১। একমেয়ে ফেসবুকে লিখেছে, 'সবাই শুধু প্রেম করতে চায়। কিন্তু কেউ বিয়ের কথা বলে না।'
আমাদের পাশের বাসার একটা মেয়ে আছে। মেয়েটা অর্থনীতিতে অনার্স করেছে। দেখতে তেমন ভালো নয়। কালো করে, মোটা। মুখে ব্রন দিয়ে ভরা। মেয়েটার মা ইদানিং বেশ অসুস্থ। বাপ নেই। পাঁচ বছর আগেই মারা গেছেন। এলাকাবাসী থেকে শুরু করে পরিচিতরা সবাই মেয়েটার মাকে বলে, 'মেয়ে বড় হয়ে গেছে, তাকে বিয়ে দিচ্ছ না কেন'? সবার এক কথাই বিয়ে দাও। বিয়ে দাও। এদিকে মেয়ে দেখতে সুন্দর না হওয়ায় তার কোনো বিয়ের সম্বন্ধ আসে না।
একদিন মেয়েটা রেগে গিয়ে সবাইকে বলে দিলো- আপনারা কেন সারাদিন আমার অসুস্থ মাকে শুধু আমার বিয়ের কথা বলেন? আপনাদের কি খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই? আমাকে নিয়ে যখন আপনাদের এতই চিন্তা- তাহলে একটা ভালো পাত্র যোগাড় করে আনেন। আমি বিয়ে করতে রাজী আছি।
মেয়ের কথা শুনে এলাকাবাসী আর আত্মীয়স্বজন এখন চুপ।
২। ফেসবুকে দেখলাম, একজন 'বই পড়ি' নামক এক গ্রুপে ভালো গোয়েন্দা গল্পের বইয়ের নাম জানতে চেয়েছেন। নানান লোকজন নানান বইয়ের নাম, তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তখন এক লেখক নিজের চারটা বইয়ের নাম দিয়ে দিলেন। এই লেখক গোয়েন্দা গল্প লিখেন। উনি দাবী করেন উনি বাংলাদেশের সেরা গোয়েন্দা লেখক। এবং উনি কুড়ি বছর ধরে গোয়েন্দা গল্প লিখে যাচ্ছেন। তার বই নাকি ধুমছে বিক্রি হয়। হুমায়ুন আহমেদ এর 'মিসির আলী' সিরিজ নাকি আহামরি কিছু না। এই লেখক সরকারী চাকরি করেন। অনেক বড় পদ তার। উনি চিৎকার করে বলেন আমি সৎ। আমি দূর্নীতিবাজ নই। এই সরকারী চাকরীজীবি লেখক নিজের লেখা বই নিয়ে ফেসবুকে যা করেন তা রীতিমতন ছেছরামী। এই রকম ছেছরামী তো হুমায়ূন আহমেদ কোনোদিন করেন নি।
৩। ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে একজন আছেন। উনি নাকি লেখক। যদিও আমি তার কোনো বই পড়ি নাই। উনি যে লেখক তাও আমি জানতাম না। উনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, 'উনি এই করোনাকালে চারটা উপন্যাস লিখে শেষ করেছেন। এবং উনি বলেছেন, আর কোনো প্রকাশককে ফ্রি পান্ডুলিপি দিবেন না। তাকে রয়ালিটি দিতেই হবে।
উনার স্ট্যাটাস পড়ে কোনো প্রকাশক যোগাযোগ করেন নি। তাই উনি প্রচন্ড মর্মাহত। শেষে উনি নিজেই তিনজন প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করলেন। প্রকাশকগন রয়ালিটি দিতে নারাজ। লেখক প্রকাশকের সাথে ম্যাস্যাঞ্জারে আলাপের স্ক্রীনশট ফেসবুকে দিয়েছেন। এবং বলেছেন, এই হলো দেশে প্রকাশকের অবস্থা।
লেখক রাগ করেছেন। উনি আর লিখবেন না। চলে যাক দেশ জাহান্নামে।
৪। এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর মাধ্যমে তার ছত্রছায়ায় থাকা তেরো জন লোক কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তারা এত এত টাকার মালিক হয়েছেন যে, টাকা শেষমেষ বিদেশে পাচার করতে হয়েছে। দেশে গাড়ি বাড়ি ফ্লাট জমি করেছে সীমাহীন। তাদের অঞ্চলের এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে তাদের বাড়ি বা জমি নেই।
