somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফগানিস্তান ও শতাব্দির ইতিহাসঃ পর্ব ৩

৩০ শে মে, ২০২২ দুপুর ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আফগানিস্তান ও শতাব্দির ইতিহাসঃ পর্ব ১
আফগানিস্তান ও শতাব্দির ইতিহাসঃ পর্ব ২

১৯৭৯ সালে বাবরাক কারমল কে সমর্থন করে আফগানিস্থানে সোভিয়েত ইউনিয়ন সেনা পাঠায় এবং হাফিযুল্লাহ আমিন কে ক্ষমতাচ্যুত করে বন্দী করে এবং এর তিন দিন পর তাকে হত্যা করা হয়। সোভিয়েত সেনারা ছিল প্রশিক্ষিত ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। ফলে কমিউনিষ্ট শাসন ঠেকাতে মোজাহিদরাও আরো জোরে সোরে মাঠে নামে।
এদিকে সোভিয়েত সেনাদের আফগানিস্তানে প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করে। পাকিস্তানের একদিকে বৈরি ভারত অন্যদিকে ভারতের মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন। সূতরাং পাকিস্তান সরকার ও সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি পশতু নেতারা মোজাহিদীনদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তারা মোজাহিদীনদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা শুরু করে।

যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন আছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র না এসে পারেই না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের মাধ্যমে মোজাহিদীনদের সামনে রেখে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু করল। যুদ্ধে নতুন মাত্রা পেল। যুক্তরাষ্ট্র মোজাহিদীনদের আধুনিক অস্ত্র ও অর্থ পাকিস্তানীদের মাধ্যমে পৌছে দিতে লাগল এবং পাকিস্থান সেনাবাহিনী এবং আই এস আই ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা করল। এ সময়ে কৃষক ও সাধারন শ্রমজীবিরা মোজাহিদ বাহিনীতে যুক্ত হয় এবং স্থানীয় ভাবে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে লড়াই করতে থাকে এবং সোভিয়েত বাহিনীর উপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে। আস্তে আস্তে যুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে সাধারন আফগানরা দেশ ছাড়তে শুরু করে এবং মোজাহিদরা পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে হামলা চালাতে শুরু করে। ফলে সোভিয়েত সাজোয়া যান, আর্টিলারি বা ট্যাংক মোজাহিদদের ঠেকাতে অকার্যকর হয়ে পড়ে। তখন সোভিয়েত বাহিনীর প্রধান অস্ত্র হয়ে ওঠে মিল ২৪ গানশিপ। গানশিপের সাহায্যে সোভিয়েতরা পাহাড়ে অভিজান চালাত।

পাকিস্তান খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে আফগান যুদ্ধের নিয়ন্ত্রন সেল খুলে এখান থেকে আফগান যুদ্ধ নিয়ন্ত্রন ও দেখভাল করতে থাকে। এখানকার শরনার্থী শিবির গুলোতে পাকিস্তান মোজাহিদিনদের ট্রেইং দিয়ে আফগানিস্তানে পাঠাতে শুরু করে। ফ্রন্ট লাইনে পাকিস্তান থাকলেও পেছন থেকে অর্থ ও রশদ সরবরাহ চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এ দিকে সেসময়ে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক ভাল না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে চীন, সৌদি ও মধ্যপ্রাচ্যের আরো কিছু দেশ মোজাহিদীন বাহিনীকে পাকিস্তানের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করে।

এমন সময় আমেরিকানরা দৃশ্যপটে নিয়ে আসে আর পি জি ও এফ আই এম ৯২ স্ট্রিংগার। ৩০ হাজার ডলার দামের একটি মিসাইল ১০ মিলিয়ন ডলার দামের এক একটি কপ্টার ধ্বংশ করে ফেলতে পারে। ফলে দেখা যায় প্রায় প্রতিদিনই দুই একটি সোভীয়েত হেলোকপ্টার মোজাহিদ বাহিনী ভূপাতিত করছে। মোজাহিদরা গ্রামের সাধারন মানুষের সাথেই মিশে ছিল এবং তাদের আলাদা করা যাচ্ছিল না ফলে সোভিয়েত সেনারা হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষন করে গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংশ করতে থাকে। যেহেতু মোজাহিদরা কোন কেন্দ্রীয় কমান্ডের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল না ফলে যুদ্ধ বন্ধে তাদের সাথে কোন শান্তি চুক্তিও করা সম্ভব হচ্ছিল না। দেখা যায় এ সময়ে প্রায় ১ বছরেই ১০ লাখ আফগান হত্যার শিকার হয়। এছাড়াও প্রায় ৮০ লাখ আফগান দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে আরো প্রচুর মানূষ স্থানীয় ভাবে বাস্তুচ্যুত হয়। এ শরনার্থীদের প্রায় ৬০ লাখ পাকিস্তানে ও ২০ লাখ ইরানে আশ্রয় নেয়। একটা সময় দেখা যায় দেশের বেশিরভাগ পরিবারের নারী ও শিশুরা দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছে, শুধু প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষরা রয়ে গেছে যুদ্ধ করতে।

সোভিয়েত বোমা বর্ষন ও পুতে রাখান মাইনে হেরাত কান্দাহারের মত বড় শহরগুলি ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এক দশকে প্রায় ২০ লাখ আফগান নিহত হয়, আহত হয় আরো কয়েক মিলিয়ন। এ সময় অর্থনৈতিক ভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আফগানিস্থানে ব্যপক ক্ষয় ক্ষতির মুখে ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায়। সোভিয়েত সামরিক সহায়তা ছাড়া আফগান সরকার দূর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলশ্রুতিতে ১৯৯২ সালে মোজাহিদরা কাবুল দখল করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ নাজিবুল্লাহ কে ক্ষমতাচ্যুত করে ও সরকার গঠন করে।

দশক ব্যাপি চলা এ যুদ্ধে আফগানিস্তানের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা ব্যপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সবার হাতে অস্ত্র চলে আসে। মানুষ ছোট ছোট মিলিট্যান্ট গ্রুপ তৈরি করে নিজস্ব প্রভাব বলয় তৈরি করে এবং লুটতরাজ করতে থাকে। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন ওয়ারলর্ড গজিয়ে ওঠে যারা স্থানীয় প্রশাষন নিয়ন্ত্রন করতে শুরু করে এবং ট্যাক্স নিতে শুরু করে। বিভিন্ন মোজাহিদ নেতাদের সমন্বয়ে নতুন আফগান সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও এ সরকার সম্পূর্ন আফগানিস্থান নিয়ন্ত্রনে নিতে ব্যর্থ হয়। এক এক এলাকা ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের নিয়ন্ত্রনে চলে যায় ফলে একটি দেশ হয়ে আফগানিস্তান হয়ে পড়ে খন্ডিত দেশ।

চলবে………
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২২ দুপুর ১:০৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×