somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে হঠাৎ চুক্তি সই

১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বরাক নদের ওপর টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে একটি যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি সই হয়েছে। গত ২২ অক্টোবর চুক্তিটি সই হয় দিল্লিতে। এ ধরনের চুক্তি করার আগে বাংলাদেশকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা মানেনি ভারত।
মণিপুর সরকার এবং প্রকল্পের অন্যতম অংশীদারের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি গতকাল শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে। আর হাইড্রোওয়ার্ল্ডডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট বলেছে, যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পে জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগমের (এনএইচপিসি) ৬৯, রাষ্ট্রায়ত্ত জলবিদ্যুৎ সংস্থার (এসজেভিএন) ২৬ এবং মণিপুর রাজ্য সরকারের ৫ শতাংশ মালিকানা থাকবে।
এনএইচপিসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, দিল্লিতে গত ২২ অক্টোবর টিপাইমুখ বহুমুখী প্রকল্পের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে ও মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ও ইবোবি সিং।
২০১০ ও ২০১১ সালে দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণায় মনমোহন সিং অঙ্গীকার করেছিলেন, টিপাইমুখে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না, যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, টিপাইমুখে জলাধার ও বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে বিরাট এলাকার পাহাড়-জঙ্গল পানিতে ডুবে যাবে এবং অনেক লুপ্তপ্রায় প্রাণিসম্পদ ধ্বংস হবে। ঘর আর জীবিকা হারাবে বহু মানুষ। তা ছাড়া টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের পরে সেটি ভূমিকম্পে ধসে পড়লে আসাম ও বাংলাদেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
বিবিসি ও হাইড্রোওয়ার্ল্ডডটকম জানায়, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুরে বরাক নদের ওপর টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদু্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এনএইচপিসি, এসজেভিএন ও মণিপুর সরকার যৌথ উদ্যোগে একটি কোম্পানি গঠন করেছে।
এনএইচপিসি ও এসজেভিএনের দুই চেয়ারম্যান এবং মণিপুর সরকারের বিদ্যুৎসচিব ওই চুক্তিতে সই করেছেন। চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি স্বীকার করেছেন জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগমের মুখপাত্র যতীন্দ্রর ম্যাগো।
মণিপুর সরকারের মুখপাত্র এবং রাজ্যের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্রী এম বিরেন সিং বিবিসিকে টেলিফোনে বলেন, রাজ্য সরকারের নীতি খুব পরিষ্কার। টিপাইমুখ প্রকল্প হবেই। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারত উন্নয়ন দপ্তর এর জন্য টাকা দেবে। প্রকল্পটি তৈরি হবে এনএইচপিসির নেতৃত্বে।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ডিসেম্বরের শুরুতে মণিপুরে যাচ্ছেন। টিপাইমুখ প্রকল্পটিকে প্রধানমন্ত্রী যাতে জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করেন, রাজ্য সরকার সেই চেষ্টা করছে।
ভারত সরকার টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের কাজে এগিয়ে গেলেও দীর্ঘদিন ধরে এর বিরোধিতা করে আসছেন মণিপুরের অনেক বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ। তাঁরা বলছেন, মিয়ানমার থেকে আসা থুইবাই ও বরাক নদের সংযোগস্থলের গ্রাম টিপাইমুখে জলাধার ও বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে বিরাট এলাকার পাহাড়-জঙ্গল পানিতে ডুবে যাবে। বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, টিপাইমুখ অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বাঁধটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভাটি অঞ্চলে থাকা আসাম ও বাংলাদেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
টিপাইমুখ প্রকল্পবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা রামানন্দ ওয়াংখেয়ি রাকপাম চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় বিবিসিকে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরোধিতার মূল কারণ, স্থানীয় মানুষ বা ভাটি অঞ্চলের অর্থাৎ আসাম আর বাংলাদেশের মানুষ—এই তিন গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই প্রকল্প রূপায়ণের চেষ্টা হচ্ছিল। সেগুলো না করে আবারও নতুন চুক্তি সই করার মধ্যে কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিরোধিতার জায়গাগুলোতে সমাধানের কোনো চেষ্টাই করল না সরকার। তবে আসামের কাছার অঞ্চলের অনেক মানুষ আবার প্রতিবছরের বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণকে সমর্থন করে।
যা থাকছে প্রকল্পটিতে: এসজেভিএনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মণিপুর রাজ্যের চন্দ্রচূড় জেলায় বাস্তবায়িত হবে টিপাইমুখ বহুমুখী জলবিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প। মণিপুর-মিজোরাম সীমান্তের থুইবাই ও বরাক নদের সংযোগস্থল থেকে ৫০০ মিটারে প্রকল্পটি অবস্থিত। এ প্রকল্পে ১৬২ দশমিক ৮০ মিটার উঁচু পাথরের বাঁধের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ছয়টি ইউনিট থাকবে, যার প্রতিটির ক্ষমতা হবে ২৫০ মেগাওয়াট। এতে বছরে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ২১১ কোটি টাকা। আর এটি শেষ হবে ৮৭ মাসে।
যে সরকারি সংস্থাটি অনেক দিন ধরে টিপাইমুখ প্রকল্পের দায়িত্বে ছিল, সেই নিপকোর হাত থেকে ২০০৯ সালে দায়িত্ব নিয়ে নেয় ভারত সরকার। সেই সময় ভারত আর বাংলাদেশে টিপাইমুখ প্রকল্পের ব্যাপক বিরোধিতা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলও টিপাইমুখে গিয়ে সরেজমিনে ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছিল। তবে খারাপ আবহাওয়ার জন্য দুই দিন ধরে চেষ্টা করেও তাদের হেলিকপ্টার টিপাইমুখে নামতে পারেনি।
প্রথম আলো
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×