somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

AND ARE YOU HAPPY?! COME ON! I WORK FOR THE SYSTEM!"; অপরিচিত আওয়াজের মেটাল ঘরানার ব্যান্ডগুলো-২; System of a Down

১৪ ই মে, ২০১০ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৪ শে এপ্রিল, ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ।
ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে, মুটামুটি সব দেশই কোন না কোন ব্লকে ঢুকে পড়েছে আর কেউ বা তখন যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় রত। ওদিকে অনেক পুরান এক সাম্রাজ্যের পতনও যে অবশ্যম্ভাবি, বেশ বোঝা যাচ্ছিল। অটোমান সাম্রাজ্যের শেষদিকের ঘটনা বলছি, আর্মেনিয়ানদের স্বাধীনচেতা মনোভাব আর কিছু ধৃষ্টতা সম্রাট এবং তার মন্ত্রীবর্গের কোনভাবেই সহ্য হচ্ছিল না। এর আগে প্রায় ৭/৮ বছর ধরে বড় বড় কিছু শাস্তি দেয়া হয়েছে কিন্তু আর্মেনিয়ানদের ঠান্ডা করতে বোঝাই যাচ্ছিল আরো বড় একটা কিছু দরকার। গ্রেফতার করে আনা হল আর্মেনিয়ার শ্রেষ্ঠ ২৫০ বুদ্ধিজীবিকে এবং ঝুলানো হল ফাঁসিতে। প্ল্যানটা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাত পাশার। এরপর শুরু হল বিংশ শতাব্দীর প্রথম গণহত্যা, যা অনেকেরই অজানা। সিরিয়ার দিকে হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল অসংখ্য আর্মেনিয়ানকে (পথে খাবার পানির অভাবে এবং পথচলার শ্রান্তিতে কয়জন মারা গিয়েছিল কোন সঠিক হিসেব নেই কারো কাছে), পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ৫,০০০জনকে............ মোট মারা গিয়েছিল ১০ থেকে ১৫ লক্ষ সাধারণ আর্মেনিয়ান সেই ৪বছর স্হায়ী গণহত্যায়। কামাল আতাতুর্কের হাতে পতন ঘটেছিল অটোমানদের, কিন্তু কামাল রাজি হননি সেই গণহত্যার বিচার বা সে সংক্রান্ত কোন দায়ভার নিতে। আর্মেনিয়ানদের মন থেকে এই গণহত্যার দগদগে ঘা আজো শুকায়নি।



প্রায় আশি বছর পরের কথা।
সোভিয়েট ইউনিয়নের পতন হয়েছে, সারা বিশ্বে একমাত্র পরাশক্তি আমেরিকা। ক্লিনটন বিপর্যস্ত নিজের নামের স্ক্যান্ডাল নিয়ে, প্রেসের মনোযোগ সরাতে ইচ্ছা হলেই বোমা মেরে আসেন ইরাকে, ইরাকের পারমাণবিক শক্তির সুরক্ষা করতে! ঠিক এই সময়টাতেই রক গানকে প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলেন ৩ আর্মেনিয়ান-আমেরিকান, সাথে ছিলেন একজন লেবানিজ-আমেরিকান। দিচ্ছি তাদের পরিচয়।




সার্জ টানকিয়ান। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাত্র কমপ্লিট করেছেন মার্কেটিং-এর উপর গ্র্যাজুয়েশন। ব্যবসায় ঢুকেছেন, সফটওয়ার উৎপাদন/গবেষণা আর বিপননের। পুর্বপুরুষ আর্মেনিয়ান, জন্ম বৈরুতে। ৮বছর বয়সে বাবা-মার সাথে লস এন্জেলসে পাড়ি জমিয়েছিলেন। গানের প্রতি আগ্রহ ছিল, ছিলেন এক ব্যান্ডের কি-বোর্ডিস্ট। ১৯৯২ সালে এক স্টুডিওতে যেয়ে পরিচয় হয় আরেক ব্যান্ডের ভোকাল, লীড গীটারিস্ট ড্যারন মালাকিয়ানের সাথে।


প্রথম সাক্ষাতেই কঠিন বন্ধুত্ব হয়ে গেল। দুজনেই আবিস্কার করলেন , দুজনের নাড়ি সেই একজায়গায়, দুজনেই সারাক্ষণ প্রতিবাদী সাধারণ মানুষের উপর করা অত্যাচারগুলোর, পছন্দ করেন সেন্ট্রাল ইউরোপের কিছু পুরান সুর, মিডল ইস্টের ঐতিহ্যবাহী সুরগুলোর। মালাকিয়ানেরও পুর্বপুরুষ আর্মেনিয়ান, কিন্তু তার জন্ম আমেরিকাতেই।


যাকগে, Dave Hakopyan (bass) আর Domingo Laranio কে ড্রামসে নিয়ে এই দুজন গড়ে তুললেন নতুন একটা রক ব্যান্ড সয়েল (এখনকার আমেরিকান ব্যান্ড সয়েল না)। তখন পরিচয় হয় আরেক আর্মেনিয়ান আমেরিকান শাভো ওডাজিনের সাথে। শাভো নিলেন নতুন ব্যান্ডের ম্যানেজারের ভার।


কিন্তু বেশিদিন টিকল না এই ব্যান্ড। কারণ খুব স্বাভাবিক, আর্মেনিয়ান-আমেরিকান দুজন যেধরণের গান করছিলেন তাতে ব্যান্ডের ভবিষ্যত অন্ধকার দেখছিলেন Dave Hakopyan আর Domingo Laranio. উজ্জল ক্যারিয়ার(!) গঠনের জন্য ছাড়লেন ব্যান্ড (গাধা কি গাছে ধরে?)। নতুন ড্রামার হিসেবে পেলেন তারা এক নতুন বন্ধুকে, ডালমায়ান। ইনি লেবানিজ আমেরিকান, জন্মের পর দেখেছেন ইসরাইল বিরোধিতার জন্য লেবাননের উপর নিষেধাজ্ঞার ফল কিভাবে পড়েছে দেশের অর্থনীতির উপর, সয়েছেন ১৫ বছর ধরে চলা লেবাননের গৃহযুদ্ধের ক্ষত। আর পুরান ম্যানেজার শাভো নিলেন ব্যান্ডের বেস আর প্রডিউসারের ভার। ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে রাখলেন তারা System of a Down. এবং শুরু হল এক ইতিহাসের, শুরু হল রক গানকে যে অন্যায়/অত্যাচারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে যে ব্যবহার করা যায়, তা দেখানোর, অন্যদের শেখানোর.......



Serj Tankian


Daron Malakian


Shavo Odadjian


John Dolmayan


চারজন একসাথে আরেকটা


আজতক ৫টা এলবাম বের হয়েছে সিসটেমের। ১৯৯৮সালের ডেব্যু এলবামটা ছিল সেলফ টাইটেলড, খুব সহজেই সেটা দিয়ে সবধরণের গানের শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। ঐ এলবামের দুয়েকটা গানকে বলা হয়েছিল নিউ-মেটাল, বাস্তবে সংগীতবোদ্ধারা আবিস্কার করেন যে এরা সম্পূর্ন নতুন এক বা একাধিক ধারা নিয়ে এসেছে রক অথবা মেটাল মিউজিকে। সেলফ টাইটেলড এলবামের সিংগেলসগুলোর মধ্যে আমি বলব দুটার কথা- স্পাইডার আর সুগার। স্পাইডার গানটা যে কি রক আমি আজো বুঝিনা। কখনো মনে হয় হার্ডরক, মাঝে মাঝে মনে হয় সাইকোডেলিক, কখনো মনে হয় .......থাক বাদ দেই। ২০০০এর আগে ওদের মিউজিক ভিডিওগুলোতে একটু রংচং বেশি করত ওরা। স্পাইডারটা ঠিক সেই ট্রেন্ডেরই।

