আম গাছে একটা লাশ ঝুলছে!
অবিবাহিত একটা মেয়ের লাশ। মেয়ের বয়স আনুমানিক ১৬ থেকে ১৮'র মধ্যে হবে। গলায় খুব শক্ত করে দড়ি প্যাচানো। মেয়েটা দেখতে বেশ মিষ্টি। মেয়েটা কি নিজে আত্মহত্যা করেছে, না তাকে মেরে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে তা বুঝা যাচ্ছে না। গ্রামের মানুষ নানান রকম কথা বলছে। মেয়েটার মা নেই। কোনো ভাই বোনও নেই। শুধু বাবা আছেন। বাবা কাজ করেন ইট ভাটায়। প্রতিদিন বাসায় ফিরেন না। কখনও কখনও টানা একমাস পর ফিরেন। মেয়েটা গতকাল মাটির চুলায় রান্না করছিলো। ভাত আর পাটশাক ভাজি। রান্না শেষ করতে পারে নি। আপনার কি মনে হয়? মেয়েটা নিজে আত্মহত্যা করেছে? না কেউ তাকে জোর করে ধরে ফাঁসি দিয়েছে? এই মেয়েটার তো কোনো শত্রু নেই। দরিদ্র ঘরের একটা মেয়ে।
মেয়েটার নাম শেফালী।
গ্রামের সহজ সরল, একটা মেয়ে। প্রাইমারী স্কুল পর্যন্ত পড়েছে। মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর। মাথা ভরতি চুল। চোখে সব সময় কাজল দিত। গ্রামের চেয়ারম্যান ইনামুল শেফালীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। শেফালী পুকুরে গোছল করতে গেলে চেয়ারম্যান ইনামুল লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো। ইনামুলের বউ আছে, তবু সে শেফালীকে বিয়ে করতে চায়। শেফালীর বাপের কাছে ইনামুল বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে। শেফালীর বাবা স্পষ্ট মানা করে দিয়েছেন। গ্রামে একটা ছেলে আছে নাম শফিক। সে কোনো কামকাজ করে না। তবে গ্রামের সবাই শফিককে ভালোবাসে। কারন শফিক সহজ সরল মানুষ। গ্রামে কেউ বিপদে পড়লে শফিক সাহায্য করে। শফিকের দুনিয়ায়তে কেউ নেই। সে একা। শফিক শেফালীকে মনে মনে পছন্দ করে। শেফালীও শফিককে অনেক পছন্দ করে। অবশ্য দুজন দুজনকে পছন্দ করলেও কেউ কাউকে তা জানায় নি। লজ্জা আর সংশয়ের কারনে।
গ্রামের নাম ধরে নিন রসুলপুর।
অন্যসব গ্রামের মতো খুব সুন্দর একটা গ্রাম। তবে রসুলপুর গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার অতি দরিদ্র। শেফালীরা দরিদ্র, শফিক দরিদ্র তবে চেয়ারম্যান ইনামূল বেশ ধনী। ইনামূলের বাজারে একটা ক্লাব ঘর করেছে। সেই ক্লাব ঘরে সারাদিন টাকা দিয়ে ক্যারাম খেলা হয়। গ্রামে পুলিশ এলো। শেফালীর লাশ নিয়ে গেলো পোস্টমর্টেম করার জন্য। শফিক দেখলো পুলিশ চেয়ারম্যান ইনামূলের সাথে ফিসফিস কিছু কথা বলছে। মাস তিনেক আগেও রসুলপুরে রীনা নামে আরেকটা মেয়ের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। রীনা কি আত্মহত্যা করেছে না তাকে কেউ মেরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে তা জানা যায়নি। রসুলপুর গ্রামের মানুষ খুন হত্যা বা ফাঁসি নিয়ে মোটেও চিন্তিত না। দরিদ্র মানুষেরা শুধু পেটের ধান্দায় ব্যস্ত থাকে। তাদের খুন, ফাঁসি নিয়ে ভাবার সময় নাই।
শেফালীকে কি চেয়ারম্যান ইনামূল হত্যা করেছে?
