somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জ্বীনের ক্ষমতা- ৩

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কুয়েত থেকে আমাদের বাসায় একজন মহিলা এসেছেন।
তার জ্বীন সাধনা আছে। তিনি জ্বীন নামাতে পারেন। প্রশ্ন করলে জ্বীন উত্তর দেয়। এমন কি মিষ্টি দিলে জ্বীন মিষ্টি খায়। তবে প্রশ্ন পছন্দ না হলে জ্বীন উত্তর দেয় না। এবং জ্বীন খুশি না হলে মিষ্টি খায় না। কথিত আছে জ্বীন যদি মিষ্টি খায় তাহলে কপাল খুলে যায়। তার আর কোনো চিন্তা নাই। কুয়েত থেকে আসা মহিলা আমাদের বাসায় তিন দিন থাকবেন। উনি দীর্ঘদিন কুয়েত ছিলেন। সেখানেই তিনি সাধনা করে বেশ কয়েকটা জ্বীনকে নিজের গোলাম বানিয়েছেন। কুয়েত থেকে আসা মহিলার বাড়ি কুমিল্লায়।

জ্বীন নামানোর আগে যা যা করতে হবে-
১। পুরো ঘর অন্ধকার করতে হবে। কঠিন অন্ধকার। একবিন্দু আলো যেন না থাকে।
২। কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। ফিসফিসও করা যাবে না।
৩। ভালো, উন্নত মানের মিষ্টি রাখতে হবে। জ্বীনকে তো আর সস্তা মিষ্টি খাওয়ানো যায় না।
৪। জ্বীনকে ভালো প্রশ্ন করতে হবে। অত্যন্ত ভদ্রতার সাথে।
৫। কোনো রকম বেয়াদবি হয়, এমন কথা বা কাজ ভুলেও করা যাবে না।
৬। নাপাক অবস্থায় থাকা যাবে না। অবশ্যই অযু করে বসতে হবে।

যাই হোক, মহিলার সব শর্ত আমরা হাসি মুখে মেনে নিলাম।
রাত তখন বারোটা। পুরো ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘরে শুধু আমি, আমার বড় ভাই আর আব্বা ও মা। মহিলার সামনে আমরা চারজন চুপ করে আছি। ঘরে আগরবাতি জ্বলছে। আগরবাতির তীব্র গন্ধ। চারিদিক সুনশান নিরবতা। তখন আমি অনেক ছোট। আমার বেশ ভয় ভয় করছিলো। না জানি কি হয়! আমি শক্ত করে মার হাত ধরে রেখেছি। বড় ভাই বেশ স্বাভাবিক আছে। আব্বা আম্মা চুপ করে আছে। কুয়েত ফেরত ভদ্র মহিলা বিড়বিড় করে হয়তো কিছু বলছিলেন।

প্রায় ত্রিশ মিনিট হয়ে গেল।
একসময় ভদ্রমহিলা বললেন, জ্বীন 'কারিন' এসেছেন। আপনারা সবাই কারিনকে সালাম দেন। আমার মা বাবা সালাম দিলেন। আমি ভয়ে মিইয়ে গেলাম। বড় ভাইয়েরও একই অবস্থা। জ্বীন কারিন সালামের উত্তর দিলেন। বেশ সুন্দর গলা। কন্ঠস্বরটা ভীষন মিষ্টি লাগলো। চারিদিকে আগরবাতি কটু গন্ধের বদলে মিষ্টি একটা গন্ধ পেলাম।
ভদ্রমহিলা বললেন, একজন একজন করে প্রশ্ন করুন। প্রথম প্রশ্ন করলেন আব্বা। জ্বীন চমৎকার বাংলা উচ্চারনে প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
মা প্রশ্ন করলো- জ্বীন উত্তর দিলো।
বড় ভাই প্রশ্ন করলো- জ্বীন কারিন সেই উত্তরও দিলো। বড় ভাইয়ের প্রশ্নে খুশি হয়ে, জ্বীন বড় ভাইকে একটা পাথর দিলো।
এবার আমার পালা। আমি কি প্রশ্ন করবো? আমার মাথায় কোনো প্রশ্নই আসছে না। আমি ভয়ে কাঁপছি। শেষমেষ বললাম, আপনি যদি একটা মিষ্টি খান তাহলে আমি খুব খুশি হবো।
জ্বীন কারিন বললেন, একটা না আমি দু'টো মিষ্টি খাবো।

(নোটঃ বহু বছর পর আমি নিজেই জ্বীন নামানোর রহস্য বের করতে সক্ষম হয়েছিলাম। কুয়েত থেকে আসা ভদ্রমহিলা আমাদের বোকা বানিয়েছেন। উনি জ্বীন নামান নি। জ্বীন আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেন নি। এবং জ্বীন মিষ্টিও খাননি। জ্বীনের সাধনা করা এটা একটা ফালতু কথা। জ্বীন মানুষের ভালোও করতে পারে না, মন্দও করতে পারে না। এই ক্ষমতা জ্বীনের নেই। জ্বীনের চেয়ে হাজার গুন বেশি ক্ষমতা মানুষের। ভদ্রমহিলা নিজেই জ্বীন সেজেছেন। জ্বীন সেজে নিজেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এবং মিষ্টি উনি নিজেই খেয়েছেন।)

আমি যেভাবে জ্বীন রহস্য উন্মোচন করলাম-

১। ভদ্র মহিলা বেশ কয়েকটা গলায় কথা বলতে পারেন। সব সময় ভদ্রমহিলা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন কিন্তু জ্বীন সেজে নিজেই আমাদের সাথে বেশ নরম স্বরে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেছেন।
২। মহিলা বলেছেন, ভালো মানের মিষ্টি কিনতে। কারন উনি সস্তা মিষ্টি খান না। এবং উনি এক বসায় দু'টা মিষ্টি খান। তাই আমি যখন বলেছি একটা মিষ্টি খান। উনি বলেছেন দু'টা মিষ্টি খাবো।
৩। জ্বীনের বড় ভাইকে দেওয়া পাথরটা অতি সাধারন একটা পাথর। আমি বায়তুল মোকাররমে গিয়ে পাথরটা দেখিয়েছি। দোকানদার বলল, এরকম পাথর আমাদের কাছে অনেক আছে। এই পাথর অনেক সস্তা। অনেক লোক এই পাথর দিয়ে আংটি বানায়। আঙ্গুলে পড়ে।
৪। আমি যদি জ্বীনকে প্রশ্ন করতাম নিউটনের তৃতীয় সুত্রটা বলেন। জ্বীন তা পারতো না। মূর্খ মহিলা নিউটনের সুত্র জানার কথা না।
৫। আব্বা আম্মা আর বড় ভাই অতি সাধরন প্রশ্ন করেছেন- ব্যবসা ভালো হবে? পরীক্ষায় পাশ করবো? অমুক বিপদ কেটে যাবে?
৬। আগরবাতির কটু গন্ধ ছাপিয়ে অন্য মিষ্টি গন্ধ পেয়েছি কারন অন্ধকারে ভদ্রমহিলা কোনো পারফিউম স্প্রে করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০৯
১৫টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×