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে


সুগার গানের কথাগুলো ভয়ংকর টাইপের। এরমধ্যে মিউজিক ভিডিওটা শাভো এমনভাবে বানান যে বলার মত না। শুরুতে একজনকে দেখা যায় নিউজ পড়ছেন, কিন্তু তার পড়ার ধরণ শুনলে মনে হয় তিনি একজায়গায় বলছেন আমেরিকা হারবে। এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে ছাড়া বাণীগুলোও কারো কারো খুব একটা ভাল লাগেনি। ফলাফল? ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় রেডিওগুলোতে, কিন্তু ক্যারাঙ টিভিতে রেস্ট্রিকশন আসে হাই অথরিটি থেকে রাত ১০টার আগে এই গানের মিউজিক ভিডিও সম্প্রচার করা যাবেনা। আরো জনপ্রিয়তা পেল এই রেস্ট্রিকশনের কথা জানাজানি হতে, মানুষ শুনল/দেখল এবং গানটা এতটাই জনপ্রিয়তা পেল, প্রথম সিংগেলসেই পেয়ে গেল ব্যান্ডটা আমেরিকাতে বিশাল ফ্যানগোষ্ঠী;) ভিডিওটা দেখুন-

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে


যাই হোক তারপর বড়বড় কয়েকটা কনসার্টে গেল আমার আরেক প্রিয় ব্যান্ড স্লিপনটের সাথে। ট্যুরটা জনপ্রিয়তা পাওয়ায় তারা এরপর ট্যুরে গেল স্লিপনট, স্লেয়ার এদের সাথে। ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা তারা টের পেলেন কনসার্টের উন্মাদনা দেখে। প্রসংগত শাভোর লক্ষ্য ছিল ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা যেন পসিবল কম সময়ে স্লেয়ারের কাছে পৌছায় সেদিকে ট্রাই করা, খুব কম কষ্টেই সেটা হয়ে গিয়েছিল। আসলে তাদের গান সবসময়ই ছিল বাকিদের চেয়ে সম্পুর্ণ আলাদা!


২০০১সালে বের হয় পরের এলবাম টক্সিসিটি! জোস একটা এলবাম। বিলবোর্ডে ১নং পজিশনে ডেব্যু হয়, এমনকি ৯/১১এর সপ্তাহেও নামেনি ১নং থেকে। গানতো সবই মাশাল্লাহ আমেরিকার সরকারকে বাম্বু দেয়া গান আর সাথে মিক্সড থাকে পুরানো কিছু ব্যাথা আর জ্বালাময়ী বাক্যের কথা। এটাও ব্যাতিক্রম ছিলনা কোনদিক থেকে। কাকতালীয়ই বলতে হবে, সেপ্টেম্বরের ৪তারিখ রিলিজ হবার পর ১১ তারিখ টুইন টাওয়ারের ঘটনা। চপ সুয়ে আমেরিকার বেশ জনপ্রিয় একটা খাবার, সেই নামের গানটাতে অনেকটা হুশিয়ারিই ছিল আমেরিকার সরকারের এরকম বৈদেশিক আক্রমনের পরিণাম সম্পর্কে। চপ সুয়ের লিরিকসের একটা অংশ দেখুন-
Well I don't think you trust in my self-righteous suicide
I cry when angels deserve to die..

মিউজিক ভিডিওটা অত স্পেশাল কিছুনা। তবে গানের সুর, ইন্ট্রো, কোরাস, ভার্স প্রতিটা অংশই আনকমন। ইন্ট্রো শুনে আপনি বুঝতে পারবেননা, কোন ভাষার গান শুনছেন, আবার কোরাসেও বুঝতে পারবেন না কোন টাইপের গান চলছে রেডিওতে, রক না নতুন মেটাল শেখার চেষ্টায় রত কোন আর্টিস্ট। সেরকম। চপ সুয়ে ২০০২ সালে মেটালে গ্র্যামি নমিনেশন পায় (ব্যান্ডের প্রথম!)। গ্র্যামির জুরি বোর্ডে ছাগল থাকে নিঃসন্দেহে, কিন্তু সিসটেমের বেলায় দোষ দেবনা, অসাধারণ গান গায়, কিন্তু কোন ক্লাসে ফেলা অসম্ভব!

