ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
পূর্ণ নাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব
ডাকনাম দ্য রেড ডেভিলস
প্রতিষ্ঠা ১৮৭৮ সালে,
নিউটন হিথ এল.ওয়াই.আর. এফ.সি. নামে
মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ড
গ্রেটার ম্যানচেস্টার
ধারনক্ষমতা
৭৬,৩১২
চেয়ারম্যান জোয়েল ও অ্যাভ্রাম গ্লেজার
ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন
লীগ প্রিমিয়ার লীগ
২০০৬-০৭ প্রিমিয়ার লীগ, ১ম
---ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ ফুটবল ক্লাব। এদের নিজস্ব মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ড ফুটবল গ্রাউন্ড, ট্রাফোর্ড, গ্রেটার ম্যানচেস্টারে অবস্থিত। সারা বিশ্বের জনপ্রিয়তম দলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এদের সমর্থকের সংখ্যা সারা বিশ্বে প্রায় ৫০ মিলিয়নেরও অধিক। বিগত ৩৪ বছরে ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলোর মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গড় দর্শকসংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ (১৯৮৭ – ১৯৮৯ সাল বাদে কারন তখন ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামের সংস্কার চলছিল)। ইংরেজ ফুটবলের ইতিহাসে সফলতম দলগুলোর মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড অন্যতম। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুম থেকে বিশ বছরের অধিক সময়ে তারা ১৮টি প্রধান শিরোপা জিতেছে যা প্রিমিয়ার লীগের অন্য যেকোন দলের থেকে বেশি। তারা বর্তমান প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়ন। তারা প্রিমিয়ার লীগ/ফুটবল লীগ জিতেছে ১৬ বার।, এফ.এ. কাপ ১১ বার, লীগ কাপ ২ বার, ইউরোপীয়ান কাপ/উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ ২ বার, উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ ১ বার, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ১ বার এবং ইউরোপীয়ান সুপার কাপ ১ বার। ১৯৬৮ সালে তারা প্রথম ইংরেজ দল হিসেবে ইউরোপীয়ান কাপ জেতে। এছাড়া তারা রেকর্ড ১১ বার এফএ কাপ জিতেছে।
১৯৯০ দশক থেকে ক্লাবটি বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং কিছুকাল আগ পর্যন্ত এটি ফুটবল ক্লাব হিসেবে সর্বোচ্চ আয়ের মালিকও ছিল। ২০০৭ পর্যন্ত ক্লাবটি ক্লাব ফুটবলের আয়ের দিক দিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে, তবে নেট আয়ের দিক দিয়ে এটি এখনও শীর্ষ লাভজনক ক্লাব। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখনো বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্লাব। ক্লাবটি ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে জি-১৪ জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
শুরুতে ক্লাবটি ১৮৭৮ সালে নিউটন হিথ এলওয়াইআর এফ.সি. নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০২ সালে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পথে ক্লাবটি কিনে নেন জন হেনরি ডেভিস যিনি এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামে বোমা আঘাত হানে। প্রতিবেশী ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাব ইউনাইটেডকে সাহায্য করে তাদের স্টেডিয়ামে খেলার অনুমতি দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউনাইটেড স্যার ম্যাট বাজ্বিকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি তরুন ফুটবলারদের মূল দলে খেলার অগ্রাধিকার দেয়ার নীতি গ্রহন করেন, যার সফলতা তিনি পরে পেয়েছিলেন। ১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালে দলটি লীগ জিতে। ১৯৫৮ সালের মিউনিখ বিমান দুর্ঘটনায় তার সাফল্যের চাকা থেমে যায় যেখানে মূল দলের ৮ জন খেলোয়াড় মারা যান। মনে করা হচ্ছিল তখন ক্লাবটি বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু দলটি ঠিকমতই চলতে থাকে এবং ১৯৬৫ ও ১৯৬৭ সালে ফুটবল লীগ এবং ১৯৬৮ সালে ইউরোপীয়ান কাপ জিতে নেয়।
