somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জটিলতা ও একটি ভালবাসা...........

১০ ই মে, ২০১১ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"তোমার চোখ বন্ধ কর "!
ধীরে ধীরে বন্ধ হল হাফসার চোখ, তার হাতে স্পর্শ করল দিপ। আঙ্গুলের টানে হাফসার হাত চলছে আজানা কোন স্থানের খোঁজে।উত্তেজনা আর রহস্যে ঘিরে আছে সে।অজানা এক আনন্দ তার চারপাশে।হাফসা অনুভব করল তার হাত দিপের চিবুক স্পর্শ করছে ,খোচা খোচা দাড়ি পার হয়ে ঠোট উষ্ণতার ঝিলিক সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ছে।ভালবাসা নামক কোন আজানা অধ্যায় বুঝি রচিত হচ্ছে আজ তাদের জীবনে।হাফসা চোখ খুলল। কি অদ্ভূদ সৌন্দর্য দিপের মুখ জুড়ে ,এই মূহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ দিপ।তার মুখ জুড়ে শুধুই প্রেম কিংবা আবেগ ছড়ানো।
এ ভাবেই তাদের প্রথম ভালবাসার প্রকাশ।দিপের ভালবাসা প্রকাশের এই পদ্ধতিতে হাফসা পাগল প্রায় , হারিয়ে যাবার ব্যাকুলতা তার মন জুড়ে ।

একি থিয়েটারে কাজ করে ওরা এবং একজন আরেকজনের বিপরীতে। প্রথম যখন তাকে দেখেছিল আড় চোখে,ভিষন সুন্দর একটা ছেলে মুখে কি অদ্ভূদ মায়া। কিন্তু সুন্দর ছেলেদের চরিত্র ভাল থাকেনা।তবু ধীরে ধীরে তার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হল হাফসা।

দিপ আবেগিগ একজন মানুষ। সম্পর্কে জড়ায়নি কখন। তবে ভালবাসা ঘিরে তার অনেক আকর্ষন অভিজ্ঞতা।তার ভাল লাগল হাফসা মেয়েটির গুণ।মেয়েটি একি সাথে ভাল নাচতে জানে,অভিনয় চমৎকার,ভাল রবীন্দ্র গায়।নিজের জন্য এমনি কাউকে হয়তো খুজছিল সে !তবে তার কাছে নিজের কোন দুর্বলতা প্রকাশ করা যাবেনা ,এতে ব্যক্তিত্ব খাটো হতে পারে।
তবুও একদিন তাদের কথা হয়,নিজেদের বিষয়ে আলাপ হয়।অভিনয়ের মতো বাস্তবেও তারা সম্পর্কের স্বপ্ন দেখে।



প্রথম দেখা করতে যাওয়া দিপের,অজানা এক ভয় শিহরণ তার মনে।কি পরবে,কি নিয়ে যাবে। বুকে ধুক ধুক ..।
পুরো ৬০ মিনিট পর আসল হাফসা, এটা নাকি মেয়েদের নিয়ম।কষ্ট হলনা দিপের ।এই প্রথম কারো জন্য তার অপেক্ষা।অপেক্ষা বিরক্তির কারণ, তবে এই প্রথম মিষ্টি একটা অনুভূতি তার। অনেক কথা হল তাদের তবে এক পর্যায়ে কথাতে সীমাবদ্ধ থাকল না। কথার সুর ছড়িয়ে পড়ল দেহে উত্তাপ ছড়ানো স্পর্শে ।

রাতে ফোনে কথা হলে দিপ পরিস্কার জানাল তার সম্পর্কে জড়ানোর আপাততঃ কোন ইচ্ছা নেই।চটে গিয়ে হাফসা বলল সুন্দর ছেলেরা এমন ই হয়, চরিত্রহীন। দিপ চাইছিল আরো কিছু সময় নিয়ে ,বুঝে শুনে সম্পর্ক শুরু করতে। কিন্তু হাফসা নাছোড়বান্দা।অতঃপর আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হল একটি সম্পর্কের।ভালবাসার গভীরতায় একাকার দুটি মন,প্রাণ। আবেগ আপ্লুত চোখে অজানা হাজারো স্বপ্নের হাতছানি শুধুই তাদের ঘিরে।

ব্রোকেন ফেম্ লি ভিষণ যন্ত্রণা দিয়েছে হাফসাকে । মধ্যবিত্ত হলেও বাবা-মা আলাদা থাকেন । তারা নতূন করে বিবাহ করেছেন। তবে সুখি আছেন কিনা সন্দেহ অবারিত! শিশুকাল থেকেই একাকিত্বতা আর ভালবাসার অপূর্ণতা অনুভূত হয়েছে তার মনে।একটু একটু করে বড় হওয়া ,বুক ভরা কান্না, ব্যাথা,বেদনায় আজ সে দিশেহারা।বাল্যকাল থেকেই বন্ধুত্ব আর বন্ধুদের নিয়েই একাকিত্ব ঘুচানোর প্রচেষ্ঠা।তাই বন্ধুরা তার অতি প্রিয় আপনজন।বাবা প্রথাগত ধার্মিক ,মা অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এক সাথে থাকা হয়নি তাই।
অন্য দিকে দিপ মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান। পড়াশুনা শেষ করে সরকারের একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা।সংসারে কোন ঝামেলা নেই ,বাবা বেসরকারী চাকুরীতে ভাল বেতনেই আছেন।সমস্যা খুব একটা নেই তাদের সংসারে।সহজ ,সরল আর ঝামেলা মুক্ত থাকাতেই তাদের আনন্দ!

সম্পর্কে তাদের গাঢ়তা বেড়েই চলছে । প্রায়ই তারা দেখা করে ,জড়িয়ে ধরে মিশে যেতে চায় একে অন্যের ভিতরে। ঠোটের মাঝে ঠোট খুজে পায় অমৃত আস্বাদ।চুমুতে চুমুতে চাপিয়ে যায় সারা দেহ ,মন।বেয়াড়া হাতের অবাধ বিচরনে উম্মত্ত হয়ে যায় প্রেমিক যূগল। দেহের সাথে দেহের মিশে যাবার আদিমতা ঘিরে ধরে তাদের। কোন একদিন আসে সেই শুভক্ষণ,একি বিছানায় দুটি বিপরীত লিঙ্গের দেহ,সাথে ভরা যৌবন,আবাধ সুখ আর অনুভূতির মহাসাগর।পুরো ১ ঘন্টার পরস্পরের সংগাত, দমণ,পীড়ন,পিষে হারিয়ে ফেলার চেষ্টা,বন্যতা পর সময় এর ভিতরে প্রবেশের। দিপ বিস্ময় ভরা চোখে দেখল অক্ষত একটি যৌন পথের চারপাশ ঘেরা ছোট ছোট কেশ। পুরুষ স্পর্শ ছাড়া এমন অঙ্গ দেখা হয়নি তার। কি অসাধারণ সৌন্দর্য! হঠাত্ অজানা ভয় পেয়ে বসল তাকে । মিলনে রক্তপাত আর ধর্মের নিষেধাক্ষা।সর্ব্বোচ্চ সুযোগ হতে পিছু হটল সে তার অঙ্গের ক্ষুধাকে উপেক্ষা করেই।মুদিত চক্ষুর হাফসা আশ্চর্য ,দুখিঃত : এমন পুরুষ ও কি হয় পৃথিবীতে ?



প্রথম বাধা আসল হাফসা মায়ের কাছ থেকেই ! আর বড় চাকুরী বা ব্যবসায়ী চাই তার মেয়ের জন্য। হাফসার ও মন খারাপ হল। এরপর কেটে গেল কিছু দিন ,গভীর ভালবাসার মাঝে ঝড় উঠল নতুন অধ্যায় হাফসার বন্ধুত্ব। গভীর রাত পর্যন্ত ছেলে বন্ধুদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলা, কাধে হাত রেখে বা গায়ের সাথে গা ঠেসে বসে ছবি তোলা ,যখন তখন রাত ১১ টা পর্যন্ত ছেলে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোকে দিপ ভাল ভাবে নিতেই পারলনা। দিপের অভিযোগ শুনে ক্ষেপে গেল মেয়েটি। কড়া গলায় কথা শুনিয়ে দিল সে! রাগের মাথায় ভিষণ অপমাণ করল দিপকে এই বলে যে ভাল লাগলে থাক নয়তো ভাগ।আমি আমার বন্ধুত্ব ছাড়তে পারবনা। দিপের প্রবল ভালবাসার আহবান একঘুয়ে, বিরক্তিকর,মূল্যহীন মনে হল হাফসার।

ভালবাসার মানুষ পছন্দে হয়ত ভুল হয়েছে তার । অত গুণের ভিতরে অত জটিলতা , তার মন বেদনায় ভরে গেল। প্রিয় মানুষের আঘাত সইতে পারলনা সে । দু চোখ ভরে বেদনার অশ্রুর সাগর প্রবাহিত হল । অভিমান হল দিপের। কিন্তু আবেগ আর ভালবাসার প্রচন্ড টান তাকে কাবু করে ফেলল তাকে। আত্মসম্মানে আঘাত লাগল তার্ এমনিতেই সে খুব অভিমানি।মনে মনে ভাবল সরে পরতে হবে আমাকে; তবে একটু একটু করে ।
সে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকল নিজেকে বদলানোর ! ভালবাসার ক্ষত শুকানোর চেষ্টা করল একটু একটু করে। তবে তা জানতে দিলনা হাফসাকে।
এরপর ফোনে হাফসার কন্ঠ নরম ছিল বেশ। হাফসা ভাবত সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে । সে মনে মনে অনুতপ্ত হয়ে বন্ধুত্ব কমিয়ে এবং দিপ কে কাছে আনার কথা কথা ভাবছে সে । ওদিকে দিপ ধীরে ধীরে সরে পরার চেষ্টায়! এভাবে কাটল কিছু দিন,মাস।
দিপ এখন বেশ সংযত বটে ! যেই দিপ হাফসা কে প্রতিদিন না দেখে থাকতে পারত না , এখন হাফসা কে আর সে দেখাও করতে বলেনা। রাত্রি বেলা ফোন ওয়েটিং এ পেলে প্রতিবাদ করেনা , জবাবদিহি করতে বলেনা।
দিপের এই পরিবর্তন হাফসা কে খুব চিন্তিত করে তুলল। অতীতের ভুল এবং ব্যবহার তাকে নাড়া দিল। দিপের পরিবর্তন ,দূরত্ব সৃষ্টি তার একাকিত্ব বোধ জাগিয়ে তুলল। দিপ কে তার আগের মত কাছে পেতে চাইল। তার ভিতর প্রবল ভালবাসার বোধ কাজ করল। সে অনুভব করল দিপ আগের মত ঘন ঘন ফোন করছেনা,তার খোজ নিচ্ছেনা,খবরদারির চেষ্টা করছে না। কোথায় আছি কিংবা ছিলাম তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই। এমন কি ফোনে ব্যস্ত থাকলেও কোনো প্রশ্ন করছেনা!
ফোনে সে প্রচুর কান্না করল ,ক্ষমা চাইল কিন্তু অভিমান ভেঙ্গে ফিরল না দিপ !
জটিলতায় ভরে একটি সম্ভাবনাময় প্রেমের ইতি ঘটল।সম্পর্ক টা ম্লান হয়ে গেল একটু একটু করে........

সময়ের আবর্তে বন্ধুরা ব্যস্ত হয়ে গেল,কিংবা হারিয়ে গেল জীবন সাথি ,মেয়ে বন্ধু কিংবা পেশার কাজে । মাঝে মাঝে ক্ষণিকের দেখা । একা ,একাকিত্বতা ঘিরে ধরল হাফসাকে একটি নিখাদ,নির্লোভ খাটি ভালবাসার লোভে .... আজো একজন দিপের প্রতিক্ষায় সে........


২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×