আজ কামাল আহমেদের অফিসে শেষ দিন।
দীর্ঘ সতের বছর তিনি এ অফিসে কাজ করেছেন। অফিস তাকে আজ বিদায় জানাচ্ছে। মোটামোটি বেশ ভালোই আয়োজন করা হয়েছে। অফিসের সবাই কনফারেন্স রুমে জমায়েত হয়েছেন। অফিসের বেশ কয়েকজন কামাল আহমেদকে নিয়ে খুব ভালো ভালো কথা বলেছেন। সিইও কখনও কারো প্রশংসা করেন না, আজ সিইও খুব প্রশংসা করলেন কামাল আহমেদের। সিইও'র কথা শুনে আবেগে কামাল আহমেদের চোখে পানি চলে এলো। অফিস আজ ভালো খাওয়ার আয়োজন করেছে। অফিসের প্রত্যেকে আজ কামাল সাহেবের সাথে ছবি তুললেন। এই অফিসে প্রফিডেন্ট ফান্ড বা গ্রাচুইটি নেই। তবু অফিস কামাল আহমেদকে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়েছে। দুই লাখ দিয়েছে অফিস এবং বাকি পঞ্চাশ হাজার দিয়েছে অফিসের সমস্ত স্টাফরা মিলে।
কামাল সাহেবের মন আজ খুব খারাপ।
দীর্ঘদিন চাকরী করার পর আজ অফিস থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। এখনও তিনি কাজ করার ক্ষমতা রাখেন। তার শরীর স্বাস্থ্য বেশ ভালো। কিন্তু অফিসের নিয়ম অনুযায়ী তাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। হাজার লক্ষ সৃতি এই অফিসের সাথে তার। তিনি বহু কিছুর সাক্ষী। এই অফিসে কত লোক এলো, গেলো। কত কাহিনী, কত ঘটনা! সব তার চোখের সামনে আজও পরিস্কার ফুটে উঠে। তার মতো এত পুরোনো লোক এই অফিসে আছেন আরো দুইজন। বাকি সবাই প্রায় নতুন বলা চলে। কারো দুই বছর, কারো তিন বা পাঁচ বছর। তার মতো এত লম্বা সময় এই অফিসে কেউ কাজ করে নি। কামাল আহমেদ এর দুই মেয়ে। দুই মেয়ের'ই বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি দুই মেয়েকেই মাস্টার্স পাশ করিয়েছেন তারপর বিয়ে দিয়েছেন। অফিসে কামাল আহমেদ খুব মন দিয়ে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। সতের বছরে কখনও তিনি দেরী করে অফিসে আসেন নি। অফিস ছুটির আগে চলেও যান নি। অকারনে ছুটি নেন নি।
অতীত দিনের সমস্ত কথা আজ তার খুব বেশি মনে পড়ছে।
এই অফিস একদিন তাকে শোকজ করেছিল। দীর্ঘ দশ বছর কাজ করার পর এইচ আর আকরাম সাহেব তাকে শোকজ লেটার দেয়। শোকজ লেটার পেয়ে কামাল আহমেদ বেশ অবাক। তিনি খুব ভদ্র এবং সহজ সরল মানুষ। অফিসের পিয়নের সাথেও তিনি হাসি মুখে কথা বলেন। কখনও কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেন না। কামাল সাহেব ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে বুঝতে পারলেন, বসের নতুন পিএ রোজিনা এই কাজ করেছে। বসের পিএ অফিসে এসেছে একমাসও হয়নি। এমনকি তার সাথে দুই মিনিট কথাও হয়নি। শোকজ লেটারে লেখা, মিটিং এর সময় কামাল সাহেব খুব চিৎকার করে কথা বলেছেন। অফিসের পরিবেশ নষ্ট করেছেন। পুরোটাই বানোয়াট। অফিসের সবাই জানে কামাল আহমেদ হাসি খুশি ভালো মানুষ। শোকজ দেওয়ার সময় এইচ আর করাম সাহেবও বলেছেন, কামাল ভাই আমি জানি, আপনি ভালো মানুষ। আপনার বিরুদ্ধে এটা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে বসের পিএ ঐ পাছা মোটা বেটি।
মৃত্যুর আগে নাকি জীবনের সব কিছু ছবির মতোণ করে চোখের সামনে ভাসে।
কামাল আহমেদের মনে পড়লো একাউন্সের মনির সাহেব প্রতিদিন অফিসে এসে পর্ণ ভিডিও দেখতেন। একদিন কি কারনে কামাল আহমেদ মনির সাহেবের ডেস্কে গিয়ে দেখেন, মনির সাহেব পর্ন ভিডিও দেখছেন। এই মনির সাহেব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। মূখ ভর্তি দাড়ি। সুমন নামের একজন একদিন তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে অফিসে এসেছিলেন। আড়ালে মেয়েটির সাথে চুমু টুমু দিচ্ছিল। ঘটনা চক্রে কামাল আহমেদ দেখে ফেলেন। মনোয়ার নামে এক ছেলে অফিসে নতুন জয়েন করেই দুই লাখ টাকা চুরী করেছিল। ধরাও পড়েছিল। জেনারেল সেকশন এর চারজন মিলে অফিস ছুটির পর অফিসে বসেই মদ খেয়েছিল। সেই ঘটনাও কামাল সাহেব দেখেছেন। কিন্তু কাউকে বলেন নি। বাবুর্চী আমিনুল তার সহকারীর সাথে সেক্স করেছিল রান্না ঘরে। সেই ঘটনাও তিনি দেখেছনে কিন্তু কখনও কাউকে বলেন নি। অফিস পলিট্রিক্স খুব খারাপ জিনিস। আর এর শিকার হয় অফিসের ভালো লোক গুলো।
অফিসের পিয়ন ছিল মহিদুল। মহিদুল অফিসেই থাকতো।
সে একবার গরম সহ্য করতে না পেরে মিটিং রুমের এসি ছেড়ে রাতে ঘুমিয়েছিল। এই অপরাধে তার চাকরী চলে গিয়েছিল। তিনি বড় স্যারকে বলে মহিদুলের চাকরী বাচিয়ে ছিলেন। প্রতিটা অফিসে বেশ কিছু দুষ্টলোক থাকে, আবার কিছু ভালো লোকও থাকে। দুষ্টলোকেরা মানুষের ক্ষতি করতে চেষ্টা করে। বসের পিএ রোজিনা তাকে একবার বিপদে ফেলেছিল। শোকজ লেটার পর্যন্ত তাকে পেতে হয়েছি। পিএ রোজিনার পাছাটা বেশ ভারী ছিল। চুল গুলো কালার করেছিল। দেখতে মোটেও ভালো লাগতো না। অবশ্য সেই পিএ বেশি দিন অফিস করতে পারেনি। ছয় মাস পর তার চাকরী চলে গিয়েছিল। রেজা নামের একজন সুমি নামের একটা মেয়েকে চিঠি দিয়েছিল বলে রেজার চাকরী চলে যায়। রেজা চিঠিতে খারাপ কিছু লিখে নি। সুমিকে তার খুব ভালো লাগে সেই কথাই লিখেছিল। মামা চাচার জোরে অফিসে অনেকেই এসে জয়েন করতো। তারা খুব দাপট দেখাতো। একের পর সব ঘটনা তার মনে পড়ছে।