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে


সেকেন্ড সিংগেলস ছিল টক্সিসিটি। বেশি কথা বলব না, VH1 এর জরিপে সর্বকালের সেরা ৪০ মেটাল গানের মাঝে এর পজিশন ১৪! লিরিকসে স্পষ্টতই সমালোচনা করা হয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতি আমেরিকার নগ্ন আচরণ সম্পর্কে। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ভিডিও, এগুলো আমার জোস লাগে।

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে


থার্ড সিংগেলস ছিল এরিয়েল। ২০০৩ সালে হার্ডরকে গ্র্যামি নমিনেশন পায়। চপসুয়ের মত এরও অসাধারণ ইন্ট্রো, মিডল ইস্টের গানের প্রভাব ব্যান্ডে কতটুকু একবার শুনলেই বুঝা যায়। ভিডিওর কনসেপ্ট-টা আমার কাছে খুব একটা ক্লিয়ার না। ভাল কথা, এরিয়াল কিন্তু বিলবোর্ডের নাম্বার ১ সিংগেলস ছিল।

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে


২০০৩ এ আরেকটা এলবাম বের করে ওরা নাম ছিল স্টিল দ্যা এলবাম। উল্লেখযোগ্য গান ছিল বুম! ৯/১১ মুভির ডিরেক্টর মাইকেল মুরকে দিয়ে এর মিউজিক ভিডিও বানানো হয়। গান এবং মিউজিক ভিডিও দুটার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ইরাক যুদ্ধের প্রতিবাদ। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে জটিল, আমি বলব পারফেক্ট।

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে



সিসটেম অফ এ ডন নিয়ে অনেক কথাই লিখলাম। এখন অল্টারনেটিভ মেটাল নিয়ে আরেকটু ত্যাঁনা পেচাই;)। উইকিপিডিয়াতে লেখা ডেফিনিশনটা দেই, আমি নিজেও মুটামুটি এটাই ঠিক বলে মনে করি,
Most notably, alternative metal bands are characterized by heavy guitar riffs; typically, these riffs have a pronounced experimental edge, including unconventional lyrics, odd time signatures, more syncopation than typical metal, unusual technique, a resistance to conventional approaches to heavy music and an incorporation of a wide range of influences outside of the metal music scene.


উপরে বেশ কিছু গান তো শুনলাম সিসটেমের, আমার মত আপনারাও চিন্তা করে দেখুন সম্ভব এদের কোন জাঁনরেতে ক্লাসিফাই করা? রক/মেটালের সব বৈশিষ্ট্য পাবেন কিন্তু স্পেসিফিক কিছু বলা অসম্ভব। গীটারিস্ট মালাকিয়ান এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, 'কেউ কেউ আমাদের রিফে নিউমেটালের টাচ পান। হাস্যকর, আমাদের চরম অপছন্দের গান নিউ-মেটাল। ফলো করার কোন প্রশ্নই উঠেনা। ব্যাক্তিগতভাবে আমি গানের ভক্ত, কিন্তু সেটা কোন স্পেসিফিক ব্যান্ড বা স্পেসিফিক টাইপের গানের না।' ভোকাল সার্জ সেম কথা বলেছেন, সম্ভবত ক্যারাঙ-এ, 'আমরা কখনোই কোন স্পেসিফিক টোনে গান গাওয়ার জন্য চেষ্টা করিনা। একই টাইপের গান মানুষকে আর কত শুনাব? কেউ কেউ দেখলাম প্রোগ্রেসিভ বলছেন, আসলেই কি তাই?' বেসিস্ট শাভো আরো স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড, 'আমাদের গান আপনি যা খুশি মনে করতে পারেন, যেই ব্যান্ডের সাথে খুশি কম্পেয়ার করতে পারেন। আমাদের ব্যান্ডে কম্পেয়ার আর গানের টাইপ কোন বিষয়বস্তু না, আমরা আমরাই, অন্য যারা গান গায় গায় তারা তাদের নিজেদের জায়গাতে.'