এলাকায় বহু লোককে তারা অঞ্চল ছাড়া করেছে। বহু লোককে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। পুরো এলাকা তাদের হাতের মুঠোয়। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই। এলাকাবাসী পুরো চুপ। কোনো কথা বলার সাহস নেই। দূর্নীতিবাজরা স্থানীয় সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। প্রতিমাসে সাংবাদিকরা ভাতা পান। আর ঈডের সময় স্পেশাল উপহার। কেউ তাদের বিরুদ্ধে বলতে সাহস পায় না।
যারা তাদের বিরুদ্ধে বলে, তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন। অথবা অঞ্চল ছাড়া করেছেন। অত্র অঞ্চলের দুইজন সাহসী লোক এদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত স্থান থেকে বলতে শুরু করেছে। এবং তারা দুদকে গিয়েও বলেছেন। প্রমানও দিয়েছে। দুদক কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। লিখিত আকারে দুদককে জানানো হয়েছে। তবু দুদক চুপ।
এদিকে তারা দূর্নীতিবাজদের কারনে নিজ এলাকায় ফিরতে পারছে না। দূর্নীতিবাজদের কেউ গ্রেফতারও করছে না। এসব দেখার কি কেউ নেই?
এই রকম ঘটনা শুধু বাংলাদেশের একটা অঞ্চলে না। সমস্ত বাংলাদেশ জুড়েই একই ঘটনা। দেখার কেউ নাই। এক যুগ ধরে এমনটাই চলছে। দূর্নীতিবাজরা বেশ আছে। অবশ্য মাঝে মাঝে সম্রাট, পাপিয়ার মতো ছিচকে চোরেরা ধরে পড়ছে। কিন্তু আসল দূর্নীতিবাজদের কেউ ধরছে না। তারা বেশ উন্নত জীবন যাপন করছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হচ্ছে। টক শো করছে। পত্রিকা বের করছে, টিভি চ্যানেল করছে, নানান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছে। আবার নামে বেনামে তিন, চার শ' ট্রেড লাইসেন্স করে রেখেছে। আসলে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই।
৫। এক দূর্নীতিবাজ ফেসবুকে তার গুনগান করার জন্য দশজন ব্যাক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ প্রাপ্ত দশ জন সারাদিন পাঁচ মিনিট পরপর দূর্নীতিবাজকে নিয়ে পোষ্ট দিয়েই যাচ্ছে ফেসবুকে। তারা দূর্নীতিবাজের ছবি পোষ্ট দিয়ে বলছেন, 'ভাই খুব ভালো মানুষ। উনি দেশকে ভালোবাসেন। উনি নামাজ পড়েন। উনি গরীব দুঃখীদের প্রতিদিন সাহায্য সহযোগিতা করেন। উনার মতো মানুষ হয় না। উনি গ্রামে স্কুল করেছেন, মাদরাসা করেছেন, মসজিদ করেছেন। উনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে গ্রাম থেকে মানুষ ধরে ধরে এনে চাকরি দিয়েছেন। ভাইয়ের মতো মানুষ হয়। আপনারা ভাইয়ের জন্য দোয়া করেন'।
প্রতিদিনই একই কথা। ভাইয়ের গুনগান। একদিন আমার মেজাজ খুব খারাপ হলো। আমি বললাম, তোমার ভাই তো ফকিরন্নীর পুলা। দশ বছর আগেও তার টাকা পয়সা কিছুই ছিলো না। এখন সে কিভাবে বিশ হাজার কোটি টাকার মালিক হলো? তারা আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে- আমাকে দুটা গালি দিয়ে আমাকে ব্লক করে দিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:০৬