১।
বিকেলে মা'র ঘরে টিভি দেখছিলাম।
রিমোট টিপতে টিপতে একটা চ্যানেলে দেখলাম বাংলা সিনেমা দেখাচ্ছে। আমি দুই মিনিট দেখলাম। যা দেখলাম-
বিয়ের আসরে জামাই বলছে, না না আমাকে হোন্ডা না দিলে আমি এ বিয়ে করবো না।
মেয়ের বাপ বলছে, টাকা যোগাড় করতে পারি নাই। তোমাকে পরে টাকার ব্যবস্থা করে হোন্ডা কিনে দিব।
জামাই কিছুতেই মানছে না। সে এখন বিয়ের আসর থেকে উঠে যাবে।
এমন সময় নায়ক জসিমের আগমন।
নায়ক জসিম জামাইকে বলে, হোন্ডা না পেলে বিয়ে করবি না?
জামাই বলে, না। করবো না।
ঘটনাচক্রে এমন সময় রাস্তা দিয়ে একলোক হোন্ডা চালিয়ে যাচ্ছিল। নায়ক জসিম দৌড় দিয়ে সেই হোন্ডা নিয়ে আসে।
স্টেজে জামাইয়ের পাশে হোন্ডাটাকে রাখে। হোন্ডাকে মালা পড়ায়, লাল ওড়না দিয়ে ডেকে রাখে।
শেষে, নায়ক জসিম জামাইকে বলে, এই হোন্ডার সাথেই আজ তোর বিয়ে হবে।
কাজী সাহেব, বিয়ে পড়ান।
এতটুকু দেখে আমি হাসতে হাসতে শেষ। চমতকার বিনোদন।
২।
অসহ্য গ্রীষ্মের দুপুর।
তবু রাস্তায় লোকজনের কমতি নেই। রাতের কয়েক ঘন্টা বাদ দিলে এ শহরের রাস্তায় সব সময় মানুষ থাকে। আমি দাঁড়িয়ে আছি, আসাদ গেটের সামনে। বাসে উঠবো, মতিঝিল যাবো।
গেরুয়া আলখাল্লা পরা এক সাধু আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মুখ ভর্তি দাড়ি গোঁফ। গলায় লোহার শিকল। দুই হাত উপরে তুলে বলল, জয়গুরু!
লোকটির মাথা ভরতি জট। এই জটের জন্য তাকে অবশ্যই দীর্ঘদিন সাধনা করতে হয়েছে।
সাধু গম্ভীর ভাবে বলল, 'তুমি যা নিয়ে চিন্তা করছো, তার সমাধান হয়ে যাবে। একটু সময় লাগবে, একমাস কি দেড় মাস। শুধু শুধু চিন্তা করে শরীর খারাপ করো না। খারাপ সময় কারো দীর্ঘদিন থাকে না।
আমি হাসলাম। সাধু আমাকে তুমি করে বলছে। আমি বেশ ভদ্রভাবেই বললাম, আপনি আমাকে শুধু শুধু উপদেশ দিচ্ছেন। আমি আপনাকে একটা টাকাও দিব না।
সাধুটি বলল, আমি তো বাবা টাকার জন্য তোমার কাছে আসি নি। তোমার কপালে একটা অমঙ্গল চিহ্ন দেখলাম....
আমি বললাম, এখন তাবিজ কবচ নিতে হবে?
না না, সেসব কিছু না। আমি মানুষের মঙ্গলের জন্য কিছু করতে চাই। এখন তুমি যদি কিছুটা সাহায্য করো। তাতে তোমার পুণ্য হবে। খারাপ সময় কেটে যাবে।
আমি রেগে গিয়ে বললাম, তুমি দূর হয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। যত সব ভন্ড! সরে যাও আমার চোখের সামনে থেকে.....
সাধুটি বিড়বিড় করে কি যেন মন্ত্র পড়ছিল।
আমার বাস এসে গেছে, এখন আমি বাসে উঠবো।
সাধুটি চিৎকার করে বলল, আমি মানুষের ভালো ছাড়া মন্দ করি না। তোর কপালে অমঙ্গলের চিহ্ন।
বাস থেকে নেমেই রাস্তা পার হচ্ছিলাম। হঠাত একটা গাড়ি দ্রুত আসছিলো আমার দিকে। এমন অবস্থা- না সামনে যাওয়া যাবে, না পেছনে যাওয়া যাবে। নিশ্চিন্ত মৃত্যু জেনে আমি চোখ বন্ধ করলাম। মাঝে মাঝে অনেক রহস্যময় ব্যপার ঘটে। আমি বেঁচে গেলাম।