কুরআনে বিভিন্ন আয়াত এবং সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে বলা যায়, মানুষ মাটির তৈরী। নূর বা অগ্নির তৈরী নয়। আসুন, কয়েকটি আয়াতের দিকে লক্ষ্য করি- 'যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেস্তাদের বললেন- আমি মাটির তৈরী মানুষ সৃষ্টি করব'। (সূরা সোয়াদ-৭১) অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, 'নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি পঁচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা'। (সূরা হিজর-২৮) আরেক জায়গায় বলা হয়েছে- 'তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুস্ক মৃত্তিকা থেকে এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে'। (সূরা আর রাহমান-১৪,১৫) সূরা মুমিন- ৬৭ তে বলা হয়েছে- 'তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা'। সূরা মুমিনুন- ১২ তে বলা হয়েছে- 'আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি'। সুরা আল ফুরকান, আয়াত ৫৪' তে বলা হয়েছে- 'তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে মানব সৃষ্টির পদ্ধতি ও মূল উপাদান সম্পর্কে আশা করি সুষ্পষ্ট ধারণা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বাণী দ্বারা একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ নূর বা আগুনের তৈরী নয়। বরং মাটির তৈরী। নাস্তিকেরা বলবে, মায়ের পেটে মাটি ঢুকলো কি করে! কোরআন বলছে, মানুষের সৃষ্টি একটি অলৌকিক ঘটনা। মহান আল্লাহ কাদামাটি দিয়ে প্রথম মানব সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি এই কাদার কাঠামোকে রুহ বা আত্মা দান করেছেন। আমার একটা প্রশ্ন জাগলো, অন্য প্রানী কী দিয়ে তৈরি? এ বিষয়ে বিজ্ঞান কী বলে? বিজ্ঞান বলছে, মানুষের শরীরের সাথে মাটির উপাদান সমূহের মিল রয়েছে। মানুষ মরে গেলে মাটির সাথে মিশে যায় তবে ডিএনএ অক্ষত থাকে। আমাদের শরীর গঠিত হয়- মায়ের পেটে। সেখানে রক্ত মাংসে আমাদের শরীর তৈরী হয়। আর আমাদের শরীর কিভাবে তৈরী হবে তা নির্ভর করছে ডি.এন.এ'র উপর।
বাইবেল ও কুরআনে আদম তৈরীর কাহিনী অনুযায়ী, আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে পৃথিবী থেকে মাটি নিয়ে যায়। সেই মাটি দিয়ে আদমের দেহ কাঠামো (মাটির মূর্তি) তৈরী করে। এবং শেষে তাতে রূহ (আত্মা) দিয়ে জীবন্ত করে। মানুষ প্রজাতির যাত্রা শুরু হয় এভাবে। বিজ্ঞান বলে, মানুষের দেহ গঠিত হয়েছে কোটি কোটি কোষ দিয়ে। আর এই কোষগুলো গঠিত হয় প্রধান দুই উপাদান নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম-এর সমন্নয়ে।
মনে প্রশ্ন আসতে পারে- বিজ্ঞান কি সূর্য সৃষ্টি করেছে, আসমান যমিন সৃষ্টি করেছে, এই পৃথিবীর বাইরে তাদের কার্যাবলি কতটুকু? প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর বাইরে, আর তা পৃথিবীতে এসেছে ধূমকেতু আর উল্কাখন্ডের মাধ্যমে। ডারউইন তো আর ঈশ্বর নন। তার তত্ত্ব যে চিরকাল টিকে থাকবে তা তো না-ও হতে পারে। এতে পরিবর্তন হতেই পারে। তবে এটা ঠিক যে প্রথমে যে সব অণুজীব মহাশূন্য থেকে পৃথিবীতে এসেছিল তারা জৈবিক কাঠামো ছিল অত্যন্ত সরল। তার পরে তা থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়েছে। কাজেই ডারউইনের তত্ত্বে যে বিবর্তনের কথা আছে তা তো ঘটেছেই, কিন্তু প্রাণের সূচনা পৃথিবীতে হয়নি, হয়েছে তার বাইরে কোথাও।
বাইবেলে বলা হয়েছে প্রথম মানবকে জীবন দান করতে ঈশ্বর তার মুখে ফুঁ দিয়েছিলেন। এক মহা বিস্ফোরণের মধ্যে দিয়ে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। আপনি মানুষ। আপনার বিবেক বুদ্ধি আছে। আপনার যেটা সঠিক মনে হবে আপনি সেটা বিশ্বাস করবেন। দুটা তো একসাথে বিশ্বাস করা যাবে না। হয় বিজ্ঞান অথবা ধর্ম। আমি বিজ্ঞান বিশ্বাস করি। সারাদিন তো বিজ্ঞানের কল্যান উপভোগ করছি। ইন্টারনেট, মোবাইল ছাড়া তো এক মুহুর্ত চলতে পারবো না। এগুলো তো আমাকে বিজ্ঞান দিয়েছে। যদিও নির্বোধেরা বলবে, কোরআন রিসার্চ করেই ইন্টারনেট, মোবাইল এসেছে অথবা বলবে ঈশ্বর মানুষকে মেধা দিয়েছে, সেই মেধা দিয়ে বিজ্ঞানীরা এসব আবিস্কার করেছে। আমি এরকম ধার্মিকদের পক্ষে নই। জন্মের পর থেকেই বাপ মার দেখাদেখি কোনো কিছু মেনে চলা আমার পক্ষে সম্ভব না। কোনো কিছুতেই আমার অন্ধ বিশ্বাস নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৬