অন্য পর্বগুলি :
পর্ব - ১ , পর্ব - ৩
দাদাজানের পান খাবার অভ্যাস আছে তা আগেই বলেছি । যে কথাটি বলা হয়নি তা হচ্ছে তাঁর পান খাবার অভ্যাস দীর্ঘদিনের এবং পরিমাণে মাত্রাতিরিক্ত । অভ্যাস না বলে বরং এটিকে বদ-অভ্যাস বলাই ভাল ।
সম্প্রতি অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে , কোনো বেলায় ভাত না খেলে ও পান তার মিস্ হয় না । প্রত্যহ তিন বেলা ভাত খেলে ও পান খান ঘন্টায় তিনবার ! যক্ষের ধনের ন্যায় তিনি আগলে রাখেন পানের পোটলা । পোটলার ভেতর থাকে বিভিন্ন শেপ এন্ড সাইজের কতকগুলি কৌটা – এদের কোনোটাতে সুপারি , কোনোটাতে জর্দা , কোনোটায় তামাক কিংবা খয়ের আবার কোনোটাতে থাকে চুন । দাদাজানের অন্যতম কু-অভ্যাস হল – তিনি পান খাওয়ার পর পানের পিক যেখানে সেখানে ফেলেন । যখন তিনি বেডরুমে থাকেন তখন ফেলেন বিছনায় , ডাইনিং রুমে থাকলে ফেলেন ডাইরেক্ট ডাইনিং টেবিলে । ক্রমাগত এ ব্যাপারটায় বাসার সবাই বিরক্ত হতে থাকে । আর সব থেকে বেশি বিরক্ত হতাম আমি কারণ , যখন তখন আমার পড়ার টেবিলে আবিষ্কার করতাম দাদাজানের মুখনিঃসৃত পানের পিক ।
আমি ‘পিক’ এর একটা নাম দিলাম ‘ছিবি’ । পান বেশ কিছুক্ষণ চিবানোর পর গাল থেকে দাদাজান যে ছ্যাবলা ফেলেন সেই ‘ছ্যাবলা’ সংক্ষিপ্ত হয়ে দাড়ালো ‘ছ্যাবা’ তে । আর ‘ছ্যাবা’ থেকেই ‘ছিবি’ । আর্কিটেক্ট নেম আর কি ! দাদাজানের নামের আগে উপাধি হিসেবে যুক্ত হল ‘ছিবি’ । তিনি এখন আর শুধুই দাদাজান না , ছিবি-দাদাজান । আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে – দু’দিন যেতে না যেতে আমার সাড়ে চার বছর বয়সী ছোট বোনটি দাদাজানকে ছিবিদাদা বলে ডাকতে শুরু করল ।
সপ্তাহখানেক পরের ঘটনা ।
ছোফায় বসে পেপারের হেডলাইন দেখছি । দাদাজান বসে আছেন বিছানায় । চিরাচরিত নিয়মেই তিনি পোটলা থেকে পান বের করে খাচ্ছেন এবং নিয়মিত বিরতিতে ছিবি ফেলছেন । আমি আড়চোখে দেখছি । হঠাৎ , ছিবির কিছুটা অংশ দাদাজানের জামার হাতায় গিয়ে পড়লো । তৎক্ষণাৎ আমার ছোট বোনটি আমায় হাতের ইশারায় কাছে ডেকে হাসতে হাসতে বলল –
‘ ভাইয়া , দাদার হাতে ছিবি পোকা !’
হাসি আর চাপিয়ে রাখতে পারলাম না । মুখ চেপে ধরে পাশের রুমে গিয়ে প্রাণ খুলে কিছুক্ষণ হাসলাম ।
এরপর থেকে পুনঃ পুনঃ এই একই ঘটনা ঘটতে থাকল । যখন ই দাদাজানকে পান খেতে দেখি বেদম বেগে হাসি পায় ।
একদিন তাকে পান খাওয়ারত অবস্থায় দেখতে পেয়ে কাছে গিয়ে বললাম –
‘দা দা জা ন …’
দাদাজান পান চিবুতে চিবুতে বললেন –
‘কি ?’
‘আপনার হাতে কি ?’
‘পান্ ।’
‘না । অন্য কিছু আছে ।’
‘কি আছে ?’
‘ছিবিপোকা …’ – বলেই হাসতে হাসতে ছুট !
দাদাজান বুঝতে পারছেন যে – তার নাতি নাত্নীরা তার সাথে ই-য়ার-কি ফাঁজলামো করছে কিন্তু তিনি ক্ষেপতে পারছেন না কারণ , ছিবির অর্থ তখন পর্যন্ত তার জানা নেই ।
একদিন হঠাৎ কোয়ানটিটি অব ই-য়ার-কি অত্যাধিক হয়ে গেল । ভীষণ রেগে মেগে শেষমেষ দাদাজান তার বজ্রকন্ঠে আমার মা কে ডাকতে লাগলেন । মা আসতেই তিনি বললেন –
‘ বৌমা , তোমার ছেলেমেয়েরা এসব কি বলে ?’
মা বললেন –
‘ কি বলে , আব্বা ?’
‘ কি কি সব হাবি-জুবি কথা’
‘ কি হাবি-জুবি কথা , আব্বা ?’
‘ ওরা বলে – আমার হাতে নাকি ছিবি পোক্ । এই ছিবি পোক্ টা কি জিনিস্ ? তুমি কিছু জানো ?’
মা পড়েছেন বিপদে । শ্বশুরের সামনে না পারছেন হাসতে আর না পারছেন হাসি চাপিয়ে রাখতে । দাদাজান ঐ একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছেন আর মা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নীরবে হেসে চলেছেন । সে এক কঠিন অবস্থা । আমরা ও হাসছি ; তবে নিরবে না সরবে । এতে দাদাজানের রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে । রাগের চোটে তিনি শুধু ঘৎ ঘৎ করছেন ।
অবশেষে ঘটনার জট খুলল । আমি কিংবা মা মুখ না খুললে ও দাদাভক্ত আমার ছোটভাইয়া টি মুখ খুলল এবং সে মুহূর্তেই ফাঁস হয়ে গেল ছিবির গোপন তত্ত্ব !
দাদাজানের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু N-type ই-য়ার-কি চলত সেগুলি তার ১৮+ নাতি নাতনীরাই পড়তে পারবে আমার দাদাজান (পর্ব -৩) থেকে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৪