মেয়েপক্ষ ছেলের বাসায় বিয়ের সাত দিন আগে বিশাল এক টিভি, ফ্রিজ, আলমারি, খাট, ড্রেসিং টেবিল এবং একটি দুই টন এসি পাঠিয়েছে। অথচ ছেলেরা এসব কিছুই চায় নি। মেয়েপক্ষ খুশি হয়েই দিয়েছে। বিয়ের চার দিন আগে- জামাই খাবার পাঠিয়েছে মেয়েপক্ষ। এলাহি কারবার! কমপক্ষে এক শো জনের খাবার পাঠিয়েছে। এমন কোনো খাবার নাই যেটা পাঠায় নি। চিড়ামুড়ি, দই, সন্দেশ, পিঠা ইত্যাদি কিছুই বাদ যায় নি। আস্তো খাসি, আস্তো টার্কি মূরগী। একুশ টা আস্তো মূরগী। এক মন গরুর রেজেলা। বহু খাবার। বহু রকমের খাবার। তিন পিকআপ ভর্তি খাবার। ছেলের বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য নগদ এক লাখ টাকা পাঠিয়েছে। ছেলে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা মোবাইল কিনে নিয়েছে। ছেলেরা দুইটা দেশী কাতলা মাছ পাঠিয়েছে মেয়ের বাসায়। দুইটা মাছের ওজন ৫/৬ কেজি তো হবেই। আজ মেয়েটির গায়ে হলুদ। তারপর দিন ছেলের গায়ে হলুদ। তারপর বিয়ে। এবং তার পরের দিন বৌভাত। বৌ ভাতের অনুষ্ঠানে আমার দাওয়াত আছে। অবশ্য আমার একটা নিয়ম আছে, যে সমস্ত বিয়েতে যৌতুক দেওয়া হয়, সেই সমস্ত বিয়েতে আমি যাই না। এ বিয়েতে আমি যাবো কিনা বুঝতে পারছি না।
যার বিয়ে হচ্ছে তার নাম হাবীব। আমার সাবেক কলিগ। হাবীব প্রচন্ড চালাক। তবে বুদ্ধিমান নয়। একটা মাঝারি মাপের চাকরী করে। এই চাকরী সে নিজের যোগ্যতায় পায়নি। তারা সচিব মামা চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। হাবীবের এক ভাই লন্ডন থাকেন বৌ বাচ্চা নিয়ে। হাবীবের ইচ্ছা তার ৪৫ বছর হলে সে আরেকটা বিয়ে করবে। আমি বললাম, আগে একটা বৌ এর ভরন পোষন ঠিক মতো চালিয়ে দেখাও। সবচেয়ে বড় কথা তোমার বৌ তোমাকে প্রচন্ড যন্ত্রনা দিবে। সেই যন্ত্রনা পেয়ে তোমার আর একটা বিয়ে করার ইচ্ছা থাকবে না। নো নেভার। হাবীব আমাকে খুব পছন্দ করে। তার যে কোনো সমস্যা আমার সাথে শেয়ার করে। আমার কাছ থেকে বুদ্ধি পরামর্শ চায়। আজ হাবীব আমার কাছে এসেছে তার বিয়ের গল্প শোনাতে। আমার একটা ভালো অভ্যাস হলো কেউ কিছু বলতে চাইলে, আমি খুব মন দিয়ে শুনি।
আমি স্পষ্ট বললাম, যেহেতু মেয়েটার কাছ থেকে তুমি প্রচুর যৌতুক নিয়েছো, তাই মেয়েটাকে রাজার হালে রাখতে হবে। কোনো প্রকার দুঃখ কষ্ট দিত্যে পারবে না। হাবীব বলল, আমরা তো যৌতুক চাই নি। ওরা নিজ থেকেই দিয়েছে। আমি বললাম, মেয়েরা ধনী নয়। তারা কোনো ভাবে বুঝতে পেরেছে তোমরা লোভী। তোমাদের চাওয়ার আছে অনেক কিছু। তাই তারা কষ্ট করে লক্ষ লক্ষ টাকার যৌতুক দিয়েছে। এমন কি যৌতুকের প্রতিটা আইটেম তোমরা খুশি মনে গ্রহনও করেছো। আহ্লাদে গদ-গদও ভাব তোমাদের বাসার সবার মধ্যে এসেছে। তোমাদের বাসার সবার চোখে মুখে খূশির ঝলক। সবচেয়ে দুঃখজকন কথা এই সমস্ত যৌতুক পাওয়া জিনিসপত্র’র ছবি তুলে গর্বের সাথে আত্মীয় স্বজনকে দিয়েছো। নিজেরদের বড় করার জন্য, ভাব নেওয়ার জন্য টিভি ফ্রিজ এসির কথা সবাইকে জানিয়েছো। হাবীর এটা কোনো গর্বের কথা নয়। এটা অত্যন্ত লজ্জার। তুমি এমন কোনো রসগোল্লা নও। তোমার মাথায় এখনই টাক পড়তে শুরু করেছে।
আমি হাবীবকে বললাম, ভায়া আমার কথা শুনে মন খারাপ করো না। আমি আবস্তব কথা বলছি। তোমার বৌয়ের সাথে যত প্রেম ভালোবাসাই থাকুক, পাঁচ বছর পর হলেও সে তোমাকে এই সমস্ত যৌতুকের জন্য খোটা দিবেই। এই খোটা থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। নো নেভার। সবচেয়ে বড় কথা তোমার আর্থিক অবস্থা ভালো না। অল্প টাকা বেতন পাও। এই টাকায় বৌ এর সমস্ত চাহিদা পূরন করা কিছুতেই সম্ভব না। সংসারে অভাব দেখা দিবেই। ছোট ছোট অপমান, আর যৌতুক নেওয়ার জন্য খোঁচা খাওইয়ার জন্য রেডি থাকে। তাছাড়া তোমার বৌ মাস্টার্স পাশ। আধুনিক মেয়ে। এই যৌতুক নেওয়ার কারনে কোনো দিনও বউয়ের সাথে কথায় পারবে না। বৌ অন্যায় করলেও চুপ করে থাকতে হবে। মেয়ের বাবা মা এই জন্যই যৌতুক দিয়েছেন, যেন তোমরা মেয়ের সাথে উচ্চ বাক্য করতে না পাবো। তারা টাকা দিয়ে তোমাদের কিনে নিয়েছেন। মূলত তোমার কিছুই নেই। বাপ ভাইয়ের টাকায় ফুটানী দেখানো বোকামী। তুমি বড়জোর বিশ হাকার টাকা বেতন পাও।
হাবীব আমার কথা শুনে খুব আপসেট। সে বলল, আমি খুব চালাক মানুষ। অনেক বুঝে-শুনেই ওকে বিয়ে করছি। ও ঢালে ঢালে চললে, আমি চলবো পাতায় পাতায়। মাছের তেল দিয়ে মাছ ভাজবো। বিয়ের পরও নানান উসিলায় ওদের কাছ থেকে টাকা নিবো। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি ছেলে হিসেবে খাবাপ নই। খারাপ হলে এত কিছু আদায় করতে পারতাম? ওরাই বা আমাকে এত কিছু দিতো? আমি যোগ্য বলেই আমাকে এত কিছু দিয়েছে। কত ছেলেই তো বিয়ে করে এত কিছু পায়? তাছাড়া প্রতিটা মেয়ের বাপেরই মেয়ের বিয়ের জন্য একটা বাজেট থাকে। মেয়ে জন্ম দিয়েছে খরচ করবে না? বাপ মায়ের একটা দায়িত্ব আছে না। আমি চুপ করে হাবীরের কথা শুনছি। সে গর্বের সাথে বলেই যাচ্ছে। আমার বড় ভাই বিয়ের করার সময়ও অনেক কিছু পেয়েছে। আমার চেয়ে আমার ভাইয়ের ভাগ্য বেশি ভালো। সে এসি’ই পেয়েছে দু’টা। তার শ্বশুর বাড়ি তাকে লন্ডন পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি যাবো কানাডা। সেই দিন খুব কাছে। ‘’স্ত্রী ভাগ্যে লক্ষ্মী’’ একটা কথা আছে। হে হে...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৫৩