবেও এস.বি.সি. ব্যবহার করা যায় অনায়াসেই যদিও এস.বি.সি. ক্রয়ের আগেই আপনাকে জানতে হবে আপনি আসলে কি করতে চাচ্ছেন এই কম্পিউটার দিয়ে। একটা উদাহরণ দিচ্ছি বোঝার জন্য।
সম্প্রতি আমি ন্যানোপিসি-টি৬ মডেলের একটি এস.বি.সি. অর্ডার করেছি যার মূল কাজ হবে বাসার বর্তমান রাউটারটিকে রিপ্লেস করা। সেই সাথে এই কম্পিউটারটিতে থাকবে ওয়াই-ফাই ৬ই ওয়ারলেস প্রযুক্তি যা ব্যবহার করে স্বাভাবিক রাউটারের মতোই অন্যান্য ডিভাইস ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারবে।
এতে থাকছে দুটো ২.৫ গিগাবিটের ইথারনেট পোর্ট যার একটি দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হবে ও অন্যটি দিয়ে প্রয়োজনে আরও একটি এ্যাক্সেস পয়েন্ট কিংবা নেটওয়ার্ক সুইচ যুক্ত করা সম্ভব। এইচ.ডি.এম.আর পোর্ট থাকাতে প্রয়োজনে এটিকে সরাসরি মনিটরে সংযুক্ত করা সম্ভব যদিও আমার ক্ষেত্রে সেটার প্রয়োজন নেই। চাইলে ইউ.এস.বি.-সি ডিসপ্লে সুবিধাও রয়েছে বোর্ডটিতে। আছে একাধিক ইউ.এস.বি. পোর্ট যা দিয়ে আপনি খুব সহজেই কী-বোর্ড ও মাউস কিংবা অন্যান্য ডিভাইস যুক্ত করতে পারবেন। আরো বেশ কিছু ফিচার রয়েছে যা উপরের লিঙ্ক থেকে পড়তে পারবেন। বোর্ডটি উপর থেকে দেখতে এমন।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, বোর্ডটিতে ব্যবহার করা হয়েছে রকচিপের শক্তিশালী আর.কে.৩৫৮৮ প্রসেসর যা রাউটিং ছাড়াও আরো অন্যান্য কাজ করতে পারবে অনায়াসে। বোর্ডটির নিচের দিকে স্টোরেজ এর জন্য একটি এম.২ পোর্ট রয়েছে যা দিয়ে এন.ভি.এম.ই. সমৃদ্ধ এস.এস.ডি. মডিউল ব্যবহার করতে পারবেন ফাইল স্টোরেজ এর জন্য। আমি মূলত এই ড্রাইভটি ব্যবহার করবো ক্লাউড স্টোরেজ হিসেবে। এখানে অপারেটিং সিস্টেম ছাড়াও থাকবে সার্ভার এ্যাপলিকেশন ও আমার সাইটের ইমেজ, ফাইল ও স্ক্রিপ্ট। একটি অংশ বরাদ্দ থাকবে বাংলাদেশে আমার বন্ধু ও পরিবারের সাথে শেয়ার করার মতো স্পেস যা দিয়ে ফাইল সহজে আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে। আরো একটি এম.২ পোর্ট রয়েছে মূলত ওয়াই-ফাই মডিউল ব্যবহারের জন্য যা দিয়ে আমি বাসার ওয়াই-ফাই ডিভাইসগুলোকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করতে পারবো।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, স্বাভাবিক হোম রাউটার গুলোতে মডিউল পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না বিধায় নতুন ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাইলে (ওয়াই-ফাই ৪ থেকে ৫ কিংবা ৫ থেকে ৬/৭) নতুন রাউটার কেনার প্রয়োজন পড়ে। এস.বি.সি কম্পিউটারের এ সমস্যা নেই বললেই চলে। যেহেতু ওয়াই-ফাই ৭ ইতোমধ্যে বাজারে চলে এসেছে, তাই এম.২ পোর্টটিতে আমি ভবিষ্যতে ওয়াই-ফাই ৭ প্রযুক্তি সম্পন্ন মডিউল ব্যবহার করে সহজেই আপগ্রেড করতে পারবো, নতুন রাউটার কেনার প্রয়োজন হবে না। নিচের ছবিতে এম.২ পোর্টগুলো দেখা যাচ্ছে।
আমি বোর্ডটি ক্রয়ের সময় এর মেমরি হিসেবে ১৬ গি.বা. মেমরি সমৃদ্ধ বোর্ড বেছে নিয়েছি যাতে রাউটিং ছাড়াও ওয়েব সার্ভার ও প্রয়োজনীয় এ্যাপলিকেশন রান করাতে কোন সমস্যা না হয় এবং চাইলে পোর্টেবেল কম্পিউটার হিসেবেও একটাকে ব্যবহার করতে পারি। তাছাড়া আপনার ব্যক্তিগত সাইটে যদি ভিজিটর ট্রাফিক একটু বেশীও হয় তা-ও যেন এটা সে চাপ নিতে পারে সেদিটাও লক্ষ্য রাখা জরুরী। এ ধরনের সার্ভারে অবশ্য হাই-ট্রাফিক আছে এমন সাইট হোস্ট করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না তাই সবকিছু মোটামুটি আগে থেকেই ভেবে-নেয়া জরুরী। এ ধরনের বোর্ডে মেমরি মূলত ইন-বিল্ট থাকে তাই আগামীতে সেটা আপগ্রেড করা সম্ভব নয়। প্রথমেই প্রয়োজনীয় মেমরি সিলেক্ট করে নিলে ভালো হয়। লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ছাড়াও রাউটার ভিত্তিক ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম যেমন ওপেন ডব্লিই.আর.টি. ব্যবহার করা যেতে পারে। ডকার ব্যবহার করেই প্রয়োজনীয় ওয়েব সাভার সম্পর্কিত প্যাকেজ ডাউনলোড করে রান করানো বেশ সহজ।
একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরী যে, হার্ডওয়্যার (ওয়াই-ফাই মডিউল, এস.এস.ডি ড্রাইভ ইত্যাদি) ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় লিনাক্স কার্নেল সাপোর্ট আছে কি না তা দেখে নেয়া দরকার। যেমন ধরুন বাজারে অনেক ওয়াই-ফাই মডিউল আছে, সব মডিউল অনেক সময় তার সব ফিচার লিনাক্সে সাপোর্ট করে না। অনেক মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার লিনাক্সে তাদের ডিভাইসের সব ফিচার ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ড্রাইভার তৈরীও করে না। আবার অনেক মডিউল ওয়াই-ফাই এ্যাক্সেস পয়েন্ট হিসেবেও লিনাক্সে ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব। সেদিক থেকে ইন্টেলের মডিউল এড়িয়ে চলুন যদি লিনাক্স ও.এস. ব্যবহার করতে চান। সর্বোপরি, ক্রয়ের আগে ভালোভাবে স্টাডি করুন। কি করতে চাচ্ছেন, আর পছন্দের এস.বি.সি দিয়ে কি করা সম্ভব বা সম্ভব নয় তা জানার চেষ্টা করুন।
হ্যাপি কম্পিউটিং।