somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মেরাজ অতি বিস্ময়কর এক ঘটনা

৩০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে অন্যতম আশ্চর্যজনক ঘটনা বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র মেরাজ। মেরাজ আরবি শব্দ; যার বাংলা অর্থ হচ্ছে ঊর্ধ্বে আরোহণের বাহন।

নবুওয়াতের দশম বছরে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতের মধ্য প্রহরে পবিত্র মেরাজ সংঘটিত হয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘রজবের সাতাশ তারিখ রাতে হঠাৎ আমার কাছে জিবরাইল (আ.) একটি সাদা রঙের বোরাক নিয়ে উপস্থিত হলেন। আমি এতে বসে পড়লাম। অতঃপর সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষ করার পর দেখি, জিবরাইল (আ.) শরবত, মধু এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমরা সামনে উপস্থিত হলেন। আমি শুধু দুধটুকু খেয়ে নিলাম।

তখন নবীজির বয়স ৫১ বছর।
সপ্তম আকাশে মহানবী (সা.) বায়তুল মামুর দেখতে পান। এই বায়তুল মামুরে দৈনিক সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন। (সুবাহানাল্লাহ) ক্রমান্বয়ে নবীজি জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেন। জান্নাতে অসংখ্য হুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবং জাহান্নামে পাপীদের কঠিন সব শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে বোরাকের গতি থেমে যায়। সিদরাতুল মুনতাহার কাছেই সবুজ রঙের ‘রফরফ’ নামে একটি কুদরতি সিঁড়ি অপেক্ষমাণ ছিল। এই রফরফে আরোহণ করে মহানবী (সা.) একাই আল্লাহতায়ালার নিকটবর্তী হলেন। আল্লাহতায়ালার সঙ্গে একান্ত ভাবের আদান-প্রদান করেন।
আল্লাহতায়ালা রাসুল (সা.)-কে সমগ্র সৃষ্টিজগতের রহস্য বুঝিয়ে দেন। নবীজির চোখ দিয়ে তখন শুধু জল গড়িয়ে পড়ছিলো। সবশেষে নবীজি আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের বিধান নিয়ে পুনরায় কুদরতি বাহনে আরোহণ করে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা নিজেই ‘সুবহানাল্লাহ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। পবিত্র এ মেরাজ বিস্ময়কর হলেও যে অবিশ্বাস্য নয়, তারই প্রমাণ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায়, যার পরিবেশ আমি বরকতময় করেছিলাম, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’
রাসুল (সা.)-এর সময় আবু জাহেলরা মেরাজ প্রসঙ্গের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নবীজিকে প্রশ্ন করেছিল ‘মোহাম্মদ! তুমি যদি বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়ে থাকো, তাহলে বলো বায়তুল মুকাদ্দাসের কটা সিঁড়ি? কটা দরজা-জানলা আছে? আবু জাহেল দুষ্টলোক। আসলে আমরা যখন কারও বাড়ি বেড়াতে যাই, তখন তাদের বাড়িঘরের দরজা-জানলা কটা, তা কখনোই গণনা করি না। রাসুল (সা.)-ও করেননি। হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) আবু জাহেলের প্রশ্নে পেরেশান হয়ে গেলেন। এরকম পেরেশানি তার আর কখনো হয়নি। নবীজির এই পেরেশানি দেখে আল্লাহতায়ালা কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন। নবীজি বলেন, ‘অতঃপর আল্লাহতায়ালা বায়তুল মুকাদ্দাসকে আমার চোখের সামনে তুলে ধরলেন আর তারা যা জিজ্ঞেস করছিল, আমি তা দেখে দেখে গণনা করে উত্তর দিচ্ছিলাম।’

নবীজি জাহান্নামে কি কি দেখেছেন তা কিছু বলতে চাই-
নবীজী নিজের চোখে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কি তা দেখলেন।
১। বেনামাজির শাস্তি দেখলেন, বড় পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হচ্ছে, আঘাতে মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, পুনরায় ভালো হয়ে যাচ্ছে, আবার আঘাত করা হচ্ছে।

