somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রেবতি

০৭ ই জুলাই, ২০২০ রাত ২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগে আমার অবস্থানটা বর্ণনা করে নিই।
সকাল সাড়ে এগারোটা। ঝকঝকে সুন্দর পরিচ্ছন্ন একটি দিন। আমি দাঁড়িয়ে আছি- বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে। আমার ডান হাতের একটা আঙ্গুল শক্ত করে ধরে আছে একটি পাচ ছয় বছরের মেয়ে। মেয়েটি দেখতে একেবারে বারবি পুতুলের মতন সুন্দর। এই মেয়েটিকে আমি চিনি না। আজই প্রথম দেখলাম। হঠাত করে মেয়েটি কোথা থেকে এসে আমার হাত ধরে রেখেছে! কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না, কিন্তু হাসে। হাসলে মেয়েটিকে অনেক সুন্দর দেখায়। মায়াময় একটি মুখ। তাকিয়ে থাকলেও আনন্দ হয়। মেয়েটিকে আমি জিজ্ঞেস করলাম- তোমার বাসা কই? তোমার বাবা-মা কোথায়? তোমার নাম কি? তুমি এখানে কেমন করে এলো? মেয়েটি কোনো প্রশ্নের জবাব দিলো না তবে মিষ্টি করে হাসলো। মেয়েটির হাসি আজকের দিনটা যেন আরও বেশী সুন্দর করে দিল!

বুঝতে পারছি আমি এক ভয়াবহ সমস্যায় পড়েছি।
কিন্তু যুক্তি দিয়ে ভাবলে এটা কোনো সমস্যাই নয়। লজিক বলে, মেয়েটি হারিয়ে গিয়েছে। হয়তো বাবা-মা'র সাথে বের হয়েছিল। এতক্ষণে বাবা-মা নিশ্চয়ই পাগল পাগল হয়ে গিয়েছে। কোনো কারনে মেয়েটি আমাকে পছন্দ করেছে। হয়তো আমি দেখতে মেয়েটির চাচা অথবা মামা'র মতন। এই জন্য সে আমার হাত ধরে রেখেছে। মেয়েটি'র হাত ধরার ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে- সে আমার হাত ধরে এক আকাশ ভরসা পেয়েছে। যেন তার আর কোনো চিন্তা নেই। মেয়েটি যথেষ্ট বড়- সে ইচ্ছা করলেই তার বাসার ঠিকানা বা বাবা-মা'র নাম অথবা টেলিফোন নাম্বারও বলতে পারে। কিন্তু মেয়েটি কিছুই বলছে না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই মিষ্টি করে হেসে দেয়। মিসির আলি হলে এতক্ষনে মেয়েটির বাবা-মা'র নাম, বাসা সব কিছু বের করে ফেলতেন। আমি কি পারব মেয়েটিকে তার বাবা-মা'র কাছে ফিরিয়ে দিতে?

অনেকদিন আগে একবার আমি মিসির আলির মতন করে একটা সমস্যার সমাধান করেছিলাম। সমস্যাটা ছিল এই রকম- একটা মাদ্রাসায় অনেকগুলো ছেলেমেয়ে থাকত। প্রতিটা ছেলেমেয়েই ধনী পরিবার থেকে এসেছে। মাদ্রাসা মানেই কিন্তু এতিম ছেলেমেয়ে এই ধারনা ঠিক নয়। সেই মাদ্রসায় আমার পরিচিত মিশু নামে একটা ছেলে থাকত। একদিন মিশু বলল- তাদের মাদ্রসায় অদ্ভুত একটা ব্যাপার একমাস ধরে ঘটছে। অদ্ভুত ব্যাপারটি হলো- মাদ্রসার প্রতিটা ছেলেমেয়ের দাঁত ব্রাশ করার পেষ্ট টিউব থেকে নাই হয়ে যায়। দিনের পর দিন একই ব্যাপার টিউব থেকে পেষ্ট উধাও হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান আমি তিন মিনিটে করেছিলাম। মাদ্রাসার এক হুজুর প্রতিদিন রাতে বেসিনে গিয়ে টিউব থেকে সব পেষ্ট বের করে ফেল দিত। আমি মাদ্রাসার হুজুরকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এই কাজ কেন করেন? হুজুর লজ্জায় মাথা নত করে বললেন- পেষ্ট টিপ দিয়ে বের করতে অনেক ভালো লাগে। অনেক আনন্দ পাই।

অনেকক্ষণ হয়ে গেছে বাচ্চা মেয়েটি আমার সাথে আছে।
মেয়েটিকে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে নিয়ে গিয়ে পিজা আর কোক নিলাম এবং আমার জন্য নিলাম কফি। কফিতে চুমুক দেওয়ার আগে আমি বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেলাম এবং আবিস্কার করলা- মেয়েটি অন্ধ এবং বোবা। ইচ্ছা করলো মেয়েটিকে কিছুক্ষন বুকে জড়িয়ে ধরি। আমার চোখ ভিজে উঠলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম যেভাবেই হোক মেয়েটির বাবা-মাকে খুঁজে বের করবই। আমি ইচ্ছা করলে মেয়েটিকে থানায় দিয়ে আসতে পারি- পুলিশ যা করার করবে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়- আমার মন বলছে- মেয়েটির বাবা-মাকে আমি অবশ্যই খুঁজে বের করতে পারব। বুদ্ধিমান একটা ছেলের জন্য এটা খুব কঠিন কিছু না। আরও সহজ হতো যদি মেয়েটা কথা বলতে পারত। ভাবতে কষ্ট লাগছে- বাচ্চা একটা মেয়ে চোখে দেখতে পায় না- কথা বলতে পারে না।

যদি কোনো কারনে বাচ্চার বাবা-মাকে খুঁজে না বের করতে পারি- তাহলে বাচ্চাটিকে নীলার কাছে দিয়ে আসব। কি মনে করে হঠাত চলে এলাম ধানমন্ডি লেক। সময় মধ্যদুপুর। আমি বাচ্চা মেয়েটিকে বললাম, তুমি ভেব না- সন্ধ্যার মধ্যে তোমার বাবা-মাকে পেয়ে যাবো। বাচ্চাটাকে খুশি করার জন্য মিথ্যা আশ্বাস দিতে হলো। বাচ্চাটা এখন আমার কোলে মাথা রেখে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। গল্প বলছি- একটা রাজকন্যা ছিল। রাজকন্যার নাম ছিল- সুকন্যা। সুকন্যার মাথায় ছিল এক আকাশ চুল। চোখ দু'টা বড় বড়। সব সময় সুকন্যা চোখে মোটা করে কাজল দিত। আর হাতে পড়তো- কাঁচের চুড়ি। সুকন্যার একদিন অনেক জ্বর হয়। জ্বরের ঘোরে সুকন্যা স্বপ্ন দেখল- একটা কালো রঙের হিংস্র পশু তার বাবাকে তারা করেছে। চিৎকার দিয়ে সুকন্যার ঘুম ভাঙ্গল। এদিকে সুকন্যার বাবা গেছে শিকার করতে। আর মা গিয়েছে শপিং এ। ...

সন্ধ্যা ঘনায়মান।
মেয়েটির ঘুম ভাঙ্গল। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হলো- এখন আমাদের বসুন্ধরা মার্কেটে যাওয়া উচিত। কেন জানি মন বলছে- বসুন্ধরা মার্কেটে গেলেই মেয়েটির বাবা-মাকে পাওয়া যাবে। একটা সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম বসুন্ধরা মার্কেটে। বাচ্চা মেয়েটি আমার কোলে। ঘুম থেকে উঠার পরই মেয়েটি মুখ মলিন করে রেখেছে। বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে একটা জটলা। আমি মেয়েটিকে জটলার সামনে নিয়ে যেতেই শুনতে পাই- এক ভদ্রমহিলা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। তার বাচ্চা মেয়েটি এই মার্কেটের সামনে থেকে সকালবেলা হারিয়ে গেছে। ভিড় সরিয়ে সামনে গিয়ে দেখি- একটা ভদ্রলোকের কাঁধে মাথা রেখে এক ভদ্রমহিলা খুব কাঁদছেন। আমি তাদের দেখেই বুঝতে পারলাম- তাদের মেয়েটি সকাল থেকে আমার সাথেই আছে। আমি ভদ্রমহিলার কাছে গিয়ে বললাম- এই নিন আপনার মেয়ে। ভদ্রমহিলা এবং লোকটি এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরল। তাদেরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি চলে এলাম রাস্তার এপারে চায়ের দোকানে।

সন্ধ্যা মিলিয়ে গেছে।
আমি চা শেষ করে সিগারেট ধরানোর আগেই দেখি- মেয়েটির বাবা-মা আমার সামনে। মেয়েটির বাবা বললেন, আমার নাম শামছুর রহমান। আমি বাংলাদেশ বিমানের পাইলট। আমার মেয়ের নাম রেবতি। একটা একসিডেন্টের পর রেবতি কথা বলতে পারে না এবং চোখেও দেখতে পায় না। আগামীকাল আমরা সিঙ্গাপুর যাচ্ছি- রেবতির চিকিৎসার জন্য। সকালে কিভাবে যেন রেবতি হারিয়ে যায়। আপনি ফেরেশতার মতন এসে আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিলেন। আমরা কি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি? আমার অনুমতির অপেক্ষা না করে মেয়েটির বাবা মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। কেন জানি মানুষের স্বচ্ছ পবিত্র চোখের পানি দেখলে- আমার চোখ ভিজে উঠে। রেবতি আমাদের তিনজনের চোখের জল মুছে দিল। আমি রেবতির কপালে ছোট একটা চুমু দিলাম।

রাতে বাসায় ফিরে- গোছল শেষ করে খাওয়া দাওয়া করে ব্যলকনিতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই মনে পড়ল, আরে... রেবতি হচ্ছে আকাশের একটা তারার নাম। যে তারাটা খুব বেশী জ্বলজ্বল করে জ্বলে। যখন খুব মন খারাপ হয়- তখন নীলাকে ফোন দেই। কবিতা আবৃত্তি করে শুনাই, তাতে আমার মন খারাপ ভাব কমতে থাকে। নাকি নীলা সব কষ্ট নিয়ে নেয়?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২০ রাত ২:৫৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×