নীলক্ষেতের পুরনো বইয়ের দোকানে এলে আমার একটা আশ্চর্য অনুভূতি হয়। নানান রকম পুরোনো বই নাড়াচাড়া করে দেখার কী আনন্দ, সেটা প্রকাশ করার ভাষা নেই! একেকটা বই কত হাত ঘুরে এসব দোকানে আসে। প্রতিটি পুরোনো বই এর ভেতরে প্রাক্তন গ্রন্থ মালিকের একটা ব্যক্তিগত সান্নিধ্য অনুভব করি। এ বই কিভাবে মালিকের ব্যক্তিগত সংগ্রহের ভান্ডার থেকে বেরিয়ে এসে পুরনো বইয়ের দোকানে ঠাই করে নিলো? আমি বই কিনতে আসিনি। এমননি পুরোনো বই নেড়ে চেড়ে দেখতে এসেছি। এই কাজটা করে আমি অনেক আনন্দ পাই। অবশ্য সব সময় শুধু নেড়ে চেড়ে দেখি না। কিনেও ফেলি দুই হাত ভরতি করে। তবে আজ বই কেনা হয়নি। টাকা নাই।
সুরভি বাসায় নেই। তার বাবার বাড়ি গেছে। রাতে ফিরবে। তাই আমি এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কোনো ছাড়াই চলে এলাম নীলক্ষেত। অলি গলি ঘুরতে ঘুরতে কখনো কখনো কোনো নির্জন মুহূর্তে নিজেকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানূষ বলে মনে হয়! এইবোধ আমাকে সাহস দেয়, শক্তি দেয়। সুন্দরের বাতাবরনের মধ্যে দিয়ে মিথ্যাকে সত্যে রুপান্তরিত করা যায়। কখনো কখনো মনে হয়- মেঘেতে গিয়ে ঠেকেছে আমার মাথা। নিজেকে মনে মনে সম্রাট ভাবি। আশে পাশের সমস্ত লোকজনদের মনে করি আমার প্রজা। আমি আরও ভাবি- এই পুরো নীলক্ষেত টাই আমার। শুধু নীলক্ষেত কি শাহবাগ মোড় পর্যন্ত আমার। এখানে যারা থাকছে- তাদের অন্য কোনো উপায় নেই, তাই তাদের থাকতে দিয়েছি।
গতকাল সারাটা রাত আমি জেগেছিলাম। একটুও ঘুম আসেনি। নানান রকম সাতপাঁচ ভাবনা ভাবতে-ভাবতে রাত পার হয়ে গেছে। রাতের গাঢ় নীল আকাশের মাঝে চাঁদ সাদা বলেই জোছনার কোমল শুভ্র আলো এত সুন্দর। আবার অন্যরকম উদাহরন দেওয়া যায়- কেউ তার অতীত ভুলে, অতীতের সমস্ত গ্লানি, দুঃখ, বেদনাকে মুছে ফেলে নতুন একটি জীবন শুরু করতে চায়, তখন প্রথমেই তার মনটাকে পরিস্কার করে, সাদা মন নিয়ে আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে। স্বচ্ছতা ও শুভ্রতা তার বিশ্বাসের তার ভালোবাসার, তার নতুন জীবনের সূচনার ভীত হবে। বিয়ের আগে সারারাত জেগে জেগে সুরভির সাথে গল্প করতাম। সুরভিকে শুধু কবিতা শুনাতাম- ''হাত বাড়ালেই ফুটে থাকা রক্তিম গোলাপ/ তবু যে যার কাটার কাছে ফিরে যায় একদিন/ একদিন যে যার নিঃসঙ্গতার কাছে।''
শীতকাল চলে এসেছে কিন্তু রোদের খুব তাপ। রোদে পুড়ে পুড়ে আমার চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে। আয়নাতে নিজেকে দেখলে নিজেই আঁতকে উঠি। নায়কের মতো দেখতে ছিলাম আমি। শূটিং ক্লাবের সামনের ফুটপাতে এক ভদ্রলোক কান পরিস্কার করাচ্ছে। মাত্র দশ টাকা। ভাবলাম আমিও কান পরিস্কার করাই। দাঁড়িয়ে আছি, ভদ্রলোকেরটা শেষ হলে আমি বলল- এবার আমার কান পরিস্কার করুন। এমন সময় দেখি ভদ্রলোকের মোবাইলে ফোন এলো। তিনি নড়াচড়া না করে ফোনে কথা বলে যাচ্ছেন। কান পরিস্কার করার লোকটা কান পরিস্কার করে যাচ্ছে। এমন সময় আমার মোবাইলে ফোন এলো, সুরভি ফোন করেছে- বলল কি করো? আমি বললাম, কান পরিস্কার করাচ্ছি। সুরভি বলল ওয়াক ছিঃ।
সারাদিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে দেখি এক লোক কাঁচা মরিচ বিক্রি করছে। একদম সস্তা, মাত্র ২৫ টাকা কেজি। এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনে ফেললাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৮