আমি একজন দূর্নীতিবাজ।
আমি দূর্নীতি করে প্রায় পনের হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছি। অথবা তারও বেশি। আসলে সঠিক হিসাব আমার কাছে নেই। আমি শুধু দূর্নীতি করেই গেছি। টাকা আর সম্পদের পরিমান কখনও হিসাব করি নাই। তবে আমার নিজের অঞ্চলে প্রচুর জমি আছে আমার। এছাড়া খুলনা ও রাজশাহীতে আমার অনেক জমি আছে। ঢাকায় অনেক গুলো ফ্লাট আছে। বাড়ি আছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। আবার আমার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুধু কাগজে কলমে, বাস্তবে কোনো অস্বস্তিত্ব নেই। কমপক্ষে নামে বেনামে দুই শ' ট্রেড লাইসেন্স আছে আমার। দূর্নীতি করতেও আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনেক বুদ্ধি খেলাতে হয়েছে। টানা সাত বছর দূর্নীতি করে গেছি। ব্যাগ ভরতি ভরতি টাকা এসেছে আমার কাছে। একসময় পুরো বাংলাদেশে মধ্যে নগদ টাকা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি। আমার সমস্ত কালো টাকা এখন সাদা করে ফেলেছি। হে হে ...। শুধু মাত্র বুদ্ধির জোরে আমি আজ এই পর্যায়ে এসেছি। ভাত ছিটালে যেমন কাকের অভাব হয় না তেমনি টাকা দিয়ে আমি বহু লোক কিনে রেখেছি। ব্যবসায়ী, দুদক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, তারা আমার কথায় উঠবোস করে। আমার ধারনা আমার যোগ্যতা আছে বলেই আল্লাহ আমাকে এত টাকার মালিক করেছেন।
আমি কোনো কালেই রাজনীতি করি নাই।
রাজনীতি বুঝিও না। তবে এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় থেকে আজ আমি পনের হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছি। অবশ্য মন্ত্রী ছত্রছায়ায় থেকে আমি একা না আরো তেরোজন ব্যাক্তি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এদের অনেকেই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আমি মালোশিয়াতে আর সুইডেনে বাড়ি করেছি। এখন অবশ্য কানাডাতে নাগরিত্ব পাওয়ার চেষ্টায় আছি। পরিবারকে কানাডা পাঠিয়ে দিব। এই দেশের মানুষ গুলো ভালো না। এই দেশ বড় নোংরা। কানাডা চলে যাবার ব্যবস্থা খুব শ্রীঘই হয়ে যাবে। আমি অনার্স পাশ করে একটা ইট ভাটায় ম্যানেজারের চাকরি করতাম। ৩৫ হাজার টাকা বেতন পেতাম। আমার ছোট সংসার। আমি, আমার স্ত্রী আর আমার তিন সন্তান। ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে আমার সংসার চলতো না। সংসারে অভাব লেগেই থাকতো। বউ বাচ্চার কোনো সখ পূরন করতে পাড়তাম না। এখন আমার তিন সন্তান যে স্কুলে পড়ে তাদের মাসিক বেতন একজনের ২৪ হাজার টাকা করে। আমি প্রচুর টাকা খরচ করি। আমাকে খরচ করতে হয়। অতি তুচ্ছ বিষয়েও আমি লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফেলি। আমার একটুও গায়ে লাগে না। আমার কাজ হলো- মাছের তেল দিয়ে মাছ ভাজা। হে হে ...।
প্রচুর সাংবাদিক আমার কাছ থেকে টাকা নেয়।
আবার কাউকে কাউকে আমি নিজে ডেকে টাকা দেই। বেশির ভাগ লোক টাকার জন্য হা করে বসে থাকে। এমনভাব যেন তারা আমার কাছে টাকা জমা করে রেখেছে। অসংখ্য লোকের বাসায় নানান রকম উপহার পাঠাই আমি। তাদের স্ত্রী কন্যারদের জন্য নানান রকম উপহার পাঠাতে হয়। দুদক এর লোকদের বাসায় নিয়মিত নানান রকম উপহার পাঠাই। এবার ঈদেও সাত জনের বাসায় সাতটা গরু পাঠিয়েছি। অবশ্য গত বছর ৩৭ টা গরু বিভিন্ন লোককে উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম। বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সরকারী অফিসের লোকদের বাসায় নানান উপকর পাঠাই। তারা খুশি। তাদের খুশি রাখা প্রত্যেক