ঘটনা ৯০ মিনিটের।
মগবাজার থেকে বাসে উঠেছি বনানী যাবো। বাস ভরতি নানান রকম কিসিমের লোকজনে। আমি বসে আছি। জানালা দিয়ে হু হু করে বাতাস আছে। বাতাসে আমার মাথার চুল গুলো উড়ছে। বাস চলছে তুফানের মতোন। অন্যদিনের তুলনায় আজ জ্যাম অনেক কম। করোনাকালে যানজট বেশ কমে গেছে। সব খারাপের মধ্যে কিছু ভালো দিকও থাকে।
বাস ড্রাইভারের মাথায় ওয়েস্টার্ন টুপি।
সে পান চিবাচ্ছে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। অন্য বাসের ড্রাইভার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হেসে হেসে চিৎকার করে আমাদের বাসের ড্রাইভারকে হেসে হেসে বলল, চাকা নষ্ট, চাকা নষ্ট। আমাদের ড্রাইভার সে কথায় কান দিল না। কিন্তু নাবিস্কো এসে আমাদের বাসের চাকা নষ্ট হয়ে গেল। বাসের অনেকেই খুবই বিরক্ত হলো। একজন বুড়ো মতো লোক একটু পরপর বিড় বিড় করে বলছেন- 'ফইন্নী...ফইন্নী'। কি বলছেন, কাকে বলছেন কে জানে।
সবাই বাস থেকে নামলাম।
বাসের চাকা সারাই করতে হবে। হ্যাস্যমূখী কন্টাকটর বলল, ৫ মিনিটের মামলা। বাসের হেল্পার, কন্টাকটর আর ড্রাইভার মিলে চাকা ঠিক করতে লেগে গেলো। কোথা থেকে দুইজন ঝালমুড়িওয়ালা আর শসা বিক্রেতা এসে পড়ল। সবাই তাদের কাছ থেকে আগ্রহ নিয়ে ঝালমুড়ি আর শসা খেতে শুরু করলো। একটা ছোট্র বাচ্চা মায়ের কোলে বসে কান্না করছিল- আমি দিলাম ধমক, আমার ধমকে বাচ্চা হেসে ফেলল। আমি বললাম, শশা খাবে?
আমার কোনো তাড়া নেই।
বাসের চাকা ঠিক করতে এক ঘন্টা লাগলেও আমার সমস্যা নেই। ঝালমুড়িওয়ালা নষ্ট হয়ে যাওয়া বাসের যাত্রীদের মৃদু ধমক দিয়ে বলছেন, আমি তো মেশিন না, হাতের কাজ, কত কিছু মেশাতে হয়। আফনেরা লাইনে দাঁড়ান, সুবাইকেই দিব। একলোককে দেখলাম, তার স্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে খুব কায়দা করে সিগারেট টানছেন। স্বামী সিগারেট ধরাতে সে খুব বিরক্ত। এক মুরুব্বি লোককে দেখলাম, বাসের সব যাত্রীদের উপর তদারকি করছেন। তার তদারকি আবার সবাই হাসিমুখে মেনেও নিয়েছেন।
সবার কর্মকান্ড দেখে আমার ভালো লাগছে।
আমি আনন্দ পাচ্ছি। চাকা লাগানো নিয়ে ড্রাইভার, কন্টাকটর আর হেল্পারের মধ্যে ঝড়গা বেঁধে গেছে। চাকা কিভাবে লাগাতে হবে- এই নিয়ে তাদের তিনিজনের তিন রকম মতামত। এই সময় একজন যাত্রী এসে বলল- তোমরা সবাই সরে যাও এই চাকা আমি একাই ঠিক করে দিচ্ছি। সৌদিতে সাত বছর বড়-বড় গাড়ি চালিয়েছি। এই চাকা লাগানো কোনো ঘটনাই না। যাত্রী আগ্রহ নিয়ে বাসের চাকা লাগাচ্ছে।
অবশেষে বাসের চাকা লাগানো হলো।
কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ না। বাস বনানী যাওয়ার পর ড্রাইভার আবিস্কার করল- হেল্পার নিখোঁজ। হেল্পারকে সাথে সাথে ফোন দেয়া হলো- বজলু তুই কই? জানা গেল, বজলু চা খেতে গিয়েছিল। চা খেয়ে এসে দেখে- বাস ছেড়ে চলে গেছে। আমাদের হাস্যমুখী ড্রাইভার বলল- কোনো সমস্যা নেই, তুমি অন্য বাস ধরে চলো এসো, বনানীতে লম্বা জ্যাম পড়েছে। কুইক।
কোনো কিছুতেই আজ আমার বিরক্ত লাগছে। মাঝে মাঝে এমন দিন আসে, বিরক্ত লাগে না। বরং তুচ্ছ একটা ঘটনাতেও অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। আজকের জার্নির আমার কোনো গন্তব্য নেই। এমনিই বাসে উঠে পড়েছি। এই বাস থামবে গাজীপুর চৌরাস্তা। গাজীপুর থেকে আরেক বাসে চড়ে বাসায় ফিরবো।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:২৬