আমার জানামতে নারী সম্পর্কিত বিষয় বর্তমানে ইসলামি পুনর্গঠনের জন্য প্রকৃত পরীক্ষা । কারণ হল পুরুষ এবংনারীর মধ্যে ভিত্তিহীন এবং অসম পার্থক্যের ভিত্তি রোপন করা আছে কিছু প্রচলিত বর্ননায় এবং মতামতে, যেগুলি আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলাম এবং মনে করি আমাদের ধর্মের অংশ।কিন্তু সেগুলি আসলে প্রকৃত ইসলামের বিরুদ্বে যায়না, যা আল্লাহ সৃষ্ট সকল মানুষের জন্য সুবিচার এবং সাম্যতার জন্য এসেছে।
একটি কাঠামোতে আমার উত্তর রাখার জন্য আমি নিম্নলিখিত স্বাতন্ত্র্য তৈরি করতে এইটিকে প্রয়োজনীয় মনে করছি বিশেষভাবে ইসলামে মহিলাদের ক্ষেত্রে।পার্থক্য আছে
১।জনপ্রিয় বর্ননা আর সহীহ বর্ননায়।
২। ‘ইসলাম' এবং ‘মুসলিমরা'
৩। ইসলামি ‘শরীয়া’ এবং ইসলামি ‘মাযহাব ’
৪। ‘ওহী’ এবং ‘ওহীর অনুবাদে'
প্রথমত কিছু প্রচলিত বর্ননায় আছে যে দোযখের অধিকাংশ বাসিন্দা হবে মহিলা ’ ‘মহিলাদের মন এবং বিশ্বাসে ঘাটতি আছে, ’ মহিলা মাত্রেই প্যাচানো ’ ‘তোমাদের জন্য অশুভ হল নারী, ’এরকম আরো কিছু।
আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনাকে বলতে পারি যে এই সমস্ত বর্ননাগুলি সহীহ না এবং দূর্বল, বর্ননাকারী যেই হোক না কেন আর যেখানেই বলা হোক না কেন।অধিক বিতর্ক এবংআলোচনায় পা না দিয়েও বলা যায় সেগুলি দুর্বল কারণ যে সেগুলি কোরানের সঙ্গে মিলে না।
এই বর্ননাগুলির একটা আমাকে উদাহরন হিসাবে এর সত্যতা নির্ধারণ করতে দিন। বুখারী, আবু হুরায়রা থেকে বর্ননা করেছেন:' তোমাদের জন্য অপয়া হল তোমাদের নারী, তোমাদের পশু এবং তোমাদের বাড়ী', বুখারী যদিও একই চাপ্টারে বর্ননা করেছেন যে আয়শা, নবীপত্নী আবু হুরায়রার বর্ননাকে মেনে নেননি এবং বলেছেন নবী(সঃ) আসলে বলেছিলেন, 'অজ্ঞতার যুগে মানুষ বলত তোমাদের জন্য অপয়া হল তোমাদের নারী, তোমাদের পশু এবং তোমাদের বাড়ি'।
হাদিস বিজ্ঞান অনুযায়ী আয়শা তা বাতিল করেছিলেন এর বর্ননা ( আল মতন)অনুযায়ী, সনদ অনুযায়ী নয়। । আবূ হুরায়রা একজন মহান সাহাবী, কিন্তু উনি ভুল করেছেন এই হাদীসের বর্ননায়।বুঝা যায়, উনি পুরাটা শুনেননি,কিন্তু ভেবেছিলেন শুনেছেন।
এখন আমরা দুটি বর্ননা নিয়ে কথা বলব যেগুলি সঠিকভাবে সততার সাথে বুখারী প্রকাশ করেছেন।কিন্তু সেগুলি পরিষ্কারভাবে অসংগতিপূর্ন এবং একটি নিঃসন্দেহে বাতিল করা উচিত।বেশীর ভাগ ব্যাখ্যাকারীই আয়শার বর্ননা বাতিল করে আবূ হুরায়রার টা গ্রহন করেছিল, যদিও আয়শা তার বর্ননার সমর্থনে কোরানের আয়াত পর্যন্ত দেখিয়েছিলেন (al-Hadid ৫৭: ২২)।আরেকজন সাহাবী মিখমার আয়শার বর্ননা সমর্থন করেছিলেন এই বলে যে,'অপয়া বলে কিছু নাই'। কিন্তু বিস্ময়করভাবে ইবনে আল জাওযি মন্তব্য করেছিল: কিভাবে আয়শা একটি স হীহ বর্ননা বাতিল করতে পারে ?'এবং ইবনে আল আরাবী বিস্ময়করভাবে মন্তব্য করেছিলেন : আয়শার এটা বাতিলের কোনো কারন নাই।বিখ্যাত স্কলার বদরুদ্দিন আল যারকাশি একটি বইয়ে দেখিয়েছিলেন আয়শাকে নিয়ে অন্যান্য সাহাবীদের সমালোচনা।
এখন আমাদের ইসলাম এবং মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য করা উচিত।এটা কে নেগেটিভলি নেয়া উচিত না। কিন্তু ইসলাম আর এর অনুসারীদের মধ্যে পার্থক্য করা দরকার যতখানি সম্ভব।মুসলিমরা যা করেছিল, অথবা বর্তমানে করে তাই ইসলাম নাও হতে পারে। ইসলামের একটি মূল রয়েছে যা প্রতিটা মুসলিমের অবশ্যপালনীয়। এই মূল বিষয়টির সাথে, ইসলাম বিভিন্নভাবে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে নিজেকে তুলে ধরেছে। এর মধ্যে কিছু কিছু সংস্কৃতির সামাজিক কাঠামো ছিল সাধারনভাবে নারীদের বিরোধী, এবং সত্যিকারের স্কলাররা এই সমাজে সুবিচার এবং সমতার ইসলামি মান বাস্তবায়ন করতে সংগ্রাম করেছে।
এমন একটি উদাহরণ মসজিদ ঢোকা থেকে মুসলিম মহিলার উপর নিষেধাজ্ঞা, নবী মুহাম্মদ(সঃ) থেকে পরিষ্কার নির্দেশনা সত্ত্বেও : ‘ মহিলাদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করনা।' যদিও তার নিজের মসজিদে তিনি সালাতে অনেক পুরুষ এবং মহিলাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
অন্য একটি সমকালীন উদাহরণ হল কিছু ইসলামি দেশগুলোতে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে মহিলাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে,যদিও হাজার হাজার বছর ধরে মুসলিম মহিলারা এই কাজটা করে গেছেন, যা শুরু করেছিলেন নবীপত্নি আয়শা , যিনি একটা ঊটে একটি সমগ্র যুদ্ধ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন (The Battle of the Camel, or Mawqi`at al-Jamal)। এই ব্যাপারটায় এরকম অনেক উদাহরণ আছে।
অনুরূপভাবে, ইসলাম এবং ইসলামের ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্যটা গুরুত্বপূর্ণ , যাতে মহিলাদের ব্যাপারটা বিবেচনা করার ব্যাপারে ভাল অথবা মন্দ দিক হতে পারে। আমাদের মুসলিমদের স্বীকার করতে হবে যে ইসলামি বিশ্বের ইতিহাসে অনেক নারী বিরোধী ঘটনা আছে ,যা ইসলামের রেফারেন্স এবং আইনের সূত্র অনুযায়ী সোজাকথায় অইসলামিক। একটি উদাহরণ হল ‘হারেম, ’এর ধারণা যেটি একটি সমৃদ্ধ অথবা ক্ষমতাশালী মানুষ তার নিজের সুবিধার জন্য অসংখ্য মহিলাদের একটি বন্দীশালায় দাসী হিসাবে বন্দি করে রাখত। আমরা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই যে এমন আনইসলামিক রীতিনীতি আর নাই। অন্য একটি সমকালীন উদাহরণ অনার কিলিংসম্মান হত্যা যা এখনো ঘটে চলেছে,কিছু এলাকাতে ইসলামের নামে ( বর্তমানে পাকিস্তান, নাইজেরিয়া এবং জর্ডানে) যদিও তা পরিষ্কার ভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে যায় এবং ইসলামি আইনে যার কোনও ভিত্তি নেই।
আরো বলা যায়, ইসলাম আর মুসলিমদের রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য করা প্রয়োজন। ইসলাম হল জীবনযাপনের একটি উপায় যাতে স্বাভাবিক
ভাবে, রাজনীতি এবং সরকার অন্তর্ভুক্ত ।কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান যদিও কিছু ইসলামিক মূল্যবোধের উপর প্রতিস্ঠিত হলেও তা ইসলামের অন্তর্ভূক্ত নাও হতে পারে এবং এটিও ঠিক না যে প্রতিটা মুসলিমকে তা মানতে হবে। যখন মহিলাদের ব্যাপারটা সামনে আসে,দেখা যায় কিছু সূক্ষ্ কিন্তু শক্তিশালী যোগাযোগ আছে ফতোয়াগুলির মধ্য যেগুলি সাধারন মহিলাদের ছোট করার জন্য এবং রাজনৈতিক অভিসন্ধির কারনে করা হয়।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল ইসলামিক শরীয়া আর ইসলামিক আইনের স্কুল (madhahib al-fiqh)। শরীয়া ইংরেজীতে খারাপ অর্থে ব্যব হৃত হয় , কারন কিছু মানুষ এটাকে শারীরিক শাস্তির সাথে গুলিয়ে ফেলেছে।( যাকে ইসলামিক আইনের নামে কিছু কিছু দেশে প্রচলিত থাকলেও দুর্ভাগ্যবশত তা সাধারনত ব্যব হার করা হয় দূর্বল আর গরীব মানুষের উপর, ধনী বা রাজনৈতিকভাব প্রভাবশালী লোকের বিরূদ্ধে নয়।)
কিন্তু শরীয়া শব্দটি কোরান'নাযিল কৃত, স্বর্গীয় পথ অথবা জীবনযাপনের উপায়' এ অর্থেই কেবল ব্যবহার করা হয় (কোরান ৫: ৪৮, ৪৫: ১৮)। সুতরাং, ইসলামের সম্বন্ধে সবকিছুই শরীয়া।এইটি হওয়া উচিত ইসলামিক জীবনযাপনের উপায়।
ফিকহ স্কুল অনুযায়ী ফিক হ শব্দটি কোরান এবং হাদীসে বিভিন্ন রূপে ধর্মের সাধারন বিষয় বোঝা, গ্রহন এবং অর্জন করার জন্য বর্ননা করা হয়। (উদাহরণ, কোরান ৪: ৭৮, ৬: ২৫, ৯: ১২২)।কিন্তু ইসলামিক আইন অনুযায়ী ফিকহ বলতে উপরন্তু, আইনের ইসলামি স্কুলে, ফিক হ বলতে টিপিক্যালি বাস্তব নিয়মকানুন বুঝানো হয়ে থাকে।
এটা জানা দরকার শরীয়া নাযিল কৃত,কিন্তু ফিক হ নয়!শরীয়া হল আল্লাহ কোরানে যা বলেছেন এবং নবী (সঃ) যা করতে মুসলিমদের র্নিদেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু ফিক হ হল বিভিন্ন যুগ এবং ভৌগলিক অবস্থানে স্কলারদের কর্তৃক নাযিলকৃত জ্ঞানের একটি বুঝ এবং মতামত ও শরীয়াকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার একটি প্রচেষ্টা। সুতরাং সাধারনভাবে, ফিক হ হল যে সমাজ এবং পরিস্থিতিতে এইটি প্রয়োগ করা হয়েছিল তার সাথে সংশ্লিষ্টএবং না এটা আল্লাহর র্নিদেশাবলী প্রতিনিধিত্ব করে আর না এটি আমাদের প্রয়োগ করা উচিত না আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে।
ইসলামে অবশ্যই এমন কতগুলি বিষয় আছে যা সার্বজনীন এবং মুসলিমরা যেখানে এবং যে অবস্হাতেই থাকুক না কেন সেগুলি তাদের প্রয়োগ করা উচিত। আমাদের এই গুলি ব্যাপারে ফিক হ এর স্কলারদের সাথে বসা উচিত।কিন্তু আমি এখানে যে ইস্যুগুলির ব্যাপারে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কযুক্ত।বিশেষ করে নারী সম্পর্কিত ইস্যু, যা আমার মতে অসংখ্য স্কলারদের থেকে পক্ষপাতের শিকার হয়েছে-যা ছিল ইসলামিক শরীয়া বা নাযিলকৃত জীবনযাপনের রীতিনীতির লংঘন।
দ্বিতীয় যে সম্পর্কযুক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তা হল ওহী এবং ওহীর অনুবাদের মধ্যে। ওহীর বানী সার্বজনীন আছে, কিন্তু কিছু অনিশ্চিত নিয়মকানুন আছে, যা সময় এবং পরিস্হিতি অনুযায়ী বদলাতে পারেকিন্তু সঠিক অনুবাদেরও কিছু সীমারেখা আছে। সঠিক অনুবাদ এমন হতে পারেনা যা সম্পূর্নভাবে টেক্সটের মান অথবা ইসলামের নবীর (সঃ) ঐতিহ্যের সাথে আমূলভাবে সাংঘর্ষিক। এই জন্য এটা বুঝা দরকার কিভাবে কিছু ঐতিহাসিক অনুবাদ মুসলিম মানসে ইসলামে নারীদের অবস্হান আকৃতি লাভ করেছে সঠিক অনুবাদ না হওয়া সত্বেও।
অতএব, ইসলামে বিশেষভাবে মহিলাদের ক্ষেত্রে কাজ করার সময় ,ইসলামি শরীয়া এবং ইসলামি মাযহাব এর মধ্যে,ইসলাম এবং মুসলিম এর মধ্যে ,প্রচলিত বর্ননা এবং সঠিক বর্ননার মধ্যে,ওহী এবং ওহীর মধ্যে পার্থক্য করাটা প্রয়োজন।
এবং আল্লাহ সর্বোত্তম জানে।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৬:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




