somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনে পড়ে তোমায় হে মহানায়ক উত্তম কুমার। (৩২তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ)

২৪ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীড় ছোট ক্ষতি নেয় ,আকাশ তো বড় ~ এই মন বলাকা মোর, অজানার আহ্বানে.....

কিংবা...

এই পথ যদি না শেষ হয়
.... তবে কেমন হতো তুমি বলতো,
.... যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
.... তবে কেমন হতো তুমি বলতো..

বাংলা চলচিত্রের এরকম বহু গানের কালজয়ী অভিনীত শিল্পীটিই হলেন আমাদের মহানায়ক উত্তম কুমার। মায়াবি হাসির নায়ক, সদা রোমান্টিক আর কিংবদন্তী অভিনয় জাদুকর এই উত্তম কুমার কে বাংলা চলচ্চিত্রে জগতে 'মহানায়ক' আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তিনি একাধারে ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা , চিত্রপ্রযোজক ও পরিচালক। চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও তিনি সফল ভাবে মঞ্চেও অভিনয় করেছিলেন ।




উত্তম কুমার ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার আহিরীটোলায় জন্মগ্রহণ করেন।আসল নাম ছিল অরুন কুমার চট্টোপাধ্যায়।তিনি ১৯৩৫ সালে নাটকের দল 'লুনার ক্লাব' গঠন করেন এবং ১৯৩৬ সালে চক্রবেড়িয়া স্কুলে পড়ার সময় 'গয়াসুর' নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা ও পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৪২ সালে কলকাতার সাউথ সাবারবান স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং পরে গোয়েন্কা কলেজে ভর্তি হন। কলকাতার পোর্টে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি।সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে এসে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে।

উত্তম কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল দৃষ্টিদান। ১৯৪৮ সালে 'দৃষ্টিদান' ছবিতে নায়কের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ঐ বছরেই তিনি গৌরী দেবীকে বিয়ে করেন।
প্রথম নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন ১৯৪৯ এ 'কামনা' ছবিতে উত্তম চট্টোপাধ্যায় নামে।আর উত্তম কুমার নামে অভিনয় শুরু করেন ১৯৫১ তে 'সহযাত্রী' তে। ঠিক ঐ বছরই ছেলে গৌতমের জন্ম হয়।
তার প্রথম হিট ছবি মুক্তি পায় ১৯৫২ সালে "বসু পরিবার" নামে। চাকরি ছেড়ে তখন পুরোপুরি অভিনয়ে নেমে পরেন।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সফল উত্তম-সুচিত্রা জুটির সূত্রপাত হয় ১৯৫৩ সালে 'সাড়ে-চুয়াত্তর' মুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে।





১৯৫৪ এ জনপ্রিয়তার সব রেকর্ড ভেঙে দিল উত্তম-সুচিত্রার 'অগ্নিপরীক্ষা'।



১৯৫৬ সালে 'নবজন্ম' ছবিতে নিজের কন্ঠে প্রথম গান গাইলেন। ১৯৫৭ সালে অজয় কর পরিচালিত 'হারানো সুর' ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন সমগ্র ভারতজুড়ে। সেই বছর 'হারানো সুর' পেয়েছিল রাষ্ট্রপতির সার্টিফিকেট অফ মেরিট।



তার পর ১৯৫৭ তে বাংলা ভাষার প্রথম সম্পূর্ণ রঙিন ছবি 'পথে হলো দেরী'তে অভিনয় করে করেন আরেক রেকর্ড।



উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অনেকগুলি ব্যবসাসফল এবং প্রশংসিত চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় একসাথে অভিনয় করেছিলেন। এগুলির মধ্যে প্রধান হল - হারানো সুর, পথে হল দেরী, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, বিপাশা, জীবন তৃষ্ণা এবং সাগরিকা।












উত্তম কুমার বহু সফল বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তাঁর অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ছোটিসি মুলাকাত, অমানুষ এবং আনন্দ আশ্রম অন্যতম।




রোমান্টিক নায়ক ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রেও তিনি ছিলেন অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় দু’টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রথমটি নায়ক এবং দ্বিতীয়টি চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানা চলচ্চিত্রে তিনি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।







১৯৬৭ সালে 'এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ও 'চিড়িয়াখানা' ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন (তখন এই পুরস্কারের নাম ছিল 'ভরত')।




এছাড়া তিনি নিউইয়র্ক, বার্লিন চলচ্চিত্র প্রভৃতি সম্মানজনক চলচ্চিত্র উৎসবের অতিথির সম্মানও অর্জন করেছিলেন।

উত্তম কুমার পরিচালক হিসেবেও সফল। কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (১৯৮১), বনপলাশীর পদাবলী (১৯৭৩) ও শুধু একটি বছর (১৯৬৬) ছবির সাফল্য তাই প্রমাণ করে।

আমার ব্যাক্তি গত একটি পছন্দের ছবি হলো " ইন্দ্রানী" (১৯৫৮)।
এর এই গানটি আমার খুব প্রিয় :





ভুবনভোলানো হাসির এই মহা মানবটি আমাদের ছেড়ে ২৪ জুলাই ১৯৮০, রাত ৯টা ৩০ মিনিটে, বেলভিউ ক্লিনিক, কলকাতা থেকে চির বিদায় নেন। তার অনবদ্য অভিনয় দেখলে কখনো মনে হয়না যে তিনি আর আমাদের মাঝে নেয়।মনে হয় এইতো তিনি তার স্বভাব সুলভ হাঁটছেন, গাইছেন আমাদের সামনে। মাত্র ৫৪ বছরের ক্ষণজন্মা কিংবদন্তী এই মহানায়ক মাত্র ৩২ বছরে আমাদের যা দিয়ে গেছেন তা থাকবে যুগ থেকে যুগান্তর ।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯
২৩টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×