১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত দলটি আর সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি। ১৯৮৬ সালের ৬ নভেম্বর তারিখে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেয়ার পরে দলটি ১১ মৌসুমে ৯ টিতেই লীগ জিতে নেয়, সর্বশেষটি ২০০৬-০৭ মৌসুমে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড একমাত্র দল যারা ১৯৯৯ সালে একই মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ, এফ.এ. প্রিমিয়ার লীগ এবং এফ.এ. কাপ ত্রয়ী জিতেছে।
১৯৯১ সালের পর থেকে দলটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে পরিচালিত হয়। রুপার্ট মুরডক ১৯৯৮ সালে দলটি কিনে নিতে চেয়েছিলেন যা ব্রিটিশ সরকার থেকে বাধা দেয়া হয়। কিন্তু ২০০৫ সালে ম্যালকম গ্লেজার বিতর্কিতভাবে দলটি কিনে নেন যার ফলে ক্লাবটি আকন্ঠ দেনায় ডুবে যায়।
বর্তমানে দলের অধিনায়ক গ্যারি নেভিল, যিনি রয় কিনের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে।
•
[ ইতিহাস
[শুরুর বছরগুলো (১৮৭৮-১৯৪৫)
১৯০৫/০৬ মৌসুমের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড দল। সে মৌসুমে তারা ২য় বিভাগে রানার্স-আপ হয় এবং ১ম বিভাগে উন্নীত হয়
১৮৭৮ সালে নিউটন হিথ এল এন্ড ওয়াই আর এফ.সি. (Newton Heath L&YR F.C.) নামে ল্যাঙ্কাশায়ার ও ইয়র্কশায়ার রেলওয়ের কর্মচারীর দল হিসেবে নিউটন হিথ ডিপোয় ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন দলের পোশাক ছিল সবুজ ও সোনালী রঙের। বর্তমান ম্যানচেস্টার পিকাডলি স্টেশনের কাছে নর্থ রোড নামের একটি ছোট স্টেডিয়ামে তারা পনের বছর খেলেছে। এরপর ১৮৯৩ সালে তারা মাঠ পরিবর্তন করে ক্লেটন শহরের কাছের ব্যাংক স্ট্রিট স্টেডিয়ামে খেলতে শুরু করে। এর আগের বছর ক্লাবটি ফুটবল লীগে প্রবেশ করে এবং রেল ডিপোর সাথে সম্পর্ক ছেদের মাধ্যমে মুক্ত প্রতিষ্ঠানে পরিনত হওয়ার উদ্যোগ নেয়। ক্লাবে একজন সচিব নিয়োগ দেয়া হয় এবং এর নামের শেষের এল এন্ড ওয়াই আর বাদ দিয়ে নামকরন করা হয় নিউটন হিথ এফ.সি.। তার কিছুকাল পরেই ১৯০২ সালে ক্লাবটি ২৫০০ পাউন্ডের ঋণে জর্জরিত হয়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যায়। এক সময় ভূসম্পত্তির তত্ত্বাবধায়কেরা তাদের ব্যাংক স্ট্রিট ফুটবল মাঠ বন্ধ করে দেয়।
চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্বে ক্লাবে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেন ম্যানচেস্টার ব্রিউয়ারিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে. এইচ. ডেভিস। কথিত আছে তৎকালীন ক্লাব অধিনায়ক হ্যারি স্ট্যাফোর্ড ক্লাবের তহবিল সংগ্রহের সময় যখন তার ব্যক্তিগত সেইন্ট বার্নার্ড কুকুরটিকে পুরষ্কার হিসেবে ঘোষনা করেছিলেন, তখন ডেভিস তার কাছে কুকুরটি কিনতে চান। স্ট্যাফোর্ড কুকুরটি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানান, তবে তিনি ডেভিসকে ক্লাবে বিনিয়োগ করাতে ও ক্লাবের চেয়ারম্যান হতে রাজী করাতে সক্ষম হন। শুরুর দিকে বোর্ড মিটিংএ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় দলটির নাম পরিবর্তন করা হবে যাতে দলটির নতুন অগ্রযাত্রা প্রতিফলিত হয়। এজন্য ম্যানচেস্টার সেন্ট্রাল এবং ম্যানচেস্টার সেল্টিক এই দুটি নাম প্রস্তাব করা হয়। তবে লুইস রকা নামের একজন ইতালীয় অভিবাসী বলেন, "ভদ্রমহোদয়গণ, আমরা আমাদের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নামে কেন ডাকি না?" শেষ পর্যন্ত এই নামটিই টিকে যায় এবং ১৯০২ সালের ২৬শে এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির নাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড রাখা হয়। ডেভিস দলের রঙ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন এবং নিউটন হিথের সবুজ ও সোনালী রঙ ছেড়ে লাল ও সাদাকে ম্যানচেস্টারের রঙ হিসেবে নির্বাচিত করেন।
১৯০২ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বরে জেমস ওয়েস্ট ক্লাবের ম্যানেজারের পদ থেকে ইস্তফা দিলে আর্নেস্ট ম্যাংনালকে ক্লাবের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ম্যাংনাল দলটিকে প্রথম বিভাগে উন্নীত করতে অনেক চেষ্টা করেন, তবে প্রথম চেষ্টায় তিনি দলকে একটুর জন্য প্রথম বিভাগে উন্নীত করতে ব্যর্থ হন। সে মৌসুমে ম্যানচেস্টার দ্বিতীয় বিভাগে পঞ্চম অবস্থান দখল করে। ম্যাংনাল সিদ্ধান্ত নেন যে এখন দলে কিছু নতুন মুখের দরকার। তিনি গোলরক্ষক হিসেবে হ্যারি মগার, হাফ-ব্যাক হিসেবে ডিক ডাকওয়ার্থ এবং স্ট্রাইকার হিসেবে জন পিকেন প্রমুখকে দলভুক্ত করেন। তবে মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হন চার্লি রবার্টস নামের একজন নতুন হাফ-ব্যাক। ১৯০৪ সালের এপ্রিলে তাকে গ্রিমসবি টাউন থেকে আনতে দলের তৎকালীন সময়ে রেকর্ড ৭৫০ পাউন্ড খরচ করতে হয়। তিনি ১৯০৩-০৪ মৌসুমে দলকে দ্বিতীয় বিভাগে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত করতে সাহায্য করেন। এসময় প্রথম বিভাগে যেতে তাদের আর মাত্র একটি পয়েন্ট লাগত।
নতুন নামে প্রথম বিভাগে উন্নীত হতে অবশ্য দলটিকে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ১৯০৫-০৬ মৌসুমে দলটি দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান দখল করে। পরবর্তীতে প্রথম বিভাগে নতুন নামে তাদের প্রথম মৌসুমে তারা অষ্টম স্থান দখল করে। তাদের প্রথম লীগ শিরোপা আসে ১৯০৮ সালে। সেসময় ম্যানচেস্টার সিটিকে তাদের খেলোয়াড়দের এফএ কর্তৃক নির্ধারিত বেতনের বেশি বেতন দেয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদেরকে ২৫০ পাউন্ড জরিমানা এবং আঠারজন খেলোয়াড়কে সে দলে খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ইউনাইটেড দ্রুত এ সুযোগ গ্রহণ করে এবং বিলি মেরেডিথ (ওয়েলশ জাদুকর নামে পরিচিত) এবং স্যান্ডি টার্নবুল সহ কয়েকজনকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়। নতুন এই খেলোয়াড়েরা ১৯০৭ সালের নববর্ষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার কারনে খেলার অযোগ্য বিবেচিত হয়েছিলেন। তাই ইউনাইটেডকে ১৯০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত শিরোপা লড়াইয়ে তাদের দক্ষতা দেখানোর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা শেফিল্ড ইউনাইটেডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ঝড়ের বেগে মৌসুম শুরু করে এবং টানা দশটি খেলায় জয়লাভ করে। মৌসুমের শেষটা তত ভাল না হলেও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাস্টন ভিলা থেকে ৯ পয়েন্ট ব্যবধান রেখে তারা লীগ শিরোপা জিতে নেয়।
পরবর্তী মৌসুমেই ম্যানচেস্টার আরেকটি ট্রফি ঘরে তুলে নেয়, তাদের প্রথম চ্যারিটি শিল্ড এবং এফ.এ. কাপ শিরোপা। এর মাধ্যমেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রেকর্ড সংখ্যক এফএ কাপ জেতার বীজ রোপিত হয়েছিল। ক্লাবের প্রথম লীগজয়ী মৌসুমের মত এ মৌসুমেও টার্নবুল ও মেরেডিথ প্রধান ভূমিকা পালন করেন। টার্নবুল এফএ কাপ ফাইনাকে জয়সূচক গোলটি করেন। এরপরে আরেকটি ট্রফি পেতে ক্লাবটিকে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়। ১৯১০-১১ মৌসুমে দলটি দ্বিতীয়বারের মত প্রথম বিভাগ লীগ জিতে নেয়। এসময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের নতুন মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে স্থানান্তরিত হয়। এ মাঠে তারা উদ্বোধনী ম্যাচ খেলে ১৯১০ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি লিভারপুলের বিরুদ্ধে, যে খেলায় ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরও ইউনাইটেড ৪-৩ গোলে পরাস্ত হয়। ১৯১১-১২ মৌসুমটি তারা ট্রফিশূণ্য থেকে পার করে। এর ফলে ম্যাংনালকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয় (দশ বছর ইউনাইটেডের সাথে থাকার পর তিনি ম্যানচেস্টার সিটি দলে যোগ দেন)। ১৯১০-১১ মৌসুমের পর আরেকটি লীগ শিরোপা জিততে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে দীর্ঘ ৪১ বছর অপেক্ষা করতে হয়, যা দলটির ইতিহাসে লীগ শিরোপা না পাওয়ার জন্য দীর্ঘতম সময়।
পরবর্তী দশ বছরে ক্লাবটির ক্রমাবনতি লক্ষ করা যায়, এবং ফলশ্রুতিতে ১৯২২ সালে দলটি দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যায়। ১৯২৫ সালে তারা আবার প্রথম বিভাগে উন্নীত হয়, কিন্তু লীগ তালিকায় অর্ধেক দলের পেছনে থাকত। ১৯৩১ সালে ইউনাইটেড আবার দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যায়। ১৯৩৪ সালে দলটি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করে। এসময় দলটি দ্বিতীয় বিভাগে ২০তম হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর আগের মৌসুমগুলোতে তারা আরো একবার প্রথম বিভাগে উন্নীত হয় এবং দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যায়। ১৯৩৮-৩৮ মৌসুমে ১৪তম হওয়ার পর থেকে তারা শীর্ষদলগুলোর কাতারে চলে আসে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালের ১১ মার্চ ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামে বোমা ফেলা হয়। এতে স্টেডিমের অধিকাংশ অংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কেবল একটি টানেল সুরক্ষিত ছিল। মাঠের অবস্থা ছিল অবর্ণনীয়। ফলে দলটিকে তৎকালীন সময়ের বড় দল ও বেশি পরিচিত ম্যানচেস্টার সিটি ক্লাবের স্মরণাপন্ন হতে হয়। ম্যানচেস্টার সিটি ইউনাইটেডকে ৫০০০ পাউন্ডের নামমাত্র মূল্যের বিনিময়ে তাদেরকে মেইন রোড স্টেডিয়ামে খেলার অনুমতি দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আদতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য বর নিয়ে আসে। কারন এসময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গঠনের পরিপূর্ণ সংস্কার সাধিত হয়, এবং কয়েকজন স্কটিশ ব্যক্তিকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
] বাজ্বির বছরগুলি (১৯৪৫-১৯৬৯)
ম্যাট বাজ্বি ১৯৪২ সালে নতুন ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি তখন তার পদে থেকে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যাবলি একই সাথে পালন করার উপর জোর দেন যা পূর্বে ঐ পদের জন্য প্রচলিত ছিল না। এই মনোভাবে জন্য তিনি তার পূর্ববর্তী দল লিভারপুলের ম্যানেজার হতে পারেননি, কারন লিভারপুল এসব কাজ পরিচালকদের দায়িত্ব হিসেবে মনে করত। তবে ইউনাইটেড বাজবির নতুন ধারনা গ্রহণ করে এবং তাকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয়। বাজবি প্রথম যার সাথে চুক্তি করেন তিনি কোন খেলোয়াড় ছিলেননা, ছিলেন একজন সহকারী ম্যানেজার, যার নাম জিমি মারফি। বাজবিকে নিয়োগ করে দল যে ঝুকি নিয়েছিল তিনি তার প্রতিদান দেন ১৯৪৭, ১৯৪৮ ও ১৯৪৯ সালে লীগ রানার্স আপ হয়ে এবং ১৯৪৮ সালে এফএ কাপ শিরোপা জিতে। এই সাফল্যের পিছনে স্ট্যান পিয়ারসন, জ্যাক রাউলি ও চার্লি মিটেন প্রমুখের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।