হত্যার আগে কি ধর্ষন করেছে? যদিও পুলিশ বলেছে শেফালীকে ধর্ষন করা হয়নি। তবে শেফালী অনেকের সাথে একাধিকবার সহবাস করেছে। দরিদ্র গ্রামের কোনো হত্যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। পুলিশ একবার এসেছে এবং ভ্যানে করে শেফালীর লাশ নিয়ে গিয়েছে। পুলিশের দায়িত্ব শেষ। এর আগে রীনা যখন মারা গেল তখনও কোনো হইচই হয়নি। গ্রামের মানুষ সব কিছু অতি সহজেই মেনে নেয়। তবে শেফালীর মৃত্যুতে শফিক অনেক আঘাত পায়। সে শেফালীকে মনে মনে ভালোবাসতো। বিয়েও করতে চেয়েছিলো। শেফালীর জন্য সে সুব্বাড্ডার মেলা থেকে দুটা শাড়িও কিনে রেখেছিল। শফিক কাঁদতে কাঁদতে পুলিশকে বলেছিলো- শেফালী কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। নিশ্চয়ই তাকে কেউ হত্যা করেছে।
শেফালীকে কে খুন করলো?
এটা বের করা কোনো ঘটনাই না। একটু সময় ব্যয় করলেই শেফালীসহ রীনার খুনী কেও বের করা সম্ভব। পাশের গ্রাম থেকে এসে কি কেউ শেফালীকে খুন করেছে? চেয়ারম্যান ইনামূল কি খুনী হতে পারে? যদিও তীর তার দিকেই বেশী যাচ্ছে। শফিক কি খুন করতে পারে? যদিও শফিক ভালো ছেলে। গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসে। শেফালীকে শফিক অনেক ভালোবাসে। যদিও সে তার ভালোবাসার কথা কখনো প্রকাশ করেনি শেফালীর কাছে। এদিকে পুলিশ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখে বলছে শেফালী অনেকের সঙ্গেই সহবাস করেছে। কিন্তু যেদিন শেফালী ফাঁসি দেয় সেদিন তাকে কেউ ধর্ষন বা সহবাস করেনি। পুলিশ কি মিথ্যা বলছে? শেফালীর বাবা বলছে তার মেয়ে পবিত্র। স্বতী। দয়া করে আমার মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিবেন না। একজন বাপের চেয়ে বেশী তার সন্তান সম্পর্কে কেউ জানে না। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আসামী ধরা পড়বেই।
আমি রসুলপুর গ্রামে বেশ কয়েকবার গিয়েছি।
গ্রামটার প্রতি আমার ভীষন মায়া পড়ে গেছে। রসুলপুরের মানুষ গুলো খুব সহজ সরল। দরিদ্র মানুষেরা সহজ সরল'ই হয়। আমি খুঁজে বের করেছি শেফালীকে কে হত্যা করছে! কেন হত্যা করেছে। আমি শেফালীদের বাড়িতে গিয়েছি, তার বাবার সাথে কথা বলেছি, শফিকের সাথে কথা বলেছি, কথা বলেছি চেয়ারম্যান ইনামূলের সাথে। এমনকি রায়েন্দা থানার ওসির সাথেও কথা বলেছি। চেয়ারম্যান ইনামূল একসময় মন্দ লোক ছিলো। এখন সে ভালো হয়ে গেছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। গত বছর সে হজ্বও করেছে। প্রিয় পাঠক, আমি আপনাদের বলব না কে শেফালীকে হত্যা করেছে। কেন করেছে। তবে আপনারা আশা করি বুঝতে পেরেছেন শেফালীকে কে হত্যা করেছে। একদম সহজ হিসাব।