somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লিফস্ অফ মোহের

০৬ ই আগস্ট, ২০০৮ সকাল ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা থেকে ডাবলিন আসি সেপ্টেম্বেরের প্রথম সপ্তাহে। ডাবলিন এসে পৌছাই রাত প্রায় সাড়ে বারোটায়। রাত তিনটার দিকে খাওয়ার সময় দেখি টিভি থ্রিতে দেখাচ্ছে বিশাল গভীর এক খাদ, যাদে সমুদ্রের জলরাশি আছড়ে পরছে। যেন প্রকৃতি খুব কৃপনভাবে একটি ভুখন্ডকে শেষ করে দিয়েছে। পরে জেনেছিলাম ওটার নাম ক্লিফস্ অফ মোহের। যাই হোক, যাওয়ার সুযোগ আর হয়ে উঠেনি যদিও এর আগে গলওয়ে গিয়েছি। গত বছরের ডিসম্বরে সুযোগ এলো। আমি আর আমার গলওয়েবাসী বন্ধু সুমন মিলে সকাল সকাল উঠে পড়লাম টুর বাসে। ভাড়া বেশি না মাত্র ১৮ ইউরো স্টুডেন্টদের জন্য। আমরা ভেবেছিলাম শুধুমাত্র ক্লিফস্ ই দেখাবে, ভুল ভাঙ্গল যখন আমাদের বাস ড্রাইভার কাম গাইড পথ চলতে চলতে রাস্তায় পরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার বিবরণ দিতে লাগল। প্রথমে আমরা থামলাম একটি ছোট খাটো মেডিইভাল ফোর্ট আ -এ, সেখানে একদফা ফটো সেশন। বাস চলতে লাগল বামে পাহাড় আর ডানে আটলান্টিক। যায়গাটারনাম বুড়েন। চারিদিকে লাইম স্টোনের ছড়াছড়ি। বোটানিষ্ট আর জিওলজিষ্টদের স্বর্গ রাজ্য এটা। বাস এখানে থামল কিছুক্ষন। হাতে নাতে প্রমান পেলাম যখন নিজেই কয়েকটা ফসিলাইজড লাইম ষ্টোনের সন্ধান পেলাম। সাইজ বেডপ থাকায় আনার ইচ্ছাটা সংবরন করতে হলো। বাসে এগোচ্ছে আঁকা বাঁকা সরু পথে। আমাদের গাইড ড্রাইভার এখন আর কোন কমেন্ট্রি দিচ্ছে না। তার অখন্ড মনোযোগ ড্রাইভিং -এ, একটু এদিক ওদিক হলেই আমরা আটলান্টিক এর জলে গোছল করব। মাঝে মাঝে গাড়ি থামিয়ে সাইড দিতে হচ্ছিল সরু রাস্তার কারনে। ক্লিফস্ -এর কাছাকাছি যেয়ে ড্রাইভার ঘোষণা করল যে বাস এখানে একটা পাবে থামবে। সস্তায় খাওয়ার জন্য নাকি এটাই শেষ যায়গা। ক্লিফস অফ মোহেরে নাকি অনেক কস্টলি হবে। আমরা চটপট নেমে আইরিশ আলু ভর্তা, বিফ ষ্টিক আর ষ্টিমড ভেজিটাবেল খেয়ে নিলাম। তর সইছিলনা কখন আমরা ক্লিফস্ এ পৌছব। অবশেষে প্রায় দশ মিনিট পর আমরা পৌছে গেলাম আমাদের স্বপ্নের গন্তব্যে। বাস থেকে নামার আগে গাইড সাবধান করে দিল আমরা যেন ক্লিফস্ এর খুব কাছে না যাই। কারণ লুজ রকসে্ পা পিছলানোর সম্ভাবনা থাকে। রসিকতা করে আরো বলল, যদি কখনো পড়েই যাও তবে তোমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ট ভিউটি দেখতে পারবে। উপরে সূর্য, সামনে দিগন্ত বিস্তৃত আটলান্টিকের জলরাশি আর নিচে দুইশত দশ মিটার গভীর খাদ। কিন্তু আফসোস, সেই অভিজ্ঞতা কাউকে বলার অভিজ্ঞতা তোমার হবে। না। অমরা ছুটলাম ক্লিফস্ এর দিকে। বড় বড় পাথর দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা আছে। এর ভেতরে থাকলে কোন সমস্যা নেই। পাথরের দেয়াল পেড়িয়ে গেলে বিপদ জনক হতে পারে। ক্লিফস্ এর পাড়ে পাহারের ভিতর