somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যাঃ দৈত্যাকার ও দানবাকার মানব

০৬ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পরিমল বর্মণের কথা মনে আছে? ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার বাংলাদেশী তরুন যে তৎকালীন সময়ে বিশ্বের উচ্চতম ব্যক্তি ছিলেন যার উচ্চতাই হয়েছিলো তার মরণের কারণ। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। অত্যধিক লম্বা হওয়া অথবা দানবাকৃতির হওয়াও যে একটি শারীরিক সমস্যা তা বোধকরি আমরা অনেকেই জানি না। যদিও সমাজে এটা বিরল তবু চলুন আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত মনে হওয়া এই সমস্যার অন্দরমহলের ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।

জীবনের প্রথম দিকে মানুষ উচ্চতায় বৃদ্ধি পায় যা ১৮-২০ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। এরপরে উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়, মানুষ বাড়তে থাকে দেহের দুপাশে। শরীরের মাংশপেশীর আয়তন বাড়ে, দেহে জমে মেদ। এই সবরকম বৃদ্ধিই নিয়ন্ত্রিত হয় আমাদের মস্তিস্কের মাঝে অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থির মাধ্যমে যার নাম দেয়া হয়েছে 'পিটুইটারি গ্রন্থি'।

পিটুইটারি নিঃসৃত রসের প্রভাবেই আমরা আকারে বাড়ি, এই রস কম নিঃসৃত হলে আমরা হই বামন আর পরিমাণের থেকে বেশি নিঃসৃত হলেই ঘটে সর্বনাশ!!



তরুণ বয়সে যখন আপনি আমি উচ্চতায় বাড়ছি তখন যদি পিটুইটারি গ্রন্থি অধিক নিঃসরণ করে তবে আমাদের উচ্চতা ধেই ধেই করে বেড়ে যাবে।
'তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে,
সব গাছ ছাড়িয়ে,
উকি মারে আকাশে'র মতো আপনি আশেপাশের সকলের থেকে লম্বা হয়ে পড়বেন, লম্বা হতেই থাকবেন, থামাতে পারবেন না। দৈত্যের মতো হয়ে পড়বেন। ঠিকমতো দাঁড়াতে পারবেন না, ভারসাম্য থাকবে না, পায়ে লাগবে বিশেষ সাইজের জুতো, গায়ে লাগবে বিশেষ সাইজের পরিধেয়। সাথে থাকবে নানা রকম শারীরিক সমস্যা যা আপনার আয়ুকে করে দেবে সীমিত। এই অবস্থাকে বলে দৈত্যাকৃতি বা Gigantism.


যদি উচ্চতা বৃদ্ধি থেমে যাবার পরে পিটুইটারি পাগলামো শুরু করে? তখন তো আর আমরা উচ্চতায় বাড়তে পারবো না, আমাদের অস্থিগুলো পূর্ণতা পেয়ে গিয়েছে ততদিনে, আর বাড়বে না লম্বায়, তবে কি হবে তখন? আমরা বাড়বো পাশে, আমাদের গায়ের মাংসপেশিগুলো বাড়বে, অস্থি বাড়বে আকারে, দৈর্ঘ্যে নয়। আমাদের হাত, পায়ের আঙ্গুল বাড়বে আকারে, আঙ্গুল ফুলে কলা গাছের মতো অনেকটা, চোয়াল বেড়ে সামনে এগিয়ে আসবে, চেহারা হয়ে পড়বে অনেকটা গরিলার ন্যায়। একে দানবাকৃতী বলতে পারি আমরা। ইংলিশে বলে Acromegaly.

জানতে ইচ্ছে করেনা কেন এমন হয়? পিটুইটারি গ্রন্থিতে হতে পারে একধরনের টিউমার যার নাম পিটুইটারি এডেনোমা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো ক্যান্সার নয়। এই টিউমারের কারনেই পিটুইটারি অধিক পরিমাণে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত করে সকল সমস্যার সৃষ্টি করে।

হাত-পায়ের আকার বাড়ে, ত্বক হয় অমসৃণ, নাক ও চোয়াল বেড়ে যায় আকারে। জিহ্বা মোটা হয়ে পড়ে, গলার স্বর হয় গভীর ও ভরাট। বাড়তে পারে ঘামের পরিমাণ ও ঘুমের মাঝে শ্বাসবদ্ধতা।
শরীরের মধ্যে হৃদয়, ফুসফুস, কলিজা, বৃক্ক ও প্লীহা বৃদ্ধি পায় আকারে। সাহসী ব্যক্তিদেরকে বলা হয় তাদের কলিজা বড়, উদার ব্যক্তিকে আমরা বলি তার হৃদয় বড়। এই রোগে বাস্তবিকই রোগীর কলিজা ও হৃদয় বেড়ে যায়। ফুলতে পারে পায়ের পাতা, গোড়ালি, হতে পারে গিঁটে গিঁটে ব্যাথা।
অধিক উচ্চতা ও অধিক শারীরিক বৃদ্ধির কারনে হৃদয়ের ওপরে চাপ পড়ে, তাকে বেশি কাজ করতে হয় অধিক উঁচুতে রক্ত পাম্প করে পাঠাতে। তাই দ্রুতই রোগীর উচ্চরক্তচাপ থেকে শুরু করে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় হৃদয়ে এবং দুঃখের বিষয় হচ্ছে রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণই হলো হৃদযন্ত্রের বৈকল্য।
হতে পারে ডায়াবেটিস, দৃষ্টির সীমানা হয়ে আসতে পারে সীমিত। সাথে থাকে মাথা ব্যথা। রক্তে বাড়তে পারে কোলেস্টেরলের পরিমাণ।

আগেই বলেছি সমাজে বিরল তার পরেও আসুন জেনে নেই কারো হয়ে গেলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে।

রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে পরে আসে চিকিৎসার প্রশ্ন। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য টিউমারটিকে আকারে ছোট রাখা ও গ্রোথ হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
রয়েছে বিভিন্ন মুখে খাবার ঔষধ, রয়েছে টিউমার অপসারনের সার্জারি। একেবারেই কাজ না হলে রয়েছে রেডিয়েশন থেরাপি।

রোগটি বিরল তাতে সন্দেহ নেই, মাঝে মাঝে রাস্তা ঘাটে বামন দেখলেও দৈত্যাকার মানব খুব কমই দেখা যায়। আমরা চাই না এমন সমস্যা কেউ পড়ুক, আমরা চাই একটি সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন যেখানে থাকবে না কোন অস্বাভাবিকতা, অসামঞ্জস্যতা। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুখে থাকুন।

লেখাটে স্বাস্থ্যবাংলাতেও প্রকাশিত হয়েছে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:০১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×