somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের জাতিগত দীনতা - ১

১১ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আর্ন্তজাতিক মানদণ্ডের বিচারে আমরা আধুনিক, শিক্ষিত ও রুচিবান পর্যায়ের কোন জাতি বলে আমার মনে হয় না। অন্তত আমার অতি ক্ষুদ্র জ্ঞান সেটাই বলে তবে আমার ধারনাই যে সম্পূর্ণ সঠিক সেটাও আমি দাবি করি না। আমাদের ভাষাগত ব্যবহার, ব্যক্তিগত আচরণ, সামাজিক মূল্যবোধ, রীতি-নীতি, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বলতে পারেন মোটা দাগে সবকিছুতেই আমাদের এক ধরনের দীনতার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্যণীয়। একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখলে এমন অনেক কিছুই আমাদের অনেকের কাছে বেশ পরিষ্কার হয়ে ধরা দেবে।

এ জাতিতেও হাতে গোণা কিছু মানুষ থাকতে পারেন যারা হয়তো স্বাভাবিকভাবেই আমাদের চেয়েও অনেক বেশী আধুনিক ও রুচিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আমাদের জাতি সম্পর্কে আমার এ উপলব্ধি অবশ্য এক দিনে গড়ে ওঠে নি। এটা বোঝার জন্য জীবনের অভিজ্ঞতা ও সময়ের প্রয়োজন অনেক। তবে খুব অল্প বয়স থেকেই বিভিন্ন দেশের ও আর্থ-সামাজিক অবস্থানের মানুষদের সাথে মেলা-মেশা করার সুযোগ হয়েছে বলেই হয়তো বিষয়গুলো খুব তাড়াতাড়ি আমার চোখে পড়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন বসবাস করলে এমন অনেক সামাজিক রীতি-নীতি আপনার আমার চোখে পড়বে যা হয়তো উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে অস্বাভাবিক বা অসুন্দর বলে ধরা হয়। এমন কি স্বাভাবিকভাবে দেখলেও তাতে কটুতা দৃষ্টিগোচর হয়, তদুপরি ওটা নিয়ে আমরা খুব একটা মাথা ঘামাই না।

ধরুন, আপনি ঢাকার কোন রাস্তা দিয়ে আপন মনে হেঁটে যাচ্ছে না। কথা নেই বার্তা নেই কোথা থেকে কেউ একজন "ওয়াক-থু" বলে এক গাদা কফ কিংবা থুথু রাস্তা ফেলে দিয়েই আরেকজনের সাথে আলোচনা জুড়ে দিচ্ছে। পুরো বিষয়টি চিরচেনা এই শহরের খুব স্বাভাববিক দৃশ্য বলে মনে হলেও আদতে এটা মোটেও স্বাভাবিক বিষয় নয়। বিগত প্রায় দু'দশকের প্রবাস জীবনে আমি এ ধরনের দৃশ্য খুব বেশী দেখিনি। আর দেখলেও, যখন থুতু ফেলা মানুষটির মুখের দিকে তাকাই, তখন খুব একটা অবাক হই না। কারণ এদের চেনা সহজ।

আবার ধরুন, আপনি ঢাকার রাস্তায় কোন কর্নারে দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তা পার হওয়ার জন্য। একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন অনেকেই আপনার আগেই রাস্তার মাঝ দিয়ে অবলীলায় হেঁটে যাচ্ছে আর হাত দিয়ে দূর থেকে গতি নিয়ে আসা গাড়িকেও থামতে বলছে। বিষয়টা এমন রাস্তা পার হওয়া তার জন্য সবচেয়ে জরুরী কাজ তাতে গাড়ি আসুক কিংবা ট্রেন। এ ধরনের ঘটনায় প্রাণও যাচ্ছে অনেক। তবে এদের মৃত্যু আমাকে খুব একটা হতাশ করে না। ইংরেজীতে আমার একটা বেশ পছন্দের প্রবাদ আছে, "এফ. এরাউন্ড এন্ড ফাইন্ড আউট"। আমার কাছে বিষয়গুলো অনেকটা তেমনই মনে হয়। হাত দিয়ে ইশারা করলেই রাস্তার মাঝে গতি নিয়ে আসা একটা গাড়ি থেমে যাওয়ার কোন কারন দেখি না। গাড়ির পেছনেও গাড়ি থাকে তাই হঠাৎ করেই ব্রেক কষলে পেছনের গাড়ি এসে যে সজোরে ধাক্কা দেবে না সে গ্যারান্টিও নেই। বিপদ দু'দিকেই। তাই পথচারি হিসেবে খুব সাবধানে রাস্তা পারাপার হওয়া জরুরী। অবশ্য এ দেশের ট্রাফিক সিগন্যালও তেমন কেউ মানে না। আধুনিক সভ্য পৃথিবীতে এই দেশের অনেক ব্যবস্থাই আমার কাছে বেশ অকল্পনীয় মনে হয়।

আজীবন দেশে থাকলে হয়তো এগুলোও আমার কাছে স্বাভাবিকই মনে হতো। তবুও একজন বোধ-সম্পন্ন মানুষ কি করে কোন সিগন্যাল না মেনেই অবলীলায় রাস্তা পার হচ্ছে তা ভাবতেও অবাক লাগে। ওভার ব্রিজ আছে তবে খুব বেশী মানুষ তা ব্যবহার করছে না। উল্টো ওভার ব্রীজেও ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসেছে মানুষজন। ভিখারীরা শুয়ে-বসে ভিক্ষা চাইছে। অথচ মানুষ যে ঠিকমতো হাটতেই পারছে না এসব ভাসমান দোকান আর ভিক্ষুকের কারনে, সে দিকে কেউ নজর দিচ্ছেন না। তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ওভার-ব্রীজ দেয়ারই বা কি মানে?

পশ্চিমের দেশে ওভার-ব্রীজ আমি খুব একটা দেখিনি। ওখানে বেশীরভাগ মানুষই ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলে। নির্দিষ্ট সময় মেনে গাড়ির ট্রাফিক থামছে আর মানুষজন পার হচ্ছেন। এখানেও যে ব্যতিক্রম নেই, তা-ও নয়। অনেক সময়ই দেখবেন কিছু লোকজন থাকে যারা ওয়াকিং সিগন্যাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও রাস্তা পার হন। ওদের দিকে ভালো করে তাকালেই দেখতে পাবেন, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ওগুলো ভিনদেশী লোকজন। এরা মূলত পশ্চিমে গিয়ে নিজেদের প্রথামতই চলতে চায় বা চলে। এর মূল্যও অনেককেই চুকাতে হয়েছে অতীতে। আজও হচ্ছে আর আগামীতেও হবে।

আমার চেনা-পরিচিত এক বাঙালীও আমেরিকায় গিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে তার পা ভেঙ্গেছে। ছ'মাস বিছানায় শুয়ে কাটিয়েছে। যোগাযোগ না থাকার কারণে তার ঘটনাটা আমি তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারিনি। জেনেছি অনেক পরে, যদিও সে জন্য বিন্দু মাত্রও আফসোস হয় নি। কিছু টাকা-পয়সার লোভে ঐ লোক নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে মামলা-মোকদ্দমা করেছিলো। লাভ হয়নি, সেখানেও আদালতে হেরেছে আর টাকাও খুইয়েছে অনেক। পুরো বিষয়টিই দুঃখজনক হলেও আসলে দুঃখ করার কিছু নেই। মানুষ ভুল করবে, মাশুল দেবে, শিখবে আর নিজেকে সংশোধন করবে এটাই জীবনের দেয়া অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা। অবশ্য আমরা বাংলাদেশীরা অতীত থেকেও শিক্ষা নেই না কারন শিক্ষাকে বড় ভয় আমাদের।

নোটঃ উপরের বক্তব্যগুলো নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত জীবন ও অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দেয়া আমার লিখার মূল উদ্দেশ্য নয় বরং আত্নসমালোচনার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক রীতি-নীতির দিকে কিছুটা দৃষ্টি দিয়ে নিজেদের সংশোধন করাই মূল উদ্দেশ্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×