কেউ আমাকে একটু কষ্ট করে বোঝাবেন, জীবনের উদ্দেশ্য কি? সত্যি বলছি, এই ব্যাপারে বিশেষ অজ্ঞ আমি। বিশেষ সন্দিহান। বছরের পর বছর ভেবেও সমাধান পাইনি। আদিম সমাজে মানুষ সারাদিন মাইলের পর মাইল চষে বেড়িয়েছে খাবারের সন্ধানে, সারা জীবন'ই থেকেছে আধপেটা খেয়ে। অধিকাংশ সময়ই কেটেছে হিংস্র প্রাণীদের মোকাবেলায়। জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজার মত অবসর ও মস্তিষ্কের বিকাশ তাদের ছিল না। এটা তো আধুনক যুগ। প্রায় সব কিছু জানা হয়ে গেছে মানব জাতির। বিবর্তনীয় দৃষ্টিতে যদি দেখি তবে, আমাদের জীবনের আসলে উদ্দেশ্য একটিই, তা হচ্ছে নিজের জিনকে রক্ষা করা এবং এর বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। ধর্ম বলে মানুষকে বিভিন্ন কাজ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে! কারো জীবনের উদ্দেশ্য রাজা হয়ে রাজ্য শাসন করা। কারো জীবনের উদ্দেশ্য সারাজীবন মাছ মেরে অন্যদের খাওয়ানো। কারো জীবনের উদ্দেশ্য স্বামীর সেবা করা ইত্যাদি।
“জীবনের কোন অর্থ বা যৌক্তিকতা নাই। তাই বলে জীবন উপভোগ না করারও কোন কারণ নাই। যারা জীবনের অর্থ পেয়েছে বলে দাবী করে তারা হয় মিথ্যে বলছে অথবা কোন মিথ্যা ভূয়া বিষয়ে বিশ্বাস করছে। দুটো ক্ষেত্রেই তারা মানব জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বিফল হয়।”
আপনি রাস্তার উপর দেখতে পেলেন একটা কুকুর গভীর নিদ্রায় মগ্ন, তার পেটটা স্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য উঠছে আর নামছে। এই দৃশ্যটি আপনি গভীর মনোযোগের সাথে দেখ্তে দেখতে যদি প্রশ্ন করেন এই কুকুরটার পৃথিবীতে কি উদ্দেশ্য এসেছে? এর উত্তর আপনি কি দেবেন আমি জানিনা, কিন্তু আমি বলব ওই সময়ের জন্য কুকুরটির উদ্দেশ্য ঘুমানো এবং সেটাই তার ওই সময়ের পরম উদ্দেশ্য। ঘুম ভাঙ্গলে সে আরেকটি কাজে নিয়জিত হবে এবং সেটাই হবে তার ওই সময়ের পরম উদ্দেশ্য। তাই নয় কি?
আইনস্টাইন মরে গিয়েও তার চিন্তার মাধ্যমে জীবন্ত থাকেন আমাদের কাছে, মানে, জীবিতদের কাছে। বস্তুত, এই যে আইনস্টাইনকে নিয়ে আমরা এত মাতামাতি করছি, রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবার্ষিকি পালন করছি সাড়ম্বরে, তাকে শ্রদ্ধা জানানোর কথা বলছি, এতে ঐ মহামানবদের আসলেই কিছু এসে যায় না, কারণ তারা এই সম্মান, ভালোবাসা দেখতেও পাচ্ছেন না, ভোগ করতেও পারছেন না! তাই আইনস্টাইনের বা রবীন্দ্রনাথের বেঁচে থাকা বলতে তাদের নিজেদের বেঁচে থাকা বোঝায় বলে মনে হয় না, বরং জীবিত মানুষের নিকট তাদের চিন্তার বেঁচে থাকা বোঝায় সম্ভবত! এখন একটা মানুষ বেঁচে আছেন কিনা, আমরা কিভাবে বুঝব? সে যদি চিন্তা করতে পারে, কথা বলতে পারে, তাহলে তাকে জীবিত বলা যায়! আইনস্টাইন বা রবীন্দ্রনাথ কি প্রত্যহ আমাদের সাথে কথা বলছেন না, বা তাদের চিন্তাগুলো কি আমাদের ভাবনার সাথে মিথস্ক্রিয়া করছে না? এইজন্যই তারা জীবিত, এইজন্যই তারা সচল!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৪