somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জ্বীনের ক্ষমতা- ১

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কমপক্ষে পঁচিশ বছর আগের কথা।
আমাদের বাসায় পাঁচ-ছয়জন মেয়ে একরুম ভাড়া নিয়ে থাকতো। মেয়েগুলো গার্মেন্টসে চাকরী করতো। সকালে চলে যেত রাতে ফিরতো। নিজেরা বাজার করতো, নিজেরাই রান্না করতো। মেয়ে গুলোকে আমার মা অনেক ভালোবাসতো। মা মাঝে মাঝে ওদের রান্না করে খাওয়াতো। কোনো মেয়ে গ্রাম থেকে নতুন ঢাকায় এলে তার কাছ থেকে মা ভাড়া নিতো না। মেয়েগুলোও মাকে খুব ভালোবাসতো। বারবার মা বলতো- দরিদ্র ঘরের মেয়ে। অভাবে পড়ে শহরে আসছে কাজ করতে। আহারে---! আহারে---! আমার মা বেশ কয়েকটা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে নিজের খরচায়। বহু বছর আগে আমাদের বাসায় ভাড়া থাকা মেয়েগুলো আজও মাঝে মাঝে দুই একজন আসে মাকে দেখতে।

আজ রাফেজা নামের একটা মেয়ের গল্প বলব।
আমার নিজের চোখে দেখা ঘটনা। রাফেজা'র বয়স ছিলো ১৭/১৮। মোটামোটি সুন্দরী। স্বাস্থ্য বেশ ভালো ছিলো। গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে নতুন এসেছে। রাফেজার অমতে তার বাবা-মা বিয়ে ঠিক করে। তাই রাফেজা পালিয়ে ঢাকা চলে আসে। ঢাকা এসে গার্মেন্টসে চাকরী নেয়। আমাদের বাসায় থাকে। রাফেজা ছুটির দিন আমার মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করে। আমাকে বেশ আদর করে। নানান রকম গল্প শুনাতো আমাকে। তখন আমি অনেক ছোট। দিন দুনিয়া কিছুই বুঝি না। অবশ্য তখন মোবাইল, ইন্টারনেট বা ডিশ ছিলো না। শুধু মাত্র বিটিভি'ই ভরসা। তখন মানুষের জীবন ছিলো সহজ সরল সুন্দর। এবং আনন্দময়।

শুক্রবার ছুটির দিন। গার্মেন্টস বন্ধ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, সব গুলো মেয়ে রাফেজাকে ঘরে বন্ধী করে রেখেছে। কারন রাফেজাকে জ্বীনে ধরেছে। রাফেজা ঘরের মধ্যে পাগলের মতো ছটফট করছে। বিকট স্বরে চিৎকার, চেচামেচি করছে। মনে হচ্ছে কোনো পুরুষ মানুষ চিৎকার চেচামেচি করছে। রাফেজা ঘরের সব কিছু ভেঙ্গে ফেলছে। বন্ধ দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। যে কোনো সময় দরজা ভেঙ্গে পরে যাবে- এমন অবস্থা। চারজন মানুষের শক্তি রাফজার শরীরে। তাকে ধরে রাখা মুশকিল। প্রায় বিশ মিনিট হুড়োহুড়ি, চিৎকার করতে করতে এক সময় রাফেজা অজ্ঞান হয়ে যায়। রাফেজার এক বোন বলল, রাফেজার সাথে জ্বীন আছে। খারাপ জ্বীন। মাসে একবার দুইবার জ্বীন রাফেজার উপর আসর করে। তখন রাফেজা এরকম পাগলের মতো করে।

প্রায় এক ঘন্টা পর রাফেজার জ্ঞান ফিরে।
মাথায় পানি দিতে হয়েছে। চোখে মুখে পানির ছিটা দিতে হয়েছে। জ্ঞান ফেরার পর দেখা গেল রাফেজা কথা বলতে পারে না। তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হয় না। রাফেজার বোন বলল, আগেও জ্বীন ধরতো কিন্তু কখনও জবান বন্ধ হতো না। এই প্রথম জবান বন্ধ হয়ে গেল। চার দিন পার হয়ে গেল রাফেজা কথা বলতে পারে না। গলা দিয়ে কোনো শব্দ আসে না। মা রাফেজাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার বললেন, এই সমস্যা একা একাই ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তার কিছু নাই। মেয়েটা খুব বেশি চিৎকার চেচামেচি করেছে তাই গলা বসে গেছে। সাত দিনের দিন রাফেজার এক মামা একজন মস্ত বড় পীর নিয়ে আসেন আমাদের। এই পীরের নাকি অনেক ক্ষমতা। সে রাফেজার জবান ঠিক করে দিবে।

পীর বাবা বললেন, এইটা কোনো ঘটনা না।
কত ডিয়ারিং সব জ্বীনকে ঠিক করে দিলাম। জ্বীন আমাকে দেখলে ভয় পায়। কত দুষ্ট জ্বীনকে বন্ধী করে ধলাই নদীতে ফেলে দিলাম। রাফেজার জ্বীনকে আজ বন্ধী করবো। রাফেজাকে দুইজন মেয়ে শক্ত করে ধরে দাড় করালো। পীর বাবা কি কি মন্তব্য করে রাফেজার দিকে তিনবার ফুঁ দিলো। তারপর হঠাত করে রাফেজার ভারী বুকে প্রচন্ড জোরে একটা থাপ্পড় দিলো। আচমকা থাপ্পড় দেওয়ার সাথে সাথে রাফেজা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। দশ মিনিট পরে রাফেজার জ্ঞান ফিরে এলো। এবং রাফেজা কথা বলতে পারলো। রাফেজা খুব খুশি তার জবান ফিরে এসেছে। পীর বাবার কেরামতিতে আশে পাশের সবাই খুশি।

(নোটঃ এখন বুঝি, রাফেজাকে জ্বীনে ধরেনি। জ্বীন কখনও কোনো মানুষকে ধরে না। জ্বীনের সেই ক্ষমতা নেই। মানুষের অজ্ঞতার ফসল জ্বীন। যাই হোক, রাফেজার সমস্যা হলো মানসিক। মেয়েটা দরিদ্র। গ্রামের মেয়ে। বিয়ের বয়স হয়ে গেছে অথচ বিয়ে হচ্ছে না। তার বান্ধবীদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। রাফেজার যা হয়েছে তাকে ডাক্তারের ভাষায় হিস্টিরিয়া বলে। অবিবাহিত মেয়েদের এই সমস্যা হতেই পারে।
রাফেজা এখন ভালো আছে। মা রাফেজার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তার দুই সন্তান। রাফেজার স্বামী একজন ট্রাফিক পুলিশ। বিয়ের পর রাফেজাকে আর জ্বীনে ধরেনি।)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×