এখন সময়টাকে কি বলা যায় চিন্তার বিষয়,অলস মানুষরা এই সব বিষয় নিয়ে চিন্তুা করে।তবে এখন ক্ষেপা দুপুরের রাগি রোদগুলোর রাগ একটু কমেছে,আর সামান্ন সময় অতিক্রম করলেই বিকালের শুরু।কিন্তু এখন তো দুপুরের তাপ নেই আর বিকেলবেলার সতেজতাও নেই তাহলে এই সময়টার নাম কী?
এই অদ্ভুত প্রশ্নের উত্তরটা আমি খুঁজার চেষ্টা করছি আমার বাড়ির পেছনের পুকুরপাড়ে বসে।আমাদের পুকুরপাড়টা অনেক সুন্দর শাঁন বাধাঁনো ঘাট,আমি সেখানেই বসে আছি ঘাটের এক কোনায় কাঁমিনি গাছের ছায়া থাকে আমি সেই ছায়ার নিচেই বসে আছি।মাঝেমাঝে হালকা হাওয়া বইছে আর কামিনি গাছের ফুল আর পাঁকা পাতা আমার মাথায় পড়ছে শুধু মাথায় না আমার চারপাশেও পড়ছে।আমি খুব আগ্রহ নিয়ে মাথায় পরা পাতা গুলো ঝেড়ে ফেলছি,কিন্তু হঠাৎ একটা পাতা আমার ঘাড়ে পড়ল,ঘাড়টা ঘুরাতেই পাতাটা গেন্জির ভেতরে চলে গেল।আমি গেন্জি খুলে পাতার বের করার কাজ করছি,আর একা একা কবিতার সুরে বলছি
;ফুল আর পাতা
তোমাদেরও কি
আমার সাথে
এমনে খেলার কথা;
এটা বলছি সাথে গেন্জি পড়ছি,যখন আমার মাথা গেন্জির ভেতরে ছিল তখন আমার চোখ বন্ধ ছিল।গেন্জিরর ভেতর থেকে মাথা বের করে আস্তে আস্তে চোখ খুলছি,আমার চোখ খোলার পর চোখ সোজা পুকুরের ওপারে চলে গেল।
কিন্তু সেখানে আমি যা দেখলাম তার জন্য আমি পস্তুুত ছিলাম না আমি চমকে গেলাম।আমি দেখলাম নীল শাড়ি পরা একটা মেয়ে,সে আমার দিকে পেছন ফিরে হাত নাড়াচ্ছে আর ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছে।
আমি বুঝলাম এটা কাঁচের চুরির শব্দ,মেয়েটার হাতে বোধয় কাঁচের চুরি আছে,সে অন্যপারে থাকায় তাকে ভালকরে দেখতে পারলাম না।
কিন্তু এই অসময় পুকুরের ওপাড়ে কে?
একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এখনও পেলাম না তার মধ্যে আরএকটা প্রশ্ন এসে হাজির।
প্রশ্ন হল মেয়েটি কে?
আমি এবার খুব মনোযোগী হয়ে ওপারে তাকালাম,মেয়েটা নীল শাড়ি পড়া কিন্তু এই শাড়িটাকে কেন যেন পরিচিত মনে হচ্ছে।
তার শাড়ি আমার কেন পরিচিত মনে হবে আবার আর একটা প্রশ্ন।
ওদিকে মেয়েটা ক্রমাগত শব্দ করেই যাচ্ছে,চুড়িগুলোর শব্দকেও কেমন যেন চেনাচেনা লাগছে।
আরও একটা প্রশ্ন বেড়ে গেলো।
কি যেন মনে পড়ল,সাথে চুড়ির শব্দটাও থেমে গেল,হঠাৎ লক্ষ করলাম মেয়েটা হাত নাড়াচ্ছে না নিচে বসে কি যেন খুঁজছে।
খুঁজতে খুঁজতে আমার দিকে তাকিয়ে একটা অভিমানী হাসি দিল।আমার মনে হল চুড়ির অদ্ভুত শব্দটায় আমি একটা নেশায় ছিলাম শব্দটা থেমে যেতেই ঘোর কেটে গেল।কিন্তু মেয়েটার হাসিটাও অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে।এখন মোট কয়টা প্রশ্ন জমা হল ভুলে গেছি,মনে করার চেষ্টা করতেই আমার শরীলের সব লোম দাড়িয়ে গেল অন্যরকম এক অনুভুতি, কেমন যেন মনে হল এমন অনুভুতি আমি শতবার পেয়েছি।কিন্তু কেন এমন মনে হল কারন খুঁজার চেষ্টা করছি।
