somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল (নয়)

০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



টয়লেট খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা জায়গা।
জগতের মহান মানুষ গুলো তাদের মহৎ চিন্তা ভাবনা টয়লেটেই করেছেন। হিটলার ট্য়লেটে বসেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। খন্দকার মোশতাক তার কুটিল জটিল সিদ্ধান্ত গুলো ট্যলেটে বসেই নিয়েছেন। আমি এক দূর্নীতিবাজকে চিনি সে তার সারাদিনের প্লান প্রোগ্রাম সকালে টয়লেটে বসেই করে ফেলেন। শাহেদ জামাল টয়লেটে বসে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। এটা তার কাছে নিম্ন রুচির কাজ বলে মনে হয়। তবে টয়লেটে খবরের কাগজ পড়া যায়, গান গাওয়া যায় বা পটি করতে করতে চা কফিও খাওয়া যায়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না। অবশ্য একেকজন একেকভাবে, একেক জায়গায় সিদ্ধান্ত নেয়। কেউ কেউ রাতে বিছানায় গিয়ে ঘুমানোর আগে গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গুলো নেয়। শাহেদ জামাল তার গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গুলো নেয় রমনা পার্কে বসে। এর চেয়ে সুন্দর জায়গা ঢাকা শহরে আর নেই। চারিদিকে গাছপালা। শীতল বাতাস।

এখন দুপুর দুইটা। আকাশ বেশ মেঘলা।
হয়তো সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি হবে। আজ সকাল থেকেই শাহেদ জামাল পার্কে বসে আছে। তার পকেটের অবস্থা ভালো না। দুপুরে কি খাবে তার ঠিক নেই। চারটা সস্তা সিগারেট ছিলো তা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। মেঘলা দিনে ভালো মন্দ খেতে ইচ্ছা করে। আজ খেতে ইচ্ছা করছে, চিকন পোলাউ চালের খিচুরী। সাথে থাকবে বড় ইলিশ মাছ ভাজা (ডিমসহ)। গরুর মাংস ভূণা। স্প্রাইট। সালাদ। বেগুন ভাজা। হুটহাঁট পছন্দের খাবার গুলো খেতে খুব ইচ্ছা করে। অথচ কোনো উপায় নাই। এমন কেউ নেই যার কাছে গেলে তার প্রিয় খাবার গুলোর ব্যবস্থা করে দিবে। পকেটে আছে মাত্র বিশ টাকা। বিশ টাকায় আজকাল কিছুই পাওয়া যায় না। রেস্টুরেন্টে এক কাপ চায়ের দাম পনের টাকা। ফুটপাতেও আজকালএক কাপ চায়ের দাম নেয় দশ টাকা। শাহেদের মনে আছে, ১৯৮৮ সাল হলে বিশ টাকায় বেশ ভালোভাবেই খাওয়া যেত। তখন একটা ডাবের দাম ছিলো তিন টাকা। রিকশা ভাড়া আজ যেটা চল্লিশ টাকা তখন ছিলো মাত্র তিন বা চার টাকা। দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। ক'দিন ধরে ভিষন দাঁত ব্যথা।

কয়েক বছর আগে শাহেদ ব্যবসায় নেমেছিলো।
তারা দুই বন্ধু ব্যবসায় নেমেছিলো। শফিক আর সে। শফিক খুব ভালো ছেলে। প্রচন্ড পরিশ্রমী। দারুন আত্মবিশ্বাসী। শফিক কিভাবে যেন গুলশান এলাকা ঘুরে ঘুরে একটা কাজ নিয়ে নেয়। কাজটা হলো একটা অফিসে ৬২ জন স্টাফের অফিস স্টেশনারী জিনিসপত্র দেওয়া। কাগজ, প্রিন্টারের কালি, কলম, ফাইলপত্র, চারটা চেয়ার টেবিল, ইত্যাদি সাপ্লাই। তারা ট্রেন্ডার জমা দিলো। দুই লাখ একুশ হাজার টাকার। তাদের ট্রেন্ডার পাশ হলো। কাজটা দেওয়ার সময় অফিসের ম্যানেজার নুরুল হুদা সাহেব বললেন, কাজটা আপনাদের দিলাম। আপনারা ইয়াংম্যান। শিক্ষিত ছেলে। দেশ আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
এদিকে শফিক আর শাহেদের হাতে কোনো টাকা নেই। শাহেদ বহু কষ্টে পঞ্চাশ হাজার টাকার ব্যবস্থা করলো। শফিক তার বোনের গহনা বন্ধক রেখে বাকি টাকার ব্যবস্থা করলো। কাজটা করতে পারলে তাদের ২২ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে। প্রথম কাজ হিসেবে ২২ হাজার টাকা মন্দ না। এবার হয়তো আল্লাহ তাদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।

শফিক এবং জামাল যথাসময়ে কাজটা করলো।
তারা বিলের জন্য ম্যানেজার নুরুল হুদার কাছে গেল। নুরুল হুদা বিল আটকে দিলো। বলল, আপনারা বাজে জিনিসপত্র দিয়েছেন। শাহেদ বলল, স্যার প্রতিটা জিনিস আপনাদের দেখিয়ে দিয়েছি। জিনিস গুলো দেখে আপনিই তো অনুমোদন দিলেন। কোনো প্রোডাক্টই বাজে না। শফিক বলল, স্যার বোনের গহনা বন্ধক রেখে মালামাল কিনেছি। বোন আমার জীবন শেষ করে দিচ্ছে। নিজের হাতে বেছে বেছে প্রতিটা আইটেম কিনেছি। কোনো জিনিসই খারাপ না। প্লীজ স্যার আমাদের বিলটা ছেড়ে দেন। আমাদের দুই বন্ধুর এটাই প্রথম কাজ। আমাদের খুব করুন অবস্থা। নুরুল হুদা বললেন, আমার আর কোনো কথা নেই। এখন আমি লাঞ্চ করবো। বিল পাবেন না। আর কিছু বলার থাকলে আমার পিএ কে বলতে পারেন। শাহেদ আর শফিক পিএ'র সাথে দেখা করলো। পিএ কোনো ভনিতা না করেই সরাসরি বলল, স্যারকে বিশ হাজার টাকা দিন। স্যার বিল ছেড়ে দিবেন। শফিক কান্না ভরা গলায় বলল, কাজটা করে আমাদের লাভ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। পিএ বলল, আপনারা বিদায় হোন। দুঃখে কষ্টে দুই বন্ধুর চোখে পানি এসে পড়লো। শফিক সিড়িতেই বসে পড়লো। শাহেদ মনে মনে নুরুল হুদাকে দুইটা কুৎসিত গালি দিলো।

ঘটনা এইখানেই শেষ না।
একদিন অফিসে গিয়ে শাহেদ নুরুল হুদাকে রাগের মাথায় একটা গালি দিয়ে দেয়। এর ফল স্বরুপ তাদের দুই বন্ধুকে ম্যানেজার নুরুল হুদা থানায় লকাপে রেখে পুলিশের হাতে মাইর পর্যন্ত খাইয়েছে। এই ঘটনার দুই বছর পর শফিক একটা এনজিও'র চাকরি নিয়ে কোনো একটা গ্রামে চলে যায়। অনেকদিন শফিকের সাথে দেখা হয় না। পকেটে ট্রেন ভাড়াটা থাকলে শাহেদ আজই রাতের ট্রেনে চলে যেত বন্ধুর কাছে।
শাহেদের কিছুই ভালো লাগছে না। পেটের ক্ষুধাটা চাগাড় দিচ্ছে। চোখের সামনে ভাসছে চিকন চালের পোলাউ, ইলিশ মাছ ভাজা আর গরুর মাংস ভূণা। অবশ্য নীলার কাছে যাওয়া যায়। নীলা ঠিকই খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে। ফেরার পথে নীলা হাতে কিছু টাকাও খুঁজে দেয়। শাহেদের খুব লজ্জা করে নীলার কাছ থেকে টাকা নিতে। না আজ নীলার কাছে যাবে না শাহেদ। বারবার নীলাকে জ্বালাতে আর ভালো লাগে না। শাহেদ রমনা পার্ক থেকে বের হলো। সে এখন যাবে পুরান ঢাকার কলতাবাজার। সেখানে একটা রেস্টুরেন্ট আছে তার পরিচিত। তারা শাহেদকে বাকিতে খাবার দেয়। সমস্যা হলো সেখানে খিচুড়ি, ইলিশ মাছ বা গরুর মাংস পাওয়া যায় না। তারা শুধু বিক্রি করে তেহারী। খেতে একটুও মজা না। ঢাকা শহরের সবচেয়ে ফালতু তেহারি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×