সুন্দর একটি দিন।
চমৎকার আবহাওয়া। চারিদিকে স্বচ্ছ রোদ। রোদের তাপ নেই। বইছে শীতল হাওয়া। এরকম একটি দিনে হযরত খিজির আ. সমুদ্রের পাশে বসেছিলেন। চারপাশের পরিবেশ তার খুব ভালো লাগছে। এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে তাঁর কাছে ভিক্ষা চেয়ে বলল, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে কিছু সাহায্য করুন। আর যদি সাহায্য না করেন তাহলে আমি আপানকে হত্যা করবো। তার কথা শুনে হযরত খিজির আ. আচমকা বেহুশ হয়ে গেলেন। ভিক্ষুক প্রচন্ড অবাক হলো!
খানিক পরেই যখন হযরত খিজির আঃ হুশ ফিরে আসল তখন তিনি ভিক্ষুককে বললেন, ভাই! আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নাই। দামী কোনো জিনিসপত্রও নাই। আমি নিজেই প্রচন্ড দরিদ্র একজন মানুষ। আমি তো শুধু আমার জান ও মালের মালিক। সুতরাং আমি আল্লাহর ওয়াস্তে তোমাকে আমার জীবন সোপর্দ করছি। তুমি যেভাবে চাও আমার মাধ্যমে তোমার প্রয়োজন মেটাও। চাইলে আমাকে বাজারেও বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পার।
ভিক্ষুক খিজির আ. কে বাজারে নিয়ে 'সাহেমা বিন আরকাম' নামক এক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে দিল। সাহেমা খিজির আ. কে ক্রয় করে নিজের বাড়ী নিয়ে গেল। খিজির আঃ দেখতে ভীষন সুন্দর ছিলেন। গায়ের রঙ ছিলো টকটকে ফর্সা। মজবুত শরীর। খাড়া নাক। মুখটা ভীষন মায়াময়। মাথার চুল গুলো সোনালী। দাঁতের সেটিং অতি সুন্দর।
সাহেমার একটি বাগান ছিল। যা তিনদিকে পাহাড় বেষ্টিত পাদদেশের নিচু ভূমিতে অবস্থিত ছিল। সাহেমা মূলত বাগানের কাজের জন্যই গোলাম খরিদ করেছে। সে খিজির আ. এর কাঁধে একটি কোদাল চাপিয়ে দিয়ে বলল, বাগানে গিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে কেটে বাগান উঁচু করতে থাক। এ কথা বলেই সে তার প্রয়োজনীয় কাজে চলে গেল।
এদিকে হযরত খিজির আ. মাটি কেটে বাগান ভরাট করতে থাকলেন। সে শক্তিবান পুরুষ। খুব মন দিয়ে কাজ করছে। দিন শেষে সাহেমা ফিরে এসে ঘরের মানুষদের জিজ্ঞাসা করল, গোলামকে খাবার দিয়েছ? উত্তরে তারা বলল, আমরাতো গোলাম সম্পর্কে জানিই না। এই কথা শুনে সাহেমা দ্রুত বাগানে গেল। গিয়ে দেখে খিজির আ. সম্পূর্ণ পাহাড় কেটে সমান করে ফেলেছে এবং বসে বসে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়ে আছে।
সাহেমা আশ্চার্য্য হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ভাই সাহেব! সত্যি করে বলেন তো তুমি আসলে কে?
তিনি বললেন, আমি খিজির।
এ কথা শুনে সাহেমা অস্থির হয়ে গেল। সে মনে মনে নিজেকে ভৎসনা করতে লাগল, তুই হযরত খিজির আ. কে গোলাম বানিয়ে কাজ করাইলি? এটাতো অত্যন্ত বেয়াদবি হয়েছে। গর্হিত কাজ হয়েছে। সাহেমার খুব অনুসূচনা হলো। সে হযরত খিজির আ. এর কাছে ক্ষমা চাইল ও তাঁকে মুক্ত করে দিল।
অতঃপর আল্লাহর কাছে তওবা করল এবং বলতে লাগল, ইয়া রাব্বাল আলামীন! হে মহান দয়াময়- আমি না জেনে এমন ভুল করে ফেলেছি। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন এবং এই অপরাধের জন্য আমাকে জবাবদিহি করবেন না। প্লীজ।
হযরত খিজির আ. মুক্ত হয়ে সিজদায়ে শোকর আদায়ান্তে দোয়া করতে লাগলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্যই গোলাম হয়েছিলাম আবার তোমার জন্যই মুক্ত হলাম। এজন্য তোমার শুকরিয়া আদায় করছি। অতঃপর তিনি সাহেমার কাছে বিদায় নিয়ে আবার সমুদ্রের ফিরে গেলেন।
হযরত খিজির আ. সমুদ্রের পারে ফিরে গিয়ে দেখেন, এক ব্যক্তি দোয়া করছে, হে আমার রব! আপনি খিজির আ. কে মুক্তি দান করুন এবং তার তওবা কবুল করুন।
খিজির আ. তাকে জিজ্ঞাসা করলো তুমি কে ভাই?
সে উত্তরে বলল, আমার নাম শা’জুন, তুমি কে?
তিনি বললেন আমার নাম খিজির।
হযরত খিজির আ. ইবাদতের জন্য সমুদ্রের পাড়ে একটি ঘর বানিয়েছিলেন কাঠ খড় দিয়ে। সেদিকে ইঙ্গিত করে হযরত শা’জুন বলল, হে খিজির! তুমি নিজের ঘর বানিয়ে দুনিয়া তলব করেছ। এ কথা শুনামাত্র হযরত খিজির আ. ময়দানে বের হয়ে গেলেন এবং আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে গেলেন।
কিছুদিন পর হযরত খিজির আ. সমুদ্রের পাড়ে তার কুঁড়ে ঘরের কাছে একটি গাছ লাগালেন এবং সেই গাছের ছায়ায় ইবাদত করতে শুরু করলেন। আচমকা গায়েবি আওয়াজ আসলো, হে খিজির! তুমি যেহেতু গাছের ছায়ায় সিজদা করেছ। তার মানে তুমি আখেরাতের চেয়ে
দুনিয়াকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছ। আমার ইজ্জত ও জালালের কসম! দুনিয়ার মুহাব্বতের উপর আমার সন্তুষ্টি নেই।
এ ঘটনার পর হযরত খিজির আ. শা’জুন ফেরেশতাকে বললেন, হে শা’জুন! তুমি আমার তওবা কবুল হওয়ার জন্য দোয়া কর। শা’জুন আবার দোয়া করল। আল্লাহ তায়ালা শা’জুন ফেরেশতার বরকতে খিজির আ. এর তওবা কবুল করলেন।
পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। ১ লাখ ২৪ হাজার পয়গম্বর পাঠিয়েছেন। তাদের দেখানো পথে যেন আমরা চলতে পারি পৃথিবীতে। আল্লাহ আমাদের সেই তৌফীক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:২৬