মোট কয়টা প্রশ্ন হল গননার চেষ্টা করতেছি,পলক ফেলতেই মেয়েটাকে আমার সামনে দেখতে পেলাম আমি বোধয় ভয় পেলাম, আর ভাবতে শুরু করলাম পলকের মধ্যে কিভাবে এপারে এল,আর তার কাপড় তো শুকনো কিভাবে সম্ভব।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি,আমার কি কি যেন মনে হতে লাগল অন্ধকার অসবে এমন লাগল।
হঠাৎ আমার কান ধরে টান দিয়ে সে বলতে শুরু করল ঐ নিরন,তোমার কি হয়েছে তুমি আমাকে নীল শাড়ি, কাঁচের চুড়ি দিলে,আমাকে পড়তে বলেছ আমি আজ পড়লাম তোমার জন্য,কিন্তু তুমি তো আমাকে ভালো করে দেখলাই না,তোমাকে চুড়ির শব্দ শুনাতে গিয়ে একটা চুড়ি ভেঙে নিচে পরে গেল আমি একাএকা খুঁজতেছি তুমি আমাকে একটু সাহায্য করলা না।কোথায় চুড়ি ভাঙার জন্য আমাকে বকা দিবা,আমি তখন মাথা নিচের দিকে দিয়ে আস্তে করে সরি বলব,ও তুমি আবার আমার সরি শুনতে পার না শত রাগ করলেও আমার মুখের সরিতে তুমি শান্ত,তারপর আমাকে জাপটে ধরে কপালে একটা চুমু দিবে কিন্তু তুমি তা করলা না।
তাই তোমাকে খুব জোড়ে একটা চিম্টি দিলাম,চিম্টির ব্যাথায় আমি ওফপপ করে কানে হাত দিয়ে দেখলাম অনেকটা যায়গায় চামড়া উঠে গেছে।
আমি হা করে ভাবছি মেয়েটা কে আর এত কথা একসাথে কিভাবে বলল।
হঠাৎ আমি বললাম পদ্দ তুমি করলা এটা পদ্দ তখন হাসতে হাসতে বলল তোমার সবকিছু আমি খুটে খুটে খাব,কেন এখন মনে নাই?
তোমার আমার মধ্যে কিছু মিলে গেলে আমি চিম্টি দিতাম তুমি অনেক ব্যাথা পেতে।নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে চিম্টি দিয়ে চামড়া তুলে নিলে এখানে লালা লাগাতে হবে।আর তখন আমি হুটকরে তোমার হাতটা ধরে একটা চুমু দিতাম আর তুমি বলতা হাজারটা মিল খুঁজ,আর এখন থেকে একটা মিলে গেলে দশটা চিম্টি আর চিম্টির দশটা চুমো।
ঐ মেয়েটা আবারও একতালে বকবক করেই যাচ্ছে আর আমি আবারও হা কবে তার দিকে তাকিয়ে আছি।কিন্তু ওর নাম পদ্দ আমি কিভাবে জানলাম আর আমি এখানে কেন এসেছিলাম,আমি কি জেন ভাবনায় ছিলাম,আমার কানে ব্যাথা করছে কেন।আমি কিছুই মনে করতে পারছি না কেমন যেন মাথা ঘুরছে আবারও অন্ধকার দেখছি।
কিন্তু মেয়েটা চুপ নেই কি যেন বলে চলছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না মাথা ঝিম দিয়ে আছে তবে সব কিছু পরিচিত লাগছে।
হঠাৎ তার হাত আমার মাথায় সে বলছে তোমার মাথাটা আগাও আমি একটা চুমা দিব।আমার মথাটা টেনে নিয়ে আমার কানে চুম দিল আর একটা কামড় ও দিল।আমি সব অন্ধকার দেখছি সব কেমন যেন লাগছে চেনা না অচেনা কখন মেয়েটার সবকিছু পরিচিত মনে হচ্ছে কখন কি আবল তাবল লাগছে কিছুই বুঝি না।
কিন্তু তার নাম পদ্দ আমি কিভাবে জানলাম সব কিছু এমন কেন লাগছে আমি মনে হয় মাথা চুলকাচ্ছি।সে আমার পাশে বসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল এই আমাকে কি তোমার সেই নীল পদ্দের মত লাগছে?
