somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাতের মিষ্টি

২৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




‘ঠক-ঠক-ঠক..’ এতো রাতে আবার কে এলো? বারোটা বাজতে মাত্র শুয়েছি। অগত্যা উঠলাম। দরজা খুলে দেখি রাসেলভাই। ‘কংগ্রাচুলেশনস্!’ বলেই আমার দিকে হাতে ধরা পলিথিন ব্যাগের মিষ্টির প্যাকেট দুটি বাড়িয়ে দিলেন। ব্যাপার কি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। ‘আরে ইন্টারমিডিয়েটে কমার্স থেকে স্টার পাওয়া সামান্য কথা? তোমার জন্য মিষ্টি এনেছি, নাও নাও, ধরো।’ আমি তাজ্জব! আমার বন্ধুরা যারা ফার্স্ট ডিভিশন এমনকি সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করেছে তাদের বাসায় আজকে ধুমছে মিষ্টি খাওয়া চলেছে, বাড়ি বাড়ি মিষ্টিও বিলানো হয়েছে। অথচ আমার বাসায় আনা হয় নি। বিকেলে রেজাল্ট জেনে এসে আব্বাকে জানালাম, তিনি খুশি হলেন কিন্তু মিষ্টি কেনার ব্যাপারে কোনো উচ্চবাচ্য করলেন না। আমিও নীরব রইলাম। ভাবলাম, কদিন ধরে সংসারে টানাটানি যাচ্ছে, তাছাড়া মা নানার চল্লিশা খেতে গ্রামে গিয়েছে, খামখা অযথা খরচে লাভ কী? ‘নাও খাও, আরে লজ্জা পাচ্ছো কেন?’ রাসেলভাই একটি প্যাকেট থেকে কমলা আকৃতির একটি সন্দেশ নিয়ে নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিতে চাচ্ছেন। লজ্জা পাওয়ারই কথা। আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে কখনো জন্মদিন পালন হয় না, সুতরাং টিভিতে বাংলা ছবিতে দেখা নায়িকার জন্মদিনে বাবা-মা-বন্ধুরা যেমন তাকে কেক খাইয়ে দেয়Ñ সে ধরণের অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। জড়তা তো থাকবেই! এমন আপেল কমলা আকৃতির সন্দেশ খাওয়ার ভাগ্যও আমার কখনো জোটে নি, কেবল রাস্তায় যেতে কাচ ঘেরা মিষ্টির দোকানে দেখেছি। রাসেলভাই শুধু সন্দেশ না, আরকেটি প্যাকেট খুলে মিষ্টিও খাওয়ালেন। ঘটনার তাৎক্ষণিক মুহূর্তে আনন্দে আমার চোখে পানি আসার উপক্রম। এই আমাদের বড়লোক বাড়িওয়ালার ছোট ছেলে রাসেলভাইÑ যিনি কিনা তিন তিন বার মেট্রিক ফেল, উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলেদের মতোই সরাদিন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরে বেড়ান, নেশা-পানি করেন বলেও শোনা যায়। অবশ্য এলাকার কাউকে তাকে খারাপ বলতে শুনি নি। ভদ্রঘরের ছেলের আচরণ তার মধ্যে স্পষ্টÑ গুরুজনদের সাথে কথা বলতেন চোখ নামিয়ে জড়সড় ভঙ্গিতে। ‘খালাম্মা তো দেশে গেছে..তুমি এক কাজ করো..মিষ্টি আমাদের ফ্রিজে রেখে আসো, তাইলে নষ্ট হবে না।’ রাসেলভাইর প্রশস্ত হৃদয়ের পাশাপাশি দায়িত্বশীলতার এহেন পরিচয়ে আমি তো যারপরনাই বিস্মিত। তখন আমাদের ফ্রিজ ছিল না। অতএব রাসেলভাই চলে গেলে সে রাতেই কিছু মিষ্টি-সন্দেশ বাড়িওয়ালার বাসায় দিয়ে বাকিটা তাদেরই ফ্রিজে রেখে আসলাম।
ইন্টারমিডিয়েট পাশের বছরই মানে ১৯৯৯ সালে নাগরিক প্রয়োজনে আমরা রাসেলভাইদের বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাই। তারপর রাসেলভাইর সাথে দু-তিনবার দেখা হয়েছে। নির্মল হেসে তিনি বলতেন, ‘ভালো মতো পড়াশুনা করবে, পড়া ছাড়া জীবনে কিছু করতে পারবে না।’ কিছুদিন আগে কানে আসলো, রাসেলভাই নাকি এখন ভালো হয়ে গেছেন, বন্ধু-বান্ধব একদম বাদ, বাবার ব্যাবসায় গিয়ে বসেন আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। শুনে খুবই ভালো লেগেছিল সেদিন। সত্যি বলতে কি মনটাকে কীভাবে বড় করতে হয় এ শিক্ষা আমি তার কাছ থেকেই নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার এই প্রিয় মানুষটার নতুন জীবন বেশিদিন স্থায়ী হলো না। গত সপ্তায় পত্রিকায় সাভারে একটা সড়ক দুর্ঘটনার কথা দেখলাম। এরকম কতই তো হয়! আমি চোখ বুলিয়ে পাতা উল্টে যাই। গতকাল মা বললো, ‘জানিস? আমাদের সেই বাড়িওয়ালার ছেলে রাসেল মারা গেছে। সাভারে মাল কিনতে গেছিল। রাস্তা পার হতে গিয়ে...’

৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×