গত শুক্রবারে খতিব সাহেব একটি গল্প শিনিয়েছেন। বিখ্যাত একটি কিতাবের গল্প একটি, কিতাবের নামটি মনে নেই আমার। গল্পটি উঠে এসেছে দিন কয়েক আগে স্বাধীনতা সরণীতে মারা যাওয়া ভিরোজ ভূঁইয়া সাহেবের ছোট ছেলেটির আচরণের কারণে। এবার খুবই সংক্ষেপে গল্পটি শুনুন-

তিন ভাই একটি আলোচনায় বসেছে। তাদের মা মারা গেছেন, জীবিত আছেন শুধু বৃদ্ধ বাবা। বৃদ্ধ বাবার খেদমত কে করবে? সেটা নিয়েই আলোচনা। সকলেই খেদমত করতে চায় বৃদ্ধ পিতার। তখন বড় ভাই প্রস্তাব দিলো যে বাবার খেদমত করবে সে বাবার কোনো সম্পদের অংশ পাবে না। এই প্রস্তাব শুনে ছোট দুই ভাই সরে দাঁড়ালো, তারা কেউ বাবার খেদমতের দায়িত্ব নিতে রাজি হলো না। বড় ভাই খুশীমনে বাবার খেদমতের দায়িত্ব নিলো। বড় ভাই তার যতসামান্য আয় দিয়ে সংসার চালাতো, বাবার খেদমত করতো। বাবার যাতে কোনো কষ্ট না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতো।
অন্যদিকে ছোট দুই ভাই বাবার সম্পদের অংশ বুঝে নিয়ে খুব সুখে আরাম আয়েশে সংসার চালাচ্ছে। বড় ভাইয়েই বউও বেশ বিরক্ত। সে তার স্বমীর বোকামির জন্য কথা শোনায়। বাবার ঝামেলাও নিয়েছে আবার সম্পদও ছেড়ে দিয়েছে, এনমন বোকা গাছে ধরে!
এই সমস্ত দেখে বৃদ্ধ পিতা তার বড় ছেলেকে সান্তনা দেয়, তার জন্য দোয়া করে। বলে- "তোমার অল্প আয়েই আল্লাহ বরকত দিবেন।" বড় ছেলে খুশী মনেই বাবার খেদমত করে, কারো কোনো কথা কানে তোলেনা। তো প্রকৃতির নিয়মে এক দিন বৃদ্ধ পিতা ইন্তেকাল করেন। বড় ছেলে বাবার খেদমত করেছে, মৃত্যুর পরের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা পালন করে বাবাকে দাফন করেছে।
দেখতে দেখতে বেশ কিছু দিন কেটে গেছে। তাকে তার ছোট ভায়েইরা টিটকারি মারে- "বাবার খেদমত করে কিছুইতো পাইলানা, এখনোতো তোমার নুন আনতে পান্তা ফুরায়"। বউও তাকে কথা শোনায়- "শুন্য হাতে বাবার বোঝা টানছো, পাইছোটা কি?" সে কিছুই মনে করেনা। তার বাবা তার জন্য দোয়া করেছে - "তোমার অল্প আয়েই আল্লাহ বরকত দিবেন।" এতেই সে খুশী।
একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে তিনি স্বপ্ন দেখলেন একজন তাকে ১০০টি স্বর্ণমূদ্রা বোঝাই একটি কলসের সন্ধান দিতে চাইছেন। তিনি জানতে চাইলেন এই স্বর্ণমূদ্রায়কি বরকত আছে? উত্তর এলো- না বরকত নেই। তিনি বললেন- তাহলে এই স্বর্ণমূদ্রা আমার চাই না। পরদিন সকালে উঠে তিনি তার বউকে রাতের স্বপ্নের কথা জানালেন। সব শুনে বউ তাকে বোকা-গাধা বলে বেশ গালমন্দ করলেন ১০০ স্বর্ণমূদ্রা ছেড়ে দেয়ার জন্য।
পরদিন রাতে ঘুমের মধ্যে তিনি আবার স্বপ্ন দেখলেন একজন তাকে ১০টি স্বর্ণমূদ্রা বোঝাই একটি ঘটির সন্ধান দিতে চাইছেন। তিনি জানতে চাইলেন এই স্বর্ণমূদ্রায়কি বরকত আছে? উত্তর এলো- না বরকত নেই। তিনি বললেন- তাহলে এই স্বর্ণমূদ্রা আমার চাই না। পরদিন সকালে উঠে তিনি আবার তার বউকে রাতের স্বপ্নের কথা জানালেন। সব শুনে বউ তাকে আবার বোকা-গাধা বলে বেশ গালমন্দ করলেন ১০ স্বর্ণমূদ্রা ছেড়ে দেয়ার জন্য।
পরদিন রাতে ঘুমের মধ্যে তিনি আবার স্বপ্ন দেখলেন একজন তাকে ১টি স্বর্ণমূদ্রার সন্ধান দিতে চাইছেন। তিনি জানতে চাইলেন এই স্বর্ণমূদ্রায়কি বরকত আছে? উত্তর এলো- হে বরকত আছে। তিনি বললেন- তাহলে আমি এই স্বর্ণমূদ্র নিতে পারি। পরদিন সকালে উঠে তিনি আর তার বউকে রাতের স্বপ্নের কথা জানালেন না। কারণ তিনি ১০০ নিতে রাজি হন নি, পরে ১০টি নিতে রাজি হননি। এখন মাত্র ১টি নিতে রাজি হয়েছেন জানলে বউ ভিশন খেপে যাবে। তাই তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে একা একা নির্দিষ্ট যায়গায় গিয়ে সত্যি সত্যি একটি স্বর্ণমূদ্রা পেলেন।
স্বর্ণমূদ্রাটি নিয়ে যখন তিনি ফিরে আসছেন তখন তিনি দেখতে পেলেন একজন জেলে অদ্ভূত সুন্দর একটি অপরিচিত মাছ ধরে নিয়ে এসেছে বিক্রির জন্য। তিনি মাছটি কিনতে চাইলেন জেলেটি ১টি স্বর্ণমূদ্রা না পেলে কিছুতেই মাছটি বিক্রি করতে রাজি হলো না। অনেক চেষ্টা করেও দাম কমাতে না পেরে শেষে তিনি স্বর্ণমূদ্রাটি জেলেকে দিয়ে মাছটি কিনে নিয়ে এলেন। বাসায় এসে মাছটি বউকে কেটে রান্না করতে বললেন। মাছ দেখে বউ বেশ খুশী হয়ে গেলেন।
এদিকে মাছ কাটার সময় মাছের পেট থেকে দুটি চকচকে মূল্যবান পাথর বেরিয়ে এলো। তাই দেখে বউটি সাথে সাথে একটি পাথর নিজের কোচরে লুকিয়ে রেখে অন্যটি তার স্বামীকে ডেকে দেখালো। তিনি সেই পাথরটি নিয়ে গেলেন স্বর্ণকারের কাছে। স্বর্ণকার সেটি দেখে বললো- এটি অমূল্যসম্পদ, এরমূল্য দেয়ার ক্ষমতা এখানকার কোনো স্বর্ণকারের নেই আপনি এটি রাজার কাছে নিয়ে যিন। তিনি রাজার কাছে নিয়ে গেলেন। রাজা এটি পেয়ে মহাখুশী হয়ে গেলেন। রাজা তাকে উটবোঝাই করে সম্পদ দিলেন, বাড়ি তৈরি করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন, জমি দিলেন। ঠিক তখন একজন জহুরি রাজাকে জানালো এই মূল্যবান পাথরটি সবসময় জোড়ায় জোড়ায় হয়। এটিরও জোড়া নিশ্চয়ই আছে। এই শুনে লোকটি গিয়ে তার স্ত্রীর কাছে বললো মাছের পেটেযে আকেরটি পাথর পেয়েছো সেটি দাও, রাজা সেটি চেয়েছেন। এইকথা শুনে বউটি বাধ্য হয়ে লুকানো পাথরটি দিয়ে দিলেন। রাজা দ্বিতীয় পাথরটি পেয়ে আরো কতো কি দিয়েছিলেন সেটি নিজে ভেবে নেন।
গল্প শেষ হলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