আমি তখন তার দিকে আবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটা লজ্জা পেয়ে নিচে তাকিয়ে আছে।নিচে তাকানো অবস্থায় আমাকে আবার ধাক্কা দিয়ে বলল নীল পদ্দের মত লাগছে?
তখন আমার মুখ থেকে না চাইতেও অনর্গল কথা বের হতে লাগল বললাম তোমাকে অপরুপা লাগছে মনে হয় পুকুর থেকে একটা নীল পদ্দ এসে আমার পাশে বসল,দেখলা তোমাকে বলেছিলাম না তোমাকে নীল পদ্দের মত লাগবে,ঠিক নীল পদ্দের মতই লাগছে।
আমি কথা গুলো বলছি আর অবাক হচ্ছি আমি কিভাবে বলি এগুলো আর পদ্দ নীল পদ্দ এগুলো কি।
মেয়েটা তখনও নিচে তাকানে আর নিচে তাকিয়ে বলছে হম বলেছিলে সেদিন এখানে নীল শাড়ি আর কাঁচের চুড়ি আছে তুমি পদ্দ আর এগুলো পরলে নীল পদ্দের মত লাগবে।আরও বলেছিলে যখন তোমার কাঁচের চুড়ির ঝুনঝুন শব্দ হবে মনে হবে পদ্দের পাপরি বাতাসে দুলছে আর ঝুনঝুন শব্দ করছে।তারপর মেয়েটা আমার হাতে তার হাত রাখল আমার কাঁধে তার মাথা রাখল।আর আমিও এক হাত তার বাহুতে রাখলাম আর ছোট একটা আলদো চুমু তার কপালে একে দিলাম।
কিন্তু আমি এসব কি করছি না চাইতেই সব হয়ে যাচ্ছে তার সাথে কথা বলছি তার নাম ধরে ডাকছি চুমু দিচ্ছি এগুলো সবই না চাইতেই হয়ে যাচ্ছে আমি থামতে চাই কিন্তু পারছি না।কিন্তু কথা বলা তার স্পর্শ অনুভব করার পর যে অনুভুতি তা অনেক চেনা,কিন্তু কিভাবে সম্ভব আমি মনে করার চেষ্টা করছি।মেয়েটা আমার কাঁধে মাথা রেখে কি যেন বলছে আমি শুনতে পাচ্ছি না শুনার চেষ্টাও করছি না আমি অজান্তেই ওর ঠোটের নাড়াচাড়া দেখছি আমি থমকে গেলাম আমার ঘামাতে শুরু হল সব মেশিনের মত মনে পড়তে শুরু করল আরে সে আমার প্রেমিকা পদ্দ হমম এই নীল শাড়ি কাঁচের চুড়ি আমি দিয়েছি,বলেছিলাম আমার জন্মদিনে আমাকে একটা নীল পদ্দ দিতে ও বলেছিল আমি কই পাব,
তখন আমি বললাম সত্যি নীল পদ্দ ফোটে না এটা কল্পনার ফুল আর তুমি এই নীল শাড়ি পরলে তোমাকে কল্পলোকের মানুষ মনে হবে। আর তুমি তো পদ্দ এখানে নীল শাড়ি তাতে তুমি নীল পদ্দ হয়ে যাবে,আর সেদিনের নীল পদ্দটাকে আমি সারাজীবনেরর জন্য আমার করে নিব।
হঠাৎ পদ্দ আমাকে বলল এই তোমার কি হয়েছে এত জোড়ে কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরে?
