somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মেয়েটার নাম নীলা

৩০ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





প্রথমে আমি কোথায় আছি সেটা বলে নিই।
আমি কোথায় আছি আমি জানি না। সম্ভবত আমি কোনো জঙ্গলে আটকে গেছি। চারিদিকে প্রচুর গাছপালা। মাথার উপরে বিরাট আকাশ। বিশাল পাথরের পাহাড় চারিদকে অনেক গুলো। দূরে দুই একটা পাহাড়ের গায়ে ঝরনা দেখা যাচ্ছে। প্রচুর পাখি দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগ পাখিই আমি নাম জানি না। পাখির কিচির মিচির শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। আমি এই গভীর জঙ্গলে কিভাবে এলাম জানি না। এখান থেকে কিভাবে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে যাবো তাও জানি না। কোন পথ দিয়ে হাঁটা শুরু করলে কোথায় পৌছাবো কিচ্ছু জানি না। আমার মাথা কিচ্ছু কাজ করছে না। আজ কি বার? কত তারিখ কিচ্ছু জানি না। এখন সময় কয়টা তাও জানি না। তবে আকাশের দিকে তাকিয়ে সময় অনুমান করতে পারছি। সম্ভবত এখন বিকেল চার টা হবে।

প্রচন্ড পানির পিপাসা পেয়েছে।
দূরে ঝরনা দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় ধরে হাঁটছি। যত সামনে যাচ্ছি ঝরনাটা যেন তত দূরে সরে যাচ্ছে। আমার হাঁটার আর শক্তি নেই। গলা বুক শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আমি মাথা ঘুরে গড়িয়ে পড়ে গেলাম। পড়তে পড়তে একটা সমুদ্রের ধারে চলে এলাম। সমুদ্রের পানি খাওয়া যায় না। একদম লবন পানি। নদী হলে প্রান ভরে পানি খেয়ে নিতাম। সমুদ্রের পাড়ে বসে আছি। যে কোনো সময় সন্ধ্যা নেমে যাবে। অসংখ্য পাখি কিচির মিচির করতে করতে নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। আমি হতাশ হয়ে বসে আছি। মনে হচ্ছে এখানেই আমার মৃত্যু হবে। হঠাত দেখতে পেলাম- একটা মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। মেয়েটা আমার কাছে এসে বলল, হে পথিক তুমি কি তৃষ্ণার্ত? মেয়েটাকে দেখে আমি মুগ্ধ! এত সুন্দর মেয়ে ঢাকা শহরে একটাও নেই। মেয়েটা বলল, আমার হাত ধরো। কাছেই আমার বাসা। আমি মেয়েটার হাত ধরলাম। এবং অনেকখানি ভরসা পেলাম।

সমুদ্র পাড়ের কাছেই মেয়েটার বাসা।
খুব সুন্দর কাঠ খড় দিয়ে বানানো বাড়ি। মেয়েটা খুব যত্ন করে আমাকে কিছু খাবার দিলো। দুই রকমের মাছ ভাজা। নানা রকম ফল। প্রথমে আমি এক মগ পানি খেলাম। আসলে মগে পানি ছিলো না। সেটা ডাবের পানি। এই জঙ্গলে মিঠা পানি পাওয়ার কথা না। অবশ্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে রেখে দেওয়া যায়। মাছ ভাজা অতি সুস্বাদু হয়েছে। ফরমালিন মুক্ত ফল। বেশ স্বাদ। মেয়েটা বলল, তুমি নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত। এখন বিশ্রাম নাও। তারপর কথা হবে। আমি আসলেই অনেক ক্লান্ত। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। দারুন ঘুম হলো। ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো। মেয়েটা বলল, ঘুম কেমন হলো? আমি বললাম, চমৎকার। ফ্রেশ হয়ে নিন, আমি নাস্তা দিচ্ছি মেয়েটা বললো। আমি বললাম, নাস্তা এখন খাবো না। তুমি কি আমাকে চা বা কফি খাওয়াতে পারবে। মেয়েটা বলল, এই জঙ্গলে চা বা কফি কোথায় পাবো? তবে আমি তোমাকে চায়ের মতো কিছু একটা খাওয়াতে পারি। আমি বললাম, তাই'ই দাও। মেয়েটা আমাকে সমুদ্রের পানি গরম করে দিলো। নুনতা নুনতা স্বাদ। মন্দ নয়।

আমি মেয়েটাকে বললাম, তোমার নাম কি?
তুমি এখানে কিভাবে এলে? মেয়েটা বলল, আমার নাম নীলা। আমি জানি না আমি কিভাবে এখানে এলাম। আমি আমার বাসায় ঘুমাচ্ছিলাম। মনে আছে সেদিন খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিলো। তারপর দেখি, আমি এখানে। এখানে এই জঙ্গলে কতদিন ধরে আছি তাও আমি জানি না। একাএকা থাকতে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। তোমাকে দেখে ভালো লাগছে। তোমার সাথে কথা বলেও ভালো লাগছে। আমি নীলাকে বললাম, তোমার কোনো ভয় নেই। আমি এসে পড়েছি। আমি তোমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবো। আমার উপর ভরসা রাখতে পারো। মেয়েটা বলল, না এখান থেকে ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এই জঙ্গলে ভয়ঙ্কর সব পশু পাখি আছে। শুধু এই সমুদ্রের পাড়টাই নিরাপদ। আমি বললাম, তুমি চিন্তা করোনা। আমি একটা কিছু ব্যবস্থা করবোই। মেয়েটা বলল, তুমি বুঝতে পারছো না, এই জঙ্গল থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। বের হতে গেলেই বনের পশুরা চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে আমাদের।

নীলাকে বললাম, দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা কি?
নীলা বলল, এখন মাছ ধরবো। সেটা ফ্রাই করে দিবো তোমাকে। আমি বললাম, বীফ, মাটন বা চিকেন এর ব্যবস্থা কি করা যায় না? নীলা বলল, এই জঙ্গলে কিচ্ছুর অভাব নেই। যাও তুমি একটা হরিন শিকার করে নিয়ে আসো। আমি রান্না করে দিচ্ছি। আমি বললাম, শিকার আমি কিভাবে করবো? এসব আমি পারি নাকি? নীলা বলল, তাহলে বেশি বক বক করো না। যা দিবো তাই হাসি মুখে খেয়ে নিবে। দুপুরে মাছ ফ্রাই খেলাম। মাছে কোনো মশলা নাই। খেয়ে আরাম পাই না। কোনো রকমে খাওয়া শেষ করে আমি ভাবতে বসলাম কি করে জঙ্গল থেকে বের হওয়া যায়। নীলা আমার পাশে এসে চুপ করে শুয়ে পড়লো। এবং মুহুর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো। নীলার ঘুমন্ত মুখ দেখে আমার ভীষন মায়া লাগলো। আমি খুব গোপনে নীলার ঠোঁটে একটি চুমু খেলাম। বেশ ভালো লাগলো। ভাগ্যিস মেয়েটার সাথে এই জঙ্গলে দেখা হয়েছে তা না হলে তো আমি দম আটকে মরে যেতাম।

আমি সমুদ্রের পাড়ে বসে আছি।
যে কোনো সময় সন্ধ্যা নামবে। নীলা আমার পাশে বসা। নীলা বলল, আমরা আর এই জঙ্গল থেকে বের হতে পারবো না। বাকিটা জীবন আমাদের এখানেই থেকে যেতে হবে। অবশ্য এখন আমার জঙ্গলটা তত খারাপ লাগছে না। কারন এখন তুমি আছো। একাএকা এই জঙ্গলে থাকা ভীষন কষ্টকর ছিলো। আমি আর নীলা সমুদ্রে নামলাম। সমুদ্রের নীল জলে ইচ্ছা মতো ডুব দিলাম। নীলা বলল, চলো ঘরে ফিরি, সন্ধ্যা হয়ে এলো। ঘরে ফিরতেই নীলা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। চুমু দিলো। আমিও কমপক্ষে এক লক্ষ চুমু দিলাম নীলাকে। সারারাত আদর ভালোবাসায় পার করে দিলাম। মনে হচ্ছে এই জঙ্গলে জীবনটা আনন্দময়'ই থাকবে। বাকিটা জীবন নীলার সাথে এই জঙ্গলে পার করে দেওয়া যায়। শহরের যান্ত্রিক সমস্যা বনে নেই। জটিলতা, কুটিলতা জঙ্গলে নেই। আমি নীলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। এবং বললাম, নীলা অলৌকিক শক্তিধর প্রভুর ইচ্ছায় আমরা এখানে এসেছি। তোমাকে পেয়েছি। আমি খুশি। তুমি কি খুশি। নীলা কিছু বলল না, আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১০
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×