এক যে ছিল খরগোশ।
দেখতে ফরসা, ধবধবে, নাদুসনুদুস। মনের সুখে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে একদিন সে সবুজ ক্ষেত দিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিল। গান গাইছিল মনের আনন্দে-
"তাক ধিনা ধিন তানা
আমার মনে ভীষন জোশ
আমি হেলেদুলে ঘুরে বেড়াই
সুখী এক খরগোশ।
আমার মনে অনেক সুখ
আমার নেইকো কোনো দুখ।
আমার চোখে মুখে হাসি
আমি ক্ষেতের মধ্যে লম্ফ দিয়ে
ঘুরতে ভালোবাসি।"
খরগোশ গান গাইছে। আর আপন মনেই খিকখিক করে হাসছে।
সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল এক শেয়াল।
খরগোশের খুশি দেখে তার ইচ্ছে করল কারণটা কী!
'কিহে খরগোশ ভায়া, এত খুশি খুশি দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?'
খরগোশ তিড়িং বিড়িং একপাক নেচে বলল, 'খুশি খুশি লাগার কারন আছে ভাই, আমি বিয়ে করেছি।'
'বাহ বাহ! খুব ভালো কথা। কী সৌভাগ্য তোমার। বিয়ে করেছ। এখন তোমার সুখের জীবন। শুনে খুব খুশি হলাম ভাই।'
'না ভাই, খুশির হওয়ার মতো কিছু নেই।' খরগোশ উদাস সুরে বলল, 'কী আর বলব ভাই- যাকে বিয়ে করেছি তার অনেক বয়স। দেখতে শুনতেও ভালো নয়। একেবারে একটা বুড়ি বউ আমার।'
শেয়াল তখন করুন হয়ে উঠল।
'আহা, তাহলে তো খুবই দুর্ভাগ্য তোমার। তা এ-রকম একটা হতচ্ছাড়ীকে কেন বিয়ে করলে?'
'ঠিক দুর্ভাগ্য নয়। একে বিয়ে করেছি বলেই তো সুন্দর ছিমছাম একটা বাড়ি উপহার পেয়েছি আমি।'
'বাহ্! তাহলে তো সৌভাগ্যবান বলতেই হয় তোমাকে। খুব ভালো কথা। সুন্দর একটা বাড়ির মালিক তুমি।'
খরগোশ ঘাসের ডগা চিবুতে চিবুতে বলল, 'এখন কিন্তু আমাকে ঠিক বাড়ির মালিক বলা যায় না।'
'কেন? কেন?' আকুল হয়ে জানতে চাইল শেয়াল।
'কারন কিছুদিন আগে সেই সুন্দর বাড়িটা আমার পুড়ে গেছে।'
'আহা, কী কষ্ট তোমার। সত্যি তোমার দুর্ভাগ্য!'
খরগোশ এবার হাসতে হাসতে বলল, 'ঠিক দুর্ভাগ্য বলা যাবে না। ঘর পুড়েছে তো কী হয়েছে? সেই ঘরের মধ্যেই ছিল আমার বুড়ি বউটা। বুড়িটা মরেছে, আমাকেও বাঁচিয়েছে। তাই আমি এখন মনের সুখে গান গাইতে গাইতে ঘুরে বেড়াচ্ছি।'
-নরওয়ের রুপকথা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০০