২। জাকাত না দেওয়ার শাস্তি দেখলেন। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে পাওনাদারেরা থাকবে। তারা পশুবৎ চরবে এবং নোংরা আবর্জনা ময়লা ও পুঁজ এবং কাঁটাযুক্ত আঠালো বিষাক্ত ফল খাবে, জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর ভক্ষণ করবে।

৩। চোগলখোরের শাস্তি দেখলেন, তাদের পার্শ্বদেশ হতে গোশত কেটে তাদের খাওয়ানো হচ্ছে; আর বলা হচ্ছে, যেভাবে তোমার ভাইয়ের গোশত খেতে, সেভাবে এটা ভক্ষণ করো।

৪। দেখলেন গিবতকারীদের শাস্তি। তাদের অগ্নিময় লোহার নখর দিয়ে তারা তাদের চেহারা ও বক্ষ বিদীর্ণ করছে। নবীজি এই শাস্তি দেখে প্রশ্ন করলেন, হে জিবরাইল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো সেসব লোক যারা পশ্চাতে মানুষের গোশত খেত (আড়ালে সমালোচনা করত)।

৫। দেখলেন সুদখোরদের বড় বড় পেট, যার কারণে তারা তাদের অবস্থান থেকে নড়াচড়া করতে পারছে না। তাদের সঙ্গে রয়েছে ফেরাউন সম্প্রদায়, তাদেরকে অগ্নিতে প্রবিষ্ট করানো হচ্ছে।

৬। জেনাকার বদকার নারী, যারা ব্যভিচার করেছে এবং ভ্রূণ ও সন্তান হত্যা করেছে, তাদের দেখলেন পায়ে আংটা লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে; তারা আর্তচিৎকার করছে। ব্যভিচারী জেনাকার পুরুষের শাস্তি দেখলেন। এক সম্প্রদায় তাদের সামনে একটি উত্তম পাত্রে উপাদেয় ভুনা গোশত এবং অন্য নোংরা একটি পাত্রে পচা মাংস। তারা উত্তম পাত্রের উন্নত তাজা সুস্বাদু গোশত রেখে নোংরা পাত্রের পচা মাংস ভক্ষণ করছে। নবীজি বললেন, হে জিবরাইল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো ওই সব পুরুষ যারা স্বীয় বৈধ স্ত্রী রেখে অন্য নারী গমন করেছে এবং ওই সব নারী যারা স্বীয় বৈধ স্বামী রেখে পরপুরুষগামিনী হয়েছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কেন এত বড় একটি ঘটনা (মেরাজ) ঘটালেন? এর পেছনে তাঁর কি রহস্য? এর গুরুত্বই বা কি? এর দ্বারা আমরা কি পেলাম? আল্লাহ তাআলা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই এর পিছনে পড়ো না।’ এরপরও শুধু অনুমান ও ধারণার উপর ভিত্তি করে বলা বড়ই অন্যায়। মানুষের জন্য আল্লাহর মেরাজের দরজা নামাজের মাধ্যমে খোলা রাখা হয়েছে। মুমিনের মেরাজই হলো নামাজ। খাও না খাও, ধনী থাকো বা গরীব থাকো। চোর হও, ডাকাত হও বা দূর্নীতিবাজ হও- নামাজ পড়তেই হবে। বেকার থাকো, আর চাকরিজীবী হও, যেমন খুশি তেমন থাকো, কিন্তু নামাজ পড়তেই হবে। নামাজ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নাই। নামাজ ছাড়া বিকল্প কিছু নাই। এ নামাজেই মানুষ আল্লাহর দিদার লাভ করতে সক্ষম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মেরাজের সঠিক ইতিহাসকে হৃদয়ে ধারণ করে নিজেদের ঈমানকে আরো শক্তিশালী করার তাওফিক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৩৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×