দূর্নীতিবাজের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। যে যত টাকা ছড়াবে সে তত নিরাপদ। এত কষ্ট করে দূর্নীতি করেও শান্তি নেই। প্রচুর লোককে দিতে হয়। খাওয়াতে হয়। তাদের খুশি রাখতে হয়। আমার হাজার হাজার কোটি কালো টাকাকে সাদা করতে আমি রাজনীতিতে নামি। সরকারের দলের বড় পদ কিনে নেই। সভাপতি হই। টাকা দিয়ে অসংখ্য অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হই। টিভিতে টক শো করি। শুধু সরকারের গুনগান করি। সামনে এমপি নির্বাচন করবো। এবং আমিই এমপি হবো। টাকা থাকলে এই দেশে সব সম্ভব। অসংখ্য লোক আমার কাছে এসে হাত কচলায়। আমি বলি, এত কচলাবেন না। হাতের চামড়া উঠে যাবে। হে হে হে...।
আমার গ্রামে আমি বহু লোকের জমি দখল করেছি।
নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে সাইন নিয়েছি। পাঁচ জন বাঁধা উকিল আছে আমার। তারা আমার সম্পদের দেখভাল করে। তারা কালোকে সাদা বানায়। প্রচুর টাকা হয়ে যাবার পর লোকজন যা করে আমিও তাই করেছি। টিভি চ্যানেল করেছি, পত্রিকা বের করেছি, গ্রামে মসজিদ করেছি, মাদ্রাসা করেছি, স্কুল করেছি। গ্রামে অসংখ্যা লোককে নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছি। অসংখ্য লোক আমার টাকা দিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে। আমার অনেক কর্মচারী আমার টাকা দিয়ে গ্রামের পাকা বাড়ি পর্যন্ত করে ফেলেছে। যেহেতু আমি আগামী নির্বাচন করবো তাই গ্রামের লোকজনের টাকা দেই। নানান উছিলায় তাদের সাহায্য সহযোগিতা করি। অসুস্থ লোকদের ধরে এনে শহরে বড় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাই। গ্রামের মানুষ অল্পতেই খুশি হয়। আমি গ্রামে গেলে অসংখ্য লোক আমার পেছনে ঘুরঘুর করে। আমি যা করি তাতেই তারা মুগ্ধ হয়ে যায়! আমাকে তারা পীরের মতো ভক্তি শ্রদ্ধা করে। আমার তিনটা প্যারাডো গাড়ি আছে। একটা দিয়ে আমার ছেলে মেয়েরা স্কুলে যায়, একটা আমার বউ পার্লারে যায় আরেকটা আমার। আমার মোট গাড়ি সতেরটা। একটা সত্য কথা বলি- আমার এত এত টাকা, অথচ আমার দু'টা সমস্যা আছে। কোনো খাবারে আমি স্বাদ পাই না এবং রাতে আমার ঘুম আসে না। দেশ বিদেশে কর ডাক্তার দেখালাম- কোনো লাভ হয় না।
বেশ কিছু দূর্নীতিবাজ ধরা পড়েছে।
অথচ আমাকে ধরতে পারছে না। তার কারন আমার দৌড় অনেক দূর পর্যন্ত। পুলিশে আমার লোক আছে, দুদকে আমার লোক আছে, র্যাবে আমার লোক আছে, বড় বড় সব আমলা এবং রাজনীতিবিদদের সাথে আমার অতি সুসম্পর্ক। এই সম্পর্ক ধরে রাখতে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমি যে পনের হাজার কোটি টাকার মালিক তা কেউ জানে না। সবাই জানে আমি ধনী। কতটা ধনী তা কেউ জানে না। সেই হিসাব কারো কাছে নেই। আমি কাউকে জানতে দেই নাই। প্রতিমাসে আমি দুইবার হেলিকাপ্টারে করে আমার গ্রামের বাড়ি যাই। ঢাকা ফেরার পথে গ্রাম থেকে এক বা দুইজনকে সাথে করে নিয়ে আসি। তারা হেলিকাপ্টারে চড়ে। আসলে এটা আমার ইনভেস্টমেন্ট। সামনে আমাকে এমপি হতেই হবে। মাত্র পঁচিশ মিনিটে ঢাকা চলে আসি হেলিকাপ্টারে করে। অবশ্য একটা হেলিকাপ্টার কিনে ফেলার ইচ্ছা আছে। কিনছি না কারন তাতে অনেকের চোখ পড়ে যাবে। বহু রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, এমপি, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী আর সচিবেরা আমার কাছে টাকা চায় না। তারা চায় নারী। একরাতের জন্য। গুলশানে আমার ফ্লাট আছে। মানে জলসা ঘর। অনৈতিক কাজের জন্য। ঢাকা শহরের সমস্ত সুন্দর মেয়েদের এক রাতের জন্য ভাড়া করে আনি। কত লোককে যে কত রকমভাবে খুশি রাখতে হয়!
আমার বিরুদ্ধে যারা যায়- তাদের পরিনতি খুব খারাপ হয়।
বহুলোককে আমি কারাগারে পাঠিয়েছি। কাউকে ল্যাংডা করে দিয়েছি। কাউকে চাকরিচ্যুত করেছি। বহু লোক আমার ভয়ে থর থর করে কাপে। অনেকে আমার ভয়ে দেশ ছাড়া। যারা আমার নামে বদনাম করে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে অযথা হয়রানি করি। তখন তারা থাকে দৌড়ের উপর। কমপক্ষে দুই শ' জনের নামে মামলা করেছি। অথচ তারা কেউ জানে না মামলা আমি করেছি। আমার এসমস্ত কাজের জন্য আমার লোক আছে। সমাজের সব উঁচু শ্রেনীর সাথে আমার উঠাবসা। ধরুন, আমি যদি দূর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতারও হই তাতে আমার কিছু যায় আসে না। জামিনে বের হয়ে আসবো। মাঝে মাঝে গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসবো। অথবা ধরুন, দুদক আমার সম্পত্তি থেকে এক শ' কোটি বা সাত শ' কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করলো তাতেও আমার কিছু যায় আসে না। তারপরও আমার যে পরিমান সম্পদ থাকবে তাতে আমার চৌদ্দ পুরুষ রাজার হালে বসে খেতে পারবে। অতীতে যারা দূর্নীতি করেছে এবং ধরা পড়েছে। তাদের কি হয়েছে? কিছুই হয় নাই। এখনও তারা রাজার হালে আছে। প্যারাডো গাড়িতে চলাফেরা করছে। শুধু সে একা না তার সমস্ত আত্মীয়স্বজনসহ। প্যারাডো গাড়ির মজার অন্যরকম। আমিও আমৃত্যু রাজার হালে থাকবো এবং আমি মরে গেলেও আমার বউ ছেলে মেয়ে রাজার হালে থাকবে। আসলে একবার টাকা করে ফেলতে পারলে আর কোনো সমস্যা নাই।
এই যে হাজার হাজার কোটি টাকা দূর্নীতি করেছি-
আমার একটুও খারাপ লাগে নি। কারন আমি দেখেছি সবাই দূর্নীতি করে। সবাই। অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে বড় স্যার পর্যন্ত। যারা দূর্নীতি করে না আসলে তারা দূর্নীতির সুযোগ পায়নি বলে দূর্নীতি করে নাই। তাই বড় বড় নীতির কথা বলে। প্রতিটা মন্ত্রী, এমপি ছাড়াও বহু রাজনীতিবিদের ছত্রছায়ায় থাকা লোকজনের পর্যন্ত উন্নত দেশে সেকেন্ড হোম আছে। সবাই সব জানে কিন্তু চুপ করে থাকে। দুদক খুবই দূর্বল একটা প্রতিষ্ঠান। দুদক হলো পুতুল। এবং তাদের চোখে টিনের চশমা। তবে দুদক যদি সৎ হতো, স্বচ্ছ হতো এবং নিরপেক্ষ হতো তবে দেশে দূর্নীতিবাজের সংখ্যা এত বাড়তো না। নব্য ধনীদের সংখ্যাও এত বাড়তো না। এই দেশে সব চেয়ে সহজ দূর্নীতিবাজদের ধরা। অথচ এদের ধরতে সরকারের বড়ই অনীহা। তাই যদি সুযোগ থাকে বিনা দ্বিধায় চোখ বন্ধ করে দূর্নীতি করুন। কোন ভয় নেই। আমি এ পর্যন্ত সাত বার হজ্ব করেছি। নামাজ আমি মিস করি না। আমার কপালে স্থায়ী কালো দাগ বসে গেছে। মুখে দাড়ি আর নামাজ পড়লে একটু বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। হে হে হে-----
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫৮