somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রতিক সহিংসতা, দুর্নীতি ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রতিক সহিংসতা, দুর্নীতি ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বরাবরই বিতর্কিত। তবে গত এক বছরে যে দৃশ্যপট দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে, তা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ ও নজিরবিহীন।শেখ হাসিনার দীর্ঘ সময়ের শাসনামলে নানা উন্নয়নকাজ হয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্যায়, দুর্নীতি, দমন-পীড়ন এবং প্রাণহানির যে চিত্র প্রকাশ্যে এসেছে, তা জাতিকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে।

দুর্নীতির প্রসঙ্গে আজ আর নতুন করে বলার কিছু নেই। বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয় বড় দলেরই শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ বহুবছর ধরে প্রচলিত। ক্ষমতার পালাবদলে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার চলে, কিন্তু জনগণ এখনো নিরপেক্ষ ন্যায়বিচারের স্বাদ পায়নি। প্রশ্ন জাগে যে বিচারক বা প্রতিষ্ঠান বিচার করবে, তারা কি নিজেরাই দুর্নীতির বাইরে? ফলে জনমনে আস্থা তৈরি হয়নি। মানুষ আজ চায়, যে-ই হোক না কেন, যার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ আছে, সবার সমান বিচারের আওতায় আসুক।

তবে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সহিংসতা। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের দমন করতে পুলিশ, আনসার, এমনকি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের হামলার ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটতে থাকে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছে। কিছু প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ২০০ থেকে ১,৪০০ পর্যন্তও উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ইউনূস সরকার ৫৫৮ জনের তালিকা দিতে সক্ষম হয়েছে। ৩০০০ পুলিশ হত্যার অভিযোগও আছে বর্তমান ক্ষমতাসীনর নামে। যদিও সঠিক সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবে এটুকু নিশ্চিত বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে এত প্রাণহানি আগে কখনো ঘটেনি। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্র, পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এবং পুলিশ সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন।

এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞে ছাত্র হত্যা, সাধারণ নাগরিক হত্যা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। যে রাষ্ট্র নাগরিকের জীবন রক্ষা করার দায়ভার বহন করে, সেই রাষ্ট্র যদি উল্টো মৃত্যুর মিছিলে অবদান রাখে, তবে তা নিঃসন্দেহে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।

মানুষের মৌলিক দাবি হচ্ছে বিচার। হত্যাকাণ্ড হোক ছাত্রের, পুলিশের, কিংবা অন্য কোনো নিরীহ নাগরিকের সবারই বিচার হতে হবে। বিচার যেন বাছবিচারহীন হয়, এটাই জনগণের প্রত্যাশা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিচার ব্যবস্থাই যখন প্রশ্নবিদ্ধ, তখন এই ন্যায়বিচার কীভাবে আসবে? অনেকেই বলেন, দেশে স্বাধীন, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা গড়ে না উঠলে, বা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংস্থার সম্পৃক্ততা না থাকলে, প্রকৃত বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিহিংসা ও দলীয় স্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। প্রতিবারই ক্ষমতায় থাকা দল নিজেদের নিরাপদ রাখতে বিচারকে ব্যবহার করেছে হাতিয়ার হিসেবে। আর এ কারণেই জনগণের কাছে “সব চোরের বিচার হোক”এই স্লোগান আজ জাতীয় চেতনায় পরিণত হয়েছে।

আজকের বাংলাদেশের বড় প্রয়োজন হলো নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা। নইলে এই সহিংসতা, দুর্নীতি ও অন্যায়ের চক্র কখনোই ভাঙবে না। যেদিন সত্যিকার অর্থে সব হত্যার বিচার হবে, সেদিনই দেশবাসী মুক্তি পাবে ভয়, অনিশ্চয়তা ও প্রতিহিংসার অচলায়তন থেকে।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×