আমি এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে পদ্দকে জাপটা ধরলাম বঝুতে পারলাম না বুঝার পরেও ছাড়লাম না আরো জোড়ে জাপটে ধরলাম।কিছুখন পর পদ্দ বলল বাবা এত জোড়ে কেউ কাউকে জাপটে ধরে আমিতো তোমারই আছি।আমি তখন একটু লজ্জা পেয়ে বললাম আমার মত এত ভালো কেউ কাউকে বাসে বল।আমার মত এত ভালোবাসলে এত জোড়েই জাপটে ধরতো।
পদ্দ তখন হাসতে হাসতে বলল হইছে আমার প্রেম কুমার।আমি পদ্দের হাতটা শক্ত করে বুকে চেপে বললাম তুমি আমায় ছেড়ে কোথায় ছিলে পদ্দ,আমি তোমাকে কত খুঁজেছি সবখানে খুঁজেছি তোমাকে অনেক খুঁজতাম তো,তাই আমার কি যেন হয়েছিল।পদ্দ ওর একটা আঙুল আমার ঠোটে চেপে ধরে থামিয়ে দিয়ে ও বলা শুরু করল,আরে বুদ্ধু তুমি তো বোকার মত সারাদিন খুঁজতে আর আমি জানি তুমি খুঁজতে খুঁজতে পাগোল হয়ে গেছ।পদ্দ এগুলো খুব সাবলীল ভাবেই হাসি মুখে বলছে পদ্দ আবার এটাও বলল তুমি যখন খুঁজতে আমি তো তোমার পাশেই থাকতাম তোমাকে ডাকতাম কিন্তু তুমি তো আমার ডাক শুনতেনা আর আমাকে দেখতেও না।
পদ্দকে এখন একটু দুখি লাগছে
আমি বললাম পদ্দ তোমাকে পাগোলের খুঁজতাম সারাখন তোমায় খুঁজতাম পেতাম না,তারপর আমার কি যেন হত চোখে অন্ধকার দেখতাম পরে দেখতাম আমি বিছানায় আর মা বাবা আমার পাশে বসে কাঁদছে।
আচ্ছা পদ্দ তুমিই বল, আমি তোমাকে খুঁজি তাতে কান্নার কি আছে আর কেউ কাউকে খুঁজলে কি কাঁদতে হয়?
পদ্দ কি যেন বলতে চেয়েও চুপ থাকল!
পদ্দ কি হয়েছিল একটু বলতো পদ্দ অনেক চিন্তা ভাবনা করে আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে জলের দিকে নিয়ে বলা শুরু করল।
নিরন তোমার জন্মদিনের সেই দিনটার কথা মনে আছে?
আমি অনেক ভেবে মনে করলাম বললাম, তুমি আমাকে কল করছিলে বলেছিলে তুমি নাদীর পাড়ে এসে গেছ,আর তারপর থেকে কেন কথা হয় না আজ কথা হল।পদ্দ ভেজা চোখে বলল তোমার সাথে যখন কথা বলতেছিলাম আমি তখন নাদীর পাড়ে দারানো সেখানের লোকগুলো তোমার নীল পদ্দের দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছিল তাই আমি হাটতে হাটতে সামনে বাঁধের দিকে গেলাম সেখানে আমি একা ছিলাম।হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া আসল আমি দুহাত প্রসারিত করে উপভোগ করছিলাম আর কল্পনা করছিলাম তুমি আমার পেছনে আর আমার দুই হাতে তোমার দুই হাত।শাঁড়ি পড়ার অভ্যাস নাই তার মধ্যে বাতাসের বেগ বেরে যাওয়ায় কখন যে পেঁচিয়ে পানিতে পড়ে গেলাম জানিনা।তবে বুঝতে পাড়লাম তোমার খুব কাছে চলে এসেছি সারাজীবনের জন্য,পদ্দ চোখ মুছে অট্ট হাসি দিয়ে বলল এখন কত মজা সারাখন তোমার পাশে এক পলকের জন্য দূরে যাই না আমি চাইলেও যেতে পাড়বো না।
আমি তখন কাঁদতেছিলাম খুব শব্দ করে কিছুখন পরে চোখে কেমন যেন অন্ধকার অনুভব করলাম যেমন টা করতাম পদ্দকে খোঁজার সময়।
দূরের থেকে শব্দ আসছে নিরন নিরন কেউ হয়তে ডাকছে,হঠাৎ আমার হাতটা ধরে বলল তুই আবার শুরু করলি,
এই কথাটা সে কাঁদতে কাঁদতে বলছে সেটা বুঝতে পাড়ছি কিন্তু কে বলছে তা বুঝার চেষ্টাও করছি।
আবার সে আমার কান নিয়ে কি যেন বলল আর তখন আমার চোখের অন্ধকার আরও বাড়তে থাকার পথে।
, , , , ,
, , , , ,
, , , , ,
, , , , ,
:::::::::::::::::::::::::
নাঈম চৌধুরী < রাজ কুমার >
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:০০