somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

হযরত খিজির আঃ এর ঘটনা

২৯ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুন্দর একটি দিন।
চমৎকার আবহাওয়া। চারিদিকে স্বচ্ছ রোদ। রোদের তাপ নেই। বইছে শীতল হাওয়া। এরকম একটি দিনে হযরত খিজির আ. সমুদ্রের পাশে বসেছিলেন। চারপাশের পরিবেশ তার খুব ভালো লাগছে। এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে তাঁর কাছে ভিক্ষা চেয়ে বলল, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে কিছু সাহায্য করুন। আর যদি সাহায্য না করেন তাহলে আমি আপানকে হত্যা করবো। তার কথা শুনে হযরত খিজির আ. আচমকা বেহুশ হয়ে গেলেন। ভিক্ষুক প্রচন্ড অবাক হলো!

খানিক পরেই যখন হযরত খিজির আঃ হুশ ফিরে আসল তখন তিনি ভিক্ষুককে বললেন, ভাই! আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নাই। দামী কোনো জিনিসপত্রও নাই। আমি নিজেই প্রচন্ড দরিদ্র একজন মানুষ। আমি তো শুধু আমার জান ও মালের মালিক। সুতরাং আমি আল্লাহর ওয়াস্তে তোমাকে আমার জীবন সোপর্দ করছি। তুমি যেভাবে চাও আমার মাধ্যমে তোমার প্রয়োজন মেটাও। চাইলে আমাকে বাজারেও বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পার।

ভিক্ষুক খিজির আ. কে বাজারে নিয়ে 'সাহেমা বিন আরকাম' নামক এক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে দিল। সাহেমা খিজির আ. কে ক্রয় করে নিজের বাড়ী নিয়ে গেল। খিজির আঃ দেখতে ভীষন সুন্দর ছিলেন। গায়ের রঙ ছিলো টকটকে ফর্সা। মজবুত শরীর। খাড়া নাক। মুখটা ভীষন মায়াময়। মাথার চুল গুলো সোনালী। দাঁতের সেটিং অতি সুন্দর।

সাহেমার একটি বাগান ছিল। যা তিনদিকে পাহাড় বেষ্টিত পাদদেশের নিচু ভূমিতে অবস্থিত ছিল। সাহেমা মূলত বাগানের কাজের জন্যই গোলাম খরিদ করেছে। সে খিজির আ. এর কাঁধে একটি কোদাল চাপিয়ে দিয়ে বলল, বাগানে গিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে কেটে বাগান উঁচু করতে থাক। এ কথা বলেই সে তার প্রয়োজনীয় কাজে চলে গেল।

এদিকে হযরত খিজির আ. মাটি কেটে বাগান ভরাট করতে থাকলেন। সে শক্তিবান পুরুষ। খুব মন দিয়ে কাজ করছে। দিন শেষে সাহেমা ফিরে এসে ঘরের মানুষদের জিজ্ঞাসা করল, গোলামকে খাবার দিয়েছ? উত্তরে তারা বলল, আমরাতো গোলাম সম্পর্কে জানিই না। এই কথা শুনে সাহেমা দ্রুত বাগানে গেল। গিয়ে দেখে খিজির আ. সম্পূর্ণ পাহাড় কেটে সমান করে ফেলেছে এবং বসে বসে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়ে আছে।

সাহেমা আশ্চার্য্য হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ভাই সাহেব! সত্যি করে বলেন তো তুমি আসলে কে?
তিনি বললেন, আমি খিজির।
এ কথা শুনে সাহেমা অস্থির হয়ে গেল। সে মনে মনে নিজেকে ভৎসনা করতে লাগল, তুই হযরত খিজির আ. কে গোলাম বানিয়ে কাজ করাইলি? এটাতো অত্যন্ত বেয়াদবি হয়েছে। গর্হিত কাজ হয়েছে। সাহেমার খুব অনুসূচনা হলো। সে হযরত খিজির আ. এর কাছে ক্ষমা চাইল ও তাঁকে মুক্ত করে দিল।
অতঃপর আল্লাহর কাছে তওবা করল এবং বলতে লাগল, ইয়া রাব্বাল আলামীন! হে মহান দয়াময়- আমি না জেনে এমন ভুল করে ফেলেছি। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন এবং এই অপরাধের জন্য আমাকে জবাবদিহি করবেন না। প্লীজ।

হযরত খিজির আ. মুক্ত হয়ে সিজদায়ে শোকর আদায়ান্তে দোয়া করতে লাগলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্যই গোলাম হয়েছিলাম আবার তোমার জন্যই মুক্ত হলাম। এজন্য তোমার শুকরিয়া আদায় করছি। অতঃপর তিনি সাহেমার কাছে বিদায় নিয়ে আবার সমুদ্রের ফিরে গেলেন।

হযরত খিজির আ. সমুদ্রের পারে ফিরে গিয়ে দেখেন, এক ব্যক্তি দোয়া করছে, হে আমার রব! আপনি খিজির আ. কে মুক্তি দান করুন এবং তার তওবা কবুল করুন।
খিজির আ. তাকে জিজ্ঞাসা করলো তুমি কে ভাই?
সে উত্তরে বলল, আমার নাম শা’জুন, তুমি কে?
তিনি বললেন আমার নাম খিজির।
হযরত খিজির আ. ইবাদতের জন্য সমুদ্রের পাড়ে একটি ঘর বানিয়েছিলেন কাঠ খড় দিয়ে। সেদিকে ইঙ্গিত করে হযরত শা’জুন বলল, হে খিজির! তুমি নিজের ঘর বানিয়ে দুনিয়া তলব করেছ। এ কথা শুনামাত্র হযরত খিজির আ. ময়দানে বের হয়ে গেলেন এবং আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে গেলেন।

কিছুদিন পর হযরত খিজির আ. সমুদ্রের পাড়ে তার কুঁড়ে ঘরের কাছে একটি গাছ লাগালেন এবং সেই গাছের ছায়ায় ইবাদত করতে শুরু করলেন। আচমকা গায়েবি আওয়াজ আসলো, হে খিজির! তুমি যেহেতু গাছের ছায়ায় সিজদা করেছ। তার মানে তুমি আখেরাতের চেয়ে
দুনিয়াকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছ। আমার ইজ্জত ও জালালের কসম! দুনিয়ার মুহাব্বতের উপর আমার সন্তুষ্টি নেই।

এ ঘটনার পর হযরত খিজির আ. শা’জুন ফেরেশতাকে বললেন, হে শা’জুন! তুমি আমার তওবা কবুল হওয়ার জন্য দোয়া কর। শা’জুন আবার দোয়া করল। আল্লাহ তায়ালা শা’জুন ফেরেশতার বরকতে খিজির আ. এর তওবা কবুল করলেন।

পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। ১ লাখ ২৪ হাজার পয়গম্বর পাঠিয়েছেন। তাদের দেখানো পথে যেন আমরা চলতে পারি পৃথিবীতে। আল্লাহ আমাদের সেই তৌফীক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:২৬
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×