উন্নত বেতনের আশায় চার্লি মিটেন কলম্বিয়ায় চলে যান, তবে ইউনাইটেডের বাকি খেলোয়াড়েরা থেকে যান এবং ১৯৫২ সালে প্রথম বিভাগ শিরোপা পুনরুদ্ধার করেন। বাজবি জানতেন দলে অভিজ্ঞতার চেয়েও দক্ষতা বেশি জরুরী, তাই তিনি যখনই সম্ভব যুব দল থেকে তরুন খেলোয়াড়দের মূল একাদশে খেলানোর নীতি গ্রহণ করেন। তার প্রথমদিকের তরুন খেলোয়াড়েরা, যেমন রজার বার্ন, বিল ফোকেস, মার্ক জোনস এবং ডেনিস ভায়োলেট, মূল দলে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় নেন, ফলে ১৯৫৩ সালে ইউনাইটেড লীগ তালিকায় অষ্টম স্থান দখল করে। কিন্তু ১৯৫৬ সালে তারা আবার লীগ জিতে নেয়। এই দলের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল মাত্র ২২ এবং লীগে তারা ১০৩টি গোল করে। বাজবির দেয়া তরুন খেলোয়াড় নীতি বর্তমান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে পরিগণিত। এ সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তরুন খেলোয়াড়দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হচ্ছেন ডানকান এডওয়ার্ডস, যিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৫৩ সালে মূল দলে খেলার সুযোগ পান। জনশ্রুতি ছিল এডওয়ার্ডস যেকোন অবস্থানে খেলতে সক্ষম এবং যারা তাকে খেলতে দেখেছেন তারা একবাক্যে তাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় আখ্যা দিয়েছেন। পরের ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আবার লীগ জিতে নেয় এবং এফএ কাপ ফাইনালে এস্টন ভিলার কাছে পরাজিত হয়। তারা প্রথম ইংরেজ দল হিসেবে ইউরোপীয়ান কাপ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এবং সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত উন্নীত হয়, যাতে তারা রিয়াল মাদ্রিদের কাছে পরাস্ত হয়। এসময় বেলজিয়ামের দল এন্ডারলেচকে তারা ১০-০ গোলে মেইন রোড স্টেডিয়ামে পরাস্ত করে যা আজও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।
মিউনিখ বিমান দুর্ঘটনার স্মরনে ওল্ড ট্রাফোর্ডে রাখা সম্মাননা
পরবর্তী মৌসুম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য ছিল বিভীষিকাময় ট্রাজেডী। ইউরোপীয়ান কাপে খেলার পর খেলোয়াড়দের ফিরতি বিমানটি জ্বালানী তেল সংগ্রহের জন্য মিউনিখে নামার পর উড্ডয়নের সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ১৯৫৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত এই মিউনিখ বিমান দুর্ঘটনায় অকালে মৃত্যুবরন করেন ৮ জন খেলোয়াড় - জিওফ বেন্ট, রজার বার্ন, এডি কোলম্যান, ডানকান এডওয়ার্ডস, মার্ক জোনস, ডেভিড পেগ, টমি টেইলর ও লিয়াম হোয়েলান এবং ১৫ জন অন্যান্য যাত্রী যার মধ্যে ছিলেন ইউনাইটেড কর্মী - ওয়াল্টার ক্রিকমার, বার্ট হোয়ালি ও টম কারি। বিমানটি প্রথম দুইবার ঊড্ডয়নের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর তৃতীয়বার চেষ্টার সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। রানওয়ের শেষপ্রান্তে বিমানটি পিছলে যায় এবং একটি খালি বাড়ীর সাথে ধাক্কা লাগে। ইউনাইটেড গোলরক্ষক হ্যারি গ্রেগ দুর্ঘটনার পরও চেতনা হারাননি এবং ভয়ভীতি সামলে নিয়ে তিনি ববি চার্লটন - যিনি মাত্র ১৮
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