গর্ত করে সুদৃশ্য তথ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। আছে খাবার এবং টয়লেট ফেসিলিটি। এত সুন্দরভাবে এটা তৈরি করা হয়েছে কোন ভাবেই তা যেন ক্লিফস্ এর সৌন্দর্য যে কে ব্যহত না করে। প্রথমেই আমরা গেলাম ও ব্রেইনস্ টাওয়ারে। এই টাওয়ারটা স্যার কর্নেলিয়াস ওব্রেইন কর্তৃক ১৮৩৫ সালে নির্মিত ক্লিফস্ এর ভিজিটরদের জন্য। এখানে পয়সা দিয়ে দুরবিন দেখার ব্যবস্থাও আছে। আমাদের ভাগ্য খুব ভালো যে, পরিষ্কার আকাশ ও কুয়াশামুক্ত আবহাওয়ায় দেখলাম সাগরের নোনা জল লাইমষ্টোনে আছরে পড়ার অপূর্ব এক দৃশ্য। অনেক সময় সামারেও আবহাওয়া খারাপ থাকায় অথবা কুয়াশার কারণে ক্লিফসের সম্পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না। ক্লিফসের গায়ে গর্ত করে অসংখ্য পাখির বাস। স্মৃতির জানালায় থাকা সেই ক্লিফস্ কে বাস্তবের সাথে মেলাতে চেষ্টা করি। আসলেই আয়ারল্যান্ডে দেখার কয়েকটি জিনিস থেকে থাকলে ক্লিফস্ অফ মোহের একটা। এক ঘন্টা ঘুরে ফিরে তথ্য কেন্দ্রে ফিরে আসি। সেখানে আইমেক্স প্রযুক্তি দিয়ে থ্রিডি ভিউ দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবের সাথে কি সিজির তুলনা চলে? আমরা বাসে উঠে বসলাম। আমরা যে পথে গিয়েছিলাম ফিরে আসছি অন্য পথে। পথে থামলাম Poulnabrone নামক জায়গায়। এখানে আছে ইংল্যান্ডের ষ্টোনহিঞ্জের আদলে গড়া একটি ম্যাগালিথিক টোম্ব। এটা নিয়োলিথিক বা নিউ ষ্টোন এজ আমলের। আমরা ফোটে সেশন করতে করতে ড্রাইভার আমাদের ছেড়েই বাস ছেড়ে দিল। আমরা দৌড়ে বাসে উঠলাম। আসলে মজা করার জন্যই ভদ্রলোক এটা করেছে। কারণ বাস ছাড়ার আগে সবার মাথা গুনেই বাস ছাড়ে। আমাদের সর্বশেষ গন্তব্য AILLWEE CAVE। এটা একটা লাইমষ্টোন পাহাড়ের ভিতরের গুহা এবং এক কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা। পাথরের গায়ে এখনও আছে প্রাগঐতিহাসিক কালের বয়ে যাওয়া নদীর দাগ। গুহার ভিতরে সব সময় ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে বাইরে যা থাকে না কেন। গুহার ভেতরে ভাল্লুকের হাড়গোড় পাওয়া গেছে, যদিও আয়ারল্যান্ডে ভাল্লুক নেই। এটা প্রমান করে যে আয়ারল্যান্ডে এক সময় ভাল্লুক ছিল এবং এখানে হাইবারনেশন করত। যাক, এবার ফেরার পালা্ বাসে ওঠে ঝিমুতে লাগলাম। সারাদিনের দৌড় ঝাপ এবার তার টোল তুলতে লাগল। বাস চলতে লাগলো বুড়েনের ছবির মত সুন্দর আঁকা বাকা রাস্তা দিয়ে যাব অনেকটাই দেখা হলো না ঝিমুনির কারনে। নিজের অজান্তে বুড়েনের পাথড়ের চাই স্তর করে বানানো দেয়ার দিয়ে ভাগ করা সবুজ মাঠে চড়ে বেড়ানো ভেড়ার দলের সঙ্গে বাংলাদেশের মাটির আইলের ঘাসের জমির তুলনা করলাম। যার বেশির ভাগটাই মেলেনা। যতটুকু মিলল তা অবশ্যই আমার তন্দ্রাচ্ছন্ন মনের কল্পনা। বাস্তবে তার কোনই স্থান নেই। বাস এগিয়ে চলছে গলওয়ের দিকে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×