আগের পর্বগুলি - পর্ব - ১ , পর্ব - ২
দাদাজানের সঙ্গে এ জীবনে ফাঁজলামি কম করিনি । দাদাজান ড্রইং রুমে ছোফায় বসে পান চিবোচ্ছেন মিষ্টি জর্দা দিয়ে । আমি ও ঘরে ঢুকেছি ।
‘দাদাজান’
‘হু’
‘কি খাচ্ছেন ?’
‘দেখছিস না কি খাচ্ছি ?’
‘নাহ্ , দেখতে পাচ্ছি না । শুধু দেখছি আপনি সেই তখন থেকে গরুর মতো জাবর কাটতেছেন ।’
‘পান খাচ্ছি, গাঁধা’
‘শুধুই পান ?’
‘না , সাথে মশলা আছে’
‘কি মশলা ?’
‘কেন ? তোর কি দর্কার ?’
‘না এমনিই’
‘এই মিষ্টিজর্দা, তামুক, খয়ের, চুন – এইগুলো’
‘দাদাজান , আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি ?’
‘কর্’
‘আপনি কী নেশা করেন ?’
‘মানে ?’
‘মানে আপনি কী নেশাখোর ?’
‘চুপ কর্ আহাম্মক’
‘আমি নিশ্চিত আপনি নেশা করেন প্রতিদিন’
‘কিভাবে ?’
‘পানের সঙ্গে আপনি তো তামাক খান, তাই না ?’
‘খাই , তাতে কি ?’
‘বিড়ি-সিগারেটের মূল উপাদান তামাক । আপনি তামাক খান । মানে আপনি বিড়ির মূল উপাদান গ্রহণ করেন । অর্থাৎ আপনি বিড়ি খান ।’
‘আবার বেয়াদপি কথা ?’
‘দাদাজান , আপনি নে শা খো র ... নে শা খো র ... নে শা খো র …’
‘যাবি ? নাকি তোর বাপরে ডাকপো ?’
…… …… …… …… …… ……
ব্যাস্ , এরকম চলতো প্রায়শই । একদিন বরাবরের মতোই গোসল সেরে বাথরুম থেকে বের হচ্ছি তোয়ালে পরিহিত অবস্থায় । দেখি দাদাজান আমার দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছেন
অনেকটা – পড়েনা চোখের পলক , কী তোমার রুপের ঝলক টাইপ অবস্থা ।
আমি ইতিমধ্যে জামা-কাপড় পরে নিলাম । দেখি দাদাজান এখনো আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন ।
সমস্যা কি এই বুড়োর ? – মনে মনে ভাবলাম আমি ।
দাদাজান আমাকে ডেকে যা বললেন তা শুনে লজ্জায় আমার দু’কান লাল হয়ে গেল (যদি ও পুরুষ মানুষের লজ্জা বেমানান)
তিনি বললেন : তোর বগলে এত্তোগাছুন দাড়ি ? কেচি নিয়ে আয় , আমি কাইটে দিচ্ছি ।
আমি বললাম : দাদাজান, সবসময় ই-য়ার-কি করবেন না তো !
তিনি আবারো বললেন : তোর বগলেই এত্তোগাছুন দাড়ি ? না জানি কোমরের নিচে কত্তোগাছুন আছে ?
আমি ও ছেড়ে দেবার পাত্র নই । ইতিমধ্যে মেজাজ বিলা করে দিয়েছে এই বুড়ো
তৎক্ষনাৎ প্রতিউত্তরে বললাম : আপনার মুখেই এতো বিশাল দাড়ি ! নিচের দিকের দাড়িগুলো নিশ্চয়ই আরো মস্ত বিশাল হবে ? হয়তো ইয়া মোটা বাবরি আকারের ! দাদাজান , টারজান ঝুলতে পারবে তো ?
দাদাজান চুপ মেরে গেলেন । আর একটা টু শব্দ ও করলেন না । এরপর থেকে বেশ কিছুদিন তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেন নি । এ সময়টাতে মনে মনে আমি খুব অনুতাপ করেছি , কষ্ট পেয়েছি । সমস্ত কষ্টের অবসান ঘটিয়ে একদিন তিনি আমাদের চার ভাইবোন কে কাছে ডাকলেন । আমরা তার কাছে গেলাম ।
তিনি বললেন : আমি মনে মনে ঠিক করেছি তোমাদের সঙ্গে আর কখনো ই-য়ার-কি, ঠাট্টা, মশকরা করবো না । তবে আজ করবো এবং আজ ই হবে তোমাদের সঙ্গে আমার শেষ ই-য়ার-কি । যেহেতু তোমরা চার ভাইবোন সেহেতু আজ আমি তোমাদের চারটি গল্প শোনাবো । কিসের গল্প জানো ?
আমরা সমস্বরে বললাম : না তো, জানি না । কিসের গল্প, দাদাজান ?
দাদাজান বললেন : আহাম্মকের গল্প ।
দাদাজান আজ আমাদেরকে গল্প শোনাবেন । আহাম্মকের গল্প , যা কিনা আমাদের সঙ্গে তার জীবনের শেষ ঠাট্টা ! চার ভাইবোন উদগ্রীব হয়ে বসে আছি । দাদাজানের জীবনের শেষ ঠাট্টার গল্প মনোযোগ দিয়ে শুনবো না তা কী হয় !!!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩৯