somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রযুক্তি বাজার হালচাল: গ্রাফিক্স কার্ড

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমেরিকা আর চীনের বাণিজ্যিক রেষারেষিতে বিশ্বব্যাপাী করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগেও গ্রাফিক্স কার্ডের বাজারে বেশ টানপোড়ন চলছিলো। মহামারি এসে পুরো পৃথিবীর উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত করায় পুরো বিষয়টি আলো বেশ ঘোলাটে হয়ে ওঠে। তবে করোনায় বেশীরভাগ মানুষ বাড়িতে অবস্থান করার কারনে, গ্রাফিক্স কার্ডের একরকম চাহিদা বাড়তে থাকে। বাসায় অফিস করা, ভিডিও কিংবা মুভি দেখা অথবা গেমিং এর জন্য গ্রাফিক্স কার্ডের চাহিদা বাড়তে থাকে। সেই কন্টেন্ট নির্মাতাদের একটা বাড়তি চাহিদা আরো আগে থেকেই ছিলো। জোগান ঠিকমতো না থাকায় খুব নিন্মমানের কার্ডও বেশ চড়া দাম পাচ্ছিলো।

করোনা পরবর্তী সময়ে জোগান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেলেও ক্রিপ্টোকারেন্সি ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যাপক প্রসার ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায়, গ্রাফিক্সের চাহিদা কমেতো নি বরং আরো বেড়েছে। আমেরিকার চাপের মুখে পড়ে টি.এস.এম.সি. এর মতো বড় কোম্পানীও আমেরিকায় তাদের চিপ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট খুলতে বাধ্য হয়েছে। তবুও সমস্যা সহসাই কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনেকেই শুনলে অবাক হতে পারেন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বেইজড সার্ভিসসমূহের (যেমন চ্যাট জিপিটি) পেছনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে হার্ডওয়্যার সেটিও এই গ্রাফিক্স কার্ড। তবে সেসব গ্রাফিক্স কার্ড সাধারন কম্পিউটারে ব্যবহৃত গ্রাফিক্স কার্ডের মতো নয়। মূলত গাণিতিক হিসেব-নিকেশ এসব কার্ড বাজারে প্রচলিত সি.পি.ইউ. এর তুলনায় অনেক দ্রুত সম্পাদন করতে পারে বিধায় এর ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে।

ম্যাক, ইউন্ডোজ কম্পিউটার ছাড়াও অনেক মোবাইল ডিভাইসেও আধুনিক এই এ.আই. ফিচার যুক্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে। ঠিক যে গতিতে পুরো প্রযুক্তি বিশ্ব এই.আই.কে গ্রহণ করছে তাতে সামনের দিনগুলোতেও গ্রাফিক্স কার্ডের চাহিদা কমার সম্ভবনা নেই। বছর দশক আগেও গ্রাফিক্স কার্ড মূলত গেমিং এর জন্য জনপ্রিয় হতে থাকলেও এর বহুবিধ ব্যবহার ধীরে ধীরে কেবলই বাড়ছে। এ্যাপল কোম্পানীকে টপকে এখন যখন দেখা যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামী কোম্পানী "এনভিদিয়া" তখন অনেকেই অবাক হলেও তা আমার জন্য বিস্ময়কর কোন বিষয় ছিলো না।

এক দশক আগেও ইন্টেল গ্রাফিক্স নিয়ে তেমন কোন মাতামাতি করেনি। তাদের ব্যবসা ছিলো মূলত প্রসেসর ভিত্তিক। কিন্তু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তারাও গ্রাফিক্স কার্ডের বাজারে প্রবেশ করেছে। প্রাথমিকভাবে এ নিয়ে অনেকেরই বেশ উত্তেজনা কাজ করলেও তা সবার মন জয় করতে পারে নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তিনবার ইন্টেলের গ্রাফিক্স কার্ড কিনে একরকম প্রতারিত হয়েছি। তাদের কার্ডের দাম বেশ ভালো হলেও প্রযুক্তিগত বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। কোনটার কুলিং ফ্যান ক্রমাগত গতি বাড়াচ্ছে আর কমাচ্ছে। কোন কার্ডে সঠিক তাপ পরিবাহী থার্মাল ব্যবহার করা হয় নি, কোথাও সফটওয়্যার ঠিকমতো কাজ করছে না। তবে সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে ইন্টেল আগামীতে এনভিদিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ করে দাম ও বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক দিক থেকে ইন্টেল এখনো বেশ ভালো অবস্থানে আছে। সে বিবেচনায় এ.এম.ডি. অনেকটাই পিছিয়ে আছে।

এনভিদিয়া এ বাজারে বেশ শক্ত অবস্থানে থাকার কারনে তারা ইন্টেল নিয়ে আপাতত ততটা শঙ্কিত না হলেও পরিবর্তনগুলো তারা নোট করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এনভিদিয়ার বেশীরভাগ পণ্যই গুণেমানে ও সাপোর্টের দিক দিয়ে সেরা। একটা উদাহরণ দিচ্ছি।

বছর চারেকেরও আগে গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে একটি লিখা পোস্ট করেছিলাম। লিখাটিতে একটি স্ক্রীণশট শেয়ার করেছিলাম আমার বর্তমান গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করে। চার বছর পরেও আমি সেই এনভিদিয়ার কোয়াড্রো পি৬২০ কার্ডটি-ই ব্যবহার করছি কোন সমস্যা ছাঁড়াই। এসব বিষয়ে কিছুটা ধারনা থাকলে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন যে আমি এনভিদিয়ার একজন একনিষ্ঠ ক্রেতা। এখনো প্রায় সফটওয়্যার আপডেট আসছে এবং নতুন অপারেটিং সিস্টেমেওে তাদের কার্ড বেশ ভালো কাজ করে।

গ্রাফিক্স কার্ড বাজারে মূলত তিনধরনের ক্রেতা রয়েছে। প্রথম দলে রয়েছে মূলত গেমিং ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। দ্বিতীয় দলে রয়েছে প্রফেশনাল ব্যবহারকারী যারা মূলত কিছু সুর্নিদিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি যেমন এ্যাপলিকেশন ডেভেলপমেন্ট, থ্রিডি ও এ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কাজ করেন। এদের অনেকেই আবার বিভিন্ন কোম্পানীর তত্তাবধানেও কাজ করে। তৃতীয় দলে রয়েছে মূলত এন্টারপ্রাইজ কাস্টমার যারা মূলত ডাটা সেন্টার নিয়ে কাজ করেন। এনভিদিয়া এই তিনটি সেক্টরেই তাদের আধিপত্য ধরে রেখেছে। কতদিন ধরে রাখতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়।

ছবি কপিরাইট: এনভিদিয়া, এইচ.জি.এক্স এ১০০।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ২:২১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্ধ ভিখারি এবং রাজার গল্প....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:২৬

অন্ধ ভিখারি এবং রাজার গল্প....

এক অন্ধ ভিখারি ভিক্ষা করতে করতে একদিন রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়লো। অন্ধ ভিখারিকে দেখে রাজার মনে দয়া হলো। রাজা মন্ত্রী-কে ডেকে বললেন-
"'এই ভিক্ষুক জন্মান্ধ নন, একে চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রক্তজবা ও গোলাপ

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৩৭

ভালোবাসার রূপান্তর

তোমার শহরে তুমি বসে আছো,
রক্তজবা হাতে…
আমার শহরে আমি,
একটি গোলাপের বাগান গড়ি—
লাল রঙে রাঙা, নিঃশব্দে ফুলে ভরে।

তুমি একদিন বলেছিলে,
রক্তজবা মানেই চিরন্তন ভালোবাসা,
তোমার অভিমানে লুকোনো ছিল রাগের আগুন,
তবু তার গভীরে ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আ.লীগের মত বিএনপি কেউ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে

লিখেছেন অপলক , ১৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫

ক্ষমতায় না বসতেই যা শুরু করেছে বিএনপি, মনে হয় না তারা তাদের যোগ্যতা বা উপযোগিতা ধরে রাখতে পারছে। এত এত করাপশন গত আগস্ট থেকে যে, এমন কোন সেক্টর নাই যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইহাকেই বলে আগবাড়িয়ে মাড়া খাওয়া

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৯


শিক্ষিত জঙ্গি মোদী ভোটের মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই হাসিনার মতো জঙ্গি নাটক সাজায়; দুজনের পার্থক্য হলো হাসিনা নিজদেশের জনগন হত্যা করে নিজদেশের জনগনকেই দোষ দেয় অপর দিকে মোদী নিজদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাসুদ(শাহবাজ ) তোমরা কি আর ভালো হবা না ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯


বাংলাদেশপন্থীরা ভারত ও পাকিস্তানপন্থীদের হাউকাউতে অতিষ্ঠ। ভারত ও ভাদা রা মনে করে ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছিলো। ভারত বাংলাদেশ কে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। গুগলে সার্চ করলেও এমন কিছুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×