নিজ দলের সমালোচনা করলে দলে আত্মশুদ্ধি হয়।
----------------------------------------------------
নিজ দলের সমালোচনা করা প্রত্যেক নেতা-কর্মীর নৈতিক দায়িত্বরাজনৈতিক ফরজ। সমালোচনার মধ্য দিয়েই একটি দল শুদ্ধ হয়, নেতৃত্ব সঠিক পথে ফিরে আসে। আওয়ামী লীগ বিগত দেড় দশকে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ইত্যাদি নিঃসন্দেহে অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে এই সাফল্যের পাশাপাশি কিছু নীতিগত ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল অদূরদর্শী, যা রাষ্ট্র ও দলের জন্য অপ্রয়োজনীয় ক্ষতির কারণ হয়েছে।
প্রথমত, বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, যদিও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। তাঁকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখা ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া মানবিকতার পরিপন্থী ছিল। তিনি বিদেশে গেলে রাষ্ট্রের কি এমন ক্ষতি হতো? বরং রাজনৈতিক সৌজন্য প্রদর্শন করলে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো।
দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মাত্র এক টাকায় তাঁকে এই বাড়ি দিয়েছিলেন। সেখান থেকে উচ্ছেদ করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। এর থেকে রাষ্ট্র বা সরকারের কোনো লাভ হয়নি; বরং সমাজে বিভাজন আরও তীব্র হয়েছে।
তৃতীয়ত, ১৯৭২ সালের সংবিধান। সেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার প্রতিফলন। কিন্তু বহুবার জনমত ও নাগরিক সমাজের দাবি সত্ত্বেও সেই অবস্থায় ফেরা হয়নি। ফলে ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার পথ খোলা রয়ে গেছে। শেখ হাসিনার সুযোগ ছিল ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইতিহাসে অমর হওয়ার, কিন্তু সেই পদক্ষেপ তিনি নেননি।
চতুর্থত, শিক্ষানীতি। একটি দেশে একটিই কারিকুলাম থাকা উচিত। অথচ বাংলাদেশে দ্বৈত শিক্ষা ব্যবস্থা বজায় রাখা হয়েছে এবং মাদ্রাসার সার্টিফিকেটকে সাধারণ শিক্ষার সমমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এটি ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। সরকার ভেবেছিল এর মাধ্যমে রাজনৈতিক সমর্থন আদায় হবে, কিন্তু এর বিপরীতে সমালোচনাই বেড়েছে। শিক্ষার মানও হয়েছে আরও খণ্ডিত।
পঞ্চমত, বিরোধী দলের অধিকার। মিছিল-মিটিংয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের দমন করা হয়েছে পুলিশ ও দলীয় কর্মী দিয়ে। এটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গণতন্ত্রে বিরোধীদলের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখার অর্থই হলো গণতন্ত্রের প্রাণশক্তিকে নিঃশেষ করা।
রাজনীতিতে ভুল-ভ্রান্তি থাকবে, কিন্তু সেই ভুল সংশোধনের সুযোগও থাকতে হবে। দুর্নীতি, সহিংসতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কোনো দলই এর বাইরে নয়। বিএনপি আমলেও দুর্নীতি ছিল পাহাড়সম, অথচ আজ তারা নির্দোষ ফেরেশতার মতো আচরণ করছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়নের স্বীকৃতি আছে, তবে রাজনৈতিক দমননীতি তাদের সাফল্যকে কলঙ্কিত করেছে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র টেকসই হবে কেবল তখনই, যখন সব দল সমান সুযোগ পাবে। বিএনপিবিহীন নির্বাচন যেমন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, তেমনি আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হবে না।
আমাদের প্রয়োজন-
দুর্নীতির নিরপেক্ষ বিচার, দলনির্বিশেষে।
১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
সমন্বিত ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা।
বিরোধী দলের পূর্ণ রাজনৈতিক স্বাধীনতা।
নিজ দলের সমালোচনা করা কাপুরুষতা নয়, বরং প্রকৃত দেশপ্রেম। যেদিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নির্ভয়ে নিজেদের দলের ভুল তুলে ধরতে পারবেন, সেদিন থেকেই দল ও জাতি সত্যিকার অর্থে শুদ্ধির পথে যাত্রা করবে।
-- সালাউদ্দিন রাব্বী
সংখ্যালঘূ বাচাও আন্দোলন।
বাংলাদেশ।


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



