ইউনূস বাংলাদেশকে কি আরেকটি গাজা বানাতে চাচ্ছেন?
----------------------------------------------------------
“ইন্ডিয়ার সেভেন সিস্টার দখল নেওয়া” এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন, উস্কানিমূলক বক্তব্য শুধু কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূতই নয়, বরং বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ভয়ংকর হুমকি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মনিপুর ও অরুণাচল প্রদেশ যা ‘সেভেন সিস্টার’ নামে পরিচিত, সেগুলো কোনো কল্পলোকের ভূখণ্ড নয়; এগুলো ভারতের সার্বভৌম অংশ, সুসংগঠিত প্রশাসন ও শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতির অধীন।
দুঃখজনকভাবে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ক্ষমতায় আসা ইউনূস সরকারের আশপাশের কিছু দায়িত্বহীন ব্যক্তি কথায় কথায় এই ‘সেভেন সিস্টার’ দখলের হুমকি ছুঁড়ে দিচ্ছেন। তারা কি জানেন—ভারতের সামরিক সক্ষমতা কতটা সুদৃঢ়, আর বাংলাদেশের সামরিক শক্তির বাস্তব অবস্থান কোথায়? রাষ্ট্র পরিচালনা কোনো ফেসবুকের স্লোগান বা চায়ের দোকানের উন্মত্ত বাক্যবিনিময় নয়; এটি জ্ঞান, ইতিহাসবোধ ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞার বিষয়।
আরও লজ্জাজনক হলো এই উস্কানিমূলক রাজনীতিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে যাওয়া হচ্ছে ১৯৭১ সালের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি গণহত্যা থেকে বাঁচতে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল। শুধু আশ্রয়ই নয়, ভারতের সামরিক বাহিনী প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে; ভারতের বহু সেনা সদস্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। এই সত্য ইতিহাসের পাতায় লেখা, কোনো দলের প্রচারপত্রে নয়।
এই বাস্তবতার পরও যদি কেউ ভারতবিরোধী যুদ্ধংদেহী ভাষা ব্যবহার করে, তবে তা কেবল রাজনৈতিক অজ্ঞতা নয় এটি কৃতজ্ঞতাহীনতা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বহীনতার প্রকাশ। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শত্রুতার বীজ বপন করে নয়, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, কূটনীতি ও বাস্তববোধের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ভারত একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র এই সত্য অস্বীকার করে আবেগী হুমকি দেওয়া মানে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া। ইউনূস সরকারকে স্পষ্টভাবে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের জনগণ যুদ্ধের উন্মাদনা নয়, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন চায়। যারা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের আগুন জ্বালাতে চায়, তারা দেশপ্রেমিক নয়; তারা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
রাষ্ট্রনায়কোচিত দায়িত্ববোধের ন্যূনতম শর্ত হলো ইতিহাসকে সম্মান করা, বাস্তবতা স্বীকার করা এবং কথার লাগাম টানা। অন্যথায়, আজকের এই দায়িত্বহীন উস্কানি আগামী দিনে জাতির জন্য ভয়াবহ মূল্য ডেকে আনতে পারে যার দায় ইতিহাস কখনো ক্ষমা করবে না।
---সালাউদ্দিন রাব্বী
সংখালঘু বাচাও আন্দোলন বাংলাদেশ।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



