বাঘের সাথে যুদ্ধে যে জয়ী
রফিকুল ইসলাম: মুই তখন বলেশ্বর নদীতে মাছ ধরছি, লগে মোর ছোড ভাই, হঠাৎ জঙ্গলের পাশদিয়া একটা বাঘ মোরে থাবা দিয়া ধরে, মুই বাঘটার নীচে পড়ইয়া যাই, এর পড় কি হইছে হ্যা মুই কইতে পারি না। বাঘের মুখ থেকে ফিরে আসা পাথরঘাটার কালাম মোল্লা (৪১) এভাবেই তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ননা করেন।
বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের কাঠালতলী গ্রামের বাসিন্ধা মৃত হামেদ মোল্লার ছেলে কালাম মোল্লার ছোট ভাই খোকন মোল্লার সাথেও মঙ্গলবার এ প্রতিবেদকের কথা হয়। খোকন মোল্লা বলেন, বড় ভাইরে বাঘে ধরছে কিনা হেড্যা মোর খেয়াল নাই, মুই নিজে বাচার লইগা সামনে বাঘটারে পাইয়া মুই কুড়াল দিয়া বাঘটারে কোপ দেই, তখন বাঘটি জখমপ্রাপ্ত হয়ে সুন্দরবনের মধ্যে চইল্লা যায়। মোগো দুই ভাইর ডাকচিৎকারে বন বিভাগের স্যারেরা ওই দিন (২৪ জানুয়ারী) সকালে মোগো পাথরঘাটা হাসপাতালে নিয়া য়ায়।”
বাঘের এ হামলার ঘটনার পর পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর তীরবর্তী টেংরা, রুহিতা, জ্ঞানপাড়া, কাঠালতলী, চরদুয়ানী গ্রামের স্থানীয়দের মধ্যে বাঘ আতংক ছড়িয়ে পড়ে। সাগর মোহনার বলেশ্বর নদী তীরবর্তী ওই গ্রাম গুলোর মানুষের চোখে ঘুম নেই। সহসা কেউ ঘর থেকে বের হয় না। বলতে গেলে সেখানে গরু-ছাগল চড়ানো বন্ধ। সর্বত্র এক আতংজনক পরিস্থিতি সৃষ্ঠি হয়েছে। কারন বলেশ্বর নদীর পশ্চিম প্রান্তের সুন্দর বনের বাঘ ঢুকে পড়েছে পাথরঘাটার লোকালয়ে। ফলে সাধারন মানুষ, প্রশাসন ও বন বিভাগ উদ্বিগ্ন।
এদিকে গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় টেংরার পার্শ্ববর্তী গাববাড়িয়া গ্রামের নদী তীরবর্তী চরঘেষা জঙ্গলে ওই গ্রামের জেলে আজিজ মাতুব্বর, আইয়ুব আলী ও আবদুল কাদের নতুন করে বাঘের পায়ের চিহ্ন দেখতে পান। বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ খান জানান, গত মঙ্গলবার সকালেও গাববাড়িয়ার জঙ্গলে তিনি বাঘের পায়ের চিহ্ন দেখেছেন। টেংরা গ্রামের জেলে মজিবর রহমান জঙ্গলে বাঘের পায়ের চিহ্ন দেখেছেন বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। প্রত্যদর্শীদের কাছে থেকে বিষয়টি অবহিত হবার পর বন বিভাগের কর্মীরা মাইকযোগে গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে বনবিভাগ স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। সিদ্ধান্ত হয় বাঘ ধরতে নিবিড় অভিযান পরিচালনার।
লোকালয়ে বাঘের অস্তিত্ব থাকার কথা স্বীকার করে প্রশাসন ও বন বিভাগগের কর্মকর্তারা জানান, সাতীরার মতো দুঃখজনক কোন পরিস্থিতি যাতে না ঘটে সে জন্যে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। চলছে রাত জেগে বন বিভাগের সশস্ত্র পাহারা ও মাইকিং। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাফ হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওয়াইল্ড লাইফ এক্সপার্ট ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের দল গতকাল বুধবার দুপুরেও সেখানে পৌছেনি। বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তারা আব্দুল লতিফ খান জানান, লোকালযে বাঘ এসেছিল তা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে কতটি বাঘ লোকালয়ে ঢুকেছে তা এ মুহুর্তে বলা যাচ্ছেনা। ফলে সোমবার সারারাত ওই সব এলাকায় বন বিভাগের কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় পাহারা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, পাথরঘাটা পৌর এলাকার যে জঙ্গলে বাঘ থাকার বিষয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে সে জঙ্গলটি অপোকৃত ছোট। প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের হবে। কিন্তু লোকালয়ে আসা বাঘ যদি বন্দরের দেিন সাগর পাড়ের সংরক্ষিত লালদিয়ার জঙ্গলে চলে যায় তা হলে তা খুজে বের করা কঠিন হবে। কারন লালদিয়ার জঙ্গল কয়েক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ##

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





