somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেগাসিরিয়াল: ঢাকা কলেজ এবং আমরা .........পর্ব৮

২৩ শে জুন, ২০১০ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্বগুলো:
পর্ব১: টিচার এবং পারিপার্শ্বিকতা
পর্ব২: নবীনবরণ এবং ফার্স্ট ইয়ারের আরো কিছু মজার কথা
পর্ব৩: ক্লাশ এবং প্র্যাকটিকাল নামের কিছু প্রহসন!
পর্ব৪: সেসময়ের ছাত্ররাজনীতি!
পর্ব৫: আরেকটু ছাত্ররাজনীতি!
পর্ব৬: তখনকার পরিবহন ব্যবস্হা আর এখনকার অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবহন ব্যবস্হার সাথে মিল/অমিল!
পর্ব৭: আমার প্রিয় একটা জায়গা-লাস্ট ওয়ান; আর নামকরণগুলো!

প্রারম্ভিক কথা: রেগুলার লেখা হয়না, কিন্তু তাই বলে মেগাসিরিয়ালকে তো অন্য নাম দিতে পারিনা! ঢাকা কলেজে পড়ার সময়ের কিছু কথা নিয়ে শুরু করেছিলাম এই সিরিজ, আরেকবার দেখা যাক শেষ করতে পারি কিনা। ভাল লাগলে, সেটাই আমার প্রাপ্তি, কারণ কলেজে ঢুকার সময়ও কেউ টের পায়নি, বার হওয়ার সময়ও না। পড়ুন আর উপভোগ করুন দেশের একমাত্র বিজ্ঞাপনবিরতি বিহীন মেগাসিরিয়াল;)। শুরু হচ্ছে মেগাসিরিয়াল ঢাকা কলেজের ৮ম এপিসোড, ঢাকা কলেজ:৮; পরীক্ষা, পরীক্ষার গার্ড এবং ঢাকা কলেজের ব্যাচ নিয়ে কিছু কথা!



কেবলমাত্র ব্যাপক আলসেমির জন্যই মেগাসিরিয়ালটা রেগুলার লেখা হয়না। ঢাকা কলেজের সবই স্পেশাল;) পরীক্ষার গার্ড বা ফাইনালটাই বা বাদ পড়বে কেন? এখানেও আনকমন!



কলেজে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালে গার্ড ঠিক মতই পড়েছিল। বেশ স্ট্রং গার্ড ছিল বলতে হবে। আগেই বলেছি গ্যালারীর বেঞ্চগুলো ছিল বিশাল, একেক বেঞ্চে মোট ৬জন করে বসিয়েছিল, পরে অপশনালগুলোর (ম্যাথ/বায়োলজি) সময় পার বেঞ্চে ৩জন করে দেয়া হয়। ৬জন করে বসালেও দুজনের মাঝে ২ফিটের মত ডিসটেন্স থাকত। আর কড়া গার্ডে জন্য খুব একটা লাভও হত না:(। ইয়ার ফাইনাল সবাই দিয়েছিল রেজাল্টের মজাগুলো মেগাসিরিয়ালের ২য় পর্বে বলেছিলাম।


সেকেন্ড ইয়ারে হয়েছিল আরেক মজা। বেশিরভাগ পরীক্ষাই কেউ দিত না, ফাইনাল মডেল টেস্ট যেটা হয়েছিল কলেজে, সাইন্সের সবার সিট এক গ্যালারিতেই পড়েছিল। হা হা হা, সিনটা চিন্তা করেন, প্রায় ৭৫০জন স্টুডেন্ট ছিল সাইন্সে, ফাইনাল মডেল টেস্ট দিয়েছিল ৯০~৯৫জন, দুয়েকজন আবার সব পরীক্ষা দেয়নি পর্যন্ত:):) সেকেন্ড ইয়ারের বেশিরভাগ পরীক্ষাতেই গার্ড পড়তেন যে টিচার, তার এক চোখ টেরা ছিল। পুরা পরীক্ষার টাইম সবাই টেনশনে থাকতাম স্যার আসলে কোনদিকে তাকিয়ে আছেন- বেশিরভাগ সময়েই মনে হত আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। তবে আস্তে আস্তে বুঝে ফেললাম স্যার এমনিতে বেশ ঠান্ডা মানুষ, যার দিকেই তাকিয়ে থাকুন না কেন, বাড়াবাড়ি না করলে স্যার কিছুই বলেন না! ইউজার ফ্রেন্ডলি স্যার;)


তো এই স্যারের গার্ড দেয়া এক পরীক্ষার একটা মজার ঘটনা বলি। ক্যালকুলাসের একটা অংক পারছিলাম না, সামনের বেঞ্চের একজন দেখি অংকটা পারে এবং শেষ করে ফেলেছে প্রায়। আশেপাশে দেখে সাবধানে ডেকে বললাম, তুমি ** অংকটা করেছ? ওর খাতা খোলা আমার চোখের সামনে, ও বলল, না করিনি, পারিনা। বলে ঘাড় ঘুরিয়ে ফেলল! =p~ =p~ =p~ ভাল ছেলে!


এবার ফাইনালের ঘটনা বলি। আমাদের আগের পরের বেশ কয়েকটা ব্যাচের সিট পড়েছিল ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজে। কলেজটা বেশ সুন্দর, গোছানো ছিমছাম পরিবেশ। পরীক্ষা দিতে যেয়ে আমার পরিবেশটা ভালই লেগেছিল। ইন্টারের রোল পড়েছিল পেছন থেকে সামনের দিকে। ওহ, একটা জিনিস বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, কলেজে রোল শুরু হয়েছিল এ সেকশনে ১,২ করে ১৯০ পর্যন্ত এবং তারপর বি সেকশনে ১৯১ থেকে তারপর সি সেকশনে ৪০০ বা এর কিছু পর থেকে, এভাবে। সেকেন্ড ইয়ারে নতুনি কিছু ছেলে ভর্তি হয় কলেজে, বেশিরভাগই নটরড্যাম থেকে আর অন্য কিছু কলেজ থেকে বিভিন্ন পারিপার্শিক ঝামেলার জন্য। তো ফাইনালের রোলটা শূরু হত একদম লাস্টে যে থাকত সি সেকশনের তাকে দিয়ে আস্তে আস্তে এ সেকশনের গুলোর দিকে। আমার রোল ছিল এ সেকশনে ৬, তাই স্বভাবতই আমার রোল পড়েছিল একদম শেষের দিকে। নিচতলা থেকে বসানো শুরু করেছিল, আমার সিট পড়েছিল সম্ভবত পাঁচতলায় (চারতলাতেও হতে পারে এখন কনফিউশনে পড়ে গেলাম:(:()


যাকগে তিনতলা আর দোতলায় কয়েকটা রুমে এসি ছিল, আমরা পরীক্ষা শুরুর আগে বি আর সি সেকশনের বন্ধুদের কয়েকজনের কপাল খুলে গেল দেখে হিংসায় জ্বলতে লাগলাম X( X( । কিন্তু পরে দেখলাম আমাদের কপালই সবচেয়ে ভাল। আমাদের রুমে পুরা পরীক্ষায় দুইজন ফিক্সড গার্ড ছিলেন এবং এনাদের মত মানুষ আর হয় না:):) প্রথম পরীক্ষার দিনই একজন বলে দিলেন, না পারলে আমাকে বল, হেল্প করব, নিজেরা কোন কথা না, সাইলেন্ট দেখতে চাই পুরা হল। আর আমি নিজেও ঢাকা কলেজে পড়ে এসেছি, জানি ভেতরের সব কিছুই সেই মত চললে নিজেদের ভাল করবে। এবং বাস্তবিকই দেখা গেল, যারা যারা গ্রামারে টুকটাক সমস্যা নিয়ে স্যারকে ডাকল, কিছুটা হলেও আসলেই বলে দিলেন!! আমরা তো মহাখুশি- ঈদের মাস পুরা। পরীক্ষা শেষে নিচে নেমে শুনি, এসিরুমগুলোতে সবচেয়ে কড়া গার্ড ছিল, ওরা ঘাড় ঘুরানর সাহসও নাকি পায়নি গার্ডদের জন্য:):)


তবে আমার কপাল খুবই খারাপ ছিল। আমার পেছনে যেই ছেলেটা বসেছিল, ওকে আমরা সবাই চিনতাম চরম বাঁদরামির জন্যই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় পুরাটা পরীক্ষা এতটাই যন্ত্রণা করেছিল আমাকে বলার মত না। শেষের দিকে ওকে একদিন বলেছিলাম- তুই আমাকে আর একবার ডাকবি, স্যারকে বলে দেব আজকে, এটার পর কিছুটা কমেছিল। ওর কারণে ম্যাথের সেকেন্ড পার্টের দিন গার্ড আমার আর ওর দুইজনের খাতাই নিয়ে আটকে রেখেছিলেন কিছুক্ষণ। ঐদিন পরীক্ষার পর ওকে সামনে পেলে একটা আছাড়ই মারতাম। আমার পাশে অন্যান্য বন্ধু যারা বসেছিল ওরা পর্যন্ত বলেছিল, ওর জন্য তোর(আমার) নাম্বার অন্তত ৫০ কমেছে টোটালে।


আরেকটা ছোটখাট জিনিসের কথা উল্লেখ করি খানিকটা। আমাদের আগের ব্যাচ এবং আমাদের ব্যাচে স্টুডেন্টদের ওভারঅলে মেইন দুর্বলতা ছিল ম্যাথে আর ফিজিক্সে। এসএসসিতে পরীক্ষা শুরুর কয়েকদিন আগে ডিক্লেয়ার এসেছিল ম্যাথে বইয়ের অংক হুবহু আসবে না ফিগার এবং সিম্বলগুলো চেন্জ হবে। এটার ফল পড়েছিল রেজাল্টে, ম্যাথের জন্য পাসের হার খানিকটা হলেও কমেছিল। আর ফিজিক্সে স্টুডেন্টদের আতংক স্বভাবজাত বলব না ট্রেন্ড বলব, বুঝি না। আমি নিজে ভার্সিটিতে স্ট্যাটের উপর অনার্স মাস্টার্স করেছি, কিন্তু অনেকটা লম্বা সময় পর্যন্ত গভীর টান ছিল ফিজিক্সের প্রতি। ফিজিক্সের পরীক্ষাগুলোর কথাটাই বলি।


ফিজিক্স ফার্স্ট পার্ট পরীক্ষার দিন আম্মার ছুটি ছিল, পরীক্ষার হলের বাইরে ওয়েট করছিলেন গার্জিয়ানদের সাথে (ইন্টারে আম্মা আমার প্রথমদিকের কয়েকটা পরীক্ষার সময় ছুটি নিয়েছিলেন)। ফিজিক্স ফার্ষ্ট পেপার পরীক্ষা কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ভেতর থেকে এক পিয়ন বেরিয়েছিল কি একটা কাজে যেন, গার্জিয়ানরা ওর কাছেই জানতে পেরেছিলেন, প্রশ্ন খুবই খারাপ হয়েছে সম্ভবত, ছেলেরা বেশিরভাগই হাত গুটিয়ে বসে আছে। প্রশ্ন কিছুটা ক্রিটিকাল হয়েছিল সত্যিই, আগের বছরের কিছু জিনিস সম্ভবত রিপিট করেছিল। আম্মা আমাকে নিয়ে বেশি টেনশন করেনি, জানতেন আমার ফিজিক্স প্রীতির কথা। সেকেন্ড পেপারের দিনও কিভাবে জানি জেনে ফেলেন সবাই- প্রশ্ন বেশ ভাল হয়েছে, সবাই ধুমসে লিখছে:):)


প্র্যাকটিকাল পরীক্ষার কথা আর লিখলাম না, বেশ খানিকটা আগের পর্বেই সম্ভবত বলে ফেলেছি। কেমিস্ট্রির ঘটনা বলি একটা। এমনিতেই মামুরা সব ব্যবস্হা করে রাখেন যেন ওমেকার টাচ পাওয়া কারো বিন্দুমাত্র সমস্যা না হয়। লবণ পেয়েছিলাম সুবিধামত, মেলাতেও সমস্যা হয়নি তেমন একটা। যেই টিচার ভাইভা নিচ্ছিলেন, তার সাথে একটা কথা নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। আমাকে লবন এবং কেমিস্ট্রি রিলেটেড যা যা কোশ্চেন করেছিলেন, সব পেরেছিলাম! তারপর জানতে চাইলেন- এসএসসিতে মার্কস কত, বাবা কি করেন কোথায় থাকি, কার সাথে থাকি, ইত্যাদি। লবণের টেনশনে শেষ প্রশ্নটার উত্তরে ভজঘট লাগিয়ে ফেলেছিলাম, উত্তর দিয়েছিলাম ফ্যামিলির সাথে থাকি! স্যার তো পুরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন, ফ্যামিলির সাথে থাক মানে? বিয়ে করেছ নাকি, এ্যাঁ? বাবামার সাথে থাকলে সেটা ফ্যামিলির সাথে থাকা বলে? :|:|ভুল হয়ে গিয়েছে, স্বীকার করে সরি বললাম, তখন বললেন, ঠিক আছে যাও, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে;)। ভাল করে পড়াশুনা কর....




বাকি অংশ বলার আগে একটা কথা প্রথমেই বলে নেই, সামনে ব্যাপক গীবত করা হয়েছে (আল্লাহ মাফ করুন আমাকে!!)

ঢাকা কলেজের স্টুডেন্টদের ব্যাচে পড়াটাও কিছুটা বৈশিষ্ট্যপূর্ন বটে! আমরা যখন পড়তাম কলেজে কয়েকজন টিচারকে দেখতাম ঢাকা কলেজ সম্পর্কে একটা বাজে দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করতেন (এখনও করেন)। এমন না যে, আর কেউ করেন না, তবে টিচারদের জন্য জিনিসটা আমার চোখে খুব একটা ভাল মনে হয়না। যত উড়াধুরা কলেজই হোক না কেন, প্রচুর স্কোর না থাকলে এইচএসসি লেভেল ভর্তি হওয়া যেত না কলেজে, এবং মনে রাখতে হবে, তখনকার স্কোরিং সিসটেম এখনকার চেয়ে অনেক ডিফারেন্ট ছিল। এতটা অবজ্ঞা দেখাতেন কোন কোন নামকরা টিচার যে তাদের কাছে পড়তে যেতে বিন্দুমাত্র উৎসাহই পাইনি আমি!!


আমি শুধু একজন টিচারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব আজকে। সাইন্সের স্টুডেন্টরা ফিজিক্সে ঢাকা শহরের সবচেয়ে সেরা বলতে ড. রানা চৌধুরী স্যারকেই চেনেন। তাঁর মত টিচার আমি কমই দেখেছি। কি পড়ানোর স্টাইল, পড়া আদায়ের স্টাইল, পরীক্ষা.....সবদিক থেকেই। তবে বাসায় ফোন করতেন একটু বেশি, এটা নিয়ে আমাদের অনেকেরই কিঞ্চিত এলার্জি কাজ করত!!! কিন্তু আমি নিজে পরে দেখেছি, তাঁর মাপের টিচার খুবই কম আছে ঢাকা শহরে। রিসেন্টলি সম্ভবত রিটায়ার্ড করেছেন।


তবে কথা তাঁকে নিয়ে নয়। তাঁর একজন বিখ্যাত স্টুডেন্টকে নিয়ে, যিনি নিজেও ফিজিক্সের নামকরা টিচার(ইনিই সেই বিখ্যাত শিক্ষক যার কথা কলেজের বাটপারি ফানপোস্টে বলেছিলাম)। তার কাছে পড়তে বাধ্য হয়েছিলাম, কারণ ফার্স্ট ইয়ারে রানা স্যারের কাছে যেতে আমি দেরি করে ফেলেছিলাম, কোন ব্যাচেই জায়গা ছিলনা আর (উনিও ঢাকা কলেজের জন্য আলাদা ব্যাচ মেইনটেইন করতেন, গণ ব্যাচ না অন্য কলেজের সাথে, কেবল কলেজের টাইমের সাথে ম্যাচ করার জন্যই)। তো আমি যার কাছে পড়েছিলাম ফার্স্ট ইয়ারে, প্রথমেই তার সাথে আমার আম্মার টক্কর লাগল টাইম নিয়ে। আম্মা তাকে বললেন, স্যার, আপনি ৮.৩০ এ ছুটি দিলে কলেজের ৮টার ক্লাশ তো ধরা সমস্যা হবে ছেলেদের জন্য। পড়ার টাইম একটু এদিক সেদিক করা যায় না? কঠিন উত্তর, তাহলে ঢাকা কলেজের ব্যাচই পড়াব না, ওদের যদি কারো পড়তে সমস্যা হয় চলে যেতে পারে! (তবু টাইম চেন্জ হবেনা!!)।


ভাল কথা, সব মেনেই পড়তে গেলাম। শীতের সকালে সূর্য উঠে ৬.৪৫এ, ফজরের আজানের জামাতই হয় মনে হয় ৬.৩০এ হত। কঠিন অন্ধকারে কুয়াশার ভেতর দিয়ে যেতাম- ৭টায় পড়া। ৭.০৫ এ ঢুকলে, এত দেরী কেন, পুরা ৩০০ সেকেন্ড লেট! আসতে সমস্যা হলে পড়া ছেড়ে দাও! আধমিনিট দেরীতে ঢুকলেও, পুরা ৩০সেকেন্ড লেট! পরীক্ষা নিতেন; ৫০এ পরীক্ষা, ৪০এ পাসমার্ক, ফেল করলে বাসায় গার্জিয়ানকে ফোন, বাসায় ফিরে গার্জিয়ানের দাবড়ানি। পুরাটা ফার্স্ট ইয়ার এলার্ট ছিলাম এই বুঝি বাদ দিল ব্যাচ থেকে (একটা সচেতনতা সৃষ্টিকারী এ্যাড দেখাত টিভিতে এক কথায় বউকে তালাক দিয়ে দিয়েছিল এক লোক- আমাদের অবস্হা মুটামুটি ওরকমই ছিল:(:()। সমস্যা নেই এতে, কিন্তু তিনি কি খুব ভাল পড়াতেন? আমি আজ প্রায় ১০বছর পর বলছি, মোটেও না। যে ভাবটুকু তিনি ধরতেন, তিনি মোটেও সেরকম টিচার না। আবার সব ব্যাচে কঠিন হুশিয়ারি থাকত, রানা স্যারের কাছে পড়লে তার কাছে পড়ার দরকার নেই। ফার্স্ট ইয়ারের একটা ফাইনাল নিয়েছিলেন, শর্ত ছিল খাতা আনার সময় গার্জিয়ান নিয়ে যেতে হবে। নিয়ে যাইনি, এই দোষেই সেকেন্ড ইয়ারে আমি বাদ!! ৭৫এ পাস মার্ক ছিল ৫২, পেয়েছিলাম মনে হয় ৪৬, প্রথমে জানতে চাইলেন গার্জিয়ান ছাড়া কেন আসলাম। তারপর, আমিই বললাম সেকেন্ড ইয়ারের পড়া কবে শুরু করবেন স্যার? উত্তর ছিল এরকম, কিসের সেকেন্ড ইয়ার? কিসের সেকেন্ড ইয়ারের পড়া?? একটা জিনিস বলার লোভ সামলাতে পারলাম না আজকে, 'স্যার, ফিজিক্স আমি খুবই ভাল শিখেছিলাম, কিন্তু তাতে আপনার বিন্দুমাত্র অবদান নেই, নিজের চেষ্টাতেই শিখেছিলাম!'


আরো দুয়েকজনের কথা বলতে ইচ্ছা করছে আজকে! বাংলার এক ফেমাস টিচারের কাছে মডেল টেস্ট দেয়ার ইচ্ছা নিয়ে গিয়েছিলাম (বেলী রোডে পড়াতেন, নামটা মনে নেই এখন)। আমি বিবিএ না করেও বুঝেছিলাম সেখানে ব্যবসা কি জিনিস!! বিশাল রুম, অন্তত ৩৫/৪০ জন পড়ছে একরুমে। আমার এক ফ্রেন্ড আমার হয়ে টাকা দিয়ে এসেছিল, ছাড়তেও পারছিলাম না। ভররররররররররর করে কি যে বলত, আমি একটা কথাও বুঝতাম না। ঐ ব্যাচের নাম ছিল ঢাকা কলেজের ব্যাচ, কিন্তু আদতে থাকত সব কলেজের।


আগেই বলেছি সব টিচার এরকম ছিলেন না। যেমন কেমিস্ট্রির ইমাম স্যারের কাছে পড়তাম, স্যার নিজে ভোজনরসিক ছিলেন, আমাদেরও মাঝে মাঝে নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে সম্ভবত ফ্রেশ থেকে সিঙ্গারা/সমুচা এনে খাওয়াতেন। দেবনাথ স্যারের কথা আগেও বলেছিলাম (ওনার কাছে পড়েই আমার বায়োলজির প্রতি সত্যিকারের একটা আগ্রহ জন্মেছিল!)। স্যার প্রচুর জানেন, পড়ানোর সময় নিজের স্টুডেন্ট লাইফের বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টের কথা বলতেন (একবার ২টা টাকি মাছের পেট সিলাই করে একসাঠে করে একুরিয়ামে ছেড়ে দিয়েছিলেন, ৩মাস পর নাকি সিলাই কেটে দেখেন, মাছ ২টা সম্পূর্ণ জোড়া লেগে গেছে! ডিটেইলস ব্যাখ্যা আজ মনে নেই:()। স্যারের ব্যবহার আজও মনে আছে, এত সুন্দর বিহেভ করতেন, সবার ভীড় লেগে থাকত স্যারের কাছে পড়ার জন্য!




আমার আরেকটা শয়তানির কথা বলে শেষ করি ()। ক্লাসে এক আতেঁল ছিল, একদিন আমরা কয়েকজন মিলে প্ল্যান করলাম ওকে একটা ধাক্কা মারব। কিন্তু এমনভাবে যেন সে ঘুনাক্ষরেও বুঝতে না পারে, কাজটা কার! কঠিন একটা প্ল্যান করলাম, মোট ৪ জনকে নিয়ে। স্টার্ট করব আমি, ২য় জনকে ধাক্কা মারব, ও যেয়ে পড়বে ৩য় আরেকজনের উপর, থার্ডজন পড়বে ৪র্থ জনের উপর এবং চতুর্থজন হাতপা ছড়িয়ে ফাইনাল ধাক্কাটা দেবে ভিকটিমকে। প্ল্যান করে হাসতে হাসতে শেষ সবাই! ক্লাস শেষ হওয়ার পর যখন অপারেশনে গেলাম- বাস্তবে দেখা গেল, মজার চোটে নাকি বেশি উৎসাহ এসে পড়েছিল কে জানে, প্রতিটা স্টেপে ধাক্কার জোড় অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ৪র্থ ছিল মাইকেল হোল্ডিং ও যেভাবে দুইহাত ছড়িয়ে ফিনিশিং টেনেছিল, আমি নিজেই বুঝতে পারনি এটা একটা সাজানো এমবুশ ছিল। কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি জায়গা এমবুশের জায়গা নির্ধারণে সেটা মাথায় ছিল আমদের; ঐ ছেলে খালি ধাক্কা সামলাতে ক্লাশেরই আরেকজনের উপর পড়েছিল আর হাত থেকে ব্যাগ পড়ে গিয়েছিল! ঘটনার ঘনঘটা দেখে ও তাজ্জব হয়ে গিয়েছিল, কি হয়েছিল বুঝতেই পারেনি;)





***খুব সম্ভবত আগামী পর্বেই শেষ হয়ে যাবে মেগাসিরিয়াল। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১২ সকাল ৭:৪৪
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×