তারপর আসা যাক, সিসটেমের গানের ব্যবচ্ছেদে! আগেই বলেছি, গানের বিষয়বস্তুতে প্রধান থাকে সারা পৃথিবীতে আমেরিকার অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ, আর্মেনিয়ান গণহত্যার কথাগুলো থাকে রুপকভাবে। কিছু কিছু গানে গভীর রোমান্সের ছোঁয়াও পাওয়া যায়। এজায়গাটাতেই গতানুগতিক মেটাল ব্যান্ডগুলোর সাথে প্রধান পার্থক্য, সমাজ ভেঙে চুরমার কর, আগুন জ্বালাও-ফায়ারবিগ্রেডকে ছুটি দিয়ে বা কোন কোন ব্যান্ডের ইশ্বর/পরকাল এই ধরণের কথা, এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুপস্হিত।

ইনস্ট্রুমেন্টের কথায় আসা যাক। মিউজিক ভিডিওগুলোতে গীটারে দেখা যায় খালি চোখে একজন। তবে কনসার্টে এবং স্টুডিওতে সার্জ কিন্তু অহরহই গীটারে থাকেন। টেকনোলজি অনেক এগিয়েছে, ওদের গানে কিন্তু ইনস্ট্রুমেন্ট আরো অনেক অনেক বেশি ইউজ করা হয়। ইলেকট্রিক ম্যান্ডোলিন, সেতার, ১২ তারের গীটার, এক্যুস্টিক গীটার, ব্যারিটোন গীটার (ইলেকট্রিক), কি-বোর্ড এগুলো প্রায় গানই ব্যবহার করা হয়েছে। আনকমন ইনস্ট্রুমেন্টগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গীটার অথবা কি-বোর্ডের সাহায্যে কনসার্টগুলোতে বাজানো হয়।

ড্রামসে, ডালমিয়ান ব্যান্ডের সবচেয়ে ঠান্ডা সদস্য। তার সাধারণ সেটাপ ডাবল বেসের ড্রামস, কিন্তু ব্লাস্ট বীট তিনি ব্যবহার করেছেন খুবই রেয়ার। যেটুকু করেছেনও এটাও অনেকটা মডভেইনের ড্রামারের মতই, বীটের টেম্পো বেশ কম থাকে, মেইনস্ট্রীমের অন্যান্য মেটাল গানের মত কলজে কাঁপানো না! তার কাজগুলো আনকমন, কারণ সিসটেমের বেশিরভাগ গানেই কোন সিসটেমিক বা ফিক্সড টাইমিং নেই কোরাস বা ভার্সের, ড্রামসের টেম্পো অন্য কেউ জীবনে পারবে কিনা সন্দেহ! সত্যি কথা বলতে কি, কোরাস/ভার্স বা ভার্স/কোরাস এরকম স্ট্রাকচারে ওদের সব গান ফেলাও যায় না। আরেকটা কথা, ওদের গানে মিডল ইস্টের বেশ ভাল প্রভাব দেখা যায়, এর পেছনে ডালমিয়ানের ভূমিকা অনেক। তার সেটাপে পারকিউশনের ইউজ অনেক, অন্যান্য ড্রামারদের তুলনায় (পারকিউশন বলতে ড্রামসের ক্রাশ বা হাই হ্যাটের কথা বলছিনা)। স্নেয়ারের ইউজও অনেক করেন কোন কোন গানে।বেসিস্ট শাভো তার কাজে ছিলেন অসাধারণ।

এবার বাকি দুজনের কথা্য আসি। সার্জ এবং ড্যারন দুজনেই কিন্তু কবি;) লিরিকসগুলো মুটামুটি দুজনেরই ঠিক করা। ব্যান্ডের এহেন নামকরণের উৎসও হচ্ছে কবিতা, মালাকিয়ানের 'ভিকটিমস অফ এ ডন' কবিতাটি। মেইন ভোকাল সার্জ, ব্যাকআপ ড্যারন। তবে দুয়েকটা গানে ড্যারন মেইন ভোকালের কাজও করেছেন, গানের গলা চমৎকার। সার্জের গলা খুব যে আহামরি মেটাল উপযোগী গলা, তা কিন্তু নয়। সিসটেমের কোন গানকে কিন্তু হেভি মেটালে ফেলার কোন অপশন এমনিতেও নেই, অল্টারনেটিভ মেটাল বলাটাই শ্রেয়। আবার দুয়েকটা গানে সার্জকে মেটালকোরের ভয়েসে চেচামেচি করতেও দেখা গেছে (সাপোজ, সুগারের শেষের দিকে)।গ্র্যামি জেতা গান বিওয়াইওবি-তে কোন কোন জায়গায় মেটালই মনে হয়েছে পুরা কম্পোজিশনটাকে। মোটকথা সবার থেকে আলাদা হওয়ার সব উপকরণ ওদের গানে সবসময়ই ছিল।

ড্যারনের গীটার সেন্স অসাধারণ। এনার মাঝেও গীটারের অড টাইমিং-এর ব্যবহার প্রায় সবসময়ই দেখা যেত। ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে কনসার্টে আর পরবর্তীতে স্টুডিওতে জ্যাকসন গীটার ব্যবহার করতেন। তবে মেইন চয়েস ছিল গিবসনের এসজি আর আইবানেজের আইসম্যান।বেশ কিছু গানে ড্রপ সি দিয়ে কাজ সেরেছেন, তবে সবসময় না। আসলে কোন স্পেসিফিক গন্ডিতে আবদ্ধ থাকাটা ব্যান্ডের কারোরও স্বভাবজাত নয়। এমনিতে গীটার ওয়াল্ড ম্যাগাজিনের চোখে ড্যারন মালাকিয়ান ওয়াল্ডের ৩০ টম সেরা মেটাল গীটারিস্ট (সবসময়ের সেরা ১০০ মেটাল গীটারিস্টের মাঝে)।




যাই হোক। ২০০৫-এ ডাবল এলবাম রিলিজ করে বসল সিসটেমরা, Mezmerize আর Hypnotize । দুই এলবামের প্রতিটা গানই জনপ্রিয়তা পেল। এর মধ্যে B.Y.O.B. গানের জন্য সিসটেমরা ২০০৬ সালের গ্র্যামিতে পায় হার্ডরকের জন্য গ্র্যামি (B.Y.O.B.= Bring Your Own Bombs)। এই গানটাও ইরাক যুদ্ধের প্রতিবাদের জন্যই রচিত। এর রিফটা গীটার-ওয়াল্ডের চোখে ৭৬তম বেস্ট মেটাল রিফ, সবসময়ের। গানের শেষের দিকে সার্জ গাইতে থাকেন "Why do they always send the poor?" ধ্রুব সত্য!

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে


মিডল ইস্টের সুর দেখা যায় কোশ্চেন এবং হিপটোনাইজগ গানে। দুইটা গানের সুরে কিছুটা বিষন্নতার ছায়া আছে, লিরিকসগুলো ওদের জন্য যা হওয়া উচিত তাই;)

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে


এটাই ওদের শেষ গ্র্যামি নমিনেশন পাওয়া গান। লোনেলি ডে গানটা ২০০৭এ হার্ডরকে গ্র্যামি নমিনেশন পেয়েছিল, হেরে যায় উলফমাদারের ওম্যানের কাছে (জঘন্য একটা গান; এজন্যই গ্র্যামির জুরি বোর্ডকে ছাগলের পাল মনে হয়।) এই গানে মেইন ভোকাল ড্যারন মালাকিয়ান, কিবোর্ডে ছিলেন সার্জ।

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে


কনসার্টে কি করে তার উদাহরণ দেই দুইটা;)

ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে


ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে


ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে





সিসটেম অফ এ ডন হায়েটাসে আছে ২০০৬ থেকে। হায়েটাসের কারণটা ঠিক স্পষ্ট না কারো কাছেই। ব্যান্ড মেম্বারদের মাঝে এখনো চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান। গেল বছরের পর এই বছরও সব মেম্বারকে একসাথে স্টেজে পারফর্ম করতে দেখা গেছে সিসটেমের গান, কিন্তু অন্য ব্যান্ডের প্রোগ্রামে। সার্জ এইমুহুর্তে সলো ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যাস্ত, ড্যারন ড্রামার ডালমিয়ানকে নিয়ে নতুন ব্যান্ড বানিয়েছেন স্কারস অন ব্রডওয়ে। বেসিস্ট শাভো ওডাজিনকে পেলে একটা আছাড়ই মারতাম,শালা এখন হিপহপ গান ধরেছে, ডিজের চাকা ঘুরায় X((। বন্ধুদের মাঝে সম্পর্কটা চমৎকার, এমনকি ব্যান্ডকে ডিসব্যান্ডেড বলছেন না কেউ তারা। সার্জের সলো ক্যারিয়ারের শুরুতে ডালমিয়ান অনেকদিন তার পেছনে ড্রামসে ছিলেন। শাভো বেসে ছিলেন দুয়েকটা গানে। অসমর্থিত সূত্র বলছে স্কারস অন ব্রডওয়ের কিছু জ্যামিং-এ নাকি সার্জ ছিলেন। তাহলে সমস্যাটা কোথায় এক হতে? এই বছরের শুরুর দিকে শাভো টুইটারে মেসেজ দিয়েছিলেন, ফ্যানদের বলেছিলেন সবাই কি সিসটেমের জন্য রেডি? কিন্তু এর কিছুদিন পরেই সার্জ নিজে সবাইকে পরিস্কার করে বলেছেন অন্তত এই বছরেও সিসটেমের জোড়া লাগার কোন সম্ভবনাই নেই। আবার কিছু গুজবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ড্যারন মালাকিয়ান 'কে বলে সার্জের সাথে আমার বাজে সম্পর্ক? আমরা দুজনকে যে পরিমাণ শ্রদ্ধা করি, এতটা মনে হয়না কেউ কাউকে করি, আমরা দুজন এসব কোন গুজবকে পাত্তাই দেই না!'


তবে স্বভাব সবার এখনো আগের মতই আছে। শাভো একজন হিউম্যান এক্টিভিস্ট, গত বছর কমিউনিটি হিরোর এওয়ার্ডও জিতেছেন কোনখান থেকে জানি। সার্জ তার পুরান বন্ধু রেজ এগেইনস্ট দ্যা মেশিন (এক্স অডিওস্লেভ) এর গীটারিস্ট টম মরেলোর সাথে গড়ে তুলেছেন জাস্টিস অফ এক্সিস নামে একটা শান্তিমূলক সংগঠন, যার একমাত্র উদ্দেশ্য বিশ্বের যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে শান্তি, মানবাধিকার নিশ্চিত করা।



তা সিসটেম বাবারা, সবই তো পার তোমরা, সিসটেম অফ এ ডন-কে জোড়া লাগাতে তোমাদের সমস্যাটা কি? পুরানো তোমাদেরকে যে তোমাদের মত আমরাও মিস করি, টের পাওনা?







এমপিথ্রী ডাউনলোড লিংক:
War Click This Link
Spiders Click This Link
Sugar Click This Link
Chop Suey Click This Link
Toxicity (version 7.0) Click This Link
Aerials Click This Link
Boom! Click This Link
Lonely Day Click This Link
B.Y.O.B. Click This Link
Hynotize Click This Link
Question Click This Link



বি.দ্র: সিরিজের আগের পোস্ট, Mudvayne
আচ্ছা সিসটেম তো মুটামুটি বেশ পরিচিত ব্যান্ড বাংলাদেশে, আমার পোস্ট তো ঠিক মৌলিক না। সিসটেমের গানের কি নাম দেয়া যায়? আমার অপশন চারটা,
১) পাগলা রক/মেটাল ২) তারছিড়া রক/মেটাল
৩) এন্টি-আমেরিকা রক/মেটাল ৪) যুদ্ধ-যুদ্ধ মেটাল
অন্য কোন সাজেশন থাকলে সেটাও দিন, অথবা আমার অপশনগুলোতেও ভোট দিতে পারেন;)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১২ সকাল ৮:৩৩
৪৯টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×