(এই লেখাটি আমার নয়। এটা লিখেছেন আমার শ্বশুরমশাই। তার অনুমতি নিয়েই লেখাটি ব্লগে দিলাম।)
সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের ১৫ সেল সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই তারা কোন দিন বুঝবেও না কত কষ্টদায়ক থাকা খাওয়ার ব্যবস্হা এবং জেল বন্দিরা কতটা নিগৃহনের শিকার হতো। আল্লাহর অশেষ রহমত ও মজলুমদের দোয়ায় সরকারের পক্ষে আমাকে শাস্তিদায়ক সেলে প্রেরণ করলেও আমি খুব ভালোই ছিলাম যা আমি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর অনেককেই বলেছি। যেহেতু আমি তখন ডিটেনশন প্রাপ্ত আসামি সেহেতু আমার জেলখানায় চলাচলেও রিস্ট্রিকসন ছিল। আমি সেলের বাহিরে যেতে পারতাম না। ছোট্ট কুঠুরীতে কাটতো আমার সকাল- সন্দ্ধ্যা। পত্রিকা পড়ে, আমার সহধর্মিণীকে চিঠি লিখে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতো তা টেরই পেতাম না।
প্রতিদিন প্রতিক্ষায় থাকতাম কখন আমার জেলজীবন সমাপ্ত হবে, কখন আমার মায়াবী মায়ের নিস্পাপ মুখে নাম ধরে ডাকতে শুনবো। অনেক সময় আমার নির্ঘুম রাত কাটে। এভাবে দিনের পর দিন কেটে যায় কিন্তু সূর্য নতুন ভোরের সংবাদ দিতে কেন যেন বিলম্ব করেই যাচ্ছে। অন্য দিকে আমার অনুপস্থিতি কর্মচারীদের মনোবল সম্পুর্ন ভেঙ্গে যায়, আর যারা বাহিরে ছিল তারাও ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে আত্মরক্ষায় নিজেকে ব্যাপৃত রাখায় আমাদের জেল জীবন দীর্ঘ হতে লাগলো।
আমার রুমমেটরা আমার জন্য এতটা আন্তরিক ছিল যা কোনদিন ভুলবার নয়। আমার বন্দী জীবন ভালোই কাটত। আমি আমার রুমের সকলের পরিচয় না দিলে ওদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা থাকবে সকলের, তাই একটু হলেও এখানে উল্লেখ করতে চাই।
১। সুভ্রত বাইন ওরফে হতেহ আলী খা একজন গৌরনদীর খৃষ্টান পরিবারে জন্ম। তার জীবন অন্য সাধারণ মানুষের মতো শুরু করলেও তার প্রথম সন্তান রাশমনো ক্লিনিক টাকার অভাবে চিকিৎসা না দেয়ায় তার হাতে সন্তানের করুন মৃত্যু তাকে টাকার নেশায় অন্ধকার জীবনে ঠেলে দেয়। সে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে আন্ডার ওয়াল্ডে ডন হিসাবে আবির্ভুত হন এবং তার একটা নতুন জগত তৈরী হয়। টাকার নেশায় একের পর এক অপরাধে জড়িয়ে যায়।
২। নাটকা বাবু লালবাগে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবা আরবি ভাষায় গোল্ড মেডেলিষ্ট, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের এম এ এবং তিনি মহাহিসাব রক্ষক কার্যালয়ের একজন অফিসার ছিলেন। কিন্তু বাবু বিপদগামী হয়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়।
৩। টিক্কা মগবাজারের তৎকালীন ওয়ার্ড কমিশনার আওয়ামিলীগ নেতা মোখলেছুর রহমান সাহেবের আপন ভাগ্নে। এছাড়া ওর পারিবারিক বিশাল সম্পত্তির মালিক ছিল এবং ভাই বোন সকলেই কানাডা প্রবাসী ছিল। মোল্লা মাসুদের সংস্পর্শে অন্ধকার জগতে পা রাখে যেখান থেকে মৃত্যু অবদি আর ফেরৎ আসা সম্ভব হয়নি।
এ ছাড়া অপর দু' জন ছিছকা ডাকাত ও ছিনতাই কারী ছিল।
চলবে------
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:১৫