
আমেরিকা আর চীনের বাণিজ্যিক রেষারেষিতে বিশ্বব্যাপাী করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগেও গ্রাফিক্স কার্ডের বাজারে বেশ টানপোড়ন চলছিলো। মহামারি এসে পুরো পৃথিবীর উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত করায় পুরো বিষয়টি আলো বেশ ঘোলাটে হয়ে ওঠে। তবে করোনায় বেশীরভাগ মানুষ বাড়িতে অবস্থান করার কারনে, গ্রাফিক্স কার্ডের একরকম চাহিদা বাড়তে থাকে। বাসায় অফিস করা, ভিডিও কিংবা মুভি দেখা অথবা গেমিং এর জন্য গ্রাফিক্স কার্ডের চাহিদা বাড়তে থাকে। সেই কন্টেন্ট নির্মাতাদের একটা বাড়তি চাহিদা আরো আগে থেকেই ছিলো। জোগান ঠিকমতো না থাকায় খুব নিন্মমানের কার্ডও বেশ চড়া দাম পাচ্ছিলো।
করোনা পরবর্তী সময়ে জোগান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেলেও ক্রিপ্টোকারেন্সি ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যাপক প্রসার ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায়, গ্রাফিক্সের চাহিদা কমেতো নি বরং আরো বেড়েছে। আমেরিকার চাপের মুখে পড়ে টি.এস.এম.সি. এর মতো বড় কোম্পানীও আমেরিকায় তাদের চিপ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট খুলতে বাধ্য হয়েছে। তবুও সমস্যা সহসাই কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনেকেই শুনলে অবাক হতে পারেন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বেইজড সার্ভিসসমূহের (যেমন চ্যাট জিপিটি) পেছনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে হার্ডওয়্যার সেটিও এই গ্রাফিক্স কার্ড। তবে সেসব গ্রাফিক্স কার্ড সাধারন কম্পিউটারে ব্যবহৃত গ্রাফিক্স কার্ডের মতো নয়। মূলত গাণিতিক হিসেব-নিকেশ এসব কার্ড বাজারে প্রচলিত সি.পি.ইউ. এর তুলনায় অনেক দ্রুত সম্পাদন করতে পারে বিধায় এর ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে।
ম্যাক, ইউন্ডোজ কম্পিউটার ছাড়াও অনেক মোবাইল ডিভাইসেও আধুনিক এই এ.আই. ফিচার যুক্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে। ঠিক যে গতিতে পুরো প্রযুক্তি বিশ্ব এই.আই.কে গ্রহণ করছে তাতে সামনের দিনগুলোতেও গ্রাফিক্স কার্ডের চাহিদা কমার সম্ভবনা নেই। বছর দশক আগেও গ্রাফিক্স কার্ড মূলত গেমিং এর জন্য জনপ্রিয় হতে থাকলেও এর বহুবিধ ব্যবহার ধীরে ধীরে কেবলই বাড়ছে। এ্যাপল কোম্পানীকে টপকে এখন যখন দেখা যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামী কোম্পানী "এনভিদিয়া" তখন অনেকেই অবাক হলেও তা আমার জন্য বিস্ময়কর কোন বিষয় ছিলো না।
এক দশক আগেও ইন্টেল গ্রাফিক্স নিয়ে তেমন কোন মাতামাতি করেনি। তাদের ব্যবসা ছিলো মূলত প্রসেসর ভিত্তিক। কিন্তু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তারাও গ্রাফিক্স কার্ডের বাজারে প্রবেশ করেছে। প্রাথমিকভাবে এ নিয়ে অনেকেরই বেশ উত্তেজনা কাজ করলেও তা সবার মন জয় করতে পারে নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তিনবার ইন্টেলের গ্রাফিক্স কার্ড কিনে একরকম প্রতারিত হয়েছি। তাদের কার্ডের দাম বেশ ভালো হলেও প্রযুক্তিগত বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। কোনটার কুলিং ফ্যান ক্রমাগত গতি বাড়াচ্ছে আর কমাচ্ছে। কোন কার্ডে সঠিক তাপ পরিবাহী থার্মাল ব্যবহার করা হয় নি, কোথাও সফটওয়্যার ঠিকমতো কাজ করছে না। তবে সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে ইন্টেল আগামীতে এনভিদিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ করে দাম ও বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক দিক থেকে ইন্টেল এখনো বেশ ভালো অবস্থানে আছে। সে বিবেচনায় এ.এম.ডি. অনেকটাই পিছিয়ে আছে।
এনভিদিয়া এ বাজারে বেশ শক্ত অবস্থানে থাকার কারনে তারা ইন্টেল নিয়ে আপাতত ততটা শঙ্কিত না হলেও পরিবর্তনগুলো তারা নোট করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এনভিদিয়ার বেশীরভাগ পণ্যই গুণেমানে ও সাপোর্টের দিক দিয়ে সেরা। একটা উদাহরণ দিচ্ছি।
বছর চারেকেরও আগে গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে একটি লিখা পোস্ট করেছিলাম। লিখাটিতে একটি স্ক্রীণশট শেয়ার করেছিলাম আমার বর্তমান গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করে। চার বছর পরেও আমি সেই এনভিদিয়ার কোয়াড্রো পি৬২০ কার্ডটি-ই ব্যবহার করছি কোন সমস্যা ছাঁড়াই। এসব বিষয়ে কিছুটা ধারনা থাকলে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন যে আমি এনভিদিয়ার একজন একনিষ্ঠ ক্রেতা। এখনো প্রায় সফটওয়্যার আপডেট আসছে এবং নতুন অপারেটিং সিস্টেমেওে তাদের কার্ড বেশ ভালো কাজ করে।
গ্রাফিক্স কার্ড বাজারে মূলত তিনধরনের ক্রেতা রয়েছে। প্রথম দলে রয়েছে মূলত গেমিং ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। দ্বিতীয় দলে রয়েছে প্রফেশনাল ব্যবহারকারী যারা মূলত কিছু সুর্নিদিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি যেমন এ্যাপলিকেশন ডেভেলপমেন্ট, থ্রিডি ও এ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কাজ করেন। এদের অনেকেই আবার বিভিন্ন কোম্পানীর তত্তাবধানেও কাজ করে। তৃতীয় দলে রয়েছে মূলত এন্টারপ্রাইজ কাস্টমার যারা মূলত ডাটা সেন্টার নিয়ে কাজ করেন। এনভিদিয়া এই তিনটি সেক্টরেই তাদের আধিপত্য ধরে রেখেছে। কতদিন ধরে রাখতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়।
ছবি কপিরাইট: এনভিদিয়া, এইচ.জি.এক্স এ১০০।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


