খুব বেড়াছেড়ার মধ্যে আছি।
আব্বা বারডেম হাসপাতালে ভর্তি। তার প্রচুর মাত্রায় ডায়বেটিকস। এর মধ্যে আবার পায়ের বুড়ো আঙ্গুকে ইনফেকশন হয়েছে। ইনফেকশন প্রায় হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এক ডাক্তার তো বলেই দিয়েছেন পা কেটে ফেলতে হবে। অবশ্য আব্বাকে যে ডাক্তার চিকিৎসা করেন সে বিদেশ আছে। দুই একদিনের মধ্যেই ফিরবেন। এখন আব্বা অপেক্ষায় আছেন, তার ডাক্তার হয়তো বলবেন- না, পা কাটতে হবে না। আব্বার খুব মন খারাপ। আব্বার চেয়ে বেশি আমার মন খারাপ। যদিও আব্বার উপর আমার অনেক রাগ। তিনবার হাসপাতালের সামনে গিয়ে আব্বাকে না দেখে ফিরে এসেছি। অবশ্য মোবাইলে কথা বলেছি। সুরভি নিয়মিত আব্বাকে দেখতে যাচ্ছে।
এ মাসে চার টা বিয়ের দাওয়াত আছে।
আমার একটা বিয়েতেও যাওয়ার ইছা নাই। অথচ চারটা বিয়েতেই যেতে হবে। এর মধ্যে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান নারায়গঞ্জ। কিছু দিন আগে বাসার চারজন সদস্যের ডেঙ্গু হলো। এর আগে মা হাসপাতালে থেকে এলেন সাত দিন। এখন আব্বা হাসপাতালে। হাসপাতালে আব্বার প্রতিদিন তের হাজার টাকা খরচ। আমার বাপ কোনো দিন টাকা পয়সা জমায় নাই। সারা জীবন সে জমিদারি করেছে। দুই একটা উদাহরন দেই, ভিক্ষুককে সে কখনও পাঁচ টাকা, দশ টাকা দিত না। বলতো পাচ-দশ টাকায় কি হয়? আব্বা একশো টাকা করে দিত। বাসায় পড়ার লুঙ্গিটা পর্যন্ত আব্বা দোকান থেকে আয়রন করিয়ে আনতো। দুই হাত ভর্তি করে বাজার করতো।
এদিকে আমার পকেট শূন্য।
বছরের শুরুতে সুরভিকে কথা দিয়েছিলাম এ বছর মালোশিয়া অথবা থাইল্যান্ড বেড়াতে নিয়ে যাবো। বছর শেষ হতে চলল। এখন, মালোশিয়া না পারি অন্তত পক্ষে কোলকাতা তো নিয়ে যেতে হবে। আমার একটা দোষ হলো- আমি কথা দিলে কথা রাখি। কথা না রাখতে পারলে আমার নিজের মেজাজ'ই প্রচন্ড খারাপ হয়। পরী অক্টোবরে যাবে অস্টেলিয়া বড় ভাই-ভাবীর সাথে। এদিকে সুরভির বাবার ডেঙ্গু। মাঝে একদিন গিয়ে দেখেও আসছি। সুরভির ভাই ভাবী যাবে চেন্নাই ডাক্তার দেখাতে। বাংলাদেশে থেকে নাকি চেন্নাইয়ে চিকিৎসার মান অনেক উন্নত এবং খরচও কম।
সুরভিকেও ডাক্তার দেখাতে হবে।
হরমনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমার নিজেরও শরীর ভালো না। গ্যাস্ট্রিক। প্রচন্ড পা চাবায়। দাঁতের ডাক্তারও দেখাতে হবে। তবে আমি আছি বেশ। বই পড়ছি। মুভি দেখছি। ব্লগিং করছি। রাস্তায় হাঁটছি। সময় পেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে নানান রকম চিন্তা ভাবনা করছি। রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খাচ্ছি। সুরভি বলে, তোমার চা খেতে ইচ্ছা করলে আমাকে বলবে। আমি চা বানিয়ে দিব। রাস্তার নোংরা কাপে চা খাওয়ার দরকারটা কি? আমি বলি, এই নোংরা কাপে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক চা খায়। আমি খেলে সমস্যা কি? সুরভি আমার কথা শুনে রেগে যায়। মাঝে মাঝে সুরভিকে রাগাতে বেশ লাগে।
বি টিভি কি হিজড়া টিভি?
বিটিভিতে সংবাদে বলে, ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছে। এদিকে অন্য প্রাইভেট চ্যানেল খবরে বলছে, প্রতিদিন নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভরতি হচ্ছে। বিটিভির এরকম মিথ্যা বলার কারন কি? বলুক মিথ্যা। আমার কি? এদিকে বাজারে প্রচুর ইলিশ মাছ। এবার নাকি বহু ইলিশ ধরা পরেছে। অথচ একটা ইলিশের দাম কমপক্ষে এক হাজার টাকা। আমার বাসায় দশ জন সদস্য। দুইটা ইলিশ তো লাগেই। মানে দুই হাজার টাকা। আমি শুধু চিন্তা করি দরিদ্র মানূষেরা কিভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে? চাষ করা মাছের কেজিও কমপক্ষে পাচশো টাকা। আমি ভুলে যাই, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে বলেই তো খাবারের দাম বেশি। মানুষের আয়ু বেড়েছে, মানে খাবার ভালো। কেউ খাবারে কিচ্ছু মেশায় না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:১৪