আমার সর্বশেষ এমআরপি পাসপোর্টটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৭ইং তারিখে।
তারপরে নানার কারণে (মূলত আলসেমী ও প্রয়োজন না থাকা এবং শেষে করনার উসিলায়) আর পাসপোর্ট তৈরি করা হয়নি। বেশ কিছু দিন আগে। আসলে বেশ কয়েক মাস আগে ই-পাসপোর্ট করবো বলে অনলাইনে e passport এর সাইটে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে একটা এ্যাকাউন্ট খুলে ফেলি। ফরম ফিলাপ করে জমা দেয়ার ডেটও নিয়ে ফেলি। কিন্তু আবারও নানান কারণে (মূলত আলসেমি ও প্রয়োজন না থাকা) জমা দেয়া হয়নি। ডেট পেরিয়ে গেলে আবার ডেট নেই। সেই ডেটও পেরিয়ে যায়। ফাইনালি কিছুদিন আগে ২৫-০৫-২০২২ তারিখের ডেট পাই। ২৪ তারিখে গিয়ে ব্যাংক জমা দিয়ে আসি।
রাতেই অনলাইন থেকে ফিলাপ করা ফরম, সিডিউল ফরম, ডাউনলোড করে প্রিন্ট করিয়ে রাখি।
ন্যাশনাল আইডির ফটোকপি
ওয়াশা বিলের ফটোকপি
পুরনো পাসপোর্টের ইফরমেশন পাতার ফটোকপি
এবং উপরের সবগুলির অর্জিনাল কপি ও
ব্যাংক চালানের কপি রেডি করে রাখি।
আমারসিডিউল টাইম ছিলো ১২টা ৩০ মিনিট। আমি সকালে ৯ টায় ছোট মেয়েকে স্কুলে দিয়ে পাশের রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা করে সাড়ে নয়টার আগে আগে রওনা হয় উত্তরার পাসপোর্ট অফিসের দিকে। ৩০ মিনিরে মধ্যেই পৌছে যাই সম্ভবতো। দেখলাম কোনো দালালের দৌরাত্য নেই। তবে লাইন ছাড়া অনেক কাজ হচ্ছে দেখতে পেলাম।
প্রথমে ভিতরে ঢুকে জানতে পারলাম ফরম জমা দেয়ার জন্য যেতে হবে ৩ তালায়। সেখানে গিয়ে দেখি লাইনে তেমন লোক নেই। পৌছেই সিরিয়াল পেয়ে গেলাম ফরম জমা দেয়ার। মিনিট ২০-২৫ পরে আমার ডাক পরলো। ফরম ফেরত দিয়ে দিলো। সেটি নাকি এক্সপায়াড হয়ে গেছে!!! আবার নতুন করে ফরম ফিলাম করতে হবে। নানান প্রশ্ন করার পরে বুঝতে পারলাম এখন আবার ফরম ফিলাপ করে সেটি প্রিন্ট করে নিয়ে আসতে হবে। সেটির সিডিউল ডেট অন্যদিন হলেও সমস্যা নেই।
রাগে বেরিয়ে এলাম, ভাবলাম বাসায় ফিরে আসবো। পরে কি মনে করে আশপাশে কোনো সাইবারক্যাফে আছে কিনা খুঁজতে শুরু করলাম। নেই, নেই, নেই। কোথাও নেই। ঘন্টা খানেক খোঁজা খুঁজি করে শেষে একটি বাড়ির দোতালায় উবারের একটি অফিসে গিয়ে ফরম ফিলাপের সুযোগ পেলাম। ২০০ টাকা দিতে হবে। কোনো উপায় নেই, রাজি হতেই হলো। এদিকে পাসওয়ার্ড গেছি ভুলে (আসলে কখনো মনেই রাখি নাই, আমার হয়ে গুগলগক্রোমই মনে রেখে দিতো)। এবার পাসওয়ার্ড রিসেট দিলাম। ফরম ফিলাপ করা হওয়ার শেষ পর্যায়ে দেখা গেলো আমার এনআইডি তে আগের ফরমটি ফিলাপ করা আছে বলে নতুনটি নিবে না। অন্য দিকে পুরনোটি মুছে ফেলার কোনো অপশন নেই! ৯০ দিন পরে নাকি মোছার অপশন আসবে।
যে ছেলেটি ফরম ফিলাপ করছিলো সে বললো এমন ওরা হরহামেশাই পায়। এখন আমার এনআইডির শেষ সংখাটি ৫ এর পরিবর্তে ৬ দিয়ে দিলে ফরম সাবমিট হবে। ফরম জমা দেয়ার সময় ওখানে বললেই ওরা আবার সেটি ঠিক করে দিবে। নানান দ্বিধা দন্দের মধ্যে আমি রাজি হয়ে গেলাম। প্রিন্ট করিয়ে আবার গিয়ে হাজির হলাম পাসপোর্ট অফিসে। গিয়ে দেখি বিশাল লাইন। বিদ্যুৎ নাই আধাঘন্টা ধরে, তাই কাজ বন্ধ। বেশ কিছুক্ষণ পরে বিদ্যুৎ এলে ফরম জমা দিলাম। এবার যেতে হবে পাশের ৩০৩ রুমে। সেখানে স্কেনিং আর বায়োমেট্রিক্স হবে। বিশাল লাইন!!
এতো বড় লাইন দেখে সেখান থেকে অর্ধেক লোক উপরের তালায় নেয়া হলো। কিন্তু উল্টোপাল্টা হয়ে যাওয়ার কারণে আমি পরে গেলাম মেলা পিছনে। এদিকে সেখানে কেউ কাজ করছে না। আমরা এমনি এমনি লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরে একজন এসে স্কেনিং শুরু করলেন। আমি যখন তার সামনে পৌছেছি তখন ২টা বাজতে ৬ মিনিট বাকি। তিনি ঘোষণা দিলেন ২টার সময় লাঞ্চ ব্রেক হবে। বুঝলাম এই দফায় আমার কাজে শেষ হলেও বায়োমেট্রিক্সে আটকে যাবো। হলোও ঠিক তাই। ২ টা বাজতেই সকলে কাজ গুটিয়ে চলে গেলো। সকালে তিনটা নানরুটি আর নেহেরি দিয়ে নাস্তা করেছি, ক্ষুধার সমস্যা আমার নেই। দেখতে দেখতে আড়াইটা বাজলো। আবার শুরু হলো কাজ। এবার বেশ ঝটপটই কাজ শেষ হয়ে গেলো। আমার পালা যখন এলো তখন আমি তাকে আমার এনআইডির শেষ সংখ্যাটার বিষয় বুঝিয়ে বললাম। বুঝা গেলো এমন কেস তিনি হরহামেসাই পান। অল্পতেই বুঝে নিয়ে সব ঠিক করে ফেললেন। কাজ শেষ করে যখন বেরিয়ে এসেছি তখন ঘড়ির কাটা প্রায় ৩টার ঘরে।
এবার অপেক্ষার পালা, দেখি কবে পাই ই-পাসপোর্ট। যদিও আগামী মাসের ১৫ তারিখে ডেট দেয়া আছে, তবে আমার ধারনা তার আগেই পেয়ে যাবো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২২ সকাল ১০:৫২