টয়লেট খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা জায়গা।
জগতের মহান মানুষ গুলো তাদের মহৎ চিন্তা ভাবনা টয়লেটেই করেছেন। হিটলার ট্য়লেটে বসেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। খন্দকার মোশতাক তার কুটিল জটিল সিদ্ধান্ত গুলো ট্যলেটে বসেই নিয়েছেন। আমি এক দূর্নীতিবাজকে চিনি সে তার সারাদিনের প্লান প্রোগ্রাম সকালে টয়লেটে বসেই করে ফেলেন। শাহেদ জামাল টয়লেটে বসে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। এটা তার কাছে নিম্ন রুচির কাজ বলে মনে হয়। তবে টয়লেটে খবরের কাগজ পড়া যায়, গান গাওয়া যায় বা পটি করতে করতে চা কফিও খাওয়া যায়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না। অবশ্য একেকজন একেকভাবে, একেক জায়গায় সিদ্ধান্ত নেয়। কেউ কেউ রাতে বিছানায় গিয়ে ঘুমানোর আগে গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গুলো নেয়। শাহেদ জামাল তার গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গুলো নেয় রমনা পার্কে বসে। এর চেয়ে সুন্দর জায়গা ঢাকা শহরে আর নেই। চারিদিকে গাছপালা। শীতল বাতাস।
এখন দুপুর দুইটা। আকাশ বেশ মেঘলা।
হয়তো সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি হবে। আজ সকাল থেকেই শাহেদ জামাল পার্কে বসে আছে। তার পকেটের অবস্থা ভালো না। দুপুরে কি খাবে তার ঠিক নেই। চারটা সস্তা সিগারেট ছিলো তা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। মেঘলা দিনে ভালো মন্দ খেতে ইচ্ছা করে। আজ খেতে ইচ্ছা করছে, চিকন পোলাউ চালের খিচুরী। সাথে থাকবে বড় ইলিশ মাছ ভাজা (ডিমসহ)। গরুর মাংস ভূণা। স্প্রাইট। সালাদ। বেগুন ভাজা। হুটহাঁট পছন্দের খাবার গুলো খেতে খুব ইচ্ছা করে। অথচ কোনো উপায় নাই। এমন কেউ নেই যার কাছে গেলে তার প্রিয় খাবার গুলোর ব্যবস্থা করে দিবে। পকেটে আছে মাত্র বিশ টাকা। বিশ টাকায় আজকাল কিছুই পাওয়া যায় না। রেস্টুরেন্টে এক কাপ চায়ের দাম পনের টাকা। ফুটপাতেও আজকালএক কাপ চায়ের দাম নেয় দশ টাকা। শাহেদের মনে আছে, ১৯৮৮ সাল হলে বিশ টাকায় বেশ ভালোভাবেই খাওয়া যেত। তখন একটা ডাবের দাম ছিলো তিন টাকা। রিকশা ভাড়া আজ যেটা চল্লিশ টাকা তখন ছিলো মাত্র তিন বা চার টাকা। দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। ক'দিন ধরে ভিষন দাঁত ব্যথা।
কয়েক বছর আগে শাহেদ ব্যবসায় নেমেছিলো।
তারা দুই বন্ধু ব্যবসায় নেমেছিলো। শফিক আর সে। শফিক খুব ভালো ছেলে। প্রচন্ড পরিশ্রমী। দারুন আত্মবিশ্বাসী। শফিক কিভাবে যেন গুলশান এলাকা ঘুরে ঘুরে একটা কাজ নিয়ে নেয়। কাজটা হলো একটা অফিসে ৬২ জন স্টাফের অফিস স্টেশনারী জিনিসপত্র দেওয়া। কাগজ, প্রিন্টারের কালি, কলম, ফাইলপত্র, চারটা চেয়ার টেবিল, ইত্যাদি সাপ্লাই। তারা ট্রেন্ডার জমা দিলো। দুই লাখ একুশ হাজার টাকার। তাদের ট্রেন্ডার পাশ হলো। কাজটা দেওয়ার সময় অফিসের ম্যানেজার নুরুল হুদা সাহেব বললেন, কাজটা আপনাদের দিলাম। আপনারা ইয়াংম্যান। শিক্ষিত ছেলে। দেশ আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
এদিকে শফিক আর শাহেদের হাতে কোনো টাকা নেই। শাহেদ বহু কষ্টে পঞ্চাশ হাজার টাকার ব্যবস্থা করলো। শফিক তার বোনের গহনা বন্ধক রেখে বাকি টাকার ব্যবস্থা করলো। কাজটা করতে পারলে তাদের ২২ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে। প্রথম কাজ হিসেবে ২২ হাজার টাকা মন্দ না। এবার হয়তো আল্লাহ তাদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।
শফিক এবং জামাল যথাসময়ে কাজটা করলো।
তারা বিলের জন্য ম্যানেজার নুরুল হুদার কাছে গেল। নুরুল হুদা বিল আটকে দিলো। বলল, আপনারা বাজে জিনিসপত্র দিয়েছেন। শাহেদ বলল, স্যার প্রতিটা জিনিস আপনাদের দেখিয়ে দিয়েছি। জিনিস গুলো দেখে আপনিই তো অনুমোদন দিলেন। কোনো প্রোডাক্টই বাজে না। শফিক বলল, স্যার বোনের গহনা বন্ধক রেখে মালামাল কিনেছি। বোন আমার জীবন শেষ করে দিচ্ছে। নিজের হাতে বেছে বেছে প্রতিটা আইটেম কিনেছি। কোনো জিনিসই খারাপ না। প্লীজ স্যার আমাদের বিলটা ছেড়ে দেন। আমাদের দুই বন্ধুর এটাই প্রথম কাজ। আমাদের খুব করুন অবস্থা। নুরুল হুদা বললেন, আমার আর কোনো কথা নেই। এখন আমি লাঞ্চ করবো। বিল পাবেন না। আর কিছু বলার থাকলে আমার পিএ কে বলতে পারেন। শাহেদ আর শফিক পিএ'র সাথে দেখা করলো। পিএ কোনো ভনিতা না করেই সরাসরি বলল, স্যারকে বিশ হাজার টাকা দিন। স্যার বিল ছেড়ে দিবেন। শফিক কান্না ভরা গলায় বলল, কাজটা করে আমাদের লাভ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। পিএ বলল, আপনারা বিদায় হোন। দুঃখে কষ্টে দুই বন্ধুর চোখে পানি এসে পড়লো। শফিক সিড়িতেই বসে পড়লো। শাহেদ মনে মনে নুরুল হুদাকে দুইটা কুৎসিত গালি দিলো।
ঘটনা এইখানেই শেষ না।
একদিন অফিসে গিয়ে শাহেদ নুরুল হুদাকে রাগের মাথায় একটা গালি দিয়ে দেয়। এর ফল স্বরুপ তাদের দুই বন্ধুকে ম্যানেজার নুরুল হুদা থানায় লকাপে রেখে পুলিশের হাতে মাইর পর্যন্ত খাইয়েছে। এই ঘটনার দুই বছর পর শফিক একটা এনজিও'র চাকরি নিয়ে কোনো একটা গ্রামে চলে যায়। অনেকদিন শফিকের সাথে দেখা হয় না। পকেটে ট্রেন ভাড়াটা থাকলে শাহেদ আজই রাতের ট্রেনে চলে যেত বন্ধুর কাছে।
শাহেদের কিছুই ভালো লাগছে না। পেটের ক্ষুধাটা চাগাড় দিচ্ছে। চোখের সামনে ভাসছে চিকন চালের পোলাউ, ইলিশ মাছ ভাজা আর গরুর মাংস ভূণা। অবশ্য নীলার কাছে যাওয়া যায়। নীলা ঠিকই খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে। ফেরার পথে নীলা হাতে কিছু টাকাও খুঁজে দেয়। শাহেদের খুব লজ্জা করে নীলার কাছ থেকে টাকা নিতে। না আজ নীলার কাছে যাবে না শাহেদ। বারবার নীলাকে জ্বালাতে আর ভালো লাগে না। শাহেদ রমনা পার্ক থেকে বের হলো। সে এখন যাবে পুরান ঢাকার কলতাবাজার। সেখানে একটা রেস্টুরেন্ট আছে তার পরিচিত। তারা শাহেদকে বাকিতে খাবার দেয়। সমস্যা হলো সেখানে খিচুড়ি, ইলিশ মাছ বা গরুর মাংস পাওয়া যায় না। তারা শুধু বিক্রি করে তেহারী। খেতে একটুও মজা না। ঢাকা শহরের সবচেয়ে ফালতু তেহারি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪৩