somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জীবনের গল্প- ৩৯

০৬ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




শিরীন আপা'রা আমাদের পাশের বাসায় থাকতেন।
কিছু কিছু মানুষ যে কত ভালো, কত সহজ সরল তা শিরীন আপাদের পরিবারটিকে দেখলেই বুঝা যায়। শিরীন আপা লালমাটিয়া কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স করেছেন। দারুন মেধাবী। তার কোনো ভাই বোন নেই। তিনি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা রুপালী ব্যাংকের কেরানী ছিলেন। এখনও অবসরে আছেন। শিরীন আপার সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। আপা আমাদের বাসায় প্রায়ই আসতেন। আপার সাথে আমি অনেকদিন নিউ মার্কেট গিয়েছি। যতদিন আমি আপার সাথে বাইরে গিয়েছি তত দিন আপা আমাকে বার্গার আর কোক খাইয়েছেন। এখনও তার সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয়। সেদিন গিলগাতে দেখা হলো। জোর করে ধরে আমাকে চিকেন ফ্রাই আর কোক খাইয়ে দিলেন। ভালো মন্দ রান্না করলে বাসায় দিয়ে পাঠান।

শিরীন আপারা এখন বাসাবো চলে গেছেন।
এখন অবশ্য প্রতিদিন দেখা সাক্ষাত হয় না। তবে নিয়মিত মোবাইলে কথাবার্তা হয়। শিরীন আপা'র বিয়ে হলো। সেই বিয়েতে আমি অনেক আনন্দ করেছি। এরেঞ্জ ম্যারেজ। তার স্বামী একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করেন। প্রথম রাতেই শিরীন আপা তার স্বামীর বাসায় গিয়ে দেখেন অনেক গুলো কমডমের প্যাকেট এখানে সেখানে পড়ে আছে। আলমারিতে আছে পিল। যেহেতু সে নতুন বউ তাই কোনো প্রশ্ন করলো না। প্রতিদিন স্বামী রাতে মদ খেয়ে বাসায় ফিরে। বাসায় ফিরে শিরীন আপালকে মারে। কুৎসিত গালাগালি করে। প্রতিদিন একই ঘটনা। এর সাথে যোগ হয়েছে শারীরিক অত্যচার। এবং প্রতি সপ্তাহে দুই দিন তিন বাসায় বন্ধু বান্ধব নিয়ে আসে। মদ খায়। শিরীন আপাকে চিকেন ফ্রাই করে দিতে হয়। গ্লাস, বরফ সব রেডি করে দিতে হয়। একদিন রাতে মদ খেয়ে বাসায় ফিরে শিরীন আপাকে বলে জামা কাপড় সব খুলো। তারপর নাচো। আমি নাচ দেখব। আমার হুকুম মানতেই হবে। অন্য কোনো উপায় নাই।

শিরোন আপা নিরবে সব সহ্য করে যাচ্ছেন।
এখন যদি আপা তার বাপের বাড়ি চলে আসে তাহলে লোকজন নানান কথা বলবে। বিয়ে হয়েছে মাত্র ৬ মাস হলো। তাছাড়া এসব ঘটনা জানলে তার বাবা মা খুব কষ্ট পাবেন- এইসব চিন্তা করে শিরীন আপা চুপ করে থাকলেন। একদিন আমি শিরীন আপার বাসায় গিয়েছি। গিয়ে আমি অবাক। শিরীন আপা অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছেন। তাকে অনেক মারধোর করা হয়েছে। জামা কাপড় সব এলোমেলো বিধ্বস্ত অবস্থা। ঠোট কেটে রক্ত পড়ছে আপার। আর তার স্বামী পাশের ঘরে বন্ধুদের সাথে মদ খাচ্ছেন। সেদিন সন্ধ্যায় আমি শিরীন আপাকে অনেক বুঝিয়ে নিয়ে আসি তার বাবার বাড়ি। তার বাবা ও মা সব ঘটনা শুনে চোখের পানি ফেললেন। এবং শিরীন আপাকে বললেন, তোমার আর ঐ বাসায় যেতে হবে না। দরকার নেই ঐ বদের সঙ্গে ঘর সংসার করার। একমাসের মধ্যে তালাকের ঝামেলা মিটে যায়। এবং শিরীন আপা একটা চাকরি পেয়ে যান। এখন শিরীন আপা বেশ ভালো আছেন। তবে শিরীন আপার স্বপ্ন ছিলো তার স্বামী থাকবে, সন্তান থাকবে। নিজের একটা সংসার থাকবে।

ছয় বছর পার হয়ে গেছে।
শিরীন আপার বিয়ের জন্য অনেক চেষ্টা করা হলো। যখন পাত্রপক্ষ জানে তার আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো তখন পাত্রপক্ষ পিছিয়ে যায়। এমনও হয়েছে- বেশ কয়েকটা বিয়ে ঠিকও হয়েছে। তারিখও হয়ে গেছে। কেনাকাটা করা হয়ে গেছে। কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত ভাড়া করা হয়ে গেছে কিন্তু শেষমেশ আর বিয়ে হয়নি। শিরীন আপা খুব সহজ সরল সুন্দর মানুষ। হাসি খুশি। প্রানবন্ত। খুব সুন্দর রান্না জানেন। সুরভি শিরীন আপাকে খুবই পছন্দ করে। বারবার বলে শিরীন আপা দেখতে এত সুন্দর অথচ তার জীবনটা কেমন হয়ে গেল! শিরীন আপার বাবা মা'র অনেক বয়স হয়েছে। তারা দুইজনই খুব অসুস্থ এখন। তারা মরে গেলে তাদের মেয়ের কি হবে এই চিন্তায় তারা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শিরীন আপা'ই এখন তাদের সংসার চালান। তার প্রমোশন হয়েছে। সম্প্রতি এই করনাতে শিরীন আপার আরো অনেকের সাথে তার চাকরি চলে গেছে। বাড়ি ভাড়া জমে গেছে তিন মাসের।

এর মধ্যে শিরীন আপার সেই স্বামী-
যদিও এখন তালাক হয়ে গেছে, স্বামী না এখন। সে প্রায়ই শিরীন আপাকে ফোন দেয়। দেখা করতে চায়। তার সাথে সময় কাটাতে চায়। কিন্তু ভদ্রলোক অলরেডি বিয়ে করেছেন। এবং তার দু'টা ছেলেমেয়েও আছে। কিন্তু প্রতিদিন সে ফোন করছে। দেখা করতে চায়। একান্তে সময় কাটাতে চায়। শিরীন আপা খুব কাঁদে। তার বাবা মাকে এসব কথা জানাতেও পারছে না। এদিকে তার চাকরি নেই। বাসা ভাড়া জমে গেছে। শিরীন আপা'রা হয়তো গ্রামে চলে যাবেন। কিন্তু ঐ বদ সমানে ফোন করেই যাচ্ছে। নানান বাজে বাজে কথা বলেই যাচ্ছে। তার শেষ কথা হলো- প্রতি সপ্তাহে দুই দিন শিরীন আপাকে তার সাথে থাকতে হবে। তাহলে সে আর বিরক্ত করবে না। আমার মন মেজাজ প্রচন্ড খারাপ। আমি এই শুয়োরের অফিসে যাবো আগামীকাল। সবার সামনে এই শুয়োরকে জুতাপিটা করবো। আমি কাউকে কোনোদিন জুতা দিয়ে মারি নাই। তার মানে এই না যে আমি জুতা পিটা করতে জানি না